Ajker Patrika

নাব্যসংকট, হেঁটে নদী পার

ফুলছড়ি (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০২১, ১৩: ১৭
নাব্যসংকট, হেঁটে নদী পার

গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনায় নাব্যতাসংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। প্রতিবছর নদী খনন না করায় বালাসী-বাহাদুরাবাদ, তিস্তামুখ-বাহাদুরাবাদ ঘাটসহ বিভিন্ন নৌপথে জমেছে বালুর স্তর। জেগে উঠেছে ছোট-বড় দুই শতাধিক চর ও ডুবোচর। বিভিন্ন পয়েন্টে আটকে যাচ্ছেন যাত্রী ও পণ্যবাহী ইঞ্জিনচালিত নৌকা। হেঁটে নদী পার হচ্ছে মানুষ। তবে, নদী খনন করে নাব্যতাসংকট দূর করার পরিকল্পনার কথা জানান গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মতিন। তিনি বলেন, অনেক মানুষ চরে বসবাস করে। ২৫৬টি চরাঞ্চলে প্রায় চার লাখ লোক বসবাস করে। এখানে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন হয়। এসব ফসল বাজারজাত করার ক্ষেত্রে নদীপথে দ্রুত ড্রেজিং প্রয়োজন। বিআইডব্লিউটিএ নদী খননে একটি প্রকল্প নিয়েছে, তা বাস্তবায়ন হলে এই নাব্যতাসংকট দূর হবে বলে জানান তিনি।

জানা যায়, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার প্রায় ২৫টি নৌঘাট ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্ব চ্যানেল জিগাবাড়ি থেকে মইন্যা এবং পশ্চিম চ্যানেল কামারজানি নৌবন্দর থেকে জামিরা পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ৫০ কিলোমিটার নদীজুড়ে জেগে উঠেছে ছোট-বড় দুই শতাধিক চর ও ডুবোচর। ফলে গত এক সপ্তাহ ধরে ফুলছড়ি উপজেলার অভ্যন্তরীণ নৌপথে ফুলছড়ি-বালাসী, তিস্তামুখঘাট-বাহাদুরাবাদ, গজারিয়া-গলনা, সিংড়িয়া-ঝানঝাইর, গুনভরি-কালাসোনা, গজারিয়া-ফুলছড়ি এবং আন্তজেলা নৌপথ ফুলছড়িঘাট-গুঠাইল, সৈয়দপুর-রাজীবপুর, তিস্তামুখঘাট-আমতলী এবং তিস্তামুখঘাট-সারিয়াকান্দি নৌপথে নৌকা চলাচল বন্ধ রয়েছে।

তিস্তামুখ নৌঘাটের ইজারাদার শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘নদীপথে ঘুরে ঘুরে নৌকা চলাচল করায় সময় লাগছে বেশি। বিভিন্ন পথে নৌকা চলাচল বন্ধ থাকায় লোকসান গুনতে হবে।’

নৌকার মাঝি জসিজল মিয়া বলেন, ‘ফুলছড়ির তিস্তামুখঘাট থেকে বর্ষা মৌসুমে বাহাদুরাবাদ ঘাটে যাত্রী পৌঁছাতে সময় লাগত দুই ঘণ্টা। নদের বিভিন্ন স্থানে চর জেগে ওঠায় এখন সময় লাগছে বেশি। তারপর চরে নৌকা আটকে গেলে তিন-চার ঘণ্টা সময় পার হয়। এ কারণে আমরা নৌকা চলাচল বন্ধ করে দিয়েছি।’

বালাসীঘাটের নৌকার মালিক আজিবর হোসেন বলেন, ‘প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমের শুরু থেকেই নদীর নাব্যতাসংকট চরমে ওঠে। ফলে বন্ধ হয়ে যায় নৌ চলাচল। এবারও একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। নদীতে পানি না থাকায় অনেক বেশি পথ ঘুরে নৌকাগুলোকে গন্তব্যে পৌঁছতে হচ্ছে। এতে খরচ ও সময় দুটি ব্যয়ই হচ্ছে বেশি।’

ফুলছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর গফুর মণ্ডল জানান, বর্তমানে নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে হ্রাস পাওয়ায় নদীতে জেগে উঠেছে অসংখ্য চর-ডুবোচর। এখন নদীতে পানি একেবারেই কমে গেছে। বর্ষা মৌসুম না আসা পর্যন্ত এগুলোর পরিবর্তন হবে না।

তিনি আরও জানান, যেখানে নদীতে বড় বড় ঢেউ থাকার কথা, সেখানে জেগে উঠেছে চর। খনন না করায় নদীর এ অবস্থা হয়েছে। ফলে অর্ধেকেরও বেশি রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

ফুলছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান জি এম সেলিম পারভেজ জানান, নাব্যতাসংকট কমাতে গেলে দ্রুত ড্রেজিং করা প্রয়োজন। নদের নাব্যতা ফিরিয়ে এলে এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে দুর্ভোগ কমে আসবে। নদী সঠিকভাবে ড্রেজিং করে নাব্যতা ঠিক রাখলে নৌকা ব্যবসায়ীরা টিকে থাকতে পারবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত