Ajker Patrika

কিছুই চোখে পড়েনি নির্বাচন কমিশনের

বিশেষ প্রতিনিধি ও নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৮ অক্টোবর ২০২২, ০৯: ২৪
কিছুই চোখে পড়েনি নির্বাচন কমিশনের

ভোটের আগে অস্ত্র নিয়ে মহড়া, টাকা বিতরণ, হামলার ঘটনা ঘটলেও গতকাল সোমবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত দেশের ৫৭ জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হয়েছে অনেকটা শান্তিপূর্ণভাবে। কিন্তু আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগের কোনো সুরাহা করেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হয়েছে ইভিএম তথা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের মাধ্যমে। আট জেলায় চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে দলীয় ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীদের কাছে হারলেও ৪৯ জেলায় জয়ী হয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থীরা। দিনাজপুরে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এবং পঞ্চগড়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। সব মিলিয়ে জেলা পরিষদের ৮৩ শতাংশ চেয়ারম্যান এখন আওয়ামী লীগের।

গাইবান্ধা-৫ আসনে উপনির্বাচনের এক সপ্তাহের মধ্যেই ভোটকেন্দ্রের গোপন কক্ষে একসঙ্গে একাধিক ব্যক্তির মতো কোনো অনিয়ম চোখে পড়েনি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি)। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করার তৃপ্তির ঢেকুর তুললেন সিইসি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, ‘আজ (সোমবার) গোপন কক্ষে কোনো দ্বিতীয় ব্যক্তি যাননি। অত্যন্ত সুন্দর, মার্জিত ও ভদ্রভাবে সবাই ভোট দিয়েছেন।’

মেয়র-ইউএনও বিতণ্ডা
ভোট চলাকালে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ বিবাদে জড়িয়েছেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সঙ্গে। গতকাল দলবল নিয়ে ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে বাধা দিলে নতুন ইউএনও মনিরুজ্জামানকে প্রকাশ্যে ‘স্টুপিড’ বলেন মেয়র। ওই সময় ইউএনও বারবার ‘প্লিজ, প্লিজ’ বলে অনুরোধ করলে মেয়র বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। আওয়ামী লীগ ঘরানার প্রার্থীরাও মেয়রের সঙ্গে ছিলেন। গতকাল সকালে মেয়রের নিজস্ব ফেসবুক আইডিতে এমন ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোড়ন ওঠে। 

আচরণবিধি লঙ্ঘন
পটুয়াখালীতে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য কাজী কানিজ সুলতানার দলবল নিয়ে ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনের ছবি ভাইরাল হয়েছে। পটুয়াখালী সদর উপজেলা পরিষদ ভোটকেন্দ্রে তিনি প্রবেশ করেন মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রীদের নিয়ে। বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনের ছবি ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে পোস্টও করেন তিনি।

ভোটের আগের রাতে পঞ্চগড়ে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র দুই প্রার্থীর বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ইটপাটকেল ছুড়ে এবং পোস্টার ছিঁড়ে হুমকি দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ওই ঘটনার পরপরই দুই প্রার্থী বিষয়টি জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে মৌখিকভাবে জানান। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পঞ্চগড় সদর থানা-পুলিশ। চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল হান্নান শেখ বলেন, ‘শনিবার রাতে মোটরসাইকেলের বহরে থাকা লোকজন আমার বাসভবন ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও গালিগালাজ করে। তারা আমাকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে বলে।’

চট্টগ্রাম-১৫ আসনের সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ পেয়েছে ইসি। অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে ওই সংসদ সদস্যকে চিঠিও দিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।

বরিশালে ৩ নম্বর (বাবুগঞ্জ) ওয়ার্ডের ৩২ ভোটারকে কুয়াকাটায় নিয়ে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে। সদস্য পদপ্রার্থী মাইনুল হোসেন পারভেজ মৃধার অভিযোগ, বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির সঙ্গে আলোচনার জন্য ওই ভোটারদের ডেকে নেওয়া হয়েছিল। পরে একটি মাইক্রোবাসে উঠিয়ে তাঁদের কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে নেওয়া হয়। আগরপুর ইউপির চেয়ারম্যান কামরুল আহসান হিমু অভিযোগ করেন, তাঁর ইউনিয়নের আট সদস্যকে কুয়াকাটায় নিয়ে যাওয়ার পর সবার ফোন বন্ধ। ভোটের দিন সকালে সরাসরি কেন্দ্রে আনার জন্য এমন করা হয়েছে। বরিশালের জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা জসীম উদ্দীন হায়দার জানান, তিনি মৌখিকভাবে অভিযোগটি পেয়েছেন। অভিযোগ তদন্ত করতে রোববার রাতে জরুরি নির্দেশনা পাঠিয়েছে ইসি।

 নির্বাচিত যাঁরা 
২৫ জেলার চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী হিসেবে বিনা ভোটে জয়ী হওয়ার ঘোষণা এসেছে আগেই। একই সঙ্গে বিভিন্ন জেলার ৬৫ জন সাধারণ সদস্য এবং ১৮ জন সংরক্ষিত সদস্য ভোট ছাড়াই বিজয়ের মালা পরেছেন। বাকি পদগুলোতে ৯২ জন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী, ৬০৩ জন সংরক্ষিত সদস্য এবং ১ হাজার ৪৮৫ জন সাধারণ সদস্য পদপ্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৬০ হাজার ৮৬৬ জন।

দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে তিন পার্বত্য জেলা বাদে ৬১ জেলায় নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত হয়েছে ৫৭ জেলায়। আদালতের আদেশে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নোয়াখালী জেলা পরিষদ নির্বাচন স্থগিত আছে।

আর ভোলা ও ফেনী জেলার সব পদে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তাই এই দুই জেলায় ভোট হয়নি। চেয়ারম্যান পদে বিনা ভোটে বিজয়ী ২৫ জনই আওয়ামী লীগ মনোনীত। দলীয় প্রতীকে এই নির্বাচন না হলেও আওয়ামী লীগ সব জেলার চেয়ারম্যান পদে একজন করে প্রার্থীকে সমর্থন জানিয়েছে। অন্যান্য দল প্রার্থী দেয়নি।

যেসব জেলায় চেয়ারম্যান পদে বিনা ভোটে প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন সেগুলোর মধ্যে আছে ঢাকা, গোপালগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, টাঙ্গাইল, সিলেট, সিরাজগঞ্জ, কুমিল্লা, কুড়িগ্রাম, জামালপুর, ঝালকাঠি, ঠাকুরগাঁও, নওগাঁ, নারায়ণগঞ্জ, পাবনা, পিরোজপুর, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, লালমনিরহাট, বাগেরহাট, ভোলা, মাদারীপুর, মৌলভীবাজার, শরীয়তপুর, বরগুনা ও বরিশাল।

গতকাল ভোট হওয়া বাকি জেলাগুলোর মধ্যে ফরিদপুর, নরসিংদী, পটুয়াখালী, সুনামগঞ্জ, রংপুর, ঝিনাইদহ, কক্সবাজার ও শেরপুরে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীরা।

এ ছাড়া পঞ্চগড়ে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন জেলা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আব্দুল হান্নান শেখ। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগ ‘মনোনীত’ আবু তোয়াবুর রহমান। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি।

দিনাজপুরে জেলা জাতীয় পার্টি-সমর্থিত প্রার্থী মো. দেলোয়ার হোসেনের কাছে হেরেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইমাম চৌধুরী এবং যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক তৈয়ব উদ্দিন চৌধুরী বিপুল।

‘বিদ্রোহী’দের জয় প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নির্বাচনী আইন অনুযায়ী জেলা পরিষদে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন না হওয়ায় এখানে আমাদের প্রার্থীর বাইরে যাঁরা দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের ওইভাবে বিদ্রোহী প্রার্থী বলা যায় না।’

অন্যান্য স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যাঁরাই ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হয়েছিলেন, তাঁদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আওয়ামী লীগ। অনেককে অব্যাহতিও দেওয়া হয়েছিল। তবে এ নির্বাচনের ক্ষেত্রে দলটি কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে জানা গেছে। 

সিইসির চোখে নির্বাচন
১ হাজার ৪০০টি ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন ভবন থেকে পুরো নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছে ইসি। গতকাল ভোট গ্রহণ শেষে প্রতিক্রিয়ায় সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটাররা শিক্ষিত, মার্জিত। তাঁরা ভদ্রভাবে ভোট দিয়েছেন। আজ আমাদের যে পর্যবেক্ষণ, তাতে বলা যায়, অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোথাও থেকে কোনো অনিয়ম, সহিংসতার তথ্য আসেনি। আমরা সন্তুষ্ট।’

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় নির্বাচনী সংস্কৃতিতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, এটা তাদের বিষয় নয়। এটা রাজনীতিবিদেরা বুঝবেন।

নির্বাচনে সিসি ক্যামেরার ব্যবহার নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘গাইবান্ধা নির্বাচন সিসিটিভির মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করে গুরুতর অনিয়ম লক্ষ করেছি। কমিশন বাধ্য হয়ে নির্বাচনটা বন্ধ করে দিয়েছে। সেখান থেকে একটা মেসেজ (বার্তা) এসেছে। যেহেতু নির্বাচন সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হয়, তাই অনিয়ম হলে সেটি বন্ধ করে দেওয়া যাবে। আমাদের মনে হয়, এর একটি পজিটিভ ইমপ্যাক্ট (ইতিবাচক প্রভাব) এই (জেলা পরিষদ) নির্বাচনে পড়েছে।’

কাজী হাবিবুল আউয়াল দাবি করেন, অনেকের যেমন আঙুলের ছাপ প্রথমে মেলেনি, পরে মিলেছে। একজনও ভোট দিতে পারেনি এমন হয়নি।

যদিও মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলায় আঙুলে মেহেদি থাকায় ভোট দিতে ব্যর্থ হন শেলিনা আক্তার। তিনি শিবালয় মডেল ইউনিয়ন পরিষদের ৪, ৫, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র নির্বাচিত হলেন মামদানি

জোট নয়, নির্বাচনী সমঝোতা করবে জামায়াত—জানালেন আমির

আজকের রাশিফল: অফিসে মিষ্টি কথায় মন গলবে বসের, প্রেমের ঝগড়ায় চ্যাটজিপিটিতে ভরসা নয়

বাংলা ভাষার সঙ্গে জোহরান মামদানির ঘরের সম্পর্ক, যোগসূত্র মা মীরা নায়ার

বুমরা-সূর্যকুমারকে শাস্তি দিল আইসিসি, নিষিদ্ধ পাকিস্তানি ক্রিকেটার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র নির্বাচিত হলেন মামদানি

জোট নয়, নির্বাচনী সমঝোতা করবে জামায়াত—জানালেন আমির

আজকের রাশিফল: অফিসে মিষ্টি কথায় মন গলবে বসের, প্রেমের ঝগড়ায় চ্যাটজিপিটিতে ভরসা নয়

বাংলা ভাষার সঙ্গে জোহরান মামদানির ঘরের সম্পর্ক, যোগসূত্র মা মীরা নায়ার

বুমরা-সূর্যকুমারকে শাস্তি দিল আইসিসি, নিষিদ্ধ পাকিস্তানি ক্রিকেটার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র নির্বাচিত হলেন মামদানি

জোট নয়, নির্বাচনী সমঝোতা করবে জামায়াত—জানালেন আমির

আজকের রাশিফল: অফিসে মিষ্টি কথায় মন গলবে বসের, প্রেমের ঝগড়ায় চ্যাটজিপিটিতে ভরসা নয়

বাংলা ভাষার সঙ্গে জোহরান মামদানির ঘরের সম্পর্ক, যোগসূত্র মা মীরা নায়ার

বুমরা-সূর্যকুমারকে শাস্তি দিল আইসিসি, নিষিদ্ধ পাকিস্তানি ক্রিকেটার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র নির্বাচিত হলেন মামদানি

জোট নয়, নির্বাচনী সমঝোতা করবে জামায়াত—জানালেন আমির

আজকের রাশিফল: অফিসে মিষ্টি কথায় মন গলবে বসের, প্রেমের ঝগড়ায় চ্যাটজিপিটিতে ভরসা নয়

বাংলা ভাষার সঙ্গে জোহরান মামদানির ঘরের সম্পর্ক, যোগসূত্র মা মীরা নায়ার

বুমরা-সূর্যকুমারকে শাস্তি দিল আইসিসি, নিষিদ্ধ পাকিস্তানি ক্রিকেটার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র নির্বাচিত হলেন মামদানি

জোট নয়, নির্বাচনী সমঝোতা করবে জামায়াত—জানালেন আমির

আজকের রাশিফল: অফিসে মিষ্টি কথায় মন গলবে বসের, প্রেমের ঝগড়ায় চ্যাটজিপিটিতে ভরসা নয়

বাংলা ভাষার সঙ্গে জোহরান মামদানির ঘরের সম্পর্ক, যোগসূত্র মা মীরা নায়ার

বুমরা-সূর্যকুমারকে শাস্তি দিল আইসিসি, নিষিদ্ধ পাকিস্তানি ক্রিকেটার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত