ড. আর এম দেবনাথ

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পেশ হবে আগামী ৬ জুন। এই মুহূর্তে ব্যবসায়ীদের অভাব-অভিযোগ ও দাবির কোনো শেষ নেই। আবার ‘মিডিয়া রিপোর্ট’ অনুযায়ী, তাঁদের বিরুদ্ধেও অভিযোগের কোনো শেষ নেই। এরই মধ্যে দেখা যাচ্ছে, তাঁরা যে সমস্যাগুলোর কথা তুলে ধরছেন, তার মধ্যে আছে ডলারের দাম, ডলারের অভাব, আমদানি সংকোচন নীতি, ঋণের অভাব, বৃহত্তম ঋণের ঊর্ধ্বসীমা, উৎসে কর ধার্য, সুদ ভর্তুকি প্রত্যাহার, ভর্তুকি হ্রাসের ঝুঁকি, করপোরেট কর হ্রাস, ঋণের ওপর উচ্চ সুদ ইত্যাদি। এর বাইরেও অনেক দায়-দাবি আছে।
ওদিকে যাচ্ছি না। তবে ঠিক এই মুহূর্তে বেশি শোরগোল হচ্ছে ঋণের ওপর উচ্চহারের সুদ নিয়ে। তাঁরা বলছেন, ঋণের ওপর সুদের হার মারাত্মক পর্যায়ে উঠেছে। এটা সহ্যসীমার বাইরে। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। প্রতিযোগিতার ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। বাজারে টেকা যাচ্ছে না। উচ্চ উৎপাদন খরচে বিক্রয়মূল্য বেড়ে যাচ্ছে। এই মূল্যে ক্রেতা নেই—দেশে অথবা বিদেশে। সুদব্যয় (ইন্টারেস্ট এক্সপেন্ডিচার) এত বেড়েছে যে ব্যাংকে ঋণের বোঝা বেড়ে গেছে। ঋণের কিস্তি অনেক বেড়েছে, যা পরিশোধ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেক শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী খেলাপি হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। এদিকে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির ফলে মালের আমদানি খরচ বেড়েছে, এর ওপর শুল্ক-কর বৃদ্ধি পেয়েছে, ভ্যাট বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বাভাবিক কারণেই ১০০ টাকা ঋণে যে কাজ হতো, এখন তাতে লাগছে ১৫০ টাকা। অথচ ঋণের পরিমাণ বাড়াতে ব্যাংক রাজি নয়। বড় বড় ঋণগ্রহীতাকে বলা হয়েছে আর কোনো নতুন ঋণ দেওয়া হবে না। যতটুকু পরিশোধ হবে, ততটুকুই আবার পাওয়া যাবে, এর বেশি নয়। এতে বড় বড় গ্রাহক আছেন বিপদে।
এসব সমস্যা নিয়ে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা ছুটছেন বাংলাদেশ ব্যাংকে, ছুটছেন মন্ত্রীর কাছে। বসছেন নিজেরা—পথ কী তাহলে? গ্যাসসংকট, বিদ্যুৎসংকট ও মূল্যবৃদ্ধি, ডলারের অভাব, ঋণের অভাব, সুদের হার বৃদ্ধি—তাহলে কি ব্যবসা বন্ধ করতে হবে? বড় কঠিন প্রশ্নই বটে। সমাধান কী, তা কেউ জানে না—সবাই প্রত্যাশা করে আছে একটা ‘মুস্তফা কামাল মার্কা’ বাজেট নয়, একটা বাস্তববাদী বাজেটের জন্য। এটা কি হবে? ঐতিহাসিক ৭ জুন সামনে রেখে এই প্রশ্ন। আসি তাহলে ঋণের ওপর সুদের হারের ইস্যুতে।
আমাদের সবারই হয়তো মনে আছে, স্বাধীনতা-উত্তরকালে আমানত ও ঋণের ওপর সুদের হার নির্ধারণ করত কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই হার ব্যাংকভেদে। এতে প্রতিযোগিতা বিঘ্নিত হতো। বাজার অর্থনীতির নীতি লঙ্ঘিত হতো—এ কথা বলে ১৯৯০-৯৫-এর দিকে সুদের হার নির্ধারণের কাজ ছেড়ে দেওয়া হয় নিজ নিজ ব্যাংকের বোর্ডের কাছে। ঋণ শ্রেণিবদ্ধকরণ (ক্ল্যাসিফিকেশন) ইত্যাদি ইস্যুও ছেড়ে দেওয়া হয় ব্যাংকের কাছে। ফল যে খুব বেশি ভালো হয়, তা বলা যাবে না। তবু মোটামুটি চলছিল। হঠাৎ এলেন এক অ্যাকাউন্ট্যান্ট অর্থমন্ত্রী, ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। তিনি অনেক কথা বলে এক হোটেলে বসে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ঠিক করে দিলেন সুদের হার। আমানতের ওপর ৬ শতাংশ সুদ হবে সর্বোচ্চ। ঋণের ওপর হবে ৯ শতাংশ; যা পরিচিতি পেল ‘নয়-ছয়’ সুদনীতি হিসেবে। ‘নয়-ছয়’ কী, তা সবারই জানা। বলা হলো, ব্যবসায় খরচ কমবে, প্রতিযোগিতা ভালো হবে। বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়বে, কর্মসংস্থান হবে। পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরে আসবে। সরকারের রাজস্ব বাড়বে। কিন্তু এতে যে বাজার অর্থনীতি বিসর্জিত হলো, তা মুস্তফা কামালের বিবেচনায় ছিল না। শুধু তা-ই নয়, তিনি ঋণ পুনঃতফসিলীকরণ জাতীয় সব নীতিতে ঘন ঘন পরিবর্তন এনে ঋণশৃঙ্খলায় আনেন এক বিপর্যয়। আমানতকারীরা নিরুৎসাহিত। সঞ্চয়পত্র বন্ধ হয় হয়। দেশে সঞ্চয় হয় নিরুৎসাহিত। নীতি হয়ে যায় যেন ‘ঋণ করেই খাও সবাই’। হঠাৎ চলে এল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)—আমাদের উদ্ধারকর্তা।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, চীন থেকে আসা করোনা বালাইয়ের কঠিন প্রেক্ষাপটে আমরা পড়ে যাই এক বড় সংকটে। সংকট থেকে উত্তরণে ‘আইএমএফের’ পথ সোজা। রোগনির্বিশেষে, দেশনির্বিশেষে, অর্থনীতির স্তরনির্বিশেষে, সামাজিক কাঠামোনির্বিশেষে তাদের ওষুধ কয়েকটা—সবকিছু ঠিক করবে বাজার। মার্কেটই হবে নিয়ন্তা। কোনো ভর্তুকি চলবে না। তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ, সার কোনো কিছুতেই থাকতে পারবে না ভর্তুকি। ডলারের দাম কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঠিক করবে না। এর দাম নির্ধারিত হবে খোলাবাজারে। সুদের হার ঠিক হবে বাজারে, চাহিদা-সরবরাহের ভিত্তিতে। কোনো হস্তক্ষেপ চলবে না। কথা একটাই, ‘বাজার অর্থনীতি’ খোলাবাজার। কে মরল, কে বাঁচল, তা কথা নয়। বাজার থাকবে। ক্যাশলেস সোসাইটি হবে। লোকের ক্রয়ক্ষমতা নেই। তাদের ক্রেডিট কার্ড দেওয়া হবে। ঋণ করো, ঘি খাও। জমি কেনো, ফ্ল্যাট কেনো, আসবাব কেনো, খাওয়া-দাওয়া করো—এই হচ্ছে ক্রেডিট কার্ড। ভোগী জাতি হও, আমেরিকার মতো। ধনী হও তাদের মতো। যথা পরামর্শ তথা কাজ। শত হোক ডলার রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন থেকে নেমে এসেছে ২০ বিলিয়ন ডলারে। বাইরের ঋণ ও সাহায্য সেভাবে নেই। এরই মধ্যে মাত্র ৪ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলারের ঋণ দেবে আইএমএফ। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি আমাদের। কত বড় বড় পারফরম্যান্স আমাদের। না, তাতে কিছু হবে না। ভর্তুকি তোলো। সুদনীতি বাজারভিত্তিক করো। ডলারের দাম বাজারের কাছে ছাড়ো। তালুকদার সাহেবের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এরই মধ্যে ‘ধরি মাছ, না ছুঁই পানি’ নীতির অধীনে ধীরে ধীরে এগোচ্ছিল।
ডলারের দাম কিছুটা নির্ধারণ করে বাকিটা বাজারের কাছে ছেড়ে দেয়। এতে ডলারের দাম বাড়তে থাকে। বাড়ে ভালোভাবেই। সুদের হারেরও তা-ই। তিনি আবিষ্কার করেন ‘স্মার্ট সুদনীতি’—যেন ‘স্মার্ট’ বাংলাদেশের একটি প্রতিফলন। ‘স্মার্ট’ সুদনীতি কী? সিক্স মান্থস মুভিজ অ্যাভারেজ রেট অব ইন্টারেস্ট অন ট্রেজারি বিল’; অর্থাৎ সরকার ট্রেজারি বিলের মাধ্যমে যে ঋণ করে, তার ওপর যে সুদ দেয়, তার ছয় মাসের গড়ে হিসাব হবে সুদের হার। এতে লোনের ওপর, ঋণের ওপর সুদের হার বাড়তে থাকে। উদ্ধারকর্তা এবং আমাদের একশ্রেণির অর্থনীতিবিদের ‘দাদাঠাকুর’ আইএমএফ তাতে সন্তুষ্ট নয়। ছয় মাস যেতে না-যেতেই তালুকদার সাহেবের ‘স্মার্টনীতি’ ‘আনস্মার্ট’ হয়ে পড়ে।
বাতিল হয় স্মার্ট সুদনীতি। এখন চলছে বেশ খোশ মেজাজি ঋণের ওপর সুদনীতি। আবার বারবার বাড়ানো হচ্ছে ‘ব্যাংক রেট’, যাকে আজকাল পোশাকি নামে ডাকা হয় ‘রেপো রেট’ হিসেবে; অর্থাৎ এটা এই রেটে, যে রেটে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ঋণ দেয় প্রয়োজনে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। মূল্যস্ফীতি কমছে না; বরং গ্রামে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৫ শতাংশ। কী মারাত্মক অবস্থা। অথচ এসবই হচ্ছে বাজার অর্থনীতি করার জন্য। এখন বাজার হয়ে যাচ্ছে বেসামাল। বাজার অর্থনীতি আছে—বাজার নেই, ক্রেতা নেই, বিক্রেতা আছে, আর আছে ধনী, অতি ধনী ক্রেতা।
বাজার অর্থনীতিতে এখন, অন্য কথা বাদ, ডলারের দাম এবং ঋণের ওপর সুদের হার গাছের ওপরে। বাংলাদেশ ব্যাংক লজ্জায় বলে ডলারের দাম হবে ১১৭ টাকা (দুই বছর আগেও যা ছিল ৮৫-৮৬ টাকা)। কিন্তু খোলাবাজারে বস্তুটি নেই। জোগাড় হলে এর দাম নাকি হাঁকা হয় ১২০-১২৫। সত্যি মিথ্যা বলতে পারবে সরকারি সংস্থাগুলো এবং ভুক্তভোগীরা। এর ফল কী? এ কথা আর বুঝিয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না। মূল্যস্ফীতি, আমদানিনির্ভর দেশ। সর্বশেষ খবর চলছে চিনি নিয়ে। চিনির ৯৮-৯৯ শতাংশ আমদানি হয়। আমদানি কম, ডলার নেই।
অতএব ‘গাল খাওয়া’ ভারত থেকে সমানে চিনি আসছে ‘দেশপ্রেমিক’ চোরাচালানিরা। ‘দেশপ্রেমিক’ চোরাচালানিদেরকে বন্ধু ‘দেশপ্রেমিক’ হুন্ডিওয়ালারা সাহায্য করছে ডলার দিয়ে। ডলার কোত্থেকে দেয় তারা? দেশের ডলার না থাকতে পারে। কিন্তু প্রভাবশালী হুন্ডিওয়ালারা বেশি দাম দিয়ে বিদেশেই বাংলাদেশি প্রবাসীদের কাছ থেকে ডলার নিয়ে নেয়। তা দিয়ে নানা কায়দায় তারা ভারতীয় চোরাচালানিদের চিনির টাকা পরিশোধ করে। এটাই হচ্ছে আদি ও অকৃত্রিম পন্থা এবং ব্যবসা। স্বাধীনতার আগে এবং পর থেকে এটাই দেশে চলে আসছে।
হুন্ডি ছিল, আছে, থাকবে—যত ‘পণ্ডিতি’ই করা হোক না কেন। এটা একটা অত্যন্ত সংগঠিত, মজবুত ব্যবসা, যা প্রয়োজনের ওপর নির্ভর করে কাজ করে।
ড. আর এম দেবনাথ, সাবেক শিক্ষক, ঢাবি; অর্থনীতি বিশ্লেষক

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পেশ হবে আগামী ৬ জুন। এই মুহূর্তে ব্যবসায়ীদের অভাব-অভিযোগ ও দাবির কোনো শেষ নেই। আবার ‘মিডিয়া রিপোর্ট’ অনুযায়ী, তাঁদের বিরুদ্ধেও অভিযোগের কোনো শেষ নেই। এরই মধ্যে দেখা যাচ্ছে, তাঁরা যে সমস্যাগুলোর কথা তুলে ধরছেন, তার মধ্যে আছে ডলারের দাম, ডলারের অভাব, আমদানি সংকোচন নীতি, ঋণের অভাব, বৃহত্তম ঋণের ঊর্ধ্বসীমা, উৎসে কর ধার্য, সুদ ভর্তুকি প্রত্যাহার, ভর্তুকি হ্রাসের ঝুঁকি, করপোরেট কর হ্রাস, ঋণের ওপর উচ্চ সুদ ইত্যাদি। এর বাইরেও অনেক দায়-দাবি আছে।
ওদিকে যাচ্ছি না। তবে ঠিক এই মুহূর্তে বেশি শোরগোল হচ্ছে ঋণের ওপর উচ্চহারের সুদ নিয়ে। তাঁরা বলছেন, ঋণের ওপর সুদের হার মারাত্মক পর্যায়ে উঠেছে। এটা সহ্যসীমার বাইরে। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। প্রতিযোগিতার ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। বাজারে টেকা যাচ্ছে না। উচ্চ উৎপাদন খরচে বিক্রয়মূল্য বেড়ে যাচ্ছে। এই মূল্যে ক্রেতা নেই—দেশে অথবা বিদেশে। সুদব্যয় (ইন্টারেস্ট এক্সপেন্ডিচার) এত বেড়েছে যে ব্যাংকে ঋণের বোঝা বেড়ে গেছে। ঋণের কিস্তি অনেক বেড়েছে, যা পরিশোধ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেক শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী খেলাপি হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। এদিকে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির ফলে মালের আমদানি খরচ বেড়েছে, এর ওপর শুল্ক-কর বৃদ্ধি পেয়েছে, ভ্যাট বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বাভাবিক কারণেই ১০০ টাকা ঋণে যে কাজ হতো, এখন তাতে লাগছে ১৫০ টাকা। অথচ ঋণের পরিমাণ বাড়াতে ব্যাংক রাজি নয়। বড় বড় ঋণগ্রহীতাকে বলা হয়েছে আর কোনো নতুন ঋণ দেওয়া হবে না। যতটুকু পরিশোধ হবে, ততটুকুই আবার পাওয়া যাবে, এর বেশি নয়। এতে বড় বড় গ্রাহক আছেন বিপদে।
এসব সমস্যা নিয়ে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা ছুটছেন বাংলাদেশ ব্যাংকে, ছুটছেন মন্ত্রীর কাছে। বসছেন নিজেরা—পথ কী তাহলে? গ্যাসসংকট, বিদ্যুৎসংকট ও মূল্যবৃদ্ধি, ডলারের অভাব, ঋণের অভাব, সুদের হার বৃদ্ধি—তাহলে কি ব্যবসা বন্ধ করতে হবে? বড় কঠিন প্রশ্নই বটে। সমাধান কী, তা কেউ জানে না—সবাই প্রত্যাশা করে আছে একটা ‘মুস্তফা কামাল মার্কা’ বাজেট নয়, একটা বাস্তববাদী বাজেটের জন্য। এটা কি হবে? ঐতিহাসিক ৭ জুন সামনে রেখে এই প্রশ্ন। আসি তাহলে ঋণের ওপর সুদের হারের ইস্যুতে।
আমাদের সবারই হয়তো মনে আছে, স্বাধীনতা-উত্তরকালে আমানত ও ঋণের ওপর সুদের হার নির্ধারণ করত কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই হার ব্যাংকভেদে। এতে প্রতিযোগিতা বিঘ্নিত হতো। বাজার অর্থনীতির নীতি লঙ্ঘিত হতো—এ কথা বলে ১৯৯০-৯৫-এর দিকে সুদের হার নির্ধারণের কাজ ছেড়ে দেওয়া হয় নিজ নিজ ব্যাংকের বোর্ডের কাছে। ঋণ শ্রেণিবদ্ধকরণ (ক্ল্যাসিফিকেশন) ইত্যাদি ইস্যুও ছেড়ে দেওয়া হয় ব্যাংকের কাছে। ফল যে খুব বেশি ভালো হয়, তা বলা যাবে না। তবু মোটামুটি চলছিল। হঠাৎ এলেন এক অ্যাকাউন্ট্যান্ট অর্থমন্ত্রী, ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। তিনি অনেক কথা বলে এক হোটেলে বসে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ঠিক করে দিলেন সুদের হার। আমানতের ওপর ৬ শতাংশ সুদ হবে সর্বোচ্চ। ঋণের ওপর হবে ৯ শতাংশ; যা পরিচিতি পেল ‘নয়-ছয়’ সুদনীতি হিসেবে। ‘নয়-ছয়’ কী, তা সবারই জানা। বলা হলো, ব্যবসায় খরচ কমবে, প্রতিযোগিতা ভালো হবে। বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়বে, কর্মসংস্থান হবে। পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরে আসবে। সরকারের রাজস্ব বাড়বে। কিন্তু এতে যে বাজার অর্থনীতি বিসর্জিত হলো, তা মুস্তফা কামালের বিবেচনায় ছিল না। শুধু তা-ই নয়, তিনি ঋণ পুনঃতফসিলীকরণ জাতীয় সব নীতিতে ঘন ঘন পরিবর্তন এনে ঋণশৃঙ্খলায় আনেন এক বিপর্যয়। আমানতকারীরা নিরুৎসাহিত। সঞ্চয়পত্র বন্ধ হয় হয়। দেশে সঞ্চয় হয় নিরুৎসাহিত। নীতি হয়ে যায় যেন ‘ঋণ করেই খাও সবাই’। হঠাৎ চলে এল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)—আমাদের উদ্ধারকর্তা।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, চীন থেকে আসা করোনা বালাইয়ের কঠিন প্রেক্ষাপটে আমরা পড়ে যাই এক বড় সংকটে। সংকট থেকে উত্তরণে ‘আইএমএফের’ পথ সোজা। রোগনির্বিশেষে, দেশনির্বিশেষে, অর্থনীতির স্তরনির্বিশেষে, সামাজিক কাঠামোনির্বিশেষে তাদের ওষুধ কয়েকটা—সবকিছু ঠিক করবে বাজার। মার্কেটই হবে নিয়ন্তা। কোনো ভর্তুকি চলবে না। তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ, সার কোনো কিছুতেই থাকতে পারবে না ভর্তুকি। ডলারের দাম কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঠিক করবে না। এর দাম নির্ধারিত হবে খোলাবাজারে। সুদের হার ঠিক হবে বাজারে, চাহিদা-সরবরাহের ভিত্তিতে। কোনো হস্তক্ষেপ চলবে না। কথা একটাই, ‘বাজার অর্থনীতি’ খোলাবাজার। কে মরল, কে বাঁচল, তা কথা নয়। বাজার থাকবে। ক্যাশলেস সোসাইটি হবে। লোকের ক্রয়ক্ষমতা নেই। তাদের ক্রেডিট কার্ড দেওয়া হবে। ঋণ করো, ঘি খাও। জমি কেনো, ফ্ল্যাট কেনো, আসবাব কেনো, খাওয়া-দাওয়া করো—এই হচ্ছে ক্রেডিট কার্ড। ভোগী জাতি হও, আমেরিকার মতো। ধনী হও তাদের মতো। যথা পরামর্শ তথা কাজ। শত হোক ডলার রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন থেকে নেমে এসেছে ২০ বিলিয়ন ডলারে। বাইরের ঋণ ও সাহায্য সেভাবে নেই। এরই মধ্যে মাত্র ৪ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলারের ঋণ দেবে আইএমএফ। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি আমাদের। কত বড় বড় পারফরম্যান্স আমাদের। না, তাতে কিছু হবে না। ভর্তুকি তোলো। সুদনীতি বাজারভিত্তিক করো। ডলারের দাম বাজারের কাছে ছাড়ো। তালুকদার সাহেবের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এরই মধ্যে ‘ধরি মাছ, না ছুঁই পানি’ নীতির অধীনে ধীরে ধীরে এগোচ্ছিল।
ডলারের দাম কিছুটা নির্ধারণ করে বাকিটা বাজারের কাছে ছেড়ে দেয়। এতে ডলারের দাম বাড়তে থাকে। বাড়ে ভালোভাবেই। সুদের হারেরও তা-ই। তিনি আবিষ্কার করেন ‘স্মার্ট সুদনীতি’—যেন ‘স্মার্ট’ বাংলাদেশের একটি প্রতিফলন। ‘স্মার্ট’ সুদনীতি কী? সিক্স মান্থস মুভিজ অ্যাভারেজ রেট অব ইন্টারেস্ট অন ট্রেজারি বিল’; অর্থাৎ সরকার ট্রেজারি বিলের মাধ্যমে যে ঋণ করে, তার ওপর যে সুদ দেয়, তার ছয় মাসের গড়ে হিসাব হবে সুদের হার। এতে লোনের ওপর, ঋণের ওপর সুদের হার বাড়তে থাকে। উদ্ধারকর্তা এবং আমাদের একশ্রেণির অর্থনীতিবিদের ‘দাদাঠাকুর’ আইএমএফ তাতে সন্তুষ্ট নয়। ছয় মাস যেতে না-যেতেই তালুকদার সাহেবের ‘স্মার্টনীতি’ ‘আনস্মার্ট’ হয়ে পড়ে।
বাতিল হয় স্মার্ট সুদনীতি। এখন চলছে বেশ খোশ মেজাজি ঋণের ওপর সুদনীতি। আবার বারবার বাড়ানো হচ্ছে ‘ব্যাংক রেট’, যাকে আজকাল পোশাকি নামে ডাকা হয় ‘রেপো রেট’ হিসেবে; অর্থাৎ এটা এই রেটে, যে রেটে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ঋণ দেয় প্রয়োজনে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। মূল্যস্ফীতি কমছে না; বরং গ্রামে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৫ শতাংশ। কী মারাত্মক অবস্থা। অথচ এসবই হচ্ছে বাজার অর্থনীতি করার জন্য। এখন বাজার হয়ে যাচ্ছে বেসামাল। বাজার অর্থনীতি আছে—বাজার নেই, ক্রেতা নেই, বিক্রেতা আছে, আর আছে ধনী, অতি ধনী ক্রেতা।
বাজার অর্থনীতিতে এখন, অন্য কথা বাদ, ডলারের দাম এবং ঋণের ওপর সুদের হার গাছের ওপরে। বাংলাদেশ ব্যাংক লজ্জায় বলে ডলারের দাম হবে ১১৭ টাকা (দুই বছর আগেও যা ছিল ৮৫-৮৬ টাকা)। কিন্তু খোলাবাজারে বস্তুটি নেই। জোগাড় হলে এর দাম নাকি হাঁকা হয় ১২০-১২৫। সত্যি মিথ্যা বলতে পারবে সরকারি সংস্থাগুলো এবং ভুক্তভোগীরা। এর ফল কী? এ কথা আর বুঝিয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না। মূল্যস্ফীতি, আমদানিনির্ভর দেশ। সর্বশেষ খবর চলছে চিনি নিয়ে। চিনির ৯৮-৯৯ শতাংশ আমদানি হয়। আমদানি কম, ডলার নেই।
অতএব ‘গাল খাওয়া’ ভারত থেকে সমানে চিনি আসছে ‘দেশপ্রেমিক’ চোরাচালানিরা। ‘দেশপ্রেমিক’ চোরাচালানিদেরকে বন্ধু ‘দেশপ্রেমিক’ হুন্ডিওয়ালারা সাহায্য করছে ডলার দিয়ে। ডলার কোত্থেকে দেয় তারা? দেশের ডলার না থাকতে পারে। কিন্তু প্রভাবশালী হুন্ডিওয়ালারা বেশি দাম দিয়ে বিদেশেই বাংলাদেশি প্রবাসীদের কাছ থেকে ডলার নিয়ে নেয়। তা দিয়ে নানা কায়দায় তারা ভারতীয় চোরাচালানিদের চিনির টাকা পরিশোধ করে। এটাই হচ্ছে আদি ও অকৃত্রিম পন্থা এবং ব্যবসা। স্বাধীনতার আগে এবং পর থেকে এটাই দেশে চলে আসছে।
হুন্ডি ছিল, আছে, থাকবে—যত ‘পণ্ডিতি’ই করা হোক না কেন। এটা একটা অত্যন্ত সংগঠিত, মজবুত ব্যবসা, যা প্রয়োজনের ওপর নির্ভর করে কাজ করে।
ড. আর এম দেবনাথ, সাবেক শিক্ষক, ঢাবি; অর্থনীতি বিশ্লেষক
ড. আর এম দেবনাথ

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পেশ হবে আগামী ৬ জুন। এই মুহূর্তে ব্যবসায়ীদের অভাব-অভিযোগ ও দাবির কোনো শেষ নেই। আবার ‘মিডিয়া রিপোর্ট’ অনুযায়ী, তাঁদের বিরুদ্ধেও অভিযোগের কোনো শেষ নেই। এরই মধ্যে দেখা যাচ্ছে, তাঁরা যে সমস্যাগুলোর কথা তুলে ধরছেন, তার মধ্যে আছে ডলারের দাম, ডলারের অভাব, আমদানি সংকোচন নীতি, ঋণের অভাব, বৃহত্তম ঋণের ঊর্ধ্বসীমা, উৎসে কর ধার্য, সুদ ভর্তুকি প্রত্যাহার, ভর্তুকি হ্রাসের ঝুঁকি, করপোরেট কর হ্রাস, ঋণের ওপর উচ্চ সুদ ইত্যাদি। এর বাইরেও অনেক দায়-দাবি আছে।
ওদিকে যাচ্ছি না। তবে ঠিক এই মুহূর্তে বেশি শোরগোল হচ্ছে ঋণের ওপর উচ্চহারের সুদ নিয়ে। তাঁরা বলছেন, ঋণের ওপর সুদের হার মারাত্মক পর্যায়ে উঠেছে। এটা সহ্যসীমার বাইরে। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। প্রতিযোগিতার ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। বাজারে টেকা যাচ্ছে না। উচ্চ উৎপাদন খরচে বিক্রয়মূল্য বেড়ে যাচ্ছে। এই মূল্যে ক্রেতা নেই—দেশে অথবা বিদেশে। সুদব্যয় (ইন্টারেস্ট এক্সপেন্ডিচার) এত বেড়েছে যে ব্যাংকে ঋণের বোঝা বেড়ে গেছে। ঋণের কিস্তি অনেক বেড়েছে, যা পরিশোধ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেক শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী খেলাপি হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। এদিকে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির ফলে মালের আমদানি খরচ বেড়েছে, এর ওপর শুল্ক-কর বৃদ্ধি পেয়েছে, ভ্যাট বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বাভাবিক কারণেই ১০০ টাকা ঋণে যে কাজ হতো, এখন তাতে লাগছে ১৫০ টাকা। অথচ ঋণের পরিমাণ বাড়াতে ব্যাংক রাজি নয়। বড় বড় ঋণগ্রহীতাকে বলা হয়েছে আর কোনো নতুন ঋণ দেওয়া হবে না। যতটুকু পরিশোধ হবে, ততটুকুই আবার পাওয়া যাবে, এর বেশি নয়। এতে বড় বড় গ্রাহক আছেন বিপদে।
এসব সমস্যা নিয়ে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা ছুটছেন বাংলাদেশ ব্যাংকে, ছুটছেন মন্ত্রীর কাছে। বসছেন নিজেরা—পথ কী তাহলে? গ্যাসসংকট, বিদ্যুৎসংকট ও মূল্যবৃদ্ধি, ডলারের অভাব, ঋণের অভাব, সুদের হার বৃদ্ধি—তাহলে কি ব্যবসা বন্ধ করতে হবে? বড় কঠিন প্রশ্নই বটে। সমাধান কী, তা কেউ জানে না—সবাই প্রত্যাশা করে আছে একটা ‘মুস্তফা কামাল মার্কা’ বাজেট নয়, একটা বাস্তববাদী বাজেটের জন্য। এটা কি হবে? ঐতিহাসিক ৭ জুন সামনে রেখে এই প্রশ্ন। আসি তাহলে ঋণের ওপর সুদের হারের ইস্যুতে।
আমাদের সবারই হয়তো মনে আছে, স্বাধীনতা-উত্তরকালে আমানত ও ঋণের ওপর সুদের হার নির্ধারণ করত কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই হার ব্যাংকভেদে। এতে প্রতিযোগিতা বিঘ্নিত হতো। বাজার অর্থনীতির নীতি লঙ্ঘিত হতো—এ কথা বলে ১৯৯০-৯৫-এর দিকে সুদের হার নির্ধারণের কাজ ছেড়ে দেওয়া হয় নিজ নিজ ব্যাংকের বোর্ডের কাছে। ঋণ শ্রেণিবদ্ধকরণ (ক্ল্যাসিফিকেশন) ইত্যাদি ইস্যুও ছেড়ে দেওয়া হয় ব্যাংকের কাছে। ফল যে খুব বেশি ভালো হয়, তা বলা যাবে না। তবু মোটামুটি চলছিল। হঠাৎ এলেন এক অ্যাকাউন্ট্যান্ট অর্থমন্ত্রী, ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। তিনি অনেক কথা বলে এক হোটেলে বসে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ঠিক করে দিলেন সুদের হার। আমানতের ওপর ৬ শতাংশ সুদ হবে সর্বোচ্চ। ঋণের ওপর হবে ৯ শতাংশ; যা পরিচিতি পেল ‘নয়-ছয়’ সুদনীতি হিসেবে। ‘নয়-ছয়’ কী, তা সবারই জানা। বলা হলো, ব্যবসায় খরচ কমবে, প্রতিযোগিতা ভালো হবে। বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়বে, কর্মসংস্থান হবে। পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরে আসবে। সরকারের রাজস্ব বাড়বে। কিন্তু এতে যে বাজার অর্থনীতি বিসর্জিত হলো, তা মুস্তফা কামালের বিবেচনায় ছিল না। শুধু তা-ই নয়, তিনি ঋণ পুনঃতফসিলীকরণ জাতীয় সব নীতিতে ঘন ঘন পরিবর্তন এনে ঋণশৃঙ্খলায় আনেন এক বিপর্যয়। আমানতকারীরা নিরুৎসাহিত। সঞ্চয়পত্র বন্ধ হয় হয়। দেশে সঞ্চয় হয় নিরুৎসাহিত। নীতি হয়ে যায় যেন ‘ঋণ করেই খাও সবাই’। হঠাৎ চলে এল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)—আমাদের উদ্ধারকর্তা।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, চীন থেকে আসা করোনা বালাইয়ের কঠিন প্রেক্ষাপটে আমরা পড়ে যাই এক বড় সংকটে। সংকট থেকে উত্তরণে ‘আইএমএফের’ পথ সোজা। রোগনির্বিশেষে, দেশনির্বিশেষে, অর্থনীতির স্তরনির্বিশেষে, সামাজিক কাঠামোনির্বিশেষে তাদের ওষুধ কয়েকটা—সবকিছু ঠিক করবে বাজার। মার্কেটই হবে নিয়ন্তা। কোনো ভর্তুকি চলবে না। তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ, সার কোনো কিছুতেই থাকতে পারবে না ভর্তুকি। ডলারের দাম কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঠিক করবে না। এর দাম নির্ধারিত হবে খোলাবাজারে। সুদের হার ঠিক হবে বাজারে, চাহিদা-সরবরাহের ভিত্তিতে। কোনো হস্তক্ষেপ চলবে না। কথা একটাই, ‘বাজার অর্থনীতি’ খোলাবাজার। কে মরল, কে বাঁচল, তা কথা নয়। বাজার থাকবে। ক্যাশলেস সোসাইটি হবে। লোকের ক্রয়ক্ষমতা নেই। তাদের ক্রেডিট কার্ড দেওয়া হবে। ঋণ করো, ঘি খাও। জমি কেনো, ফ্ল্যাট কেনো, আসবাব কেনো, খাওয়া-দাওয়া করো—এই হচ্ছে ক্রেডিট কার্ড। ভোগী জাতি হও, আমেরিকার মতো। ধনী হও তাদের মতো। যথা পরামর্শ তথা কাজ। শত হোক ডলার রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন থেকে নেমে এসেছে ২০ বিলিয়ন ডলারে। বাইরের ঋণ ও সাহায্য সেভাবে নেই। এরই মধ্যে মাত্র ৪ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলারের ঋণ দেবে আইএমএফ। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি আমাদের। কত বড় বড় পারফরম্যান্স আমাদের। না, তাতে কিছু হবে না। ভর্তুকি তোলো। সুদনীতি বাজারভিত্তিক করো। ডলারের দাম বাজারের কাছে ছাড়ো। তালুকদার সাহেবের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এরই মধ্যে ‘ধরি মাছ, না ছুঁই পানি’ নীতির অধীনে ধীরে ধীরে এগোচ্ছিল।
ডলারের দাম কিছুটা নির্ধারণ করে বাকিটা বাজারের কাছে ছেড়ে দেয়। এতে ডলারের দাম বাড়তে থাকে। বাড়ে ভালোভাবেই। সুদের হারেরও তা-ই। তিনি আবিষ্কার করেন ‘স্মার্ট সুদনীতি’—যেন ‘স্মার্ট’ বাংলাদেশের একটি প্রতিফলন। ‘স্মার্ট’ সুদনীতি কী? সিক্স মান্থস মুভিজ অ্যাভারেজ রেট অব ইন্টারেস্ট অন ট্রেজারি বিল’; অর্থাৎ সরকার ট্রেজারি বিলের মাধ্যমে যে ঋণ করে, তার ওপর যে সুদ দেয়, তার ছয় মাসের গড়ে হিসাব হবে সুদের হার। এতে লোনের ওপর, ঋণের ওপর সুদের হার বাড়তে থাকে। উদ্ধারকর্তা এবং আমাদের একশ্রেণির অর্থনীতিবিদের ‘দাদাঠাকুর’ আইএমএফ তাতে সন্তুষ্ট নয়। ছয় মাস যেতে না-যেতেই তালুকদার সাহেবের ‘স্মার্টনীতি’ ‘আনস্মার্ট’ হয়ে পড়ে।
বাতিল হয় স্মার্ট সুদনীতি। এখন চলছে বেশ খোশ মেজাজি ঋণের ওপর সুদনীতি। আবার বারবার বাড়ানো হচ্ছে ‘ব্যাংক রেট’, যাকে আজকাল পোশাকি নামে ডাকা হয় ‘রেপো রেট’ হিসেবে; অর্থাৎ এটা এই রেটে, যে রেটে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ঋণ দেয় প্রয়োজনে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। মূল্যস্ফীতি কমছে না; বরং গ্রামে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৫ শতাংশ। কী মারাত্মক অবস্থা। অথচ এসবই হচ্ছে বাজার অর্থনীতি করার জন্য। এখন বাজার হয়ে যাচ্ছে বেসামাল। বাজার অর্থনীতি আছে—বাজার নেই, ক্রেতা নেই, বিক্রেতা আছে, আর আছে ধনী, অতি ধনী ক্রেতা।
বাজার অর্থনীতিতে এখন, অন্য কথা বাদ, ডলারের দাম এবং ঋণের ওপর সুদের হার গাছের ওপরে। বাংলাদেশ ব্যাংক লজ্জায় বলে ডলারের দাম হবে ১১৭ টাকা (দুই বছর আগেও যা ছিল ৮৫-৮৬ টাকা)। কিন্তু খোলাবাজারে বস্তুটি নেই। জোগাড় হলে এর দাম নাকি হাঁকা হয় ১২০-১২৫। সত্যি মিথ্যা বলতে পারবে সরকারি সংস্থাগুলো এবং ভুক্তভোগীরা। এর ফল কী? এ কথা আর বুঝিয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না। মূল্যস্ফীতি, আমদানিনির্ভর দেশ। সর্বশেষ খবর চলছে চিনি নিয়ে। চিনির ৯৮-৯৯ শতাংশ আমদানি হয়। আমদানি কম, ডলার নেই।
অতএব ‘গাল খাওয়া’ ভারত থেকে সমানে চিনি আসছে ‘দেশপ্রেমিক’ চোরাচালানিরা। ‘দেশপ্রেমিক’ চোরাচালানিদেরকে বন্ধু ‘দেশপ্রেমিক’ হুন্ডিওয়ালারা সাহায্য করছে ডলার দিয়ে। ডলার কোত্থেকে দেয় তারা? দেশের ডলার না থাকতে পারে। কিন্তু প্রভাবশালী হুন্ডিওয়ালারা বেশি দাম দিয়ে বিদেশেই বাংলাদেশি প্রবাসীদের কাছ থেকে ডলার নিয়ে নেয়। তা দিয়ে নানা কায়দায় তারা ভারতীয় চোরাচালানিদের চিনির টাকা পরিশোধ করে। এটাই হচ্ছে আদি ও অকৃত্রিম পন্থা এবং ব্যবসা। স্বাধীনতার আগে এবং পর থেকে এটাই দেশে চলে আসছে।
হুন্ডি ছিল, আছে, থাকবে—যত ‘পণ্ডিতি’ই করা হোক না কেন। এটা একটা অত্যন্ত সংগঠিত, মজবুত ব্যবসা, যা প্রয়োজনের ওপর নির্ভর করে কাজ করে।
ড. আর এম দেবনাথ, সাবেক শিক্ষক, ঢাবি; অর্থনীতি বিশ্লেষক

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পেশ হবে আগামী ৬ জুন। এই মুহূর্তে ব্যবসায়ীদের অভাব-অভিযোগ ও দাবির কোনো শেষ নেই। আবার ‘মিডিয়া রিপোর্ট’ অনুযায়ী, তাঁদের বিরুদ্ধেও অভিযোগের কোনো শেষ নেই। এরই মধ্যে দেখা যাচ্ছে, তাঁরা যে সমস্যাগুলোর কথা তুলে ধরছেন, তার মধ্যে আছে ডলারের দাম, ডলারের অভাব, আমদানি সংকোচন নীতি, ঋণের অভাব, বৃহত্তম ঋণের ঊর্ধ্বসীমা, উৎসে কর ধার্য, সুদ ভর্তুকি প্রত্যাহার, ভর্তুকি হ্রাসের ঝুঁকি, করপোরেট কর হ্রাস, ঋণের ওপর উচ্চ সুদ ইত্যাদি। এর বাইরেও অনেক দায়-দাবি আছে।
ওদিকে যাচ্ছি না। তবে ঠিক এই মুহূর্তে বেশি শোরগোল হচ্ছে ঋণের ওপর উচ্চহারের সুদ নিয়ে। তাঁরা বলছেন, ঋণের ওপর সুদের হার মারাত্মক পর্যায়ে উঠেছে। এটা সহ্যসীমার বাইরে। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। প্রতিযোগিতার ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। বাজারে টেকা যাচ্ছে না। উচ্চ উৎপাদন খরচে বিক্রয়মূল্য বেড়ে যাচ্ছে। এই মূল্যে ক্রেতা নেই—দেশে অথবা বিদেশে। সুদব্যয় (ইন্টারেস্ট এক্সপেন্ডিচার) এত বেড়েছে যে ব্যাংকে ঋণের বোঝা বেড়ে গেছে। ঋণের কিস্তি অনেক বেড়েছে, যা পরিশোধ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেক শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী খেলাপি হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। এদিকে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির ফলে মালের আমদানি খরচ বেড়েছে, এর ওপর শুল্ক-কর বৃদ্ধি পেয়েছে, ভ্যাট বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বাভাবিক কারণেই ১০০ টাকা ঋণে যে কাজ হতো, এখন তাতে লাগছে ১৫০ টাকা। অথচ ঋণের পরিমাণ বাড়াতে ব্যাংক রাজি নয়। বড় বড় ঋণগ্রহীতাকে বলা হয়েছে আর কোনো নতুন ঋণ দেওয়া হবে না। যতটুকু পরিশোধ হবে, ততটুকুই আবার পাওয়া যাবে, এর বেশি নয়। এতে বড় বড় গ্রাহক আছেন বিপদে।
এসব সমস্যা নিয়ে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা ছুটছেন বাংলাদেশ ব্যাংকে, ছুটছেন মন্ত্রীর কাছে। বসছেন নিজেরা—পথ কী তাহলে? গ্যাসসংকট, বিদ্যুৎসংকট ও মূল্যবৃদ্ধি, ডলারের অভাব, ঋণের অভাব, সুদের হার বৃদ্ধি—তাহলে কি ব্যবসা বন্ধ করতে হবে? বড় কঠিন প্রশ্নই বটে। সমাধান কী, তা কেউ জানে না—সবাই প্রত্যাশা করে আছে একটা ‘মুস্তফা কামাল মার্কা’ বাজেট নয়, একটা বাস্তববাদী বাজেটের জন্য। এটা কি হবে? ঐতিহাসিক ৭ জুন সামনে রেখে এই প্রশ্ন। আসি তাহলে ঋণের ওপর সুদের হারের ইস্যুতে।
আমাদের সবারই হয়তো মনে আছে, স্বাধীনতা-উত্তরকালে আমানত ও ঋণের ওপর সুদের হার নির্ধারণ করত কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই হার ব্যাংকভেদে। এতে প্রতিযোগিতা বিঘ্নিত হতো। বাজার অর্থনীতির নীতি লঙ্ঘিত হতো—এ কথা বলে ১৯৯০-৯৫-এর দিকে সুদের হার নির্ধারণের কাজ ছেড়ে দেওয়া হয় নিজ নিজ ব্যাংকের বোর্ডের কাছে। ঋণ শ্রেণিবদ্ধকরণ (ক্ল্যাসিফিকেশন) ইত্যাদি ইস্যুও ছেড়ে দেওয়া হয় ব্যাংকের কাছে। ফল যে খুব বেশি ভালো হয়, তা বলা যাবে না। তবু মোটামুটি চলছিল। হঠাৎ এলেন এক অ্যাকাউন্ট্যান্ট অর্থমন্ত্রী, ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। তিনি অনেক কথা বলে এক হোটেলে বসে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ঠিক করে দিলেন সুদের হার। আমানতের ওপর ৬ শতাংশ সুদ হবে সর্বোচ্চ। ঋণের ওপর হবে ৯ শতাংশ; যা পরিচিতি পেল ‘নয়-ছয়’ সুদনীতি হিসেবে। ‘নয়-ছয়’ কী, তা সবারই জানা। বলা হলো, ব্যবসায় খরচ কমবে, প্রতিযোগিতা ভালো হবে। বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়বে, কর্মসংস্থান হবে। পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরে আসবে। সরকারের রাজস্ব বাড়বে। কিন্তু এতে যে বাজার অর্থনীতি বিসর্জিত হলো, তা মুস্তফা কামালের বিবেচনায় ছিল না। শুধু তা-ই নয়, তিনি ঋণ পুনঃতফসিলীকরণ জাতীয় সব নীতিতে ঘন ঘন পরিবর্তন এনে ঋণশৃঙ্খলায় আনেন এক বিপর্যয়। আমানতকারীরা নিরুৎসাহিত। সঞ্চয়পত্র বন্ধ হয় হয়। দেশে সঞ্চয় হয় নিরুৎসাহিত। নীতি হয়ে যায় যেন ‘ঋণ করেই খাও সবাই’। হঠাৎ চলে এল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)—আমাদের উদ্ধারকর্তা।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, চীন থেকে আসা করোনা বালাইয়ের কঠিন প্রেক্ষাপটে আমরা পড়ে যাই এক বড় সংকটে। সংকট থেকে উত্তরণে ‘আইএমএফের’ পথ সোজা। রোগনির্বিশেষে, দেশনির্বিশেষে, অর্থনীতির স্তরনির্বিশেষে, সামাজিক কাঠামোনির্বিশেষে তাদের ওষুধ কয়েকটা—সবকিছু ঠিক করবে বাজার। মার্কেটই হবে নিয়ন্তা। কোনো ভর্তুকি চলবে না। তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ, সার কোনো কিছুতেই থাকতে পারবে না ভর্তুকি। ডলারের দাম কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঠিক করবে না। এর দাম নির্ধারিত হবে খোলাবাজারে। সুদের হার ঠিক হবে বাজারে, চাহিদা-সরবরাহের ভিত্তিতে। কোনো হস্তক্ষেপ চলবে না। কথা একটাই, ‘বাজার অর্থনীতি’ খোলাবাজার। কে মরল, কে বাঁচল, তা কথা নয়। বাজার থাকবে। ক্যাশলেস সোসাইটি হবে। লোকের ক্রয়ক্ষমতা নেই। তাদের ক্রেডিট কার্ড দেওয়া হবে। ঋণ করো, ঘি খাও। জমি কেনো, ফ্ল্যাট কেনো, আসবাব কেনো, খাওয়া-দাওয়া করো—এই হচ্ছে ক্রেডিট কার্ড। ভোগী জাতি হও, আমেরিকার মতো। ধনী হও তাদের মতো। যথা পরামর্শ তথা কাজ। শত হোক ডলার রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন থেকে নেমে এসেছে ২০ বিলিয়ন ডলারে। বাইরের ঋণ ও সাহায্য সেভাবে নেই। এরই মধ্যে মাত্র ৪ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলারের ঋণ দেবে আইএমএফ। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি আমাদের। কত বড় বড় পারফরম্যান্স আমাদের। না, তাতে কিছু হবে না। ভর্তুকি তোলো। সুদনীতি বাজারভিত্তিক করো। ডলারের দাম বাজারের কাছে ছাড়ো। তালুকদার সাহেবের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এরই মধ্যে ‘ধরি মাছ, না ছুঁই পানি’ নীতির অধীনে ধীরে ধীরে এগোচ্ছিল।
ডলারের দাম কিছুটা নির্ধারণ করে বাকিটা বাজারের কাছে ছেড়ে দেয়। এতে ডলারের দাম বাড়তে থাকে। বাড়ে ভালোভাবেই। সুদের হারেরও তা-ই। তিনি আবিষ্কার করেন ‘স্মার্ট সুদনীতি’—যেন ‘স্মার্ট’ বাংলাদেশের একটি প্রতিফলন। ‘স্মার্ট’ সুদনীতি কী? সিক্স মান্থস মুভিজ অ্যাভারেজ রেট অব ইন্টারেস্ট অন ট্রেজারি বিল’; অর্থাৎ সরকার ট্রেজারি বিলের মাধ্যমে যে ঋণ করে, তার ওপর যে সুদ দেয়, তার ছয় মাসের গড়ে হিসাব হবে সুদের হার। এতে লোনের ওপর, ঋণের ওপর সুদের হার বাড়তে থাকে। উদ্ধারকর্তা এবং আমাদের একশ্রেণির অর্থনীতিবিদের ‘দাদাঠাকুর’ আইএমএফ তাতে সন্তুষ্ট নয়। ছয় মাস যেতে না-যেতেই তালুকদার সাহেবের ‘স্মার্টনীতি’ ‘আনস্মার্ট’ হয়ে পড়ে।
বাতিল হয় স্মার্ট সুদনীতি। এখন চলছে বেশ খোশ মেজাজি ঋণের ওপর সুদনীতি। আবার বারবার বাড়ানো হচ্ছে ‘ব্যাংক রেট’, যাকে আজকাল পোশাকি নামে ডাকা হয় ‘রেপো রেট’ হিসেবে; অর্থাৎ এটা এই রেটে, যে রেটে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ঋণ দেয় প্রয়োজনে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। মূল্যস্ফীতি কমছে না; বরং গ্রামে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৫ শতাংশ। কী মারাত্মক অবস্থা। অথচ এসবই হচ্ছে বাজার অর্থনীতি করার জন্য। এখন বাজার হয়ে যাচ্ছে বেসামাল। বাজার অর্থনীতি আছে—বাজার নেই, ক্রেতা নেই, বিক্রেতা আছে, আর আছে ধনী, অতি ধনী ক্রেতা।
বাজার অর্থনীতিতে এখন, অন্য কথা বাদ, ডলারের দাম এবং ঋণের ওপর সুদের হার গাছের ওপরে। বাংলাদেশ ব্যাংক লজ্জায় বলে ডলারের দাম হবে ১১৭ টাকা (দুই বছর আগেও যা ছিল ৮৫-৮৬ টাকা)। কিন্তু খোলাবাজারে বস্তুটি নেই। জোগাড় হলে এর দাম নাকি হাঁকা হয় ১২০-১২৫। সত্যি মিথ্যা বলতে পারবে সরকারি সংস্থাগুলো এবং ভুক্তভোগীরা। এর ফল কী? এ কথা আর বুঝিয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না। মূল্যস্ফীতি, আমদানিনির্ভর দেশ। সর্বশেষ খবর চলছে চিনি নিয়ে। চিনির ৯৮-৯৯ শতাংশ আমদানি হয়। আমদানি কম, ডলার নেই।
অতএব ‘গাল খাওয়া’ ভারত থেকে সমানে চিনি আসছে ‘দেশপ্রেমিক’ চোরাচালানিরা। ‘দেশপ্রেমিক’ চোরাচালানিদেরকে বন্ধু ‘দেশপ্রেমিক’ হুন্ডিওয়ালারা সাহায্য করছে ডলার দিয়ে। ডলার কোত্থেকে দেয় তারা? দেশের ডলার না থাকতে পারে। কিন্তু প্রভাবশালী হুন্ডিওয়ালারা বেশি দাম দিয়ে বিদেশেই বাংলাদেশি প্রবাসীদের কাছ থেকে ডলার নিয়ে নেয়। তা দিয়ে নানা কায়দায় তারা ভারতীয় চোরাচালানিদের চিনির টাকা পরিশোধ করে। এটাই হচ্ছে আদি ও অকৃত্রিম পন্থা এবং ব্যবসা। স্বাধীনতার আগে এবং পর থেকে এটাই দেশে চলে আসছে।
হুন্ডি ছিল, আছে, থাকবে—যত ‘পণ্ডিতি’ই করা হোক না কেন। এটা একটা অত্যন্ত সংগঠিত, মজবুত ব্যবসা, যা প্রয়োজনের ওপর নির্ভর করে কাজ করে।
ড. আর এম দেবনাথ, সাবেক শিক্ষক, ঢাবি; অর্থনীতি বিশ্লেষক

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৯ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পেশ হবে আগামী ৬ জুন। এই মুহূর্তে ব্যবসায়ীদের অভাব-অভিযোগ ও দাবির কোনো শেষ নেই। আবার ‘মিডিয়া রিপোর্ট’ অনুযায়ী, তাঁদের বিরুদ্ধেও অভিযোগের কোনো শেষ নেই। এরই মধ্যে দেখা যাচ্ছে, তাঁরা যে সমস্যাগুলোর কথা তুলে ধরছেন, তার মধ্যে আছে ডলারের দাম, ডলারের অভাব, আমদানি সংকোচন
২২ মে ২০২৪
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পেশ হবে আগামী ৬ জুন। এই মুহূর্তে ব্যবসায়ীদের অভাব-অভিযোগ ও দাবির কোনো শেষ নেই। আবার ‘মিডিয়া রিপোর্ট’ অনুযায়ী, তাঁদের বিরুদ্ধেও অভিযোগের কোনো শেষ নেই। এরই মধ্যে দেখা যাচ্ছে, তাঁরা যে সমস্যাগুলোর কথা তুলে ধরছেন, তার মধ্যে আছে ডলারের দাম, ডলারের অভাব, আমদানি সংকোচন
২২ মে ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৯ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পেশ হবে আগামী ৬ জুন। এই মুহূর্তে ব্যবসায়ীদের অভাব-অভিযোগ ও দাবির কোনো শেষ নেই। আবার ‘মিডিয়া রিপোর্ট’ অনুযায়ী, তাঁদের বিরুদ্ধেও অভিযোগের কোনো শেষ নেই। এরই মধ্যে দেখা যাচ্ছে, তাঁরা যে সমস্যাগুলোর কথা তুলে ধরছেন, তার মধ্যে আছে ডলারের দাম, ডলারের অভাব, আমদানি সংকোচন
২২ মে ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৯ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পেশ হবে আগামী ৬ জুন। এই মুহূর্তে ব্যবসায়ীদের অভাব-অভিযোগ ও দাবির কোনো শেষ নেই। আবার ‘মিডিয়া রিপোর্ট’ অনুযায়ী, তাঁদের বিরুদ্ধেও অভিযোগের কোনো শেষ নেই। এরই মধ্যে দেখা যাচ্ছে, তাঁরা যে সমস্যাগুলোর কথা তুলে ধরছেন, তার মধ্যে আছে ডলারের দাম, ডলারের অভাব, আমদানি সংকোচন
২২ মে ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৯ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫