Ajker Patrika

চলচ্চিত্র সংগঠনগুলোর কোনো মেরুদণ্ড নেই

শিহাব আহমেদ
চলচ্চিত্র সংগঠনগুলোর  কোনো মেরুদণ্ড নেই

ঢাকাই সিনেমার অ্যাকশন হিরো মাসুম পারভেজ রুবেল অভিনয় করেছেন আড়াই শর বেশি সিনেমায়। বেশ কিছু সিনেমা প্রযোজনা এবং পরিচালনাও করেছেন। ২০০৭ সালে মুক্তি পেয়েছিল রুবেল পরিচালিত সর্বশেষ সিনেমা ‘রক্ত পিপাসা’। বিরতি পেরিয়ে আবারও তিনি ফিরছেন পরিচালনায়। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শিহাব আহমেদ

শোনা যাচ্ছে, দুটি সিনেমা দিয়ে পরিচালনায় ফিরছেন...
আবার পরিচালনা শুরু করছি, এটা সত্য। তবে ‘স্বপ্নচূড়া’ ও ‘জানের দোস্ত’ এখনো শতভাগ চূড়ান্ত নয়। প্রযোজকের সঙ্গে সিনেমা দুটি নিয়ে কথা হয়েছে। পরিচালক সমিতিতে নাম নিবন্ধন করেছি। শুটিং শুরু করার আগপর্যন্ত ফাইনাল কিছু বলতে পারছি না। কারণ, অনেক সময় নাম নিবন্ধন করার পরও সিনেমার শুটিং ফ্লোরে গড়ায় না। তাই এখনই বিস্তারিত বলতে পারছি না। ‘বীর বাহাদুর’ নামের আরও একটি সিনেমা নিয়ে কথা হচ্ছে। সেটিতে অভিনয়ের পাশাপাশি যৌথভাবে পরিচালনা করতেও পারি।

সর্বশেষ ২০০৭ সালে ‘রক্ত পিপাসা’ বানিয়েছিলেন। এত দিন পর আবার পরিচালনায় আগ্রহী হলেন কেন?
সিনেমা এখন আর সিনেমার মানুষের কাছে নেই। বিষয়টি আমাকে পীড়া দেয়। কয়েক দিন আগে পত্রিকায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের খবরের ছবিতে দেখলাম, সেখানে সিনেমার কেউ নেই। সবাই টিভি নাটকের শিল্পী। এটার দায় সিনেমার মানুষদেরই নিতে হবে। চলচ্চিত্রই আমাকে রুবেল বানিয়েছে। চলচ্চিত্রের প্রতি সেই দায়বদ্ধতার কারণে আবার পরিচালনার কথা ভাবছি।

ঢাকাই সিনেমায় আপনি নতুন ধরনের অ্যাকশন নিয়ে এসেছিলেন। পরবর্তী সময়ে সেটার ধারাবাহিকতা আর থাকল না কেন?
২০০৬ সালের পর থেকে আমি সিনেমায় নিয়মিত নই। আমার বড় ভাই (সোহেল রানা) সব সময় একটা কথা বলতেন, রাজা থাকা অবস্থায়ই সিংহাসন ছেড়ে দিতে হয়। তাহলে সম্মান বাড়ে। আমি তাঁর কথামতো আমার চাহিদা থাকার সময়েই ইন্ডাস্ট্রি থেকে সরে এসেছি। এরপর কেউ সেটা ধরে রাখতে পারেনি, এটা দুঃখজনক। অনেকে চেষ্টা করেছে, কিন্তু নোংরা রাজনীতির কারণে এগোতে পারেনি। কারও নাম বলতে চাই না। তবে সিনেমার মানুষদের পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ এই রাজনীতি।

ঈদের উৎসব ছাড়া বাংলা সিনেমা এখন তেমন ব্যবসা করতে পারছে না। এর কারণ কী বলে মনে করেন?
সবচেয়ে বড় কারণ, হল কমে যাওয়া। আর হলের পরিবেশ। এ ছাড়া ভালো সিনেমার অভাব। সিনেমার সংখ্যাই তো কমে গেছে। বানালেই তো হবে না; মানুষকে সিনেমা দেখাতে হবে। এখন তো হলের সংখ্যা খুব কম। এত কমসংখ্যক হলে মুক্তি দিয়ে কি টাকা ফেরত আনা যায়? তবে আমি মনে করি, আমাদের দেশের দর্শকদের এখনো সিনেমার প্রতি ভালোবাসা আছে। ভালো সিনেমা ও পরিবেশ পেলে মানুষ হলে যাবে।

দেশে এখন একই দিনে হিন্দি সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে। শাহরুখের ‘জওয়ান’-এর পর এবার সালমানের ‘টাইগার থ্রি’ আসছে। এটা আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে কী প্রভাব ফেলবে?
এটা খুব দুঃখের বিষয় যে আমাদের দেশে হিন্দি ভাষার সিনেমা চলছে। বঙ্গবন্ধু যেখানে বলে গেছেন, এ দেশে হিন্দি, উর্দু ভাষার সিনেমা চলবে না। সেখানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন হিন্দি সিনেমা প্রদর্শনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আর অনন্য মামুন বাংলা সংস্কৃতিকে ধ্বংসের পথ সৃষ্টি করে দিয়েছে। সে বলছে, হিন্দি সিনেমা এলে প্রতিযোগিতা বাড়বে। তাঁর কাছে প্রশ্ন, যদি এমনটাই চিন্তা করে থাকেন, তাহলে তিনি কেন বাংলাদেশে সিনেমা না বানিয়ে বলিউডের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনার সিনেমা করছেন?

কিন্তু হিন্দি সিনেমা আমদানির জন্য তো চলচ্চিত্রের ১৯ সংগঠন একমত হয়েছে...
এ বিষয়ে কথা বলতে লজ্জা লাগে। আমাদের চলচ্চিত্র সংগঠনগুলোর আসলে কোনো মেরুদণ্ড নেই। হিন্দি সিনেমার সঙ্গে কোনোভাবেই আমাদের সিনেমা পেরে উঠবে না। বলিউডে শুধু একটি গানের বাজেট ৫ থেকে ১০ কোটি টাকা, যা আমাদের পুরো সিনেমার বাজেটেরও বেশি। হিন্দি সিনেমার কারণে আমাদের সিনেমার সংখ্যা আরও কমে যাবে। ইন্ডাস্ট্রির কলাকুশলীরা বেকার হয়ে পড়বে। এই কথাটা কেউ ভাবল না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত