Ajker Patrika

ডেঙ্গুতে আতঙ্ক নয়, সতর্ক হোন

ডা. মো. আরমান বিন আজিজ  
আপডেট : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৯: ৪৯
ডেঙ্গুতে আতঙ্ক নয়, সতর্ক হোন

ডেঙ্গু ভাইরাস বা ডেঙ্গি ভাইরাস হলো ফ্ল্যাভিভাইরিডি পরিবার ও ফ্ল্যাভিভাইরাসদের অন্তর্ভুক্ত মশাবাহিত এক সূত্রক আরএনএ ভাইরাস। এটি ডেঙ্গু জ্বরের জন্য দায়ী।

ডেঙ্গু জ্বরের সময়
সাধারণত মে থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত, বিশেষ করে গরম ও বর্ষার সময় ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বেশি থাকে। শীতকালে সাধারণত এই জ্বর হয় না। তবে অপরিচ্ছন্নতা ও অব্যবস্থাপনার দরুন বর্তমানে কমবেশি সারা বছরই এর প্রকোপ বেড়ে চলেছে।

কাদের বেশি হয়
সাধারণত শহর অঞ্চলে, অভিজাত এলাকায়, বড় বড় দালানকোঠায় এডিস মশার প্রাদুর্ভাব বেশি। তাই ডেঙ্গু জ্বরও সেসব এলাকার বাসিন্দাদের বেশি হয়। ডেঙ্গু ভাইরাস চার ধরনের। তাই ডেঙ্গু জ্বরও চারবার হতে পারে। তবে যারা আগেও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে রোগটি হলে সেটি মারাত্মক হওয়ার ঝুঁকি থাকে; বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে এটি বেশি দেখা যায়।

ডেঙ্গুর লক্ষণ

  • ক্ল্যাসিক ডেঙ্গু জ্বরে সাধারণত তীব্র জ্বর ও সেই সঙ্গে শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। জ্বর ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়।
  • শরীরে, বিশেষ করে হাড়, কোমর, পিঠসহ অস্থিসন্ধি ও মাংসপেশিতে তীব্র ব্যথা হয়। এ ছাড়া মাথাব্যথা ও চোখের পেছনে ব্যথা হয়।
  • জ্বর হওয়ার চার বা পাঁচ দিনের সময় শরীরজুড়ে লালচে দানা দেখা যায়। এই স্কিন র‍্যাশ অনেকটা অ্যালার্জি বা ঘামাচির মতো।
  • বমি বমি ভাব এমনকি বমি হতে পারে।
  • অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ এবং রুচি কমে যায়।
  • কোনো কোনো রোগীর ক্ষেত্রে এর দুই বা তিন দিন পর আবার জ্বর আসে। 

ডেঙ্গু জ্বরের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। তবে এই জ্বর সাধারণত নিজে নিজেই ভালো হয়ে যায়। তাই উপসর্গ অনুযায়ী সাধারণ চিকিৎসাই যথেষ্ট। 

কয়েক বছর হলো লিভার আক্রান্ত হওয়া ডেঙ্গু জ্বরের নতুন উপসর্গ হিসেবে দেখা দিয়েছে। এতে রোগী দুর্বল বোধ করে, খেতে পারে না, বমি হয়, লিভার ব্যথা করে। এটি সাধারণত জ্বর কমে যাওয়ার পরপর দেখা দেয় এবং পাঁচ থেকে সাত দিন থাকতে পারে। ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর ও ডেঙ্গু শক সিনড্রোম ডেঙ্গুর দুটি জটিল অবস্থা। এ দুটির কারণে কখনো কখনো প্রাণ সংশয় হতে পারে। 

কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন
ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত নিজে নিজেই ভালো হয়ে যায়। তাই উপসর্গ অনুযায়ী সাধারণ চিকিৎসাই যথেষ্ট। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো।
যেমন,

  • শরীরের যেকোনো অংশে রক্তপাত হলে
  • প্লাটিলেটের মাত্রা কমে গেলে
  • শ্বাসকষ্ট হলে বা পেট ফুলে পানি এলে
  • প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলে
  • জন্ডিস দেখা দিলে
  • অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দুর্বলতা দেখা দিলে
  • প্রচণ্ড পেটে ব্যথা বা বমি হলে।

কী কী পরীক্ষা করা দরকার
অধিকাংশ ক্ষেত্রে ডেঙ্গু জ্বর হলে খুব বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার দরকার নেই। তবে চিকিৎসকের পরামর্শে কিছু পরীক্ষা করানো দরকার হতে পারে। এগুলোর মধ্যে সিবিসি ও প্লাটিলেট পরীক্ষা, ডেঙ্গু অ্যান্টিবডির পরীক্ষা অন্যতম। জ্বরের চার থেকে পাঁচ দিন পর এ পরীক্ষাগুলো করাতে হবে। তবে চিকিৎসক চাইলে এসজিপিটি, এসজিওটি, এলকালাইন ফসফাটেজ, প্রোথ্রোম্বিন টাইম, এপিটিটি, ডি-ডাইমার ইত্যাদি পরীক্ষাও করাতে হতে পারে। 

যা করতে হবে

  • সম্পূর্ণ ভালো না হওয়া পর্যন্ত বিশ্রামে থাকতে হবে।
  • যথেষ্ট পরিমাণে পানি, শরবত, ডাবের পানি ও অন্যান্য তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে।
  • খেতে না পারলে দরকার হলে শিরাপথে স্যালাইন দেওয়া যেতে পারে।
  • জ্বর কমানোর জন্য শুধু প্যারাসিটামল-জাতীয় ওষুধই যথেষ্ট। এসপিরিন বা ডাইক্লোফেনাক-জাতীয় ব্যথার ওষুধ কোনোক্রমেই খাওয়া যাবে না। এতে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়বে।
  • জ্বর কমানোর জন্য ভেজা কাপড় দিয়ে গা মোছাতে হবে।
  • সর্বোপরি জ্বর ও আনুষঙ্গিক সমস্যা তীব্রতর হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। কোনোমতেই ঝুঁকি নেওয়া উচিত হবে না।

প্রতিরোধই সর্বোত্তম ব্যবস্থা

ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধের মূল মন্ত্রই হলো এডিস মশার বিস্তার রোধ এবং এই মশা যেন কামড়াতে না পারে তার ব্যবস্থা করা।

  • বাড়ির আশপাশের ঝোপঝাড়, জঙ্গল, জলাশয় ইত্যাদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
  • এডিস মশা স্বচ্ছ পানিতে ডিম পাড়ে। তাই ফুলদানি, অব্যবহৃত কৌটা, ডাবের খোসা, পরিত্যক্ত টায়ার ইত্যাদি সরিয়ে ফেলতে হবে।
  • ঘরের বাথরুমে বা কোথাও জমানো পানি পাঁচ দিনের বেশি রাখা যাবে না। অ্যাকুয়ারিয়াম, ফ্রিজ বা এয়ারকন্ডিশনারের নিচেও পানি জমা থাকা যাবে না।
  • এডিস মশা সাধারণত সকালে ও সন্ধ্যায় কামড়ায়। তবে অন্য কোনো সময়ও কামড়াতে পারে। তাই দিনের বেলা শরীরে ভালোভাবে কাপড়ে ঢেকে বের হতে হবে, প্রয়োজনে মসকুইটো রিপেলেন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। ঘরের দরজা-জানালায় নেট লাগাতে হবে।
  • দিনের বেলায় মশারি টাঙিয়ে অথবা কয়েল জ্বালিয়ে ঘুমাতে হবে।
  • বাচ্চাদের যারা স্কুলে যায়, তাদের হাফপ্যান্ট না পরিয়ে ফুলপ্যান্ট পরিয়ে স্কুলে পাঠাতে হবে।
  • মশা নিধনের স্প্রে, কয়েল, ম্যাট ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে মশার কামড় থেকে বাঁচার জন্য দিনে ও রাতে মশারি ব্যবহার করতে হবে।
  • ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে অবশ্যই সব সময় মশারির মধ্যে রাখতে হবে।

লেখক: চক্ষুরোগ ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ  সাবেক ফ্যাকাল্টি মেম্বার ও প্রশিক্ষক, চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাকা দিয়ে নারীর চাবুকের ঘা খাচ্ছিলেন পুরুষ, দুজন গ্রেপ্তার

ভারতের সঙ্গে সংঘাতে পাকিস্তানের ভাগ্যনিয়ন্তা সেনাপ্রধান জেনারেল মুনির

প্রবাসীর রেমিট্যান্সের অর্থ আত্মসাৎ, নারী ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে

পাকিস্তানে কীভাবে হামলা চালাতে পারে ভারত, ইতিহাস যা বলছে

আইসিএক্স বাদ দিলে ঝুঁকিতে পড়বে দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব, বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত