Ajker Patrika

ব্লাস্টে কৃষকের স্বপ্নভঙ্গ

মনিরামপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ১৮ এপ্রিল ২০২২, ১৩: ৫১
Thumbnail image

মনিরামপুরের টেংরামারীতে ব্লাস্টের হাত থেকে বোরো খেত রক্ষা করতে না পেরে ১৫ কাঠার কাঁচা ধানগাছ কাটে ফেলেছেন মোতালেব জমাদ্দার ভুট্ট নামের এক কৃষক। ধান না পেলেও অন্তত যেন বিচালী (খড়কুটো) বাড়ি তুলতে পারেন, সে জন্য তিনি গত শুক্রবার ধান কেটে শুকানোর জন্য মাঠে ফেলে রেখেছেন।

মোতালেব জমাদ্দার ভুট্ট নন, তাঁর মতো ৪ কাঠা জমির ধান আগে ভাগে কেটে ফেলেছেন কদমবাড়িয়া মাঠের প্রান্তিক চাষি নজরুল ইসলাম।

গতকাল রোববার সরেজমিন টেংরামারী বিলে গিয়ে দেখা গেছে, মোতালেব জমাদ্দার ভুট্টোর খেতের আশপাশের খেতগুলোর ধান এখনো সবুজ। ধান গাছে শিষ বের হয়ে কেবল গুটি বাঁধছে। আর ভুট্টর ১৮ কাঠা বোরো খেতের মধ্যে ১৫ কাঠা জমির ধানগাছ কাটা। বাকি ৩ কাঠার ধান সবুজ। সে অংশেও ব্লাস্ট ছড়াচ্ছে।

এ সময় কথা হয় ভুট্টর সঙ্গে। এ কৃষক বলেন, ‘মূলত ধানে পাক ধরতে আরও ১০-১৫ দিন লাগবে। তার আগেই আমার ধান কেটে ফেলতে হলো। পুরো খেত ব্লাস্টে আক্রান্ত হয়ে ধান চিটা হয়ে গেছে। দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছিল ধান পেকে গেছে।’

ভুট্ট বলেন, ‘ভ্যান চালিয়ে ৪ বিঘা ধান রোপণ করেছি। দুই খেতে ব্লাস্ট লেগেছে। একটা কোনো রকম বাঁচাতে পেরেছি। টেংরামারী বিলের ১৫ কাঠায় চারবারে ১ হাজার ৭০০ টাকার বিষ ছিটাইছি। কাজ হয়নি। উপায় না পেয়ে ধান কেটে দিছি।’

এ কৃষক বলেন, ‘১৫ কাঠায় অন্তত ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। পুরো জমিতে হয়তো ৩ মণ ধান পাব। তারপরও গরুর খাবার (বিচালীর) জন্য ধান কেটে দিছি।’

এদিকে গত শুক্রবার সকালে এ কৃষকের বোরো খেতে ব্লাস্ট আক্রমণের বিষয়ে কথা হয় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবুল হাসানের সঙ্গে। বিষয়টি জেনে পরপরই তিনি স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিল্লাল হোসেনের সমন্বয়ে কয়েকজন প্রতিনিধি পাঠান। তাঁরা দুপুর ১২টার দিকে টেংরামারী বাজারে পৌঁছান।

অভিযোগ রয়েছে, তাঁরা ওই কৃষকের ঠিকানা জানার পরও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ না করে টেংরামারী বাজার এলাকার মোতালেব হোসেন নামে অপর ব্যক্তিকে খুঁজে বের করে তাঁর ভিডিও সাক্ষাৎকার মোবাইলে ধারণ করেছেন। এ ব্যক্তি ভ্যানচালক হলেও বোরো চাষি নন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘আমরা যাঁকে পেয়েছি, তাঁর ভিডিও সাক্ষাৎকার নিয়েছি। মোতালেব জমাদ্দার ভুট্টকে পাইনি। আমরা সরেজমিন তাঁর খেত দেখে এসেছি। ব্লাস্টে ধান নষ্ট হয়েছে, এটা ঠিক।’

এ বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ভুট্ট বলেন, শুক্রবার সকাল থেকে আমি খেতে ছিলাম। কাউকে আসতে দেখিনি।

মোতালেব জমাদ্দার ভুট্ট বলেন, ‘কতবার ধান চাষ করেছি। কোনোবার কৃষি অফিসের কাউকে এলাকায় আসতে দেখিনি। কে আমাদের এলাকার দায়িত্বে আছেন তাও জানি না।’

এ দিকে বোরো খেতে ব্লাস্ট আক্রান্ত হওয়ায় ৪ কাঠা জমির ধান আগে ভাগে কেটে ফেলেছেন কদমবাড়িয়া মাঠের প্রান্তিক চাষি নজরুল ইসলাম। তাঁর খেতের দুপাশের দুটি খেত এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। ব্লাস্ট লেগে ১ বিঘা জমির এক-তৃতীয়াংশ বোরো খেত নষ্ট হয়েছে শেখপাড়া মাঠের চাষি মুজিবর রহমানের। এ ছাড়া উপজেলার রঘুনাথপুর, দেবিদাসপুর ও হাকোবা এলাকার কয়েকটি খেতে ব্লাস্ট দেখা গেছে।

মনিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবুল হাসান বলেন, ‘আমার লোক টেংরামারী বিলে গিয়ে ভুট্টর খেতের ছবি তুলে এনেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত ওই কৃষককে অফিসে যোগাযোগের পরামর্শ দিয়েছেন এ কর্মকর্তা। আমাদের উপসহকারীরা সব সময় কৃষকদের খোঁজ রেখে তাঁদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত