Ajker Patrika

প্লাস্টিকের ভিড়ে জৌলুশ হারাচ্ছে গ্রামীণ মেলা

হোসাইন আহাম্মেদ সুলভ, মুক্তাগাছা
আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১: ৫৪
Thumbnail image

মুক্তাগাছায় হাতের নাগালে একবার ব্যবহার উপেযাগী সামগ্রী ও মেশিনে তৈরি গৃহস্থালি পণ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় পৌষ-মাঘের গ্রামীণ মেলা দিন দিন জৌলুশ হারাচ্ছে। উপজেলার গ্রামাঞ্চলের অর্থনীতির ফুসফুস হিসেবে খ্যাত এসব মেলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কুটির শিল্পের কারিগর এবং বিপণনকারীরা অন্য পেশা বেছে নিচ্ছেন। এ ছাড়া লোকসান গুনছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরাও। এ অবস্থায় ধুকতে থাকা গ্রামীণ এই ঐতিহ্য ধরে রাখা উদ্যোগ নেওয়ার দাবি অনেকের।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কারাখানায় তৈরি গৃহস্থালি পণ্য হাতের নাগালে থাকায় এবং প্লাস্টিক পণ্যের দাপটে বিক্রি কমেছে গ্রামীণ কুটির শিল্পে তৈরি পণ্যের। এর ফলে বিপাকে রয়েছেন কুটিরশিল্পীরাও। পৌষ ও মাঘ মেলার ওপর ভরসা করেই কোনো রকমে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছেন তাঁরা। ওই মেলাই কিছু বিক্রি হয়। এ জন্য সারা বছর ওই সময়ের মেলার দিকে তাকিয়ে থাকেন তাঁরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মুক্তাগাছা বিভিন্ন স্থানে বসে মেলা। এর মধ্যে উত্তরবাহিনী মেলা, রামচন্দ্রপুর, বানার পাড়, দরগার মেলা, বাসন্তীপূজার মেলা, ছাপ্পান্ন প্রহর মাঠ মেলা, বাঁশাটির মেলা, চঙ্গের মেলা (কাশিমপুর-খেরুয়াজিন সীমান্তে) রয়েছে। এসব মেলা গ্রামীণ মেলা হিসেবে পরিচিত। এগুলো সাধারণত এক দিনের হয়। তবে কোথাও কোথাও একাধিক দিনও চলে। মেলা উপলক্ষে ব্যস্ততা তুঙ্গে ওঠে কুটিরশিল্পীদের।

উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি ও সনাক সদস্য হেলাল উদ্দিন নয়ন বলেন, ‘আগে দিনের গ্রামীণ মেলায় অন্যরকম আমেজ ছিল। এখনকার ছেলে-মেয়েরা সেই মেলার মজা কখনোই বুঝবে না।’

জানা গেছে, এখন কোথাও চলছে শেষ মুহূর্তের কাজ। কোথাও বা চলছে শিল্পসামগ্রী বাঁধার প্রস্তুতি। কার্যত ঘুম নেই কুটির শিল্পীদের। এক সময় উপজেলার দুল্লা বড়গ্রাম, তারাটি, কুমারগাতা, বাঁশাটি, মানকোন, ঘোগা, দাওগাঁও, খেরুয়াজানি ইউনিয়ন ও পৌরসভার শহরতলিতে কামার, কুমার, তাতি, ধোপা, ক্ষৌরকার সম্প্রদায়ের জীবিকার উৎস ছিল নিজেদের তৈরি শিল্পকর্ম। শিল্পসামগ্রী বিক্রি করে ভাত-কাপড়ের সংস্থান হতো। কিন্তু অনেকই বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে চলে গেছেন অন্য পেশায়।

নিবারণ, কানাই, সনাতন, হুরমুজ আলী ও সালাম মিয়া জানান, বেচাকেনা কমে যাওয়ায় সরাই বানানো, মাটির পাত্র, বেত-বাঁশের তৈরি সামগ্রী তৈরি সহায়ক পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক দিনের মেলায় এখনো বিক্রি হয় বলেই মাস খানিক আগে থেকে শিল্পসামগ্রী তৈরি করে রাখেন তাঁরা।

মুক্তাগাছা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এম ইদ্রিস আলী বলেন, ‘মেলার প্রয়োজন আজও ফুরিয়ে যায়নি। যন্ত্র সভ্যতার যুগেও হাতা, খন্তি, ঝুড়ি, কুলা, দা, বটির মতো কিছু প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনার জন্য মেলায় যেতেই হয়। গ্রামের লোকেদের মিলিত হওয়ার সব থেকে বড় জায়গা গ্রামীণ মেলা। মেলাগুলো মুক্তাগাছার অর্থনীতির ফুসফুস। এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে হবে।

উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরব আলী বলেন, ‘গ্রামীণ মেলাকে কেন্দ্র করে এলাকার ঘরে ঘরে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হতো। গ্রামীণ সংস্কৃতি নতুন প্রজন্মকে জানাতে হলে মেলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত