Ajker Patrika

তাজরীন ট্র্যাজেডি: ১১ বছরেও মেলেনি ক্ষতিপূরণ, হতাশা আর কষ্টই সঙ্গী

রিফাত মেহেদী, সাভার (ঢাকা)
আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০২৩, ১০: ৪৭
তাজরীন ট্র্যাজেডি: ১১ বছরেও মেলেনি ক্ষতিপূরণ, হতাশা আর কষ্টই সঙ্গী

‘আমাদের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে অনেক আন্দোলন করছি, অনেক যুদ্ধ করছি। আমাদের দীর্ঘমেয়াদি সুচিকিৎসা দিক; যাতে ছেলেমেয়েকে নিয়ে দুবেলা দুমুঠো ডাল-ভাত খেয়ে বাঁচতে পারি, চলতে পারি।’ এই কথাগুলো তাজরীন ফ্যাশনসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে স্বজনহারানো রেহানা আক্তারের। ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর ভয়াবহ সেই অগ্নিকাণ্ডে রেহানা বড় বোন, দুলাভাই, ভাগনে ও তাঁর স্ত্রীকে হারিয়েছেন।

সেই সময় কারখানার সুইং অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন রেহানা। বললেন, ‘ব্যাংক-ব্যালান্স, বাড়ি-গাড়ি কিছুই চাই না। কিন্তু কেউ আমাদের খোঁজখবর করতেছে না। আজ ১১টা বছর চলে গেল। ছেলেমেয়ে নিয়ে খুব কষ্টে আছি।’

তাজরীন ফ্যাশনসে সেই অগ্নিকাণ্ডে ১১৭ জন শ্রমিক মারা যান। আহত হন আরও কয়েক শ শ্রমিক। কারখানাটির ভেতর আটকা পড়লে অনেকে ছাদ থেকে ভবনের পাইপ বেয়ে নিচে নেমে জীবন বাঁচান। অনেকে আবার প্রাণ বাঁচাতে ছাদ ও জানালা থেকে লাফ দেন। বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের অনেকেই জানিয়েছেন, সেদিনের সেই দুঃসহ স্মৃতি এখনো তাঁদের তাড়িয়ে বেড়ায়। ট্র্যাজেডির ১০ বছরেও ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন না পেয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন এসব আহত শ্রমিক।

এমনই একজন ফাতেমা। আগুন থেকে বাঁচতে স্বামী রবিনকে নিয়ে চারতলা থেকে লাফিয়ে পড়েছিলেন গর্ভবতী ফাতেমা। আহত রবিন কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। চলতি বছর তিনি মারা যান। স্বামীর মৃত্যু, শিশুসন্তান জান্নাত ও ফাইজাকে নিয়ে টিকে থাকতে এখন একাই লড়াই করছেন ফাতেমা। তিনি বলেন, ‘চায়ের দোকান দেওয়ার দুই মাসের মাথায় মারা যায় আমার স্বামী। এখন দুই মেয়েকে নিয়ে আমার পক্ষে একা সংসার চালানো তো কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। চাওয়া এখন একটাই, ক্ষতিপূরণ।’

ফাতেমার মতো তাজরীনের আহত শ্রমিকেরা অনেকেই ভয়াল স্মৃতি আর রোগশোকে পার করছেন হতাশার জীবন।

আহত শ্রমিক নাজমা আক্তার। কাজ করতেন ওই কারখানার চতুর্থ তলায়। আগুন ছড়িয়ে পড়লে জানালা থেকে লাফ দিয়েছিলেন। এরপর আর মনে নেই কিছু। তিনি বলেন, ‘১১ বছর শেষ হয়ে ১২ বছরে পড়ল। দেবে দেবে বলে এত দিন গেল। কিছুই তো দিল না’ 
আহতদের পুনর্বাসনের দাবি তুলেছেন শ্রমিকনেতারাও। রয়েছে দোষীদের শাস্তির দাবিও। গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মো. সরোয়ার হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর আগুন লাগার পর কারখানা কর্তৃপক্ষ গেটে তালা লাগিয়ে শতাধিক শ্রমিককে পুড়িয়ে হত্যা করে। এ ঘটনার ১১ বছর পার হলেও দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হয়নি।

ইউনাইটেড ফেডারেশন অব গার্মেন্টস ওয়ার্কার্সের সাভার-আশুলিয়ার আঞ্চলিক সভাপতি মো. ইমন সিকদার বলেন, ‘১১ বছর পার হলো, এখনো বিচার হয় না। বিচার প্রক্রিয়াধীন। আমরা দেখেছি, নিজ উদ্যোগে আহত কিছু শ্রমিক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে। আমরা চাই, সরকার থেকে এবং বিজিএমইএ থেকে সহায়তা করে তাদের নিজেদের চলার মতো এবং চিকিৎসার খরচ মেটানোর যেন একটা ব্যবস্থা করা হয়।’

দেশের অর্থনীতির এই গুরুত্বপূর্ণ খাতে শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে সরকারকে আরও মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক বশির আহমেদ। এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘প্রতিবছর এই দিন এলেই আমরা তাদের কথা মনে করি। কিন্তু এরপরে সরকারের পক্ষ থেকে সামগ্রিকভাবে যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ, সেটাও আমরা লক্ষ করি না। মামলার দীর্ঘসূত্রতা চলছে। কিন্তু যারা এই মানবেতর পরিবেশে জীবন যাপন করছে, জীবন নিয়ে যারা ধুঁকছে, তাদের দিকে আমাদের তাকাতে হবে।’

নিহতদের স্মরণে প্রদীপ প্রজ্বালন
এদিকে তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বালন করেছেন নিহতদের স্বজন ও শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। গতকাল সন্ধ্যায় বন্ধ কারখানাটির সামনে মোমবাতি প্রজ্বালন করেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল-গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের নেতা-কর্মীরা। এ সময় উপস্থিত নেতা-কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত ভবন ভেঙে আহত শ্রমিকদের বাসস্থান নির্মাণ, সুচিকিৎসা, ক্ষতিপূরণসহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পাকিস্তানে কীভাবে হামলা চালাতে পারে ভারত, ইতিহাস যা বলছে

জনবল-সরঞ্জাম বেশি হলেও সমরশক্তিতে ভারত কি পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে

প্রবাসীর রেমিট্যান্সের অর্থ আত্মসাৎ, নারী ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে

ইতিহাস গড়ে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদে আইএসআইপ্রধান

ভারতের সঙ্গে সংঘাতে পাকিস্তানের ভাগ্যনিয়ন্তা সেনাপ্রধান জেনারেল মুনির

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত