Ajker Patrika

প্যাডেল স্টিমার আর ফিরছে না

খান রফিক, বরিশাল
আপডেট : ১৩ মে ২০২২, ১১: ৫৮
প্যাডেল স্টিমার আর ফিরছে না

ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে মোরেলগঞ্জ পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের নদীতে একসময় চলত প্যাডেলচালিত স্টিমার। এ অঞ্চলের মানুষের কাছে বেশ গ্রহণযোগ্য ছিল রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিআইডব্লিউটিসির এই স্টিমারগুলো। কিন্তু ঐতিহ্যের সেই প্যাডেল স্টিমার আর যাত্রীসেবায় ফিরছে না। এগুলোর মধ্যে সর্বশেষ সেবা দেওয়া পিএস মাসউদ সংরক্ষণের পরিকল্পনা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বাকি দুটোকে করা হচ্ছে ভাসমান হোটেল। দেশের সরকারি এই নৌ সার্ভিসের এমন করুণ পরিণতিতে হতাশ বরিশালের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

জানা গেছে, এ পথে বর্তমানে এমভি মধুমতি ও এমভি বাঙ্গালী নামে মাত্র দুটি সরকারি জাহাজ সপ্তাহে দুই দিন সার্ভিসের মাধ্যমে কোনো রকম টিকে আছে। বিআইডব্লিউটিসি নিজেদের দৈন্যদশার কারণে গেল ঈদে ঢাকা, বরিশাল ও মোরেলগঞ্জ রুটে প্রথম বিশেষ সার্ভিস দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

এমভি মধুমতির মাস্টার আব্দুল হাই আজকের পত্রিকাকে বলেন, পিএস মাসউদ সার্ভিসে আনা হয়েছিল গত এপ্রিলের শুরুতে। কিন্তু ফিটনেস না থাকায় মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে দু-তিনটি ট্রিপ দিয়ে বাদামতলী ঘাটে রাখা হয়েছে। সম্ভবত সংরক্ষণ করবে এ জাহাজটি। এটিই ছিল প্যাডেল ইঞ্জিনচালিত সর্বশেষ স্টিমার। পিএস টার্ন এবং লেপচা করোনার আগে এ পথে চলত। ওই দুটি স্টিমারকে ভাসমান হোটেলে রূপ দেওয়ার জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। অস্ট্রিচও গেছে তিন-চার বছর আগে। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে প্যাডেলচালিত স্টিমার আর হয়তো সার্ভিসে আসছে না। সত্তরের দশকের আগে এই জাহাজগুলো ঢাকা, বরিশাল ও মোরেলগঞ্জ রুটে চলাচল করত।

মাস্টার হাই বলেন, তিনি একসময় পিএস মাসউদ চালিয়েছেন। প্যাডেল ইঞ্জিনচালিত এ ধরনের স্টিমার আর নেই। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য দুই পাশে প্রপেলার। এগুলোর স্পিড নেই, মান্ধাতার আমলের, কিন্তু ঐতিহ্যবাহী।

পিরোজপুরের ইন্দুরকানীর বাসিন্দা স্বাস্থ্যকর্মী মো. লাভলু বলেন, ঢাকা, চাঁদপুর, ঝালকাঠি, কাউখালী, হুলারহাট, চরখালী, মাছুয়া, সন্ন্যাসী ও মোরেলগঞ্জ রুটে একসময় স্টিমার বেশ জনপ্রিয় ছিল। বাবা-দাদার কাছে এ কথাই শুনেছেন। ব্যবসায়ীরা সাম্প্রতিক সময়েও রাজধানী থেকে সহজে মালামাল এনেছেন স্টিমারে। অথচ ঐতিহ্যবাহী এই সার্ভিসটিকে নানাভাবে অচল করা হয়েছে।

নৌযাত্রী ঐক্য পরিষদের বরিশাল জেলা আহ্বায়ক দেওয়ান আব্দুর রশিদ নীলু জানান, নদীপথে যাত্রীদের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিতে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন তাঁরা। ১২ দফার দাবিতে দক্ষিণাঞ্চলে স্টিমার সার্ভিস সপ্তাহে সাত দিন চালানোর কথা বলেছেন। লঞ্চের চেয়ে নিরাপদ সার্ভিস স্টিমার। তিনিও একসময় স্টিমারে চড়েছেন। এটি নিয়মিত চললে লঞ্চের হয়রানি রোধ হবে বলে আশা করেন নিলু।

এ প্রসঙ্গে বিআইডব্লিউটিসির বরিশালের ব্যবস্থাপক জসিম উদ্দিন বলেন, পিএস মাসউদ সার্ভিসে নেই। এটির ফিটনেস না থাকায় ডক ইয়ার্ডে রাখা হচ্ছে। পিএস টার্ন, লেপচাও চার্টারে দেওয়ার জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। তিনি বলেন, এগুলো আর হয়তো যাত্রী সার্ভিসে আসতে পারবে না।

বরিশালের বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অ্যাডভোকেট এস এম ইকবাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘লঞ্চের সিন্ডিকেটের কারণে সর্বনাশ করার চেষ্টা চলছে ঐতিহ্যবাহী স্টিমার সার্ভিসকে। প্যাডেল স্টিমার সার্ভিস ছিল আরামদায়ক ও বিলাসবহুল। স্টিমারে ভ্রমণের স্মৃতির শেষ নেই। স্টিমারে চড়েই বঙ্গবন্ধু বরিশালে এসেছিলেন। আমরা চাই এই ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য সরকার উদ্যোগ নেবে। পাকিস্তান আমলে স্টিমার ভিড়লে মানুষ দেখতে আসতেন। বাংলা সাহিত্যেও উঠে এসেছে স্টিমারের ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্য নষ্টের জন্য নানা ষড়যন্ত্র চলছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিশ্চয়ই এটি রক্ষা করবেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের বিপক্ষে সেমির আগেই ধাক্কা খেল অস্ট্রেলিয়া

পরমাণু শক্তিধর হতে চেয়েছিল তাইওয়ান, সিআইএ এজেন্টের বিশ্বাসঘাতকতায় স্বপ্নভঙ্গ

এলপি গ্যাস, তেল, আটাসহ বেশ কিছু পণ্যে ভ্যাট তুলে দিল এনবিআর

চ্যাম্পিয়নস ট্রফি: রিজার্ভ-ডেতেও সেমিফাইনাল না হলে হৃদয়বিদারক সমীকরণ

অমর্ত্য সেনের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় যা বললেন জামায়াতের আমির

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত