হাইথেম গুয়েসমি
মানবাধিকার এখন মৃত একটি বিষয়। জলবায়ুজনিত নাজুক পরিস্থিতি, আপাতদৃষ্টিতে অন্তহীন সংঘাত এবং এর ফলে শরণার্থী-সংকট বেড়েছে। এ কারণে বিশ্বজুড়ে দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সবচেয়ে মৌলিক অধিকার রক্ষার জন্য একটি কার্যকর বৈশ্বিক কৌশলের অনুপস্থিতি এটি স্পষ্ট করেছে যে ‘মানবাধিকার’ ধারণাটির সব অর্থ এবং উদ্দেশ্য হারিয়েছে প্রত্যেকের জন্য, বিশেষ করে আমরা যারা গ্লোবাল সাউথের বাসিন্দা (আফ্রিকা ও এশিয়ার স্বল্পোন্নত দেশগুলো)।
জাতিসংঘের মতে, প্রায় ৮২ কোটি ৪০ লাখ মানুষ, যা বিশ্ব জনসংখ্যার ১০ শতাংশ প্রতি রাতে ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমাতে যায়। যারা ক্ষুধার সঙ্গে লড়াই করছে, তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাস করছে। আর এই এলাকাগুলো গ্লোবাল সাউথে পড়েছে। যুদ্ধ ও অভ্যুত্থান—প্রায়ই বৈশ্বিক শক্তিগুলোর মধ্যে হয়ে থাকে। এসব বিষয় এই অঞ্চলগুলোতে নানাভাবে, নানান পরিমাণে ক্ষতি করছে।
তাদের দুর্দশার শেষ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা না দেখতে পেয়ে গ্লোবাল সাউথের অনেক বাসিন্দা নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির জন্য গ্লোবাল নর্থে (ইউরোপ ও আমেরিকা) পাড়ি জমাতে মরুভূমি এবং সাগরে বিপজ্জনক যাত্রা শুরু করেছে। এই শরণার্থীদের মানবাধিকার রক্ষার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার পরিবর্তে, পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো যারা নিজেদের মানবাধিকারের ধারণার উদ্ভাবক বলে গর্ব করে, তারা তাদের সঙ্গে শত্রুর মতো আচরণ করছে।
ফলে হাজার হাজার মানুষ যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমান্তে অমানবিক অভিবাসী আটককেন্দ্রগুলোতে পড়ে আছে এবং ভূমধ্যসাগর এখন অভিবাসীদের কবরস্থান। ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের মিসিং মাইগ্রেন্টস প্রজেক্ট অনুসারে, ২০১৪ সাল থেকে ভূমধ্যসাগরে ২৮ হাজারের বেশি মানুষের ডুবে যাওয়ার ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা জানা অসম্ভব এবং সেটা সম্ভবত অনেক বেশি।
গ্লোবাল সাউথের বাসিন্দাদের এভাবে ভূমধ্যসাগরে ডুবে যাওয়াই যেন একমাত্র ভবিতব্য। যারা বিশ্বব্যাপী সংখ্যাগরিষ্ঠ, তারা ব্যাপকভাবে মারা যাচ্ছে। কারণ পশ্চিমা নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের মানবাধিকারকে সুরক্ষার যোগ্য বলে মনেই করে না। তারা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বেড়ে ওঠা প্রাকৃতিক দুর্যোগে এবং আরও ভূ-রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডার জন্য যুদ্ধে মারা যাচ্ছে। তাদের ড্রোন দিয়ে হত্যা করা হচ্ছে এবং জীবন্ত পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে।
মানবাধিকারের মৃত্যুর লক্ষণ সর্বব্যাপী। পশ্চিমা সরকারগুলো ইসরায়েলের বর্ণবাদী আচরণকে জবাবদিহির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করছে। তারা ইসরায়েলের নিপীড়ন প্রতিরোধকারী ফিলিস্তিনিদের এবং তাদের মুক্তির সংগ্রামকে সমর্থন করে এমন ব্যক্তিদের অপরাধী হিসেবে আখ্যায়িত করছে। গ্লোবাল নর্থের নেতৃস্থানীয় সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলো তাদের প্ল্যাটফর্মে ইতিমধ্যেই প্রান্তিক এবং হুমকির মুখে থাকা জনসংখ্যাকে লক্ষ্য করে বিপজ্জনক ভুল তথ্য প্রচারের অনুমতি দিচ্ছে। ইউরোপীয় দেশগুলো এখনো একটি বিষাক্ত কীটনাশক গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোতে বিক্রি করছে, যা কিনা শিশু এবং অনাগত শিশুদের জন্য ক্ষতিকর বলে ইউরোপীয় ইউনিয়নে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তালিকায় এ রকম আরও অনেক কিছুই আছে।
পশ্চিমারা সব সময় নিজেদের মানবাধিকারের সত্যিকারের রক্ষক হিসেবে বিক্রির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়া, চীন ও ইরানের মতো দেশগুলোর নাগরিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য প্রায়ই নিন্দা জানায় এবং এমনকি মাঝেমধ্যে দেশগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তারা প্রায়ই এসব দেশকে সাহায্য দিতে মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নত করার শর্ত বেঁধে দেয়। কোনো কোনো দেশ অতীতে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে কি না, এই অজুহাতে সামরিক হস্তক্ষেপও শুরু করে।
উদাহরণস্বরূপ ইউরোপের একেবারে কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ইউক্রেনে আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায়, গ্লোবাল নর্থের দেশগুলো রাশিয়া যে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, তার নিন্দাই করেনি। প্রয়োজনে ইউক্রেনের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। কোনো বাধার সম্মুখীন না হয়ে অন্য দেশে যাতে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পায় তার ব্যবস্থা করেছে। তারা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রতিও তাদের সমর্থন রেখেছিল এবং ক্রেমলিনকে দোষী সাব্যস্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য তদন্তকারীদের সরবরাহ করেছিল।
প্রকৃতপক্ষে, যে দেশগুলো ইউক্রেনের জনগণকে সাহায্য করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছিল, তারা একইভাবে সুদানিদের জন্য তাদের সীমানা খুলে দেয়নি, যখন তারা একইভাবে গুরুতর সামরিক হুমকির মুখে পড়ে। তারা কখনো ফিলিস্তিনিদের জন্যও তা করেনি, যাদের অনেকেই এখনো হিংসাত্মক আক্রমণকারীর লৌহমুষ্টির মধ্যে বসবাস করছে।
আইসিসিকে কখন সমর্থন করবে, সে বিষয়টি তারা খুব বেছে বেছে করে থাকে। নিশ্চিতভাবে তারা আফ্রিকানদের বিরুদ্ধে আইসিসির বিচারকে সমর্থন করেছিল, যখন এটি তাদের অ্যাজেন্ডা অনুসারে উপযুক্ত ছিল। কিন্তু তারা কখনোই এর কৌঁসুলিদের তাদের নিজস্ব ড্রোন যুদ্ধ বা বেআইনি নির্যাতন কর্মসূচির কাছাকাছি কোথাও যেতে দেয়নি।
যদিও তারা এখন রাশিয়াকে সহযোগিতা করছে—এমন যেকোনো রাষ্ট্রকে নিন্দা করছে। গ্লোবাল সাউথে তারা নিজেরাই দীর্ঘদিন ধরে মানবাধিকারের উদ্বেগের চেয়ে ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে, নিপীড়নের শাসনকে সমর্থন করছে এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে দুর্বল করছে। আর এ কারণে গ্লোবাল সাউথের অনেক দেশ ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধকে সমর্থন করতে দ্বিধাগ্রস্ত হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী মানবাধিকারব্যবস্থা ও আলোচনায় এই সংকট নতুন নয়। ১৯৮৪ সালে যখন জাতিসংঘে সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্র (ইউডিএইচআর) পাস হয়, তখন এটিকে আরও শান্তিপূর্ণ বিশ্বের দিকে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং হলোকাস্টের ভয়াবহতা পেছনে ফেলে আসার পর এর একটি আশার রশ্মি ছিল, যা ইঙ্গিত দেয় যে একটি উন্নত বিশ্ব গড়ার, যেখানে সবার মৌলিক অধিকারগুলোর সম্মান করা সম্ভব হতে পারে। তবে এই স্বপ্ন বেশি দিন টেকেনি। যে জাতিগুলো শাসনব্যবস্থায় নতুন মানবাধিকারের বিকাশে এগিয়ে এসেছিল, তারা তাদের স্বার্থকে এগিয়ে নিতে, তাদের শত্রুদের আঘাত করতে এবং তাদের স্বার্থ সম্প্রসারণের জন্য দ্রুত তা লঙ্ঘন করতে শুরু করে। এমনকি তারা ‘গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার জন্য এবং ‘মানবাধিকার’ রক্ষার জন্য গ্লোবাল সাউথের বেশ কয়েকটি দেশকে আক্রমণ করে।
যারা ইউডিএইচআর স্বাক্ষরের পর থেকে গ্লোবাল নর্থের আগ্রাসন এবং দ্বৈত ভূমিকার কারণে সবচেয়ে বেশি ভুগছে, তারা আর নিশ্চিত নয় যে পশ্চিমা সরকার, প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থাগুলো তাদের মৌলিক অধিকার রক্ষা করতে পারে। তারা এখন সেগুলোকে অকার্যকর ও বিপজ্জনক হিসেবে দেখে।
আরবের রাস্তায় যারা প্রতিবাদ করছে, ব্রাজিলের ফাভেলাসে ক্রমাগত আক্রমণের শিকার হচ্ছে, গাজার খোলা-হাওয়ার কারাগার থেকে বাঁচার চেষ্টা করছে বা বাংলাদেশের (কক্সবাজারে) বিস্তীর্ণ শরণার্থীশিবির থেকে বেরিয়ে আসার উপায় খুঁজছে—তারা আর বিশ্বাস করে না বা আশা করে না যে গ্লোবাল নর্থ এগিয়ে আসবে এবং তাদের কথিত পবিত্র ‘মানবাধিকার’ লঙ্ঘন হবে না, তা নিশ্চিত করার জন্য কিছু করবে।
শুধু আন্তর্জাতিক রাজনীতির জন্য বৈষম্যমূলক আদেশ, নীতি হিসেবে মানবাধিকারের পশ্চিমের ভন্ডামিকে আমরা এড়িয়ে চলতে পারি। আমরা প্রত্যেকের মৌলিক অধিকার সংজ্ঞায়িত এবং সুরক্ষার জন্য আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, বৈচিত্র্যময় ও প্রতিনিধিত্বমূলক পদ্ধতি নিজেরাই তৈরি করতে পারি।
এটি করার মাধ্যমে গ্লোবাল সাউথের স্থানীয় সম্প্রদায় ও আদিবাসী জনগোষ্ঠী পরিবেশ সংরক্ষণ এবং টেকসই উন্নয়ন পুনর্বিবেচনা ও বাস্তবায়নে সক্রিয় এবং কেন্দ্রীয় ভূমিকা নিতে পারবে। যেহেতু আমরা একাধিক আন্তসংযুক্ত পরিবেশগত এবং মানবিক সংকটের মুখোমুখি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবিলম্বে বর্তমান শাসনব্যবস্থায় মানবাধিকারের যে মৃত্যু ঘটছে তা বুঝতে হবে এবং দ্রুত একটি বিকল্প পদক্ষেপ নিতে হবে, যা সত্যিকার অর্থে সব মানুষের মৌলিক অধিকার এবং চাহিদা অন্তর্ভুক্ত করবে। সব মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষার জন্য আমাদের জরুরিভাবে একটি নতুন কাঠামো দরকার।
হাইথেম গুয়েসমি, তিউনিসিয়ার শিক্ষাবিদ ও লেখক
(আল জাজিরায় প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত ও ঈষৎ সংক্ষেপিত)
মানবাধিকার এখন মৃত একটি বিষয়। জলবায়ুজনিত নাজুক পরিস্থিতি, আপাতদৃষ্টিতে অন্তহীন সংঘাত এবং এর ফলে শরণার্থী-সংকট বেড়েছে। এ কারণে বিশ্বজুড়ে দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সবচেয়ে মৌলিক অধিকার রক্ষার জন্য একটি কার্যকর বৈশ্বিক কৌশলের অনুপস্থিতি এটি স্পষ্ট করেছে যে ‘মানবাধিকার’ ধারণাটির সব অর্থ এবং উদ্দেশ্য হারিয়েছে প্রত্যেকের জন্য, বিশেষ করে আমরা যারা গ্লোবাল সাউথের বাসিন্দা (আফ্রিকা ও এশিয়ার স্বল্পোন্নত দেশগুলো)।
জাতিসংঘের মতে, প্রায় ৮২ কোটি ৪০ লাখ মানুষ, যা বিশ্ব জনসংখ্যার ১০ শতাংশ প্রতি রাতে ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমাতে যায়। যারা ক্ষুধার সঙ্গে লড়াই করছে, তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাস করছে। আর এই এলাকাগুলো গ্লোবাল সাউথে পড়েছে। যুদ্ধ ও অভ্যুত্থান—প্রায়ই বৈশ্বিক শক্তিগুলোর মধ্যে হয়ে থাকে। এসব বিষয় এই অঞ্চলগুলোতে নানাভাবে, নানান পরিমাণে ক্ষতি করছে।
তাদের দুর্দশার শেষ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা না দেখতে পেয়ে গ্লোবাল সাউথের অনেক বাসিন্দা নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির জন্য গ্লোবাল নর্থে (ইউরোপ ও আমেরিকা) পাড়ি জমাতে মরুভূমি এবং সাগরে বিপজ্জনক যাত্রা শুরু করেছে। এই শরণার্থীদের মানবাধিকার রক্ষার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার পরিবর্তে, পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো যারা নিজেদের মানবাধিকারের ধারণার উদ্ভাবক বলে গর্ব করে, তারা তাদের সঙ্গে শত্রুর মতো আচরণ করছে।
ফলে হাজার হাজার মানুষ যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমান্তে অমানবিক অভিবাসী আটককেন্দ্রগুলোতে পড়ে আছে এবং ভূমধ্যসাগর এখন অভিবাসীদের কবরস্থান। ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের মিসিং মাইগ্রেন্টস প্রজেক্ট অনুসারে, ২০১৪ সাল থেকে ভূমধ্যসাগরে ২৮ হাজারের বেশি মানুষের ডুবে যাওয়ার ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা জানা অসম্ভব এবং সেটা সম্ভবত অনেক বেশি।
গ্লোবাল সাউথের বাসিন্দাদের এভাবে ভূমধ্যসাগরে ডুবে যাওয়াই যেন একমাত্র ভবিতব্য। যারা বিশ্বব্যাপী সংখ্যাগরিষ্ঠ, তারা ব্যাপকভাবে মারা যাচ্ছে। কারণ পশ্চিমা নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের মানবাধিকারকে সুরক্ষার যোগ্য বলে মনেই করে না। তারা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বেড়ে ওঠা প্রাকৃতিক দুর্যোগে এবং আরও ভূ-রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডার জন্য যুদ্ধে মারা যাচ্ছে। তাদের ড্রোন দিয়ে হত্যা করা হচ্ছে এবং জীবন্ত পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে।
মানবাধিকারের মৃত্যুর লক্ষণ সর্বব্যাপী। পশ্চিমা সরকারগুলো ইসরায়েলের বর্ণবাদী আচরণকে জবাবদিহির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করছে। তারা ইসরায়েলের নিপীড়ন প্রতিরোধকারী ফিলিস্তিনিদের এবং তাদের মুক্তির সংগ্রামকে সমর্থন করে এমন ব্যক্তিদের অপরাধী হিসেবে আখ্যায়িত করছে। গ্লোবাল নর্থের নেতৃস্থানীয় সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলো তাদের প্ল্যাটফর্মে ইতিমধ্যেই প্রান্তিক এবং হুমকির মুখে থাকা জনসংখ্যাকে লক্ষ্য করে বিপজ্জনক ভুল তথ্য প্রচারের অনুমতি দিচ্ছে। ইউরোপীয় দেশগুলো এখনো একটি বিষাক্ত কীটনাশক গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোতে বিক্রি করছে, যা কিনা শিশু এবং অনাগত শিশুদের জন্য ক্ষতিকর বলে ইউরোপীয় ইউনিয়নে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তালিকায় এ রকম আরও অনেক কিছুই আছে।
পশ্চিমারা সব সময় নিজেদের মানবাধিকারের সত্যিকারের রক্ষক হিসেবে বিক্রির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়া, চীন ও ইরানের মতো দেশগুলোর নাগরিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য প্রায়ই নিন্দা জানায় এবং এমনকি মাঝেমধ্যে দেশগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তারা প্রায়ই এসব দেশকে সাহায্য দিতে মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নত করার শর্ত বেঁধে দেয়। কোনো কোনো দেশ অতীতে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে কি না, এই অজুহাতে সামরিক হস্তক্ষেপও শুরু করে।
উদাহরণস্বরূপ ইউরোপের একেবারে কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ইউক্রেনে আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায়, গ্লোবাল নর্থের দেশগুলো রাশিয়া যে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, তার নিন্দাই করেনি। প্রয়োজনে ইউক্রেনের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। কোনো বাধার সম্মুখীন না হয়ে অন্য দেশে যাতে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পায় তার ব্যবস্থা করেছে। তারা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রতিও তাদের সমর্থন রেখেছিল এবং ক্রেমলিনকে দোষী সাব্যস্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য তদন্তকারীদের সরবরাহ করেছিল।
প্রকৃতপক্ষে, যে দেশগুলো ইউক্রেনের জনগণকে সাহায্য করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছিল, তারা একইভাবে সুদানিদের জন্য তাদের সীমানা খুলে দেয়নি, যখন তারা একইভাবে গুরুতর সামরিক হুমকির মুখে পড়ে। তারা কখনো ফিলিস্তিনিদের জন্যও তা করেনি, যাদের অনেকেই এখনো হিংসাত্মক আক্রমণকারীর লৌহমুষ্টির মধ্যে বসবাস করছে।
আইসিসিকে কখন সমর্থন করবে, সে বিষয়টি তারা খুব বেছে বেছে করে থাকে। নিশ্চিতভাবে তারা আফ্রিকানদের বিরুদ্ধে আইসিসির বিচারকে সমর্থন করেছিল, যখন এটি তাদের অ্যাজেন্ডা অনুসারে উপযুক্ত ছিল। কিন্তু তারা কখনোই এর কৌঁসুলিদের তাদের নিজস্ব ড্রোন যুদ্ধ বা বেআইনি নির্যাতন কর্মসূচির কাছাকাছি কোথাও যেতে দেয়নি।
যদিও তারা এখন রাশিয়াকে সহযোগিতা করছে—এমন যেকোনো রাষ্ট্রকে নিন্দা করছে। গ্লোবাল সাউথে তারা নিজেরাই দীর্ঘদিন ধরে মানবাধিকারের উদ্বেগের চেয়ে ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে, নিপীড়নের শাসনকে সমর্থন করছে এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে দুর্বল করছে। আর এ কারণে গ্লোবাল সাউথের অনেক দেশ ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধকে সমর্থন করতে দ্বিধাগ্রস্ত হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী মানবাধিকারব্যবস্থা ও আলোচনায় এই সংকট নতুন নয়। ১৯৮৪ সালে যখন জাতিসংঘে সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্র (ইউডিএইচআর) পাস হয়, তখন এটিকে আরও শান্তিপূর্ণ বিশ্বের দিকে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং হলোকাস্টের ভয়াবহতা পেছনে ফেলে আসার পর এর একটি আশার রশ্মি ছিল, যা ইঙ্গিত দেয় যে একটি উন্নত বিশ্ব গড়ার, যেখানে সবার মৌলিক অধিকারগুলোর সম্মান করা সম্ভব হতে পারে। তবে এই স্বপ্ন বেশি দিন টেকেনি। যে জাতিগুলো শাসনব্যবস্থায় নতুন মানবাধিকারের বিকাশে এগিয়ে এসেছিল, তারা তাদের স্বার্থকে এগিয়ে নিতে, তাদের শত্রুদের আঘাত করতে এবং তাদের স্বার্থ সম্প্রসারণের জন্য দ্রুত তা লঙ্ঘন করতে শুরু করে। এমনকি তারা ‘গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার জন্য এবং ‘মানবাধিকার’ রক্ষার জন্য গ্লোবাল সাউথের বেশ কয়েকটি দেশকে আক্রমণ করে।
যারা ইউডিএইচআর স্বাক্ষরের পর থেকে গ্লোবাল নর্থের আগ্রাসন এবং দ্বৈত ভূমিকার কারণে সবচেয়ে বেশি ভুগছে, তারা আর নিশ্চিত নয় যে পশ্চিমা সরকার, প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থাগুলো তাদের মৌলিক অধিকার রক্ষা করতে পারে। তারা এখন সেগুলোকে অকার্যকর ও বিপজ্জনক হিসেবে দেখে।
আরবের রাস্তায় যারা প্রতিবাদ করছে, ব্রাজিলের ফাভেলাসে ক্রমাগত আক্রমণের শিকার হচ্ছে, গাজার খোলা-হাওয়ার কারাগার থেকে বাঁচার চেষ্টা করছে বা বাংলাদেশের (কক্সবাজারে) বিস্তীর্ণ শরণার্থীশিবির থেকে বেরিয়ে আসার উপায় খুঁজছে—তারা আর বিশ্বাস করে না বা আশা করে না যে গ্লোবাল নর্থ এগিয়ে আসবে এবং তাদের কথিত পবিত্র ‘মানবাধিকার’ লঙ্ঘন হবে না, তা নিশ্চিত করার জন্য কিছু করবে।
শুধু আন্তর্জাতিক রাজনীতির জন্য বৈষম্যমূলক আদেশ, নীতি হিসেবে মানবাধিকারের পশ্চিমের ভন্ডামিকে আমরা এড়িয়ে চলতে পারি। আমরা প্রত্যেকের মৌলিক অধিকার সংজ্ঞায়িত এবং সুরক্ষার জন্য আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, বৈচিত্র্যময় ও প্রতিনিধিত্বমূলক পদ্ধতি নিজেরাই তৈরি করতে পারি।
এটি করার মাধ্যমে গ্লোবাল সাউথের স্থানীয় সম্প্রদায় ও আদিবাসী জনগোষ্ঠী পরিবেশ সংরক্ষণ এবং টেকসই উন্নয়ন পুনর্বিবেচনা ও বাস্তবায়নে সক্রিয় এবং কেন্দ্রীয় ভূমিকা নিতে পারবে। যেহেতু আমরা একাধিক আন্তসংযুক্ত পরিবেশগত এবং মানবিক সংকটের মুখোমুখি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবিলম্বে বর্তমান শাসনব্যবস্থায় মানবাধিকারের যে মৃত্যু ঘটছে তা বুঝতে হবে এবং দ্রুত একটি বিকল্প পদক্ষেপ নিতে হবে, যা সত্যিকার অর্থে সব মানুষের মৌলিক অধিকার এবং চাহিদা অন্তর্ভুক্ত করবে। সব মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষার জন্য আমাদের জরুরিভাবে একটি নতুন কাঠামো দরকার।
হাইথেম গুয়েসমি, তিউনিসিয়ার শিক্ষাবিদ ও লেখক
(আল জাজিরায় প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত ও ঈষৎ সংক্ষেপিত)
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
২০ দিন আগেআধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে দুই চিরবৈরী প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনার পারদ ক্রমেই চড়ছিল। তা তুঙ্গে উঠল এবার পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা দিয়ে। পাশাপাশি সীমান্তেও দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে...
০৮ মে ২০২৫