Ajker Patrika

রাজধানীর যোগাযোগ অবকাঠামো: অনিশ্চয়তায় সব বড় প্রকল্প

সৌগত বসু, ঢাকা
আপডেট : ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৬: ৪৪
রাজধানীর যোগাযোগ অবকাঠামো: অনিশ্চয়তায় সব বড় প্রকল্প

রাজধানী ঢাকাকে ঘিরে যোগাযোগব্যবস্থা সহজতর করতে ১৫টি বড় প্রকল্প নিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার। এসব প্রকল্পের মধ্যে এখন পর্যন্ত তিনটি পুরোপুরি ও আংশিক চালু করা সম্ভব হয়েছে। বাকিগুলোর কোনোটি নির্মাণাধীন, কোনোটি সমীক্ষা পর্যায়ে, আবার কোনোটি সমীক্ষা শেষে অর্থায়নের অভাবে থমকে আছে। এরই মধ্যে গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের ঘটনায় অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে তাঁর আমলে নেওয়া এসব প্রকল্প।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের আওতায় বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলো পর্যালোচনার জন্য ১৫ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সভায় চলমান প্রকল্পের মেয়াদ না বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন হলে অনেক প্রকল্প মাঝপথে থেমে যাবে এবং অনিশ্চয়তায় পড়বে। 

ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) সূত্রমতে, ঢাকায় এখন পর্যন্ত ছয় ধরনের যোগাযোগকেন্দ্রিক প্রকল্প চলমান রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি ম্যাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) বা মেট্রোরেল, দুটি বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) ছয়টি এক্সপ্রেসওয়ে, আটটি রেডিয়াল সড়ক, তিনটি লিংক রোডসহ ট্রান্সপোর্ট হাব এবং বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রকল্প। এই প্রকল্পগুলোর বেশির ভাগই একাধিকবার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। বর্ধিত মেয়াদ অনুযায়ী ২০২৬ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে শেষ করার কথা এসব প্রকল্প। কিন্তু বাস্তবায়নের যে বাস্তবচিত্র, তাতে প্রকল্পগুলোর কোনোটিই নির্ধারিত সময়ে শেষ হবে না। 

জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, আদতে একসঙ্গে এত প্রকল্প বাস্তবায়ন করার মতো সক্ষমতা নেই। প্রকল্প মানে শুধু আর্থিক সক্ষমতার বিষয় নয়। এখানে টেকনিক্যাল সক্ষমতাও থাকতে হবে। দাতা সংস্থা অর্থায়ন করবে কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নের দায় সরকারি প্রতিষ্ঠানের। এসব প্রকল্পের যে টাইমলাইন আছে, তা শুনতে ভালো লাগে, তবে এগুলো বাস্তবায়ন করার মতো সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে। 

কোন প্রকল্পের কী অবস্থা
মেট্রোরেল: রাজধানীকে ঘিরে পাঁচটি মেট্রোরেল নির্মাণের প্রকল্প নেয় আওয়ামী লীগ সরকার। এর মধ্যে কেবল একটিতে ট্রেন চলছে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ‘এমআরটি-৬ লাইন’ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন শেষে ২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর খুলে দেওয়া হয়। বাকি চারটি সমীক্ষা ও ভূমি উন্নয়ন পর্যায়ে আছে। 

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর-খিলক্ষেত-কুড়িল-যমুনা ফিউচার পার্ক-বাড্ডা-রামপুরা-মালিবাগ-রাজারবাগ-কমলাপুর এবং কুড়িল থেকে কাঞ্চন সেতুর পশ্চিম পাশ পর্যন্ত এমআরটি লাইন-১। ৫২ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজ ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন করা হয়। এটি ২০২৭ সালে শেষ করার সময় ধরা হয়েছে। এটির ভূমি উন্নয়নকাজ চলমান রয়েছে। 

মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) সূত্রে জানা যায়, গাবতলী-বেড়িবাঁধ-মোহাম্মদপুর-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-ফুলবাড়িয়া-কমলাপুর নিয়ে এমআরটি লাইন-২। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পটির সমীক্ষা করার জন্য উন্নয়ন সহযোগী খুঁজছে ডিএমটিসিএল। প্রকল্পটির মেয়াদ ২০৩০ সাল পর্যন্ত।  

কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত নির্মাণ হবে ‘এমআরটি লাইন-৪’। এই প্রকল্পের সমীক্ষার কাজ করছে কোরীয় কোম্পানি দোহা ইঞ্জিনিয়ারিং। এটিও ২০৩০ সালের মধ্যে শেষ করার কথা। 

হেমায়েতপুর-গাবতলী-টেকনিক্যাল-মিরপুর-কচুক্ষেত-বনানী-গুলশান-ভাটারা পর্যন্ত থাকছে এমআরটি লাইন-৫-এর উত্তরাংশে। এই প্রকল্পের ভূমি উন্নয়নকাজ চলমান রয়েছে। এটি ২০২৮ সালের মধ্যে শেষ করার কথা। আর প্রকল্পটির দক্ষিণাংশে থাকছে গাবতলী থেকে ধানমন্ডি-বসুন্ধরা সিটি-হাতিরঝিল হয়ে দাসেরকান্দি পর্যন্ত রেলপথ। এই অংশের সমীক্ষা ও নকশার ভিত্তিতে বিস্তারিত প্রকল্প প্রস্তাবনার (ডিপিপি) জন্য পরিকল্পনা কমিশনে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এটিও ২০২৮ সালে শেষ করার কথা। 

মেট্রোরেলের প্রকল্পগুলো ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রউফ আজকের পত্রিকাকে বলেন, সব প্রকল্পের আলাদাভাবে কাজ চলমান আছে। লাইন-৫-এর দক্ষিণাংশ নিয়ে ২১ অক্টোবর সভা আছে। সেখানে সার্বিক বিষয়ে আলোচনা হবে। তবে এটির ক্ষেত্রে কাজ ১ বছর পিছিয়ে গেছে। রুট বিন্যাস নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। 

মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, প্রকল্পগুলো নিয়ে উন্নয়ন সহযোগীর সঙ্গে কোনো সমস্যা নেই। তবে ব্যয় না বাড়ানো ও সময়ক্ষেপণ না করার নির্দেশনা দেওয়া আছে। 

ছবি: আজকের পত্রিকাদুই বিআরটি প্রকল্প 
গাজীপুর থেকে ঝিলমিল পর্যন্ত বিআরটি লাইন-৩ প্রকল্পে শুধু এয়ারপোর্ট পর্যন্ত কাজ হচ্ছে। এটির অগ্রগতি ৯৭ শতাংশ। প্রকল্প সূত্র বলছে, ২০১২ সালে প্রকল্প নেওয়া হলেও কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। ছয়বার মেয়াদ বাড়িয়ে আগামী ডিসেম্বরে শেষ করার কথা। পরিকল্পনায় বড় ত্রুটি থাকায় প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাই একে ‘সিক প্রজেক্ট’ বা রুগ্‌ণ প্রকল্প আখ্যা দিচ্ছেন। 

এদিকে কাপাসিয়া-নারায়ণগঞ্জ নিয়ে বিআরটি লাইন-৭। ২০১৯ সালে এই প্রকল্পের সমীক্ষা শুরু হয়। বর্তমানে সমীক্ষা শেষ হলেও আর কোনো অগ্রগতি নেই। ডিটিসিএ সূত্র বলছে, এই প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো উন্নয়ন সহযোগী পাওয়া যায়নি। 

তিনটি রিংরোড প্রকল্প 
যানজট নিরসনে রাজধানীকে ঘিরে তিনটি বৃত্তাকার সড়ক (রিং রোড) নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে আউটার রিং রোড, ইনার রিং রোড ও মিডল রিং রোড। 
২০২০ সালের জুলাইয়ে আউটার রিং রোডের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শুরু হয়। গত বছরের ডিসেম্বরে এই সমীক্ষা শেষ হওয়ার কথা থাকলেও আরও ছয় মাস সময় বাড়িয়ে এ বছর শেষ হয়েছে। আউটার ও মিডল রিং রোড নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। ইনার রিং রোড করছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ এবং সেতু কর্তৃপক্ষ। 

ডিটিসিএ বলছে, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) অধীনে আউটার রিং রোড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে দুই পর্বে। প্রথমে ২০২৮ সালের মধ্যে এই সড়ক চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও তা হচ্ছে না। 

ঢাকা আউটার রিং রোডের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্পের ব্যবস্থাপক ডি এম গিয়াস মালিক বলেন, তাঁরা সমীক্ষা শেষ করেছেন। সমীক্ষার রিপোর্ট অন্যান্য সংস্থার কাছে দেওয়া হয়েছে। 

ইনার রিং রোড প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ২৫ দশমিক ২৪ কিলোমিটার রাস্তাকে মহাসড়কে উন্নীত করতে ব্যয় হবে ২ হাজার ৭১৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় ১০৭ কোটি টাকার বেশি। ছয় বছর আগে গাবতলী-বাবুবাজার-কদমতলী অংশের সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা ও চূড়ান্ত নকশা করেছে সওজ। এর একটি অংশ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করবে, যাতে খরচ হবে ৯৯৮ কোটি টাকা। প্রকল্পের নথি অনুযায়ী, ২০২৭ সালের জুনে এটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে। 

অন্যদিকে হেমায়েতপুর-কালাকান্দি-৩য় শীতলক্ষ্যা সেতু-মদনপুর-ভুলতা (ঢাকা বাইপাস হয়ে)-কড্ডা (গাজীপুর)-বাইপাইল (ঢাকা-ইপিজেড)-হেমায়েতপুর নিয়ে মিডল রিং রোড। এই প্রকল্পের ঢাকা বাইপাস অংশের কাজ চলছে। 

ছবি: আজকের পত্রিকাকাজ বন্ধ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি নেওয়া হয় ২০০৯ সালে। প্রকল্পের মূল নির্মাণকাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। আনুষ্ঠানিক নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি। গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় কাওলা থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত এবং পরে ২০ মার্চ কারওয়ান বাজার (এফডিসি) এক্সপ্রেসওয়ের অংশ যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। কাওলা থেকে শুরু হয়ে কুড়িল, বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও, মগবাজার, কমলাপুর, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী এলাকায় গিয়ে শেষ হবে এ প্রকল্প। তবে অর্থসংকটে দুই মাস ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে এই প্রকল্পের। প্রকল্পটির গত ছয় মাসে মাত্র ৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে ৭৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। 

প্রকল্প সূত্র বলছে, বিদেশি তিন কোম্পানির বিরোধে বন্ধ হয়েছে এক্সপ্রেসওয়ের কাজ। বিদেশি কোম্পানিগুলো নিজেদের মধ্যে বিরোধের কারণে আদালতে মামলা করায় কাজের গতি থেমে গেছে। কবে নাগাদ কাজ আবার শুরু হবে, তা বলতে পারছে না বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। 

প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম এস আকতার বলেন, বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান এফডিইই এর শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে শেয়ার হস্তান্তরসংক্রান্ত জটিলতায় এ প্রকল্পে চায়নিজ দুটি ব্যাংক থেকে ঋণের কিস্তি ছাড় বন্ধ রয়েছে। এ জন্য হাতিরঝিল এলাকায় প্রকল্পের কাজ সীমিত পরিসরে চলমান রয়েছে। 

৯ বছর ধরে কাজ চলমান রয়েছে ২৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের। এটির কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে। ঋণ সহায়তায় জটিলতার কারণে কাজ শুরু করতে কয়েক বছর দেরি হয়। প্রকল্প সূত্র বলছে, কাজ ২০১৭ সালে শুরু হলেও মূলত ২০২২ সালে এটির গতি পায়। এটির নির্মাণকাজ শেষ হবে ২০২৭ সালের ২৬ ডিসেম্বর। 

এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট এক্সপ্রেসওয়ে, যা পরে ঢাকা ইস্ট-ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হিসেবে পরিচিত। ৩৯ দশমিক ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। 

ট্রান্সপোর্টেশন হাব ও রুট রেশনালাইজেশন 
ঢাকাকে ঘিরে ২১টি ট্রান্সপোর্টেশন হাব করার কথা রয়েছে। তবে সেগুলো এখনো কাগজ-কলমে সীমাবদ্ধ। ঢাকা শহরের চারপাশের বৃত্তাকার জলপথ নির্মাণের কথা থাকলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। রাজধানীকে ঘিরে বৃত্তাকার রেলপথ নির্মাণের জন্য ইতিমধ্যে ২৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকায় প্রকল্পের সমীক্ষা করা হয়েছে। তবে এর পর আর কাজ এগোয়নি। ঢাকার গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ও যাত্রীভোগান্তি কমাতে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে যাত্রা শুরু হয় ঢাকা নগর পরিবহনের। পরিকল্পনা ছিল ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ রাজধানীকে একটি কোম্পানির আওতায় আনা। তিন বছর পর হলেও এই পরিকল্পনা এখনো আলোর মুখ দেখেনি। 

এই প্রকল্পের পরিচালক ধ্রুব আলম বলেন, তাঁরা রুট রেশনালাইজেশন কমিটির অধীনে সভা করেছেন। সভায় বাসমালিকদের বক্তব্য শোনা হয়েছে। সেখানে তাঁরা (বাসমালিক) অনেক রুট নতুন করে বিন্যাস করতে বলেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত