Ajker Patrika

নিবন্ধনই নেই শিশু আয়ান মারা যাওয়া সেই হাসপাতালের

রাশেদ রাব্বি ও রাসেল মাহমুদ, ঢাকা
আপডেট : ১০ জানুয়ারি ২০২৪, ১১: ২৫
Thumbnail image

রাজধানীর মাদানি সড়কের শেষ প্রান্তে নির্মাণাধীন একটি ভবন। বেসমেন্ট ও প্রথম তলার কাজ সম্পন্ন হয়েছে, ওপরের তলাগুলোর কাজ চলেছে। সেখানে বড় করে লেখা আছে ‘ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল’। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল নামে কোনো প্রতিষ্ঠানের নাম তাদের জানা নেই। এই নামে কোনো প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন নেই। এমনকি আজ পর্যন্ত এই নামের কোনো প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের জন্য আবেদনও করেনি। অথচ গত ৩০ ডিসেম্বর এই অনুমোদনহীন হাসপাতালেই সুন্নতে খতনা করাতে গিয়ে শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যু হয়েছে। 

নিবন্ধন ছাড়াই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা সম্পর্কে জানতে চাইলে ইউনাইটেড হসপিটাল লিমিটেডের পরিচালক ডা. মাহবুব আজকের পত্রিকাকে বলেন, এসব বিষয়ে তিনি বলতে পারবেন না। হাসপাতালের অ্যাডমিন শাখায় কথা বলতে হবে। 

হাসপাতালের অপারেশন অ্যান্ড অ্যাডমিন শাখার জেনারেল ম্যানেজার লে. কর্নেল বশির আহমেদের (অব.) কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে এসব বিষয়ে তিনি জানেন না বলে জানান। কে জানেন, জানতে চাইলে তিনি অফিসে দেখা করতে বলেন। 

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরে অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. অধ্যাপক ডা. বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজ বলেন, ‘মেডিকেল কলেজের অনুমোদন রয়েছে। তবে হাসপাতালটির অনুমোদন আছে কি না, আমার জানা নেই।’ তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখা থেকে আজকের পত্রিকাকে নিশ্চিত করা হয়েছে, ওই হাসপাতালের নিবন্ধনের জন্য কোনো আবেদনই করা হয়নি।
 
আয়ানের বাবার মামলা
আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় গতকাল রাজধানীর বাড্ডা থানায় মামলা করেছেন তার বাবা মো. শামীম আহমেদ। এতে আসামি করা হয় ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের অ্যানেসথেসিয়া স্পেশালিস্ট চিকিৎসক সাইদ সাব্বির আহম্মেদ, অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর তাসনুভা মাহজাবিন, ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের অজ্ঞাতনামা পরিচালক, চিকিৎসক ও অজ্ঞাতনামা কর্মকর্তা-কর্মচারীকে। 

মামলায় শামীম আহমেদ উল্লেখ করেন, ৩০ ডিসেম্বর ছেলে আয়ান আহমেদের সুন্নতে খতনার জন্য ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকের পরামর্শে কিছু পরীক্ষা করে পরদিন সকালে ছেলেকে অপারেশনে নেওয়া হয়।

অপারেশন রুমে নেওয়ার পর ৩০ থেকে ৪০ জন ইন্টার্ন চিকিৎসক ওটি ড্রেস পরে সেখানে প্রবেশ করেন। এক ঘণ্টা পর তাঁরা বের হন। এর কিছুক্ষণ পর হাসপাতালের কয়েকজন চিকিৎসক হন্তদন্ত হয়ে অপারেশন রুমে প্রবেশ করেন। এতে আয়ানের বাবার সন্দেহ হলে অপারেশন রুমে প্রবেশ করে দেখেন, আয়ানের বুকে চাপাচাপি করছেন তাঁরা। পরে অনুমতি ছাড়াই শিশুটির বুকের দুই পাশে ফুটা করে টিউব স্থাপন করেন। এতে কোনো কাজ না হওয়ায় হাসপাতালের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আয়ানকে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। 

শামীম ছেলেকে উন্নত চিকিৎসায় অন্য হাসপাতালে নিতে চাইলেও তারা অনুমতি দেয়নি। এমনকি তার চিকিৎসা ও ওষুধ বিষয়েও কোনো তথ্য জানায়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ৩১ ডিসেম্বর থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ৫ লাখ ৭৭ হাজার টাকার চিকিৎসা বিল করে ইউনাইটেড হাসপাতাল। 

শিশু আয়ান। ছবি: সংগৃহীতঘটনার বিষয়ে বাড্ডা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ইয়াসিন গাজী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মামলা হয়েছে। আমরা তদন্ত করছি। যেহেতু চিকিৎসাধীন বিষয়, আমরা বিশেষজ্ঞ মতামত নিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’ 

হাইকোর্টে রিট
আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় রাজধানীর ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিল চেয়ে গতকাল হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেছেন আইনজীবী শাহজাহান আকন্দ মাসুম। তাতে জড়িত চিকিৎসকদেরও লাইসেন্স বাতিল চাওয়া হয়। পাশাপাশি আয়ানের পরিবারের জন্য ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়েছে। 

আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় সোমবার এক আদেশনামা জারি করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। তাতে বলা হয়েছে, সুন্নতে খতনার ঘটনায় পরিবারের বিনা অনুমতিতে ভুক্তভোগী শিশুর পুরো শরীরে অ্যানেসথেসিয়া প্রয়োগ ও শিশুর মৃত্যুর ঘটনা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক ও মর্মান্তিক। চিকিৎসকের অবহেলা বা ভুল চিকিৎসার কারণে কারও মৃত্যু বা অন্য কোনো ধরনের ক্ষতি মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেছে কমিশন। 

আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ৪ সদস্যের কমিটিকে আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে মৃত্যুর সুস্পষ্ট মতামতসহ প্রতিবেদন পাঠাতে বলা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত