Ajker Patrika

স্থাপনা নির্মাণ আর নদী ভাঙনে কমছে কৃষিজমি

সাইফুল ইসলাম, চরফ্যাশন (ভোলা)
আপডেট : ২০ মে ২০২২, ১৯: ০৬
স্থাপনা নির্মাণ আর নদী ভাঙনে কমছে কৃষিজমি

ফসলি জমি ভরাট করে অপরিকল্পিতভাবে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, বাড়িঘর নির্মাণ ও নদীভাঙনে ভোলার চরফ্যাশনে আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে কৃষিজমি। এতে উদ্বেগজনকভাবে উৎপাদনও কমে যাচ্ছে।

স্থানীয় কৃষকেরা জানিয়েছেন, ফসলি জমির আশেপাশে বাড়িঘর ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, ইটভাটার কারণে জমির পরিমাণ ও ফসলের চাষাবাদ কমে যাচ্ছে। তবে অপরিকল্পিতভাবে কৃষিজমি ভরাট হওয়ায় উপজেলায় আউশ, আমন, ইরি, বোরো ও রবিশস্য উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে।

চরফ্যাশন উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, উপজেলায় ৮৫ হাজার ১৯২ হেক্টর আবাদি জমি ও ৩ হাজার ৩৩৭ হেক্টর অনাবাদি জমি রয়েছে। প্রতিবছর শতকরা ১ শতাংশ কৃষিজমি অপরিকল্পিত বাড়িঘর নির্মাণে কমে যায়। আবাদি জমির মধ্যে চলতি মৌসুমে ২৭ হাজার ৮ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। এ ছাড়া সবজিসহ অন্যান্য মৌসুমি ফসল চাষ হয়েছে ৭৫ হাজার ৭২ হেক্টর জমিতে।

স্থানীয় বাসিন্দা বশির চকিদার (৬৫) পাঁচবারের ভাঙনে সবকিছু হারিয়ে নতুন বাড়ি করেছেন উপজেলার জিন্নাগর ইউনিয়নের কাশেমগঞ্জ এলাকায়। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তিনি সাক্ষী হয়েছেন অনেক দৃশ্যপটের। তিনি বলেন, ‘খড়-কুটোর ঘর, গবাদিপশু, চাষের জমি, এমনকি পরিবার ও জীবনসহ সবকিছুই বিপদের মুখে রেখে বসবাস করতে হয় নদীর তীরের মানুষদের। ঝড়-বন্যা আর ভাঙন আমাদের নিত্যসঙ্গী। এমনিতেই গরিব, তার ওপর আবার বসতভিটা, চাষের জমি, থাকার ঘরও খোয়া গেছে ভাঙনে। এ জন্য এখানে ৮ শতাংশ জমি কিনে বাড়ি করেছি।’

দক্ষিণ আইচা অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম কলেজের অধ্যক্ষ আবুল হাসেম মহাজন বলেন, ‘ফসল উৎপাদন কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে কৃষিজমির পরিমাণ ক্রমশ কমে যাওয়া। কয়েক বছর আগেও কৃষিজমির পরিমাণ যা ছিল তা বাড়ি নির্মাণ ও নদীভাঙনে অনেকটা কমে গেছে। অপরিকল্পিত বসতবাড়ি, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, ইটভাটা, পুকুর খননসহ নানা রকম স্থাপনা যত্রতত্র গড়ে উঠছে। এতে ফসলি জমি বিলীন হচ্ছে। ফলে কয়েক বছর পর কৃষি উৎপাদন মারাত্মকভাবে হ্রাস পাবে।’

চরফ্যাশন উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ঠাকুর কৃষ্ণ বলেন, ‘বর্তমানে একই আবাদি জমিতে বহুমুখী শস্যের চাষ হওয়ায় উপজেলায় খাদ্যে ঘাটতি নেই। তবে যেভাবে আবাদি জমির সংখ্যা কমে যাচ্ছে, তাতে এক সময় খাদ্যঘাটতি দেখা দিতে পারে। অপরিকল্পিতভাবে ভরাট হয়ে যাওয়ায় কমেছে কৃষিজমি। ফলে বাধ্য হয়ে কৃষকেরা পেশা বদলে ফেলছেন। কৃষিজমি সুরক্ষা আইন যথাযথভাবে কার্যকর করা দরকার।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল নোমান বলেন, ‘কৃষিজমি রক্ষা এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৃষিজমি আইন-২০২২, কার্যকর হলে কেউ অকৃষি কাজে কৃষিজমি ব্যবহার করলে জরিমানা ও কারাদণ্ড হবেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত