Ajker Patrika

দুই দপ্তরের দ্বন্দ্বে সেবায় কমতি

শরিফুল ইসলাম তনয়, সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)
দুই দপ্তরের দ্বন্দ্বে সেবায় কমতি

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে সরকারি দুই প্রতিষ্ঠানের টানাটানিতে দীর্ঘদিন ধরে পূর্ণ চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না এলাকাবাসী। উপজেলার জালকুড়ি শাখা শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট এবং মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্রের মধ্যে এই দ্বন্দ্ব চলছে।

৪৬ বছর আগে হাসপাতালের জন্য এলাকাবাসীর দান করা জায়গা নিজেদের দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছে প্রতিষ্ঠান দুটি। মা ও শিশুসেবা বন্ধ হওয়ায় বর্তমানে অনেকটা জঙ্গলে পরিণত হয়েছে ওই এলাকা।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার জালকুড়ি এলাকায় অবস্থিত শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে প্রায় দুই বছর ধরে বহির্বিভাগের সেবা বন্ধ রয়েছে। তবে একই ভবনে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কার্যক্রম চলছে। এতে পূর্ণাঙ্গ সেবা পাচ্ছেন না এলাকাবাসী। বর্তমানে ইনস্টিটিউটের চারপাশ অনেকটা জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। এমনকি এর ভেতরে রিকশা-ভ্যান, মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য যানবাহন রেখে ভাড়া নেওয়ার বিষয়টি জানা গেছে। এর ভেতর কক্ষ থাকার জন্য ব্যবহার করছেন ঢাকার মাতুয়াইলের অবস্থিত শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের (আইসিএমএইচ) কর্মী ও আনসারেরা।

জানা গেছে, মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবার কথা চিন্তা করে ১৯৭৬ সালে পল্লী পরিবার পরিকল্পনাকে হাসপাতাল তৈরির জন্য ৮ বিঘা জমি দান করেন এলাকাবাসী। দাতাদের শর্ত ছিল, ওই জায়গায় হাসপাতাল না হলে জমি তাঁদের ওয়ারিশদের দখলে চলে যাবে।

মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, জাপান সরকারের সহায়তায় ১৯৭৬ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত জিরো পপুলেশন গ্রোথ (জেডপিজি) প্রকল্প চলে। প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে গেলে ওই জায়গায় মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্র চালুর জন্য পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরকে অনুরোধ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

এদিকে ১৯৯৩ সালে মাতুয়াইলে অবস্থিত আইসিএমএইচ সংস্কারের সময় জালকুড়ি হাসপাতালের স্থাপনা আইসিএমএইচের প্রশাসনিক আওতায় ন্যস্ত করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। পরবর্তী সময়ে মাতুয়াইলে আইসিএমএইচ পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হলেও হাসপাতালের কর্মচারীরা জালকুড়ির হাসপাতালের কয়েকটি কক্ষ দখল করে রাখেন।

এদিকে ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর হাসপাতালটি পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের নিকট হস্তান্তরের জন্য আইসিএমএইচকে চিঠি পাঠায় মন্ত্রণালয়। জায়গাটি ছেড়ে দেওয়ার জন্য পরে একাধিকবার আইসিএমএইচকে চিঠি পাঠালেও তাঁরা জালকুড়ির হাসপাতালটি হস্তান্তর করেননি।

জালকুড়ি এলাকার বাসিন্দা মিজান বলেন, ‘আমাদের বাপ-চাচারা পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসাসেবা পাওয়ার জন্য জায়গাটি দান করেছিলেন; কিন্তু দুই প্রতিষ্ঠানের টানাপড়েনে এই এলাকাবাসী সুফল পাচ্ছেন না।’ শাহনাজ আক্তার বলেন, ‘এলাকায় মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্র থাকা সত্ত্বেও গর্ভবতী মায়েরা কোনো ইমারজেন্সি সেবা এখানে পাচ্ছেন না।’

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, জালকুড়ি এলাকায় আর কোনো সরকারি হাসপাতাল নেই। নারায়ণগঞ্জে দুটি সরকারি হাসপাতাল থাকলেও তা অনেক দূরে। ফলে কেউ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গেলে দীর্ঘ পথ ও যানজট পাড়ি দিতে হয়।

মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্রের মেডিকেল কর্মকর্তা জিনাত সুলতানা বলেন, ‘আইসিএমএইচ বেশির ভাগ কক্ষ দখল করে রাখায় সেবা দিতে আমাদের কষ্ট হচ্ছে। ফলে মায়েরা ঠিকমতো সেবা পাচ্ছেন না। আমাদের এখানে নরমাল ডেলিভারির ব্যবস্থা থাকলেও উন্নত ব্যবস্থাসম্পন্ন অপারেশন থিয়েটার নেই।’

আইসিএমএইচের গণসংযোগ কর্মকর্তা অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বলেন, ‘মূলত এই জায়গা স্থানীয়রা দিয়েছিলেন ফ্যামিলি প্ল্যানের জন্য, পরবর্তী সময়ে জেডপিজি নামে একটি প্রজেক্টের কাজ শুরু হয়। ভবনটি সেবা দেওয়ার জন্য অনুপযোগী হওয়ায় ও জনবল সংকটসহ আরও কিছু কারণে দুই বছর ধরে সেবা বন্ধ রয়েছে।’

নারায়ণগঞ্জের পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপপরিচালক মো. শাহজালাল বলেন, ‘আমরা জালকুড়ির জায়গায় ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই হাসপাতাল নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে। একনেকের সভায় এটির বাজেট হলেই হাসপাতালটির কাজ শুরু হবে। তার আগে আমরা জায়গাটির সব কাগজপত্র প্রস্তুত করে রেখেছি।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রশিক্ষণ ছাড়াই মাঠে ৪২৬ সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা

গ্রাহকের ২,৬৩৫ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৪৬ বিমা কোম্পানি

১০০ বছর পর জানা গেল ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত