Ajker Patrika

জিম্মি নাবিকদের ঘরে ফ্যাকাশে ঈদ

মো. ইমরান হোসাইন, কর্ণফুলী ও আব্দুল্লাহ আল মারুফ, কামারখন্দ
Thumbnail image

সোমালি জলদস্যুদের হাতে ভারত মহাসাগর থেকে জিম্মি হন বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক। ঘটনাটি ঘটেছিল ১২ মার্চ। এরপর প্রায় এক মাস পেরিয়ে যাচ্ছে, এখনো তাঁদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এদিকে আসছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। স্বজনেরা তাঁদের ফিরে পাওয়ার অপেক্ষায়। এ অপেক্ষায় রংহীন হতে যাচ্ছে ঈদ আনন্দ।

সোমালীয় জলদস্যুদের হাতে যাঁরা জিম্মি হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলার চার নাবিক রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে জাহাজের নূর উদ্দিন কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের আমিন শরীফের ছেলে। তাঁর সংসারে স্ত্রী ও চার বছরের এক ছেলে রয়েছে। আনোয়ারার মোহাম্মদ সামসুদ্দিন শিমুল বৈরাগ ইউনিয়নের উত্তর বন্দর বাসিন্দা। তাঁর সংসারে মা, স্ত্রী ও দুই মেয়ে রয়েছে। একই এলাকার বাসিন্দা সাজ্জাদ হোসেন। আসিফুর রহমান বৈরাগ ইউনিয়নের উত্তর বন্দর মেরিন একাডেমি এলাকার। তিনি পাঁচ মাস আগে চাকরিতে যোগ দেন।

জলদস্যুদের হাতে জিম্মি মোহাম্মদ সামসুদ্দিন শিমুলের মা সাগেরা বেগম বলেন, ‘ঈদে বড় আনন্দ হবে যদি ছেলেটাকে ফিরে পেতাম। বুকের ধন কবে ফিরবে জানি না। যেকোনো মূল্যেই আমার বুকের ধনকে ফিরে আনার আকুল আবেদন জানাচ্ছি।’

গত বছরের ২৭ নভেম্বর জাহাজে ওঠেন নাবিক মো. সাজ্জাদ হোসেন। এর আগের দিন ২৬ নভেম্বর একই গ্রামের এক মেয়ের সঙ্গে তাঁর কাবিন সম্পন্ন হয়। জাহাজ থেকে ফিরে আসার পর অনুষ্ঠান করে মেয়েটিকে ঘরে তুলে আনার কথা ছিল। এখন মেয়েটি এবং তাঁর পরিবারও সাজ্জাদকে নিয়ে চিন্তিত। সাজ্জাদের বাড়ি গিয়ে জানা গেল, বৃদ্ধ মা সমশাদ মোবাইলটা সব সময় কাছেই রেখেছেন। ছেলের একটি ফোনকলের আশায় দিন কাটছে তাঁর। তিনি বলেন, ‘গত বছর রোজায় ছেলে ঘরে ইফতার-সেহেরি খেয়েছে। ছেলেটা আজ নেই ঘরে। জিম্মি অবস্থায় কেমন আছে সেটাও জানি না।’ 

ছেলে যেন জীবিত ফেরে
ওই জিম্মি নাবিকদের মধ্যে রয়েছেন নাজমুল হক। বাড়ি সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার ভদ্রঘাট ইউনিয়নের চর-নুরনগর গ্রামে। গত রোববার ঘড়ির কাঁটায় সকাল ৭টা বেজে ৫ মিনিটে বাড়ির টিনের ফটকের সামনে দাঁড়াতেই নাজমুলের মা নার্গিস খাতুন ছুটে আসেন। জানতে চান তাঁর ছেলের কোনো খবর আছে নাকি? বলেন, ‘ঈদে সবাই বাড়ি আসে। কিন্তু আমার ছেলের কোনো খবর আসে না। আল্লাহ কাছে অনেক কান্নাকাটি করি, দোয়া করি। কিন্তু আমার ছেলে ফিরে এল না।’

নার্গিস বেগম বলেন, ‘আমার ছেলেসহ যাঁরা জাহাজে জিম্ম আছে, তাঁদের জন্য সব সময় দোয়া করি, যেন আমাদের ছেলেরা জীবিত ফিরে আসে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের ঈদ কেনাকাটা বলতে কিছু নেই। আমাদের সন্তানেরা বাড়ি ফিরে আসলেই ঈদ। গতবার ঈদে ছেলে বাড়িতে জামাকাপড় ও বাজার করার জন্য টাকা পাঠিয়েছিল। এবার আমার ছেলেও নাই টাকা পাঠানেরও কেউ নাই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত