Ajker Patrika

সেচ নিয়ে শঙ্কায় ৩৪ হাজার চাষি

মো. শফিকুল ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
আপডেট : ১১ জানুয়ারি ২০২২, ১২: ১১
সেচ নিয়ে শঙ্কায় ৩৪ হাজার চাষি

জ্বালানিসাশ্রয়ী একটি মডেল সেচ প্রকল্প হিসেবে পরিচিত ‘আশুগঞ্জ-পলাশ অ্যাগ্রো-ইরিগেশন প্রকল্প’। এই প্রকল্পের শুরু থেকেই সুবিধাভোগী কৃষকেরা নিরবচ্ছিন্ন ও কম খরচে সেচের সুবিধা পেয়ে আসছিলেন। কিন্তু গত বছরে আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে ভরাট হয়ে যায় প্রকল্পের প্রধান রিজার্ভার পুকুর ও ১১ কিলোমিটার নালা।

ফলে কিছুটা ব্যাহত হয় সেচসুবিধা। মহাসড়ক উন্নয়নে সেচসুবিধা বহাল রাখার দাবিতে এলাকায় বেশ কয়েকবার মানববন্ধন ও সমাবেশও করা হয়। কিন্তু সেচ মৌসুম শুরু হলেও এখনো সংস্কার করা হয়নি রিজার্ভার পুকুরসহ নালা।

এদিকে বেড়েছে ডিজেলের মূল্য। এ সবকিছু মাথায় রেখে প্রকল্পের ১৬ হাজার হেক্টর জমি অনাবাদি এবং ৭০ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন প্রকল্পের ৩৪ হাজার কৃষক। দ্রুত সেচব্যবস্থা চালুর দাবি জানান তাঁরা।

বিএডিসি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পের আওতাধীন আশুগঞ্জ-পলাশ অ্যাগ্রো-ইরিগেশন সেচ প্রকল্পটি দেশের একটি ব্যতিক্রমী পরিবেশবান্ধব কৃষি প্রকল্প হিসেবে পরিচিত। প্রকল্পের শুরু থেকেই সেচের পানি ধরে রাখতে এবং বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্গত গরম পানি ঠান্ডা করতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে আশুগঞ্জ রেলগেট এলাকায় স্থানীয় বিদ্যুৎ বিভাগের একটি পুকুরকে পানির প্রধান কুলিং রিজার্ভার হিসেবে ব্যবহার করে আসছে।

কিন্তু ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত মহাসড়ক উন্নয়নকাজের জন্য রিজার্ভার পুকুরটি মহাসড়কের পাশের প্রায় ১১ কিলোমিটার ড্রেন ভরাট করে। এতে সেচকাজ ব্যাহত হয়। ফলে গত বছর আশুগঞ্জ উপজেলার কিছু অংশে সেচসুবিধা দেওয়া সম্ভব হলেও সরাইল উপজেলার পানিশ্বর এলাকার কয়েক হাজার বিঘা জমিতে সেচের পানি পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।

কৃষকেরা বলেছেন, একদিকে ডিজেলের দাম বেড়েছে; অন্যদিকে প্রকল্পের সেচ না পাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ফলে প্রকল্পের ১৫ হাজার হেক্টর জমি অনাবাদি থাকার আশঙ্কায় রয়েছে। এতে কমপক্ষে ৭০ হাজার মেট্রিক ধান উৎপাদন ব্যাহত হবে।

সরেজমিন দেখা গেছে, আশুগঞ্জ রেলগেট এলাকায় রিজার্ভার পুকুরের বালু সরানো হয়নি। তবে পানির প্রধান চ্যানেলের (বক্স কালভার্ট) নির্মাণকাজ চলছে। ড্রেন করা হলেও তা যথেষ্ট প্রশস্ত নয়। তা ছাড়া সোনারামপুর-সোহাগপুর এলাকায় বেশ কয়েক স্থানে ড্রেন ভরাট হয়ে রয়েছে।

আশুগঞ্জে সুবিধাভোগী কৃষক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসেম আজাদ, বইগর গ্রামের সালাহ উদ্দিন, সরাইলের কৃষক আহম্মদ আলীসহ কয়েকজন বলেন, প্রকল্পটি সবার জন্য আশীর্বাদ। কেননা এতে সেচ খরচ যেমন কম, নদীর পানি সেচকাজে ব্যবহার করায় জমিতে সারও কম লাগে। প্রকল্পের পুকুর ও ড্রেন ভরাট করায় সেচ ব্যাহত হওয়ায় আশঙ্কায় রয়েছেন তাঁরা।

বিএডিসি (ক্ষুদ্র সেচ) আশুগঞ্জ কার্যালয়ে সহকারী প্রকৌশলী মো. খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমরা সেচ চালুর বিষয়ে সরেজমিন কাজ করছি। আগে ৩০-৪০ ফুট প্রশস্ত ড্রেন দিয়ে পানি গেলেও এখন তা ৫-১০ ফুট। ফলে সেচের পানিপ্রবাহ কিছুটা বাধাগ্রস্ত হতে পারে।’

বিএডিসি ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রকৌশলী রুবায়েত ফয়সাল আল মাসুম বলেন, ‘আমরা ফোর লেন কর্তৃপক্ষসহ সড়ক বিভাগের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। তাঁরা আশ্বস্ত করেছেন, পানি ছাড়ার ব্যবস্থা করবেন।’

আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত ফোর লেন কর্তৃপক্ষের প্রজেক্ট ম্যানেজার রিয়াজুর রহমান রাজন বলেন, ‘সেচসুবিধা চালু করতে কাজ চলমান। বিএডিসি কর্তৃক চিহ্নিত স্থানের বাধাগুলো অপসারণে কাজ করা হচ্ছে। আশা করি সেচের পানি ছাড়ার আগেই তা সম্ভব হবে।’

বিএডিসির প্রধান প্রকৌশলী (ক্ষুদ্র সেচ) মো. আব্দুল করিম প্রকল্পটিকে দেশের ব্যতিক্রমী ও কম খরচের সেচ প্রকল্প উল্লেখ করে মুঠোফোনে জানান, এই প্রকল্পের ৭০ ভাগ জ্বালানি সাশ্রয় হয়। সেচের পানি অবশ্যই ছাড়া হবে এবং সেচ সচল রাখতে একটি স্থায়ী ও বৃহৎ প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রশিক্ষণ ছাড়াই মাঠে ৪২৬ সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা

গ্রাহকের ২,৬৩৫ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৪৬ বিমা কোম্পানি

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

১০০ বছর পর জানা গেল ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়: তিন দফা দাবিতে সোমবার মাঠে নামছেন শিক্ষার্থীরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত