মহিউদ্দিন খান মোহন
‘আমি এক পাহলোয়ান, ঘাড় মোর ত্যাড়া/লাইত্থাইয়া ভাঙি আমি পাটখড়ির বেড়া/কুস্তি লড়তে গিয়ে পড়ে যাই তলে/অমনি মুতিয়া দেই নিজ বাহুবলে’।
ছেলেবেলায় শোনা একটি ব্যঙ্গাত্মক ছড়া। এর মর্মার্থ ব্যাখ্যা করে বলার দরকার আছে বলে মনে হয় না। হামবড়া ভাব প্রকাশ করে যাঁরা সমাজে কল্কে পেতে চান, ছড়াটি তাঁদের ক্ষেত্রেই বেশি ব্যবহার হতো। সম্প্রতি আমাদের মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়ের মুখনিঃসৃত বাণী ওই ছড়াটিকে পুনরায় মনে করিয়ে দিল।
যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে ৯ ও ১০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে গণতন্ত্র নিয়ে এক বৈশ্বিক শীর্ষ সম্মেলন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ওই সম্মেলনের উদ্যোক্তা। ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠেয় ওই সম্মেলনে বিশ্বের ১১০টি দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও বাংলাদেশ বাদ পড়েছে। এ ধরনের একটি সম্মেলনে বাংলাদেশের আমন্ত্রণ না পাওয়া আমাদের জন্য বেদনাদায়ক সন্দেহ নেই। কেননা, আমরা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র কেন বাংলাদেশকে ওই সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানাল না, সেটা পরিষ্কার নয়। সরকারের পক্ষ থেকেও অফিশিয়ালি এ বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। আর তা বলাটা সমীচীনও নয় বোধ হয়। কেননা, মেজবান নিজেই নির্ধারণ করবেন কাকে কাকে তিনি মেহমান করবেন। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র যে গণতন্ত্র সম্মেলন আয়োজন করেছে, তাতে কোন কোন দেশকে তারা আমন্ত্রণ জানাবে, সেটা তাদেরই এখতিয়ার। তবে যেহেতু আমরা নিজেদের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলে দাবি করি, সেহেতু এ ধরনের বৈশ্বিক সম্মেলনে দাওয়াত না পাওয়া আমাদের জন্য অমর্যাদাকরও বটে।
এই দাওয়াত না পাওয়ার বিষয়ে একটি চমকপ্রদ ব্যাখ্যা দিয়েছেন আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। বলেছেন, ‘ওই সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র সম্ভবত দুর্বল গণতন্ত্রের দেশগুলোকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। সে কারণে বাংলাদেশ আমন্ত্রণ পায়নি।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে স্থিতিশীল গণতন্ত্র বিরাজ করছে। এটি হচ্ছে স্বচ্ছ গণতন্ত্র। জনগণ সুষ্ঠু ও মুক্তভাবে ভোট দিতে পারছে।’ (সূত্র: ২৬ নভেম্বরের দৈনিক পত্রিকাসমূহ)
এর পরদিন সিলেটে তিনি বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সব সময় নানা ইস্যুতে বিভিন্ন দেশকে চাপে রাখতে চায়। তারা কখনো গণতন্ত্রের কথা বলে, কখনো সুশাসন, সন্ত্রাসবাদ ও দুর্নীতির কথা বলে এ রকম চাপ সৃষ্টি করে। এটা তাদের একটি রাজনীতি। কে দাওয়াত দিল আর না দিল, তাতে কিছু আসে-যায় না। আমাদের গণতন্ত্র আমাদেরই ঠিক করতে হবে। এটা অন্য কেউ করে দেবে না।’ (সূত্র: ২৭ নভেম্বরের দৈনিকসমূহ)
অত্যন্ত কঠিন সত্য উচ্চারণ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আমাদের গণতন্ত্র আমাদেরই ঠিক করতে হবে, অন্য কেউ তা করে দেবে না। তবে এ কথা দ্বারা তিনি প্রকারন্তরে এটা স্বীকার করে নিয়েছেন যে, আমাদের গণতন্ত্র আসলে ঠিক নেই। সে জন্যই তা ঠিক করার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়েছে তাঁর কাছে। মন্ত্রী মহোদয়ের শেষের কথাকে যদি আমরা সত্যি বলে ধরে নিই, তাহলে তার প্রথম বচনের কী হবে? তাঁর মতে, যুক্তরাষ্ট্র দুর্বল গণতন্ত্রের দেশগুলোকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। তার মানে আমরা দুর্বল নই, শক্তিশালী। তো শক্তিশালী সে গণতন্ত্রকে আবার ঠিক করার প্রশ্ন আসে কী করে? উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের আমন্ত্রণ তালিকায় বাংলাদেশ না থাকলেও দক্ষিণ এশিয়া থেকে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও ভুটান রয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো, ভারত কি দুর্বল গণতন্ত্রের দেশ? সর্বোপরি যে ১১০টি দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, সেগুলোও কি দুর্বল গণতন্ত্রের দেশ? দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত-পাকিস্তানের চেয়ে আমরা কি শক্তিশালী গণতন্ত্রের দেশ? হলে কতটা শক্তিশালী?
একটি দেশে গণতন্ত্র কতটা শক্তিশালী, তা মাপার জন্য কোনো ব্যারোমিটার এ পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি। তবে পারিপার্শ্বিক পরিবেশ পরিস্থিতি থেকেই সাধারণত বোঝা যায় গণতন্ত্রের অবস্থা বা দুরবস্থা। আমাদের দেশে বর্তমানে গণতন্ত্রের যে চেহারা-সুরত আমরা দেখছি, তাতে আত্মতৃপ্তির অবকাশ আছে বলে মনে হয় না। কয়েক বছর ধরে স্থিতিশীল গণতন্ত্র রয়েছে এবং জনগণ মুক্তভাবে ভোট দিতে পারছে— পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ বক্তব্য কতটা বাস্তবতাপ্রসূত, তা নিয়ে অবশ্যই প্রশ্ন তোলা যায়। এটা ঠিক, দেশে এখন একধরনের স্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে, উন্নয়নকাজ অব্যাহত গতিতে চলছে। তবে এ স্থিতিশীলতা যতটা না শক্তিশালী গণতন্ত্রের কারণে তার চেয়ে বহুলাংশে দুর্বল বিরোধী দলের জন্য। এ এক অস্বাভাবিক স্থিতিশীল পরিবেশ। সবকিছু আপাতদৃষ্টিতে শান্ত, কিন্তু কোথায় যেন একটা অস্বস্তি মনের ভেতর খোঁচা মারছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী তো বহির্বিশ্বসংক্রান্ত বিষয়ে ব্যস্ত সময় কাটান, তাই দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তেমন মনোযোগ হয়তো দিতে পারেন না। না হলে আমাদের গণতন্ত্রের বর্তমান শীর্ণকায় দশা তাঁর নজর এড়াত না। আমাদের গণতন্ত্র কেমন শক্তিশালী—তার প্রমাণ তো চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ধারাবাহিকভাবেই আমরা পাচ্ছি। মন্ত্রী যে দেশগুলোকে দুর্বল গণতন্ত্রের দেশ বলেছেন, সেসব দেশের জাতীয় কিংবা স্থানীয় নির্বাচনে এত মানবজীবনের ইতি ঘটে কি না, তা ভেবে দেখা দরকার। শুনতে খারাপ লাগলেও বলতে দ্বিধা নেই, একমাত্র বিবেক-বুদ্ধি ভোঁতা হয়ে যাওয়া ব্যক্তি ছাড়া আর কেউ বাংলাদেশের বর্তমান গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করতে পারেন না। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও গণমাধ্যম মাঝেমধ্যেই বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে থাকে। হয়তো তাদের সমীক্ষা, পরিসংখ্যান কিংবা মন্তব্য আমাদের জন্য স্বস্তিদায়ক বা মনঃপূত হয় না। কিন্তু তাতে তো বাস্তব পরিস্থিতির কোনো হেরফের হবে না।
তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একটি ব্যাপারে ধন্যবাদ পাওয়ার দাবি রাখেন। তিনি ইচ্ছে করলে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশের দাওয়াত না পাওয়ার বিষয়টিকে বিএনপির ষড়যন্ত্র বলে চালিয়ে দিতে পারতেন। বলতে পারতেন, বিএনপি আন্তর্জাতিক লবিস্ট নিয়োগ করে জো বাইডেনকে প্রভাবিত করেছে বাংলাদেশকে দাওয়াত না দিতে। অজুহাত হিসেবে কথাটি মন্দ হতো না। যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র সম্মেলনে দাওয়াত পাওয়া গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার পরিমাপক বলে আমি মনে করি না। তবে দাওয়াত না পাওয়াটা অবশ্যই দুঃখজনক। এতে অনুমান করা যায়, বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর মোড়ল রাষ্ট্রটির দৃষ্টিতে আমাদের মূল্যায়ন কী। আমাদের ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও মন্ত্রীরা দিবানিশি বলে চলেছেন, দেশে গণতন্ত্রের ভরা জোয়ার বইছে। কিন্তু তা যে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমাদের ছোট নদী’ কবিতার সেই ছোট্ট নদীটির মতো বৈশাখ মাসে হাঁটু জলের ধারায় পরিণত হয়েছে, তা কি তাঁরা উপলব্ধি করতে পারছেন?
লেখক: মহিউদ্দিন খান মোহন সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
‘আমি এক পাহলোয়ান, ঘাড় মোর ত্যাড়া/লাইত্থাইয়া ভাঙি আমি পাটখড়ির বেড়া/কুস্তি লড়তে গিয়ে পড়ে যাই তলে/অমনি মুতিয়া দেই নিজ বাহুবলে’।
ছেলেবেলায় শোনা একটি ব্যঙ্গাত্মক ছড়া। এর মর্মার্থ ব্যাখ্যা করে বলার দরকার আছে বলে মনে হয় না। হামবড়া ভাব প্রকাশ করে যাঁরা সমাজে কল্কে পেতে চান, ছড়াটি তাঁদের ক্ষেত্রেই বেশি ব্যবহার হতো। সম্প্রতি আমাদের মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়ের মুখনিঃসৃত বাণী ওই ছড়াটিকে পুনরায় মনে করিয়ে দিল।
যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে ৯ ও ১০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে গণতন্ত্র নিয়ে এক বৈশ্বিক শীর্ষ সম্মেলন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ওই সম্মেলনের উদ্যোক্তা। ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠেয় ওই সম্মেলনে বিশ্বের ১১০টি দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও বাংলাদেশ বাদ পড়েছে। এ ধরনের একটি সম্মেলনে বাংলাদেশের আমন্ত্রণ না পাওয়া আমাদের জন্য বেদনাদায়ক সন্দেহ নেই। কেননা, আমরা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র কেন বাংলাদেশকে ওই সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানাল না, সেটা পরিষ্কার নয়। সরকারের পক্ষ থেকেও অফিশিয়ালি এ বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। আর তা বলাটা সমীচীনও নয় বোধ হয়। কেননা, মেজবান নিজেই নির্ধারণ করবেন কাকে কাকে তিনি মেহমান করবেন। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র যে গণতন্ত্র সম্মেলন আয়োজন করেছে, তাতে কোন কোন দেশকে তারা আমন্ত্রণ জানাবে, সেটা তাদেরই এখতিয়ার। তবে যেহেতু আমরা নিজেদের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলে দাবি করি, সেহেতু এ ধরনের বৈশ্বিক সম্মেলনে দাওয়াত না পাওয়া আমাদের জন্য অমর্যাদাকরও বটে।
এই দাওয়াত না পাওয়ার বিষয়ে একটি চমকপ্রদ ব্যাখ্যা দিয়েছেন আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। বলেছেন, ‘ওই সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র সম্ভবত দুর্বল গণতন্ত্রের দেশগুলোকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। সে কারণে বাংলাদেশ আমন্ত্রণ পায়নি।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে স্থিতিশীল গণতন্ত্র বিরাজ করছে। এটি হচ্ছে স্বচ্ছ গণতন্ত্র। জনগণ সুষ্ঠু ও মুক্তভাবে ভোট দিতে পারছে।’ (সূত্র: ২৬ নভেম্বরের দৈনিক পত্রিকাসমূহ)
এর পরদিন সিলেটে তিনি বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সব সময় নানা ইস্যুতে বিভিন্ন দেশকে চাপে রাখতে চায়। তারা কখনো গণতন্ত্রের কথা বলে, কখনো সুশাসন, সন্ত্রাসবাদ ও দুর্নীতির কথা বলে এ রকম চাপ সৃষ্টি করে। এটা তাদের একটি রাজনীতি। কে দাওয়াত দিল আর না দিল, তাতে কিছু আসে-যায় না। আমাদের গণতন্ত্র আমাদেরই ঠিক করতে হবে। এটা অন্য কেউ করে দেবে না।’ (সূত্র: ২৭ নভেম্বরের দৈনিকসমূহ)
অত্যন্ত কঠিন সত্য উচ্চারণ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আমাদের গণতন্ত্র আমাদেরই ঠিক করতে হবে, অন্য কেউ তা করে দেবে না। তবে এ কথা দ্বারা তিনি প্রকারন্তরে এটা স্বীকার করে নিয়েছেন যে, আমাদের গণতন্ত্র আসলে ঠিক নেই। সে জন্যই তা ঠিক করার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়েছে তাঁর কাছে। মন্ত্রী মহোদয়ের শেষের কথাকে যদি আমরা সত্যি বলে ধরে নিই, তাহলে তার প্রথম বচনের কী হবে? তাঁর মতে, যুক্তরাষ্ট্র দুর্বল গণতন্ত্রের দেশগুলোকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। তার মানে আমরা দুর্বল নই, শক্তিশালী। তো শক্তিশালী সে গণতন্ত্রকে আবার ঠিক করার প্রশ্ন আসে কী করে? উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের আমন্ত্রণ তালিকায় বাংলাদেশ না থাকলেও দক্ষিণ এশিয়া থেকে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও ভুটান রয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো, ভারত কি দুর্বল গণতন্ত্রের দেশ? সর্বোপরি যে ১১০টি দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, সেগুলোও কি দুর্বল গণতন্ত্রের দেশ? দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত-পাকিস্তানের চেয়ে আমরা কি শক্তিশালী গণতন্ত্রের দেশ? হলে কতটা শক্তিশালী?
একটি দেশে গণতন্ত্র কতটা শক্তিশালী, তা মাপার জন্য কোনো ব্যারোমিটার এ পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি। তবে পারিপার্শ্বিক পরিবেশ পরিস্থিতি থেকেই সাধারণত বোঝা যায় গণতন্ত্রের অবস্থা বা দুরবস্থা। আমাদের দেশে বর্তমানে গণতন্ত্রের যে চেহারা-সুরত আমরা দেখছি, তাতে আত্মতৃপ্তির অবকাশ আছে বলে মনে হয় না। কয়েক বছর ধরে স্থিতিশীল গণতন্ত্র রয়েছে এবং জনগণ মুক্তভাবে ভোট দিতে পারছে— পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ বক্তব্য কতটা বাস্তবতাপ্রসূত, তা নিয়ে অবশ্যই প্রশ্ন তোলা যায়। এটা ঠিক, দেশে এখন একধরনের স্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে, উন্নয়নকাজ অব্যাহত গতিতে চলছে। তবে এ স্থিতিশীলতা যতটা না শক্তিশালী গণতন্ত্রের কারণে তার চেয়ে বহুলাংশে দুর্বল বিরোধী দলের জন্য। এ এক অস্বাভাবিক স্থিতিশীল পরিবেশ। সবকিছু আপাতদৃষ্টিতে শান্ত, কিন্তু কোথায় যেন একটা অস্বস্তি মনের ভেতর খোঁচা মারছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী তো বহির্বিশ্বসংক্রান্ত বিষয়ে ব্যস্ত সময় কাটান, তাই দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তেমন মনোযোগ হয়তো দিতে পারেন না। না হলে আমাদের গণতন্ত্রের বর্তমান শীর্ণকায় দশা তাঁর নজর এড়াত না। আমাদের গণতন্ত্র কেমন শক্তিশালী—তার প্রমাণ তো চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ধারাবাহিকভাবেই আমরা পাচ্ছি। মন্ত্রী যে দেশগুলোকে দুর্বল গণতন্ত্রের দেশ বলেছেন, সেসব দেশের জাতীয় কিংবা স্থানীয় নির্বাচনে এত মানবজীবনের ইতি ঘটে কি না, তা ভেবে দেখা দরকার। শুনতে খারাপ লাগলেও বলতে দ্বিধা নেই, একমাত্র বিবেক-বুদ্ধি ভোঁতা হয়ে যাওয়া ব্যক্তি ছাড়া আর কেউ বাংলাদেশের বর্তমান গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করতে পারেন না। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও গণমাধ্যম মাঝেমধ্যেই বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে থাকে। হয়তো তাদের সমীক্ষা, পরিসংখ্যান কিংবা মন্তব্য আমাদের জন্য স্বস্তিদায়ক বা মনঃপূত হয় না। কিন্তু তাতে তো বাস্তব পরিস্থিতির কোনো হেরফের হবে না।
তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একটি ব্যাপারে ধন্যবাদ পাওয়ার দাবি রাখেন। তিনি ইচ্ছে করলে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশের দাওয়াত না পাওয়ার বিষয়টিকে বিএনপির ষড়যন্ত্র বলে চালিয়ে দিতে পারতেন। বলতে পারতেন, বিএনপি আন্তর্জাতিক লবিস্ট নিয়োগ করে জো বাইডেনকে প্রভাবিত করেছে বাংলাদেশকে দাওয়াত না দিতে। অজুহাত হিসেবে কথাটি মন্দ হতো না। যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র সম্মেলনে দাওয়াত পাওয়া গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার পরিমাপক বলে আমি মনে করি না। তবে দাওয়াত না পাওয়াটা অবশ্যই দুঃখজনক। এতে অনুমান করা যায়, বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর মোড়ল রাষ্ট্রটির দৃষ্টিতে আমাদের মূল্যায়ন কী। আমাদের ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও মন্ত্রীরা দিবানিশি বলে চলেছেন, দেশে গণতন্ত্রের ভরা জোয়ার বইছে। কিন্তু তা যে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমাদের ছোট নদী’ কবিতার সেই ছোট্ট নদীটির মতো বৈশাখ মাসে হাঁটু জলের ধারায় পরিণত হয়েছে, তা কি তাঁরা উপলব্ধি করতে পারছেন?
লেখক: মহিউদ্দিন খান মোহন সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১৩ দিন আগেভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫