Ajker Patrika

কষ্টে গড়া জীবন আগুনে শেষ!

তাসনীম হাসান, চট্টগ্রাম
আপডেট : ০৭ জুন ২০২২, ০৯: ৩৫
কষ্টে গড়া জীবন আগুনে শেষ!

মোহাম্মদ শাহজাহানের বয়স যখন এক মাস, তখনই তাঁর মা মারা যান। বাবা আরেক বিয়ে করে নতুন সংসার পাতেন। এরপর শাহজাহান হয়ে পড়েন পথশিশু। এখানে-ওখানে ধাক্কা খেতে খেতে বড় হন খুব কষ্টে। একটু বড় হতেই কাজ নেন কাভার্ডভ্যানের সহকারী হিসেবে। কয়েক বছরের প্রচেষ্টায় হন চালক।

স্বপ্নের দুনিয়াটা যেন একটু একটু করেই বড় হচ্ছিল এই তরুণের। সেই স্বপ্ন এত দ্রুত যে শেষ হয়ে যাবে কে জানত! সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে কনটেইনার ওঠানামার কাভার্ডভ্যান চালাতেন শাহজাহান। গত শনিবার রাতে সেই ডিপোতে বিস্ফোরণের পর আর তাঁর কোনো খোঁজ মিলছে না।

গতকাল সকালে শাহজাহানের খোঁজে ডিএনএ নমুনা দিতে এসেছিলেন তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তান। বাবার খোঁজে মুখের নমুনা দেয় ছয় বছরের রিহান আহমেদ। তার মা রেশমি বেগমেরও নমুনা নেওয়া হয়। তাঁদের আশঙ্কা, শাহজাহান আর বেঁচে নেই।

মেয়ে ও দুই নাতিকে নিয়ে হাসপাতালে আসেন মোহাম্মদ লিটন। লিটন নিজেও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালান। সেই আয়ে কোনোরকমে চলে সংসার। এখন শাহজাহানের কোনো খোঁজ না পাওয়ায় দুই নাতি আর মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে চোখে অন্ধকার দেখছেন লিটন।

বিস্ফোরণের একটু আগেও শাহজাহানের সঙ্গে কথা হচ্ছিল শ্বশুর লিটনের। মেয়ে জামাইয়ের সঙ্গে সর্বশেষ কথা বলার সেই স্মৃতিচারণ করেন লিটন এভাবে, ‘শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে শাহজাহানের সঙ্গে আমার কথা হয়। তখন সে বলছিল, তার গাড়ি ভেতরে নিরাপদে রেখে এসেছে। ভেতরে আরেকজন চালক অবস্থান করছে। তাকে নিয়ে একেবারে বের হবে। এর মধ্যে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। তারপর থেকে তার সঙ্গে আর কোনো কথা হয়নি।’

লিটন আক্ষেপের সুরে বলছিলেন, ‘শাহজাহানকে বারবার অনুরোধ করেছিলাম বের হয়ে আসতে। সে কোনো কথাই শুনল না। সে আগুনের ছবি তুলছিল। নিরাপদ দূরত্বে সরে গেলে আজ তাকে হারাতে হতো না।’

লিটন বলেন, ‘শাহজাহান খুব কষ্টে বড় হয়েছে। এক মাস বয়সে মা মারা যাওয়ার পর এখানে ওখানে দিন কেটেছে তাঁর। আট বছর আগে মেয়েকে তাঁর সঙ্গে বিয়ে দেন। দুই দিনেও খোঁজ পেলাম না। অলৌকিক কিছু না ঘটলে তাকে তো আর জীবিত পাব না। এখন যদি মরদেহটাও পাই, তাহলে মনকে সান্ত্বনা দিতে পারতাম। মরদেহটা মনসুরাবাদে তার মায়ের কবরের পাশে দাফন করতাম।’ বলতে বলতে লিটনের চোখ কান্নায় ঝাপসা হয়ে আসে, গলা ধরে আসে।

সেই কান্না সামলে উঠলেও লিটনের গলায় আবার দুঃখের সুর। বলেন, ‘গাড়ি চালিয়ে খুব কষ্টে সংসার চালাই। নিজের চার মেয়ে। দুজনকে বিয়ে দিয়েছি। এখন একজন স্বামীহারা হলো। মেয়ে আর দুই নাতিকে তো আগলে রাখতে হবে। কীভাবে যে সামনের দিনগুলো পাড়ি দেব, ভাবতেই যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত