Ajker Patrika

উদ্বোধনের আগেই সড়কের ঢালে ধস

রানা আহমেদ, নলডাঙ্গা (নাটোর)
উদ্বোধনের আগেই সড়কের ঢালে ধস

নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার বাড়িয়াহাটি-সোনাপাতিল-শেরকুল আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রশস্তকরণের কাজে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। জমি অধিগ্রহণ না করে বসতবাড়ি ও কৃষিজমি থেকে মাটি কেটে সড়কে ফেলার অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে সড়কের পাশে গর্ত করে মাটি তোলায় ভূষণগাছা এলাকায় প্রায় ১০০ মিটার এবং আঁচড়াখালিতে ৫০ মিটার ঢাল উদ্বোধনের আগেই ধসে গেছে। 
কথা ছিল ২৭ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্তকরণের ক্ষেত্রে অন্য স্থান থেকে মাটি আনবেন ঠিকাদার। এ জন্য আলাদা বরাদ্দও ছিল। কিন্তু সেই শর্ত ভঙ্গ করা হয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ।

নাটোর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে জেলার নলডাঙ্গা উপজেলার বাড়িয়াহাটি কবরস্থান থেকে সোনাপাতিল-পাটুল হয়ে সিংড়ার শেরকুল পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার এক লেনের সড়কটি প্রশস্তকরণের উদ্যোগ নেয় সরকার। বরাদ্দ ছিল প্রায় ৫২ কোটি টাকা। তিনটি প্যাকেজে তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মইনউদ্দিন বাসী, মেসার্স মোজাহার এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স হাবিবুল আলম অ্যান্ড রানা বিল্ডার লিমিটেড এ কাজের চুক্তি করে। এর মধ্যে সড়কের যে অংশ ধসে গেছে সেই অংশের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মইনউদ্দিন বাসী হলেও সাব ঠিকাদার হিসেবে কাজ করেন নাটোরের সুজিত সরকার। ১২ ফুটের সড়ক ২৪ ফুট প্রশস্তকরণের কাজ ২০২০ সালে শেষ করার দুই বছর পর পিচ করাও শেষ হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ঠিকাদারের গাফিলতিতেই ভূষণগাছায় প্রায় ১০০ মিটার এবং আঁচড়াখালিতে ৫০ মিটার ধসে গেছে। ভূষণগাছা অংশটি নির্মাণের এক বছরের মাথায় প্রথম ধসে পড়ে। পরে ধসে যাওয়া অংশ মেরামতের পাঁচ মাসের মাথায় আবার ধসে পড়ল।

ভূষণগাছা গ্রামের আমিনুল ইসলাম বলেন, এ সড়কের নিচ থেকে ভেকু দিয়ে মাটি কাটা হয়। এ কারণে ১০০ মিটার সড়কের ঢাল পরপর দুইবার ধসে যায়। 
আঁচড়াখালি গ্রামের সাহাদুল ইসলাম বলেন, ‘ঠিকাদারের লোকজন জোর করে আমাদের ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি থেকে মাটি কেটে সড়কে ফেলেছেন। বাধা দিলে নানা ভয়ভীতি দেখিয়েছেন।’

আঁচড়াখালি গ্রামের সোহরাব হোসেন বলেন, ‘ঠিকাদারের লোকজন সড়কের পাশে আমার বাড়ির ভিটা থেকে মাটি জোর কাটতে চান। আমি বাধা দিই। কিন্তু আমার কোনো বাধা না মেনে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও রাজনৈতিক নেতাদের দিয়ে আমাকে হুমকি দেওয়া হয়। মাটি কাটতে না দিলে টাকা চাওয়া হয় আমার কাছে। ১৪ হাজার টাকা দিয়ে রেহাই পাই।’

আঁচড়াখালি গ্রামের রাহেলা বেগম বলেন, ‘সড়কের পাশে আমার বসতবাড়ি। জোর করে আমার বসতবাড়ির ঘরের ভেতর থেকে মাটি কেটে সড়কে ফেলেছে।’

২৭ কিলোমিটার এ সড়কের জমি অধিগ্রহণ না করে সড়ক নির্মাণ করায় জমির ক্ষতিপূরণ চেয়ে নাটোর আদালতে মামলা করেন বাঁশিলা গ্রামের উত্তম দাস। 
উত্তম দাস বলেন, ‘আমার পৈতৃক জমির ওপর দিয়ে এ সড়ক নির্মাণ করা হয়। আমি এ জমির ক্ষতিপূরণ চেয়ে আদালতে মামলা করি। আদালত এ সড়কের কাজ বন্ধ করতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন। পরে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সড়কের কাজ সম্পন্ন করা হয়। আমি কোনো ক্ষতিপূরণ পাইনি।’

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মইনউদ্দিন বাসীর প্রতিনিধি সুজিত সরকার বলেন, ‘সড়কের ভূষণগাছা অংশ সওজ বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী করা হয়েছে।

পরপর দুইবার এই অংশে সড়কের ঢাল ধসে গেছে। আমরা বালুর বস্তা ফেলে তা রক্ষা করার চেষ্টা করছি। সড়কের পাশ থেকে মাটি কাটার অভিযোগ সত্য নয়।’

মেসার্স মোজাহার এন্টারপ্রাইজের বরাদ্দ পাওয়া কাজ করেছেন ঠিকাদার আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘মাটির কাজের জন্য অন্য ঠিকাদারকে সাব-কন্ট্রাক্ট দেওয়া হয়েছিল। তাঁরা সড়কের পাশ থেকে মাটি কেটে সড়কে ফেলেছেন। পরে তাঁদের সাথে থাকা চুক্তি বাতিল করে নিজেরা মাটি ভরাটের কাজ করেছি।’

নাটোর সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রহিম বলেন, ‘ঠিকাদারেরা সড়কের পাশ থেকে মাটি কেটেছেন কি না, তা জানা নাই। অন্য স্থান থেকে মাটি কিনে এনে সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ করার চুক্তি ছিল। ব্যক্তিমালিকানার জমি থেকে মাটি কাটার অভিযোগ পাইনি। সড়কের ভূষণগাছা এলাকায় ১০০ মিটার অংশ ঢাল ধসে গেছে। এ অংশ ঠিকাদার মেরামত করে দেবেন।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত