Ajker Patrika

অনুমোদনহীন সাপের খামার বন্ধের উদ্যোগ

মীর মো. মহিব্বুল্লাহ, পটুয়াখালী
আপডেট : ১২ জুন ২০২২, ১১: ৪৩
অনুমোদনহীন সাপের খামার বন্ধের উদ্যোগ

পটুয়াখালী সদর উপজেলার নন্দিপাড়া এলাকার আব্দুর রাজ্জাক বিশ্বাসের বিষধর সাপের খামারের অনুমোদন মেলেনি। বন বিভাগ এটি বন্ধ করে সাপগুলো নিরাপদ স্থানে অবমুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে। গত মাসে সাপের কামড়ে এক কর্মচারীর মৃত্যু হওয়ায় এ খামার বন্ধ করতে নড়েচড়ে বসেছে বন বিভাগ।

রাজ্জাক বিশ্বাসের দাবি সরকারের সব নিয়ম মেনেই খামার পরিচালনা ও অনুমোদনের জন্য তিনি আবেদন করেছেন। এটি অনুমোদন পেলে এবং বিষ উৎপাদন করতে পারলে বছরে সরকারকে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব দেওয়া সম্ভব হবে।

জানা গেছে, আব্দুর রাজ্জাক ২০০০ সালে তাঁর বাড়ির আঙিনায় ১টি কিং কোবরা সাপ এবং ২৪টি ডিম দিয়ে খামার শুরু করেন। বর্তমানে তাঁর খামারে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ধরে আনা বিষধর কালো গোখরা, খইয়া গোখরা, কিং কোবরা পঙ্খিরাজ, কেউটে দাঁড়াশ, বাসুয়া কালকুলিন, সাদা গোমা, পদ্ম গোমা, বিষঝুড়ি ও গোড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৩০০ বিষধর সাপ রয়েছে। তবে গত ২৭ মে সাপের কামড়ে তাঁর খামারের জব্বার তালুকদার নামের (৪০) এক কর্মচারীর মৃত্যুর হয়। এরপরই খামারটি বন্ধ করতে নড়েচড়ে বসেছে বন বিভাগ।

ইতিমধ্যে গত ৩০ মে বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের কর্মকর্তারা ও পটুয়াখালী বন বিভাগ কর্তৃপক্ষ রাজ্জাকের খামার পরিদর্শন করেন ও নিহত ওই শ্রমিকের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেন। গত ৩১ মে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট থেকে রাজ্জাকের খামারটি বন্ধসহ তাঁর সাপ বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করতে বলা হয়। তবে এ বিষয়ে রাজ্জাক কোনো চিঠি পাননি।

রাজ্জাক বিশ্বাস জানান, ২০০৮ সালে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বেসরকারি পর্যায়ে সাপের খামার স্থাপনের জন্য আবেদন করেন। সেই আবেদনের আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। পরে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আবেদন করেন। ২০১৪ সালের ২৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক ড. মো. সহিদুল্যাহ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর চিঠি দেন। এতে রাজ্জাকের মালিকানাধীন ‘বাংলাদেশ স্নেক ভেনম’ একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ বলে বিধিমোতাবেক খামার অনুমোদনের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়।

প্রথম দিকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় খামারের অনুমোদনের প্রক্রিয়া শুরু করলেও বন বিভাগ এ ক্ষেত্রে আপত্তি জানায়। এরপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে বিষয়টি অবহিত করা হয়। তখন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আইনগত মতামত দেওয়ার জন্য বন বিভাগের কাছে চিঠি করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সাপের খামারের অনুমোদন দেওয়ায় প্রক্রিয়া বন্ধ রেখে বন বিভাগ একটি খসড়া আইন তৈরি করে।

রাজ্জাক বিশ্বাস আরও বলেন, ২০১৭ সালের ৩১ অক্টোবর খামার নিবন্ধনের জন্য ২৫ হাজার টাকা ব্যাংকে জমা দেন। সর্বশেষ ২০১৯ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মতিউল ইসলাম চৌধুরী সাপের খামার সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠান। পটুয়াখালী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সাপের খামার পরিদর্শন করেন। তবে নীতিমালায় সাপের খামারে অ্যান্টি ভেনম সংরক্ষণ করা এবং সাপের বিষ সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকার কথা বলা হয়। আর লাইসেন্স না থাকায় রাজ্জাক বিশ্বাস অ্যান্টি ভেনম সংগ্রহ করতে পারেননি। রাজ্জাক বিশ্বাস প্রধান বন সংরক্ষক বরাবর গত ১৭ এপ্রিল একটি আবেদন করে খামার বন্ধ করা ও সাপ ছেড়ে দেওয়ার নোটিশটি প্রত্যাহারের আবেদন করেন।

এ বিষয়ে উপকূলীয় বন বিভাগ পটুয়াখালী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘লাইসেন্স ছাড়া সাপের খামার করা বেআইনি। সাপের ভিডিও তৈরি করে ইউটিউবে আপলোড করেন। তাই খামারটি বন্ধ করে সাপগুলোকে অবমুক্ত করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছি। ইতিমধ্যে টেকনিক্যাল সাপোর্টের জন্য অধিদপ্তরকে জানানো হয়েছে। সাপোর্ট পেলে সাপগুলোকে উদ্ধার করে অবমুক্ত করা হবে।’

পটুয়াখালী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি খামারটি পরিদর্শন করেছি। নিয়ম অনুযায়ী তাঁর খামারে অ্যান্টি ভেনমসহ বিষ সংগ্রহ এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থাকার কথা, কিন্তু তা নেই। সে কারণে অনুমোদন দেওয়া সম্ভব হয়নি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত