চিররঞ্জন সরকার
বসন্ত এসেছে। বাংলা ভাষার গায়ে বসন্তের ফুরফুরে বাতাস লেগেছে, তা অবশ্য বলা যাবে না; বরং চারদিকের পরিবেশ-পরিস্থিতিতে বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
যাদের বয়স কম, তারা ভবিষ্যতে কোন ভাষা বেশি ব্যবহার করবে, তার ওপরেই ভিত্তি করে গড়ে ওঠে ভাষার ভবিষ্যৎ। আমাদের দেশে উঠতি মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তরা কিন্তু ক্রমেই বাংলা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ তাই নির্ভর করছে পাঁচ থেকে পঁয়তাল্লিশের মধ্যবর্তী বয়সী বাঙালিরা ভাষা নিয়ে কী ভাবছেন, তার ওপর।
এই পাঁচ থেকে পঁয়তাল্লিশ নানা অর্থনৈতিক শ্রেণির অন্তর্গত, ঊর্ধ্বসীমার দিকে যাঁরা আছেন, সেই পঁয়ত্রিশ থেকে পঁয়তাল্লিশ হলেন এখনকার কম বয়সী বাবা-মা। তবে যে অর্থনৈতিক শ্রেণিরই অন্তর্গত হোন না কেন, সবাই কম-বেশি স্বপ্ন দেখেন, নিজেদের ছেলেমেয়েকে ভালো করে পড়াশোনা শিখিয়ে মানুষ করবেন। এই স্বপ্নে ভাষার একটা
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।
আগে স্কুল-কলেজগুলোতে বাংলা ভাষাতেই লেখাপড়া হতো। এখনো হয়। তবে ইংরেজি দিন দিন তার আসন পাকাপোক্ত করে নিচ্ছে। মুক্তবাজার অর্থনীতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শিক্ষাও অর্থকরী বিষয়ে পরিণত হয়েছে। যাদের টাকা আছে তারা ভালো-স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। আর বর্তমানে ‘ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান’ মানে হচ্ছে ইংরেজি-প্রধান শিক্ষা। গরিবেরা পড়ছে সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। আর তুলনামূলক ধনীরা পড়ছে ইংরেজি-প্রধান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। এভাবে এই দুই শ্রেণির শিক্ষা, বুঝ,
চিন্তা, মূল্যবোধ, স্টাইল—সবকিছুই আলাদা হয়ে যাচ্ছে।
ক্রমেই ইংরেজিবিহীন সহজ বাংলা মিডিয়ামের প্রতি আস্থা কমে যাচ্ছে মধ্যবিত্ত আর উচ্চবিত্তদের। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের রমরমা ব্যবসা চলছে। ধনী পরিবারের সন্তানদের মধ্যে বাংলা ভাষার ব্যবহারযোগ্যতা কমেছে। যাঁদের বয়স পঁয়ত্রিশ থেকে পঁয়তাল্লিশ, সেই অভিভাবকেরা কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও এখন ছেলেমেয়েদের বাংলা মাধ্যমে পাঠাতে পারেন না। কারণ ভালো বাংলা মিডিয়াম স্কুল প্রায় নেই। ফলে ইংলিশ মিডিয়াম অনিবার্য ভবিতব্য হয়ে উঠছে।
আমাদের দেশে উচ্চবিত্তদের একটা অংশ দলে দলে ইউরোপ-আমেরিকায় পাড়ি জমাচ্ছেন। বাংলা ভাষার সঙ্গে তাঁদের ছেলেমেয়েদের যোগ কমছে। এভাবে দেশে স্পষ্ট দুটি শ্রেণি গড়ে উঠছে। যাঁরা অর্থনৈতিকভাবে সবল তাঁরা ইংরেজির চর্চা করছেন। আর গরিব চাষাভূষারা বাংলা নিয়ে পড়ে আছেন। ব্যবসা-চাকরি সবখানে ইংরেজি জানাদের আধিপত্য, কদর। বাংলাওয়ালাদের জন্য ব্লগ আর ফেসবুকে হতাশার পদ্য রচনা ছাড়া আপাতত তেমন কোনো পুরস্কার নেই!
সত্যিকার অর্থে বাংলা ভাষার অবস্থা আজ বড়ই করুণ। এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের বাংলা উচ্চারণের দশা দেখলে আত্মারাম খাঁচা ছেড়ে পালাতে চায়। কে যে কী ‘অ্যাকসেন্টে’ বাংলা বলে! সেই বিচিত্রবাদিনী রাত্রিদিন বাংলা ব্যান্ড, বাঙালির এফএম, বাঙালির চ্যানেলে নৃত্য করছে। একটা বাংলা শব্দ তো সাতটা ইংরেজি। ক্রিয়া পদের মাথামুণ্ডু নেই। মিসড কল মারে, আদর পায়, হ্যাপি থাকে। বানানের কথা বেশি না বলাই ভালো। বাংলা বই পড়ার বালাই নেই। সুতরাং গো, ওয়েন্ট, গন। বাংলা ক্রমেই চাষা-মজুরের ভাষায় পরিণত হচ্ছে। ভদ্রলোকেরা বাংলাকে ক্রমে টা-টা জানাচ্ছেন। বাংলা ইলেকট্রিক চুল্লিতে গন গনাগন হতে চলেছে। এ যেন নেভার রিটার্ন! যে ভাষা না জানলে চাকরি হয় না, ব্যবসা হয় না, বিদেশে যাওয়া যায় না, সেই ভাষা নিয়ে মেতে থাকবে কে?
যাদের কিছু করার নেই, তাদের কথা আলাদা। কিন্তু যাদের সাধ আছে, সাধ্য আছে, তারা কেন ‘বাংলার গান’ গেয়ে যাবে?
‘একুশের প্রথম প্রভাতফেরি-অলৌকিক ভোর’ রক্তে রাঙানো সেই সূর্যোদয়ের গাথা কি এখন আর সত্যিই বাঙালিকে দোলা দেয়? বিশ্বায়িত দুনিয়ার নয়া ‘ট্রেন্ড’—বাঙালি ‘গ্লোবাল’ হচ্ছে। সেই সঙ্গেই বদলে যাচ্ছে ভাষার বিন্যাস। মাতৃভাষা থোড়াই কেয়ার, ‘বাংলিশ’ (বাংলা ২০ ও ইংরেজি ৮০ শতাংশ)-এর এখন একাধিপত্য। আর অদ্ভুত কিছু বাংলা খিস্তি যার দারুণ কদর। এই ‘ট্রেন্ড’ দেখে গুলিয়ে যেতে শুরু করে নিজের অস্তিত্ব।
যদিও বাংলাকে নিয়ে মুখে মুখে গর্ব করার লোকের এখনো অভাব নেই। কিন্তু বাস্তবতা কী বলে? ইংরেজি না জানলে বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বাজারে কারোর ভাত নেই। তাহলে মরার বাংলা নিয়ে পড়ে থাকতে যাবে কোন দুঃখে? এখন এমন মানুষও দেখা যাচ্ছে, যাঁরা বলছেন, ‘বাংলাটা ঠিক আসে না’ বা ‘আমার ছেলেমেয়েরা বাংলা পড়তে বা লিখতে জানে না’। ঔপনিবেশিক শাসনকর্তাদের ভাষাটাকে নিজের মনে না করলে আর কোনো থই পাওয়া যাবে না! যুগধর্মকে অগ্রাহ্য করে খামোখা বেকারত্বের বোঝা বয়ে বেড়াতে কে চায়?
এখন এই কম্পিউটার-স্মার্টফোন-ইন্টারনেটের যুগে, ইংরেজির মতো শক্তিশালী ভাষা কমই আছে। কারণ, এসব মাধ্যমে কাজ করতে গেলে আপনাকে ইংরেজি কিছুটা জানতেই হবে। ফলে এলিট ক্লাস হোক আর আটপৌরে বাঙালি, কিছুটা বিভ্রান্তও বটে। কারণ, বাংলা যদি ক্রমেই পিছিয়ে পড়ে, তাহলে সেটাকে আঁকড়ে থেকে লাভ কী! আর বই যদি ইংরেজিতেই পড়তে হয়, তাহলে তাতে লিখলেই বা ক্ষতি কী! না, বাঙালির ইংরেজি জানা নিয়ে বা তাতে পড়াশোনা করা নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। থাকতেই পারে না। এখানে প্রশ্নটা বিকল্পের; অর্থাৎ যদি কেউ চায় বাংলাকে অবলম্বন করতে, সে ক্ষেত্রে কী সুযোগ থাকবে তার কাছে? খুবই সীমিত তা।
সে জন্য তাকে নিজেকেই চেষ্টা করতে হবে। বাংলাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যই খুব ভালো করে বুঝতে হবে ইংরেজিকেও। দুটো ভাষাকে মিশিয়েই মাতৃভাষায় শিক্ষাচর্চা করতে হবে। শুধু বাংলানির্ভরতা থাকলে কিন্তু একটা সময় পর কানাগলিতে ধাক্কা খাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু সে জন্য নিজের ভাষাকে বিসর্জন দেওয়ার মতো যে সর্বনাশের খেলায় আমরা ক্রমেই মেতে উঠেছি, তা হলে সেই ভাষাকে বাঁচানোর রসদ আমরা কোথায় পাব?
আসলে আর্থসামাজিক-রাষ্ট্রীয় শক্তিতে সংখ্যাগুরু সব ভাষাভাষীর দ্বারাই অপরাপর অপেক্ষাকৃত দুর্বল গোষ্ঠী (জনসংখ্যা-আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক নিরিখে) শিকার হয়। আমরা ইংরেজি দ্বারা নিয়মিত পিষ্ট হই—এ কথা যেমন সত্য, তেমনি আমরা বাংলাভাষীরা সাঁওতালি, খাসি, চাকমা, মুন্ডাসহ ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক ভাষাভাষীদের কি কখনো প্রাপ্য স্বীকৃতিটুকু দিয়ে থাকি? প্রকৃতপক্ষে ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর অধিকারী বহু ভাষা এই অসম লড়াইয়ে হেরেছে অবিরত। নতুন শাসকশ্রেণির কাছে বহু সময় নতুন ভাষা গুরুত্ব পেয়েছে, কিন্তু তাতে সব ভাষাভাষী পুষ্ট হয়নি।
কিছু স্লোগান, কিছু প্রচারসর্বস্ব কর্মসূচিতে ভাষার বিলোপকে রোখা সম্ভব নয়। প্রত্যেকের মাতৃভাষার অধিকার ও বিকাশকে অন্তর থেকে স্বীকার করতে পারলে, বৈচিত্র্যকে শক্তি এবং সৌন্দর্য হিসাবে স্বীকার করতে পারলে বিশ্বব্যাপী বহু ভাষা, বহু ভাষাভাষী রক্ষা পায়। নচেৎ নয়।
বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে ভাবার সময় এসেছে। আমাদের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভাষাকে রক্ষার জন্য যেমন ইতিবাচক মানসিকতা প্রয়োজন, ঠিক তেমনি বাংলাকে কীভাবে বড়লোক-গরিব সবার প্রাণের ভাষায় পরিণত করা যায়, তা নিয়ে ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী উদ্যোগ প্রয়োজন। বাংলা ভাষা নিশ্চয়ই মরবে না। তেমন কোনো আশঙ্কা আপাতত দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু শুধু গরিব-মেহনতি মানুষের ভাষা হয়ে বাংলা টিকে থাকলে কী লাভ? যারা বাংলা বর্জন করে ইংরেজি শিখবে, কিংবা বাংলা কম জানবে, তারাই যদি শাসক-প্রশাসক-সংস্কৃতির ধ্বজাধারী হয়, তাহলে তো ভবিষ্যৎ ইতিহাস অন্য রকম হতে বাধ্য।
বাংলার মাটি, বাংলার জল, বাংলার আলো, বাংলার বায়ুতে আমাদের জন্ম, জীবন, মৃত্যু। আত্মশক্তি ও দেশীয় সম্পদ অবলম্বন করে বাইরের জগৎ থেকে প্রয়োজন ও সামর্থ্য অনুযায়ী পুষ্টি গ্রহণ করে আমরা আমাদের সত্তাকে এবং দেশকে সমৃদ্ধ করব—এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু নিজেদের নৃতাত্ত্বিক ও ভৌগোলিক পরিচয় পরিত্যাগ করে যখন আমরা বিদেশি-বিভাষী-বিজাতি হয়ে উঠতে চাই, তখন কি আমরা ঠিক কাজ করি?
আমরা চাইলে এবং চেষ্টা করলে বাইরের জগৎ থেকে গ্রহণ করে অবশ্যই আরও উন্নত বাঙালি হতে পারব। কিন্তু আত্মপরিচয় ত্যাগ করে, পশ্চিমা আধিপত্যবাদীদের মগজধোলাই প্রক্রিয়ায় আত্মসমর্পণ করে, তাদের চাপিয়ে দেওয়া ‘উন্নয়ন মডেল’ অনুযায়ী চলে আমরা কি মোক্ষলাভ করতে পারব? নীতিনির্ধারকদের আজ এ প্রশ্নটির সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।
চিররঞ্জন সরকার, গবেষক ও কলামিস্ট
বসন্ত এসেছে। বাংলা ভাষার গায়ে বসন্তের ফুরফুরে বাতাস লেগেছে, তা অবশ্য বলা যাবে না; বরং চারদিকের পরিবেশ-পরিস্থিতিতে বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
যাদের বয়স কম, তারা ভবিষ্যতে কোন ভাষা বেশি ব্যবহার করবে, তার ওপরেই ভিত্তি করে গড়ে ওঠে ভাষার ভবিষ্যৎ। আমাদের দেশে উঠতি মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তরা কিন্তু ক্রমেই বাংলা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ তাই নির্ভর করছে পাঁচ থেকে পঁয়তাল্লিশের মধ্যবর্তী বয়সী বাঙালিরা ভাষা নিয়ে কী ভাবছেন, তার ওপর।
এই পাঁচ থেকে পঁয়তাল্লিশ নানা অর্থনৈতিক শ্রেণির অন্তর্গত, ঊর্ধ্বসীমার দিকে যাঁরা আছেন, সেই পঁয়ত্রিশ থেকে পঁয়তাল্লিশ হলেন এখনকার কম বয়সী বাবা-মা। তবে যে অর্থনৈতিক শ্রেণিরই অন্তর্গত হোন না কেন, সবাই কম-বেশি স্বপ্ন দেখেন, নিজেদের ছেলেমেয়েকে ভালো করে পড়াশোনা শিখিয়ে মানুষ করবেন। এই স্বপ্নে ভাষার একটা
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।
আগে স্কুল-কলেজগুলোতে বাংলা ভাষাতেই লেখাপড়া হতো। এখনো হয়। তবে ইংরেজি দিন দিন তার আসন পাকাপোক্ত করে নিচ্ছে। মুক্তবাজার অর্থনীতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শিক্ষাও অর্থকরী বিষয়ে পরিণত হয়েছে। যাদের টাকা আছে তারা ভালো-স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। আর বর্তমানে ‘ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান’ মানে হচ্ছে ইংরেজি-প্রধান শিক্ষা। গরিবেরা পড়ছে সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। আর তুলনামূলক ধনীরা পড়ছে ইংরেজি-প্রধান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। এভাবে এই দুই শ্রেণির শিক্ষা, বুঝ,
চিন্তা, মূল্যবোধ, স্টাইল—সবকিছুই আলাদা হয়ে যাচ্ছে।
ক্রমেই ইংরেজিবিহীন সহজ বাংলা মিডিয়ামের প্রতি আস্থা কমে যাচ্ছে মধ্যবিত্ত আর উচ্চবিত্তদের। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের রমরমা ব্যবসা চলছে। ধনী পরিবারের সন্তানদের মধ্যে বাংলা ভাষার ব্যবহারযোগ্যতা কমেছে। যাঁদের বয়স পঁয়ত্রিশ থেকে পঁয়তাল্লিশ, সেই অভিভাবকেরা কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও এখন ছেলেমেয়েদের বাংলা মাধ্যমে পাঠাতে পারেন না। কারণ ভালো বাংলা মিডিয়াম স্কুল প্রায় নেই। ফলে ইংলিশ মিডিয়াম অনিবার্য ভবিতব্য হয়ে উঠছে।
আমাদের দেশে উচ্চবিত্তদের একটা অংশ দলে দলে ইউরোপ-আমেরিকায় পাড়ি জমাচ্ছেন। বাংলা ভাষার সঙ্গে তাঁদের ছেলেমেয়েদের যোগ কমছে। এভাবে দেশে স্পষ্ট দুটি শ্রেণি গড়ে উঠছে। যাঁরা অর্থনৈতিকভাবে সবল তাঁরা ইংরেজির চর্চা করছেন। আর গরিব চাষাভূষারা বাংলা নিয়ে পড়ে আছেন। ব্যবসা-চাকরি সবখানে ইংরেজি জানাদের আধিপত্য, কদর। বাংলাওয়ালাদের জন্য ব্লগ আর ফেসবুকে হতাশার পদ্য রচনা ছাড়া আপাতত তেমন কোনো পুরস্কার নেই!
সত্যিকার অর্থে বাংলা ভাষার অবস্থা আজ বড়ই করুণ। এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের বাংলা উচ্চারণের দশা দেখলে আত্মারাম খাঁচা ছেড়ে পালাতে চায়। কে যে কী ‘অ্যাকসেন্টে’ বাংলা বলে! সেই বিচিত্রবাদিনী রাত্রিদিন বাংলা ব্যান্ড, বাঙালির এফএম, বাঙালির চ্যানেলে নৃত্য করছে। একটা বাংলা শব্দ তো সাতটা ইংরেজি। ক্রিয়া পদের মাথামুণ্ডু নেই। মিসড কল মারে, আদর পায়, হ্যাপি থাকে। বানানের কথা বেশি না বলাই ভালো। বাংলা বই পড়ার বালাই নেই। সুতরাং গো, ওয়েন্ট, গন। বাংলা ক্রমেই চাষা-মজুরের ভাষায় পরিণত হচ্ছে। ভদ্রলোকেরা বাংলাকে ক্রমে টা-টা জানাচ্ছেন। বাংলা ইলেকট্রিক চুল্লিতে গন গনাগন হতে চলেছে। এ যেন নেভার রিটার্ন! যে ভাষা না জানলে চাকরি হয় না, ব্যবসা হয় না, বিদেশে যাওয়া যায় না, সেই ভাষা নিয়ে মেতে থাকবে কে?
যাদের কিছু করার নেই, তাদের কথা আলাদা। কিন্তু যাদের সাধ আছে, সাধ্য আছে, তারা কেন ‘বাংলার গান’ গেয়ে যাবে?
‘একুশের প্রথম প্রভাতফেরি-অলৌকিক ভোর’ রক্তে রাঙানো সেই সূর্যোদয়ের গাথা কি এখন আর সত্যিই বাঙালিকে দোলা দেয়? বিশ্বায়িত দুনিয়ার নয়া ‘ট্রেন্ড’—বাঙালি ‘গ্লোবাল’ হচ্ছে। সেই সঙ্গেই বদলে যাচ্ছে ভাষার বিন্যাস। মাতৃভাষা থোড়াই কেয়ার, ‘বাংলিশ’ (বাংলা ২০ ও ইংরেজি ৮০ শতাংশ)-এর এখন একাধিপত্য। আর অদ্ভুত কিছু বাংলা খিস্তি যার দারুণ কদর। এই ‘ট্রেন্ড’ দেখে গুলিয়ে যেতে শুরু করে নিজের অস্তিত্ব।
যদিও বাংলাকে নিয়ে মুখে মুখে গর্ব করার লোকের এখনো অভাব নেই। কিন্তু বাস্তবতা কী বলে? ইংরেজি না জানলে বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বাজারে কারোর ভাত নেই। তাহলে মরার বাংলা নিয়ে পড়ে থাকতে যাবে কোন দুঃখে? এখন এমন মানুষও দেখা যাচ্ছে, যাঁরা বলছেন, ‘বাংলাটা ঠিক আসে না’ বা ‘আমার ছেলেমেয়েরা বাংলা পড়তে বা লিখতে জানে না’। ঔপনিবেশিক শাসনকর্তাদের ভাষাটাকে নিজের মনে না করলে আর কোনো থই পাওয়া যাবে না! যুগধর্মকে অগ্রাহ্য করে খামোখা বেকারত্বের বোঝা বয়ে বেড়াতে কে চায়?
এখন এই কম্পিউটার-স্মার্টফোন-ইন্টারনেটের যুগে, ইংরেজির মতো শক্তিশালী ভাষা কমই আছে। কারণ, এসব মাধ্যমে কাজ করতে গেলে আপনাকে ইংরেজি কিছুটা জানতেই হবে। ফলে এলিট ক্লাস হোক আর আটপৌরে বাঙালি, কিছুটা বিভ্রান্তও বটে। কারণ, বাংলা যদি ক্রমেই পিছিয়ে পড়ে, তাহলে সেটাকে আঁকড়ে থেকে লাভ কী! আর বই যদি ইংরেজিতেই পড়তে হয়, তাহলে তাতে লিখলেই বা ক্ষতি কী! না, বাঙালির ইংরেজি জানা নিয়ে বা তাতে পড়াশোনা করা নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। থাকতেই পারে না। এখানে প্রশ্নটা বিকল্পের; অর্থাৎ যদি কেউ চায় বাংলাকে অবলম্বন করতে, সে ক্ষেত্রে কী সুযোগ থাকবে তার কাছে? খুবই সীমিত তা।
সে জন্য তাকে নিজেকেই চেষ্টা করতে হবে। বাংলাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যই খুব ভালো করে বুঝতে হবে ইংরেজিকেও। দুটো ভাষাকে মিশিয়েই মাতৃভাষায় শিক্ষাচর্চা করতে হবে। শুধু বাংলানির্ভরতা থাকলে কিন্তু একটা সময় পর কানাগলিতে ধাক্কা খাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু সে জন্য নিজের ভাষাকে বিসর্জন দেওয়ার মতো যে সর্বনাশের খেলায় আমরা ক্রমেই মেতে উঠেছি, তা হলে সেই ভাষাকে বাঁচানোর রসদ আমরা কোথায় পাব?
আসলে আর্থসামাজিক-রাষ্ট্রীয় শক্তিতে সংখ্যাগুরু সব ভাষাভাষীর দ্বারাই অপরাপর অপেক্ষাকৃত দুর্বল গোষ্ঠী (জনসংখ্যা-আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক নিরিখে) শিকার হয়। আমরা ইংরেজি দ্বারা নিয়মিত পিষ্ট হই—এ কথা যেমন সত্য, তেমনি আমরা বাংলাভাষীরা সাঁওতালি, খাসি, চাকমা, মুন্ডাসহ ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক ভাষাভাষীদের কি কখনো প্রাপ্য স্বীকৃতিটুকু দিয়ে থাকি? প্রকৃতপক্ষে ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর অধিকারী বহু ভাষা এই অসম লড়াইয়ে হেরেছে অবিরত। নতুন শাসকশ্রেণির কাছে বহু সময় নতুন ভাষা গুরুত্ব পেয়েছে, কিন্তু তাতে সব ভাষাভাষী পুষ্ট হয়নি।
কিছু স্লোগান, কিছু প্রচারসর্বস্ব কর্মসূচিতে ভাষার বিলোপকে রোখা সম্ভব নয়। প্রত্যেকের মাতৃভাষার অধিকার ও বিকাশকে অন্তর থেকে স্বীকার করতে পারলে, বৈচিত্র্যকে শক্তি এবং সৌন্দর্য হিসাবে স্বীকার করতে পারলে বিশ্বব্যাপী বহু ভাষা, বহু ভাষাভাষী রক্ষা পায়। নচেৎ নয়।
বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে ভাবার সময় এসেছে। আমাদের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভাষাকে রক্ষার জন্য যেমন ইতিবাচক মানসিকতা প্রয়োজন, ঠিক তেমনি বাংলাকে কীভাবে বড়লোক-গরিব সবার প্রাণের ভাষায় পরিণত করা যায়, তা নিয়ে ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী উদ্যোগ প্রয়োজন। বাংলা ভাষা নিশ্চয়ই মরবে না। তেমন কোনো আশঙ্কা আপাতত দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু শুধু গরিব-মেহনতি মানুষের ভাষা হয়ে বাংলা টিকে থাকলে কী লাভ? যারা বাংলা বর্জন করে ইংরেজি শিখবে, কিংবা বাংলা কম জানবে, তারাই যদি শাসক-প্রশাসক-সংস্কৃতির ধ্বজাধারী হয়, তাহলে তো ভবিষ্যৎ ইতিহাস অন্য রকম হতে বাধ্য।
বাংলার মাটি, বাংলার জল, বাংলার আলো, বাংলার বায়ুতে আমাদের জন্ম, জীবন, মৃত্যু। আত্মশক্তি ও দেশীয় সম্পদ অবলম্বন করে বাইরের জগৎ থেকে প্রয়োজন ও সামর্থ্য অনুযায়ী পুষ্টি গ্রহণ করে আমরা আমাদের সত্তাকে এবং দেশকে সমৃদ্ধ করব—এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু নিজেদের নৃতাত্ত্বিক ও ভৌগোলিক পরিচয় পরিত্যাগ করে যখন আমরা বিদেশি-বিভাষী-বিজাতি হয়ে উঠতে চাই, তখন কি আমরা ঠিক কাজ করি?
আমরা চাইলে এবং চেষ্টা করলে বাইরের জগৎ থেকে গ্রহণ করে অবশ্যই আরও উন্নত বাঙালি হতে পারব। কিন্তু আত্মপরিচয় ত্যাগ করে, পশ্চিমা আধিপত্যবাদীদের মগজধোলাই প্রক্রিয়ায় আত্মসমর্পণ করে, তাদের চাপিয়ে দেওয়া ‘উন্নয়ন মডেল’ অনুযায়ী চলে আমরা কি মোক্ষলাভ করতে পারব? নীতিনির্ধারকদের আজ এ প্রশ্নটির সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।
চিররঞ্জন সরকার, গবেষক ও কলামিস্ট
চিররঞ্জন সরকার
বসন্ত এসেছে। বাংলা ভাষার গায়ে বসন্তের ফুরফুরে বাতাস লেগেছে, তা অবশ্য বলা যাবে না; বরং চারদিকের পরিবেশ-পরিস্থিতিতে বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
যাদের বয়স কম, তারা ভবিষ্যতে কোন ভাষা বেশি ব্যবহার করবে, তার ওপরেই ভিত্তি করে গড়ে ওঠে ভাষার ভবিষ্যৎ। আমাদের দেশে উঠতি মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তরা কিন্তু ক্রমেই বাংলা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ তাই নির্ভর করছে পাঁচ থেকে পঁয়তাল্লিশের মধ্যবর্তী বয়সী বাঙালিরা ভাষা নিয়ে কী ভাবছেন, তার ওপর।
এই পাঁচ থেকে পঁয়তাল্লিশ নানা অর্থনৈতিক শ্রেণির অন্তর্গত, ঊর্ধ্বসীমার দিকে যাঁরা আছেন, সেই পঁয়ত্রিশ থেকে পঁয়তাল্লিশ হলেন এখনকার কম বয়সী বাবা-মা। তবে যে অর্থনৈতিক শ্রেণিরই অন্তর্গত হোন না কেন, সবাই কম-বেশি স্বপ্ন দেখেন, নিজেদের ছেলেমেয়েকে ভালো করে পড়াশোনা শিখিয়ে মানুষ করবেন। এই স্বপ্নে ভাষার একটা
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।
আগে স্কুল-কলেজগুলোতে বাংলা ভাষাতেই লেখাপড়া হতো। এখনো হয়। তবে ইংরেজি দিন দিন তার আসন পাকাপোক্ত করে নিচ্ছে। মুক্তবাজার অর্থনীতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শিক্ষাও অর্থকরী বিষয়ে পরিণত হয়েছে। যাদের টাকা আছে তারা ভালো-স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। আর বর্তমানে ‘ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান’ মানে হচ্ছে ইংরেজি-প্রধান শিক্ষা। গরিবেরা পড়ছে সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। আর তুলনামূলক ধনীরা পড়ছে ইংরেজি-প্রধান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। এভাবে এই দুই শ্রেণির শিক্ষা, বুঝ,
চিন্তা, মূল্যবোধ, স্টাইল—সবকিছুই আলাদা হয়ে যাচ্ছে।
ক্রমেই ইংরেজিবিহীন সহজ বাংলা মিডিয়ামের প্রতি আস্থা কমে যাচ্ছে মধ্যবিত্ত আর উচ্চবিত্তদের। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের রমরমা ব্যবসা চলছে। ধনী পরিবারের সন্তানদের মধ্যে বাংলা ভাষার ব্যবহারযোগ্যতা কমেছে। যাঁদের বয়স পঁয়ত্রিশ থেকে পঁয়তাল্লিশ, সেই অভিভাবকেরা কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও এখন ছেলেমেয়েদের বাংলা মাধ্যমে পাঠাতে পারেন না। কারণ ভালো বাংলা মিডিয়াম স্কুল প্রায় নেই। ফলে ইংলিশ মিডিয়াম অনিবার্য ভবিতব্য হয়ে উঠছে।
আমাদের দেশে উচ্চবিত্তদের একটা অংশ দলে দলে ইউরোপ-আমেরিকায় পাড়ি জমাচ্ছেন। বাংলা ভাষার সঙ্গে তাঁদের ছেলেমেয়েদের যোগ কমছে। এভাবে দেশে স্পষ্ট দুটি শ্রেণি গড়ে উঠছে। যাঁরা অর্থনৈতিকভাবে সবল তাঁরা ইংরেজির চর্চা করছেন। আর গরিব চাষাভূষারা বাংলা নিয়ে পড়ে আছেন। ব্যবসা-চাকরি সবখানে ইংরেজি জানাদের আধিপত্য, কদর। বাংলাওয়ালাদের জন্য ব্লগ আর ফেসবুকে হতাশার পদ্য রচনা ছাড়া আপাতত তেমন কোনো পুরস্কার নেই!
সত্যিকার অর্থে বাংলা ভাষার অবস্থা আজ বড়ই করুণ। এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের বাংলা উচ্চারণের দশা দেখলে আত্মারাম খাঁচা ছেড়ে পালাতে চায়। কে যে কী ‘অ্যাকসেন্টে’ বাংলা বলে! সেই বিচিত্রবাদিনী রাত্রিদিন বাংলা ব্যান্ড, বাঙালির এফএম, বাঙালির চ্যানেলে নৃত্য করছে। একটা বাংলা শব্দ তো সাতটা ইংরেজি। ক্রিয়া পদের মাথামুণ্ডু নেই। মিসড কল মারে, আদর পায়, হ্যাপি থাকে। বানানের কথা বেশি না বলাই ভালো। বাংলা বই পড়ার বালাই নেই। সুতরাং গো, ওয়েন্ট, গন। বাংলা ক্রমেই চাষা-মজুরের ভাষায় পরিণত হচ্ছে। ভদ্রলোকেরা বাংলাকে ক্রমে টা-টা জানাচ্ছেন। বাংলা ইলেকট্রিক চুল্লিতে গন গনাগন হতে চলেছে। এ যেন নেভার রিটার্ন! যে ভাষা না জানলে চাকরি হয় না, ব্যবসা হয় না, বিদেশে যাওয়া যায় না, সেই ভাষা নিয়ে মেতে থাকবে কে?
যাদের কিছু করার নেই, তাদের কথা আলাদা। কিন্তু যাদের সাধ আছে, সাধ্য আছে, তারা কেন ‘বাংলার গান’ গেয়ে যাবে?
‘একুশের প্রথম প্রভাতফেরি-অলৌকিক ভোর’ রক্তে রাঙানো সেই সূর্যোদয়ের গাথা কি এখন আর সত্যিই বাঙালিকে দোলা দেয়? বিশ্বায়িত দুনিয়ার নয়া ‘ট্রেন্ড’—বাঙালি ‘গ্লোবাল’ হচ্ছে। সেই সঙ্গেই বদলে যাচ্ছে ভাষার বিন্যাস। মাতৃভাষা থোড়াই কেয়ার, ‘বাংলিশ’ (বাংলা ২০ ও ইংরেজি ৮০ শতাংশ)-এর এখন একাধিপত্য। আর অদ্ভুত কিছু বাংলা খিস্তি যার দারুণ কদর। এই ‘ট্রেন্ড’ দেখে গুলিয়ে যেতে শুরু করে নিজের অস্তিত্ব।
যদিও বাংলাকে নিয়ে মুখে মুখে গর্ব করার লোকের এখনো অভাব নেই। কিন্তু বাস্তবতা কী বলে? ইংরেজি না জানলে বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বাজারে কারোর ভাত নেই। তাহলে মরার বাংলা নিয়ে পড়ে থাকতে যাবে কোন দুঃখে? এখন এমন মানুষও দেখা যাচ্ছে, যাঁরা বলছেন, ‘বাংলাটা ঠিক আসে না’ বা ‘আমার ছেলেমেয়েরা বাংলা পড়তে বা লিখতে জানে না’। ঔপনিবেশিক শাসনকর্তাদের ভাষাটাকে নিজের মনে না করলে আর কোনো থই পাওয়া যাবে না! যুগধর্মকে অগ্রাহ্য করে খামোখা বেকারত্বের বোঝা বয়ে বেড়াতে কে চায়?
এখন এই কম্পিউটার-স্মার্টফোন-ইন্টারনেটের যুগে, ইংরেজির মতো শক্তিশালী ভাষা কমই আছে। কারণ, এসব মাধ্যমে কাজ করতে গেলে আপনাকে ইংরেজি কিছুটা জানতেই হবে। ফলে এলিট ক্লাস হোক আর আটপৌরে বাঙালি, কিছুটা বিভ্রান্তও বটে। কারণ, বাংলা যদি ক্রমেই পিছিয়ে পড়ে, তাহলে সেটাকে আঁকড়ে থেকে লাভ কী! আর বই যদি ইংরেজিতেই পড়তে হয়, তাহলে তাতে লিখলেই বা ক্ষতি কী! না, বাঙালির ইংরেজি জানা নিয়ে বা তাতে পড়াশোনা করা নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। থাকতেই পারে না। এখানে প্রশ্নটা বিকল্পের; অর্থাৎ যদি কেউ চায় বাংলাকে অবলম্বন করতে, সে ক্ষেত্রে কী সুযোগ থাকবে তার কাছে? খুবই সীমিত তা।
সে জন্য তাকে নিজেকেই চেষ্টা করতে হবে। বাংলাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যই খুব ভালো করে বুঝতে হবে ইংরেজিকেও। দুটো ভাষাকে মিশিয়েই মাতৃভাষায় শিক্ষাচর্চা করতে হবে। শুধু বাংলানির্ভরতা থাকলে কিন্তু একটা সময় পর কানাগলিতে ধাক্কা খাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু সে জন্য নিজের ভাষাকে বিসর্জন দেওয়ার মতো যে সর্বনাশের খেলায় আমরা ক্রমেই মেতে উঠেছি, তা হলে সেই ভাষাকে বাঁচানোর রসদ আমরা কোথায় পাব?
আসলে আর্থসামাজিক-রাষ্ট্রীয় শক্তিতে সংখ্যাগুরু সব ভাষাভাষীর দ্বারাই অপরাপর অপেক্ষাকৃত দুর্বল গোষ্ঠী (জনসংখ্যা-আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক নিরিখে) শিকার হয়। আমরা ইংরেজি দ্বারা নিয়মিত পিষ্ট হই—এ কথা যেমন সত্য, তেমনি আমরা বাংলাভাষীরা সাঁওতালি, খাসি, চাকমা, মুন্ডাসহ ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক ভাষাভাষীদের কি কখনো প্রাপ্য স্বীকৃতিটুকু দিয়ে থাকি? প্রকৃতপক্ষে ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর অধিকারী বহু ভাষা এই অসম লড়াইয়ে হেরেছে অবিরত। নতুন শাসকশ্রেণির কাছে বহু সময় নতুন ভাষা গুরুত্ব পেয়েছে, কিন্তু তাতে সব ভাষাভাষী পুষ্ট হয়নি।
কিছু স্লোগান, কিছু প্রচারসর্বস্ব কর্মসূচিতে ভাষার বিলোপকে রোখা সম্ভব নয়। প্রত্যেকের মাতৃভাষার অধিকার ও বিকাশকে অন্তর থেকে স্বীকার করতে পারলে, বৈচিত্র্যকে শক্তি এবং সৌন্দর্য হিসাবে স্বীকার করতে পারলে বিশ্বব্যাপী বহু ভাষা, বহু ভাষাভাষী রক্ষা পায়। নচেৎ নয়।
বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে ভাবার সময় এসেছে। আমাদের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভাষাকে রক্ষার জন্য যেমন ইতিবাচক মানসিকতা প্রয়োজন, ঠিক তেমনি বাংলাকে কীভাবে বড়লোক-গরিব সবার প্রাণের ভাষায় পরিণত করা যায়, তা নিয়ে ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী উদ্যোগ প্রয়োজন। বাংলা ভাষা নিশ্চয়ই মরবে না। তেমন কোনো আশঙ্কা আপাতত দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু শুধু গরিব-মেহনতি মানুষের ভাষা হয়ে বাংলা টিকে থাকলে কী লাভ? যারা বাংলা বর্জন করে ইংরেজি শিখবে, কিংবা বাংলা কম জানবে, তারাই যদি শাসক-প্রশাসক-সংস্কৃতির ধ্বজাধারী হয়, তাহলে তো ভবিষ্যৎ ইতিহাস অন্য রকম হতে বাধ্য।
বাংলার মাটি, বাংলার জল, বাংলার আলো, বাংলার বায়ুতে আমাদের জন্ম, জীবন, মৃত্যু। আত্মশক্তি ও দেশীয় সম্পদ অবলম্বন করে বাইরের জগৎ থেকে প্রয়োজন ও সামর্থ্য অনুযায়ী পুষ্টি গ্রহণ করে আমরা আমাদের সত্তাকে এবং দেশকে সমৃদ্ধ করব—এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু নিজেদের নৃতাত্ত্বিক ও ভৌগোলিক পরিচয় পরিত্যাগ করে যখন আমরা বিদেশি-বিভাষী-বিজাতি হয়ে উঠতে চাই, তখন কি আমরা ঠিক কাজ করি?
আমরা চাইলে এবং চেষ্টা করলে বাইরের জগৎ থেকে গ্রহণ করে অবশ্যই আরও উন্নত বাঙালি হতে পারব। কিন্তু আত্মপরিচয় ত্যাগ করে, পশ্চিমা আধিপত্যবাদীদের মগজধোলাই প্রক্রিয়ায় আত্মসমর্পণ করে, তাদের চাপিয়ে দেওয়া ‘উন্নয়ন মডেল’ অনুযায়ী চলে আমরা কি মোক্ষলাভ করতে পারব? নীতিনির্ধারকদের আজ এ প্রশ্নটির সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।
চিররঞ্জন সরকার, গবেষক ও কলামিস্ট
বসন্ত এসেছে। বাংলা ভাষার গায়ে বসন্তের ফুরফুরে বাতাস লেগেছে, তা অবশ্য বলা যাবে না; বরং চারদিকের পরিবেশ-পরিস্থিতিতে বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
যাদের বয়স কম, তারা ভবিষ্যতে কোন ভাষা বেশি ব্যবহার করবে, তার ওপরেই ভিত্তি করে গড়ে ওঠে ভাষার ভবিষ্যৎ। আমাদের দেশে উঠতি মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তরা কিন্তু ক্রমেই বাংলা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ তাই নির্ভর করছে পাঁচ থেকে পঁয়তাল্লিশের মধ্যবর্তী বয়সী বাঙালিরা ভাষা নিয়ে কী ভাবছেন, তার ওপর।
এই পাঁচ থেকে পঁয়তাল্লিশ নানা অর্থনৈতিক শ্রেণির অন্তর্গত, ঊর্ধ্বসীমার দিকে যাঁরা আছেন, সেই পঁয়ত্রিশ থেকে পঁয়তাল্লিশ হলেন এখনকার কম বয়সী বাবা-মা। তবে যে অর্থনৈতিক শ্রেণিরই অন্তর্গত হোন না কেন, সবাই কম-বেশি স্বপ্ন দেখেন, নিজেদের ছেলেমেয়েকে ভালো করে পড়াশোনা শিখিয়ে মানুষ করবেন। এই স্বপ্নে ভাষার একটা
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।
আগে স্কুল-কলেজগুলোতে বাংলা ভাষাতেই লেখাপড়া হতো। এখনো হয়। তবে ইংরেজি দিন দিন তার আসন পাকাপোক্ত করে নিচ্ছে। মুক্তবাজার অর্থনীতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শিক্ষাও অর্থকরী বিষয়ে পরিণত হয়েছে। যাদের টাকা আছে তারা ভালো-স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। আর বর্তমানে ‘ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান’ মানে হচ্ছে ইংরেজি-প্রধান শিক্ষা। গরিবেরা পড়ছে সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। আর তুলনামূলক ধনীরা পড়ছে ইংরেজি-প্রধান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। এভাবে এই দুই শ্রেণির শিক্ষা, বুঝ,
চিন্তা, মূল্যবোধ, স্টাইল—সবকিছুই আলাদা হয়ে যাচ্ছে।
ক্রমেই ইংরেজিবিহীন সহজ বাংলা মিডিয়ামের প্রতি আস্থা কমে যাচ্ছে মধ্যবিত্ত আর উচ্চবিত্তদের। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের রমরমা ব্যবসা চলছে। ধনী পরিবারের সন্তানদের মধ্যে বাংলা ভাষার ব্যবহারযোগ্যতা কমেছে। যাঁদের বয়স পঁয়ত্রিশ থেকে পঁয়তাল্লিশ, সেই অভিভাবকেরা কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও এখন ছেলেমেয়েদের বাংলা মাধ্যমে পাঠাতে পারেন না। কারণ ভালো বাংলা মিডিয়াম স্কুল প্রায় নেই। ফলে ইংলিশ মিডিয়াম অনিবার্য ভবিতব্য হয়ে উঠছে।
আমাদের দেশে উচ্চবিত্তদের একটা অংশ দলে দলে ইউরোপ-আমেরিকায় পাড়ি জমাচ্ছেন। বাংলা ভাষার সঙ্গে তাঁদের ছেলেমেয়েদের যোগ কমছে। এভাবে দেশে স্পষ্ট দুটি শ্রেণি গড়ে উঠছে। যাঁরা অর্থনৈতিকভাবে সবল তাঁরা ইংরেজির চর্চা করছেন। আর গরিব চাষাভূষারা বাংলা নিয়ে পড়ে আছেন। ব্যবসা-চাকরি সবখানে ইংরেজি জানাদের আধিপত্য, কদর। বাংলাওয়ালাদের জন্য ব্লগ আর ফেসবুকে হতাশার পদ্য রচনা ছাড়া আপাতত তেমন কোনো পুরস্কার নেই!
সত্যিকার অর্থে বাংলা ভাষার অবস্থা আজ বড়ই করুণ। এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের বাংলা উচ্চারণের দশা দেখলে আত্মারাম খাঁচা ছেড়ে পালাতে চায়। কে যে কী ‘অ্যাকসেন্টে’ বাংলা বলে! সেই বিচিত্রবাদিনী রাত্রিদিন বাংলা ব্যান্ড, বাঙালির এফএম, বাঙালির চ্যানেলে নৃত্য করছে। একটা বাংলা শব্দ তো সাতটা ইংরেজি। ক্রিয়া পদের মাথামুণ্ডু নেই। মিসড কল মারে, আদর পায়, হ্যাপি থাকে। বানানের কথা বেশি না বলাই ভালো। বাংলা বই পড়ার বালাই নেই। সুতরাং গো, ওয়েন্ট, গন। বাংলা ক্রমেই চাষা-মজুরের ভাষায় পরিণত হচ্ছে। ভদ্রলোকেরা বাংলাকে ক্রমে টা-টা জানাচ্ছেন। বাংলা ইলেকট্রিক চুল্লিতে গন গনাগন হতে চলেছে। এ যেন নেভার রিটার্ন! যে ভাষা না জানলে চাকরি হয় না, ব্যবসা হয় না, বিদেশে যাওয়া যায় না, সেই ভাষা নিয়ে মেতে থাকবে কে?
যাদের কিছু করার নেই, তাদের কথা আলাদা। কিন্তু যাদের সাধ আছে, সাধ্য আছে, তারা কেন ‘বাংলার গান’ গেয়ে যাবে?
‘একুশের প্রথম প্রভাতফেরি-অলৌকিক ভোর’ রক্তে রাঙানো সেই সূর্যোদয়ের গাথা কি এখন আর সত্যিই বাঙালিকে দোলা দেয়? বিশ্বায়িত দুনিয়ার নয়া ‘ট্রেন্ড’—বাঙালি ‘গ্লোবাল’ হচ্ছে। সেই সঙ্গেই বদলে যাচ্ছে ভাষার বিন্যাস। মাতৃভাষা থোড়াই কেয়ার, ‘বাংলিশ’ (বাংলা ২০ ও ইংরেজি ৮০ শতাংশ)-এর এখন একাধিপত্য। আর অদ্ভুত কিছু বাংলা খিস্তি যার দারুণ কদর। এই ‘ট্রেন্ড’ দেখে গুলিয়ে যেতে শুরু করে নিজের অস্তিত্ব।
যদিও বাংলাকে নিয়ে মুখে মুখে গর্ব করার লোকের এখনো অভাব নেই। কিন্তু বাস্তবতা কী বলে? ইংরেজি না জানলে বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বাজারে কারোর ভাত নেই। তাহলে মরার বাংলা নিয়ে পড়ে থাকতে যাবে কোন দুঃখে? এখন এমন মানুষও দেখা যাচ্ছে, যাঁরা বলছেন, ‘বাংলাটা ঠিক আসে না’ বা ‘আমার ছেলেমেয়েরা বাংলা পড়তে বা লিখতে জানে না’। ঔপনিবেশিক শাসনকর্তাদের ভাষাটাকে নিজের মনে না করলে আর কোনো থই পাওয়া যাবে না! যুগধর্মকে অগ্রাহ্য করে খামোখা বেকারত্বের বোঝা বয়ে বেড়াতে কে চায়?
এখন এই কম্পিউটার-স্মার্টফোন-ইন্টারনেটের যুগে, ইংরেজির মতো শক্তিশালী ভাষা কমই আছে। কারণ, এসব মাধ্যমে কাজ করতে গেলে আপনাকে ইংরেজি কিছুটা জানতেই হবে। ফলে এলিট ক্লাস হোক আর আটপৌরে বাঙালি, কিছুটা বিভ্রান্তও বটে। কারণ, বাংলা যদি ক্রমেই পিছিয়ে পড়ে, তাহলে সেটাকে আঁকড়ে থেকে লাভ কী! আর বই যদি ইংরেজিতেই পড়তে হয়, তাহলে তাতে লিখলেই বা ক্ষতি কী! না, বাঙালির ইংরেজি জানা নিয়ে বা তাতে পড়াশোনা করা নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। থাকতেই পারে না। এখানে প্রশ্নটা বিকল্পের; অর্থাৎ যদি কেউ চায় বাংলাকে অবলম্বন করতে, সে ক্ষেত্রে কী সুযোগ থাকবে তার কাছে? খুবই সীমিত তা।
সে জন্য তাকে নিজেকেই চেষ্টা করতে হবে। বাংলাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যই খুব ভালো করে বুঝতে হবে ইংরেজিকেও। দুটো ভাষাকে মিশিয়েই মাতৃভাষায় শিক্ষাচর্চা করতে হবে। শুধু বাংলানির্ভরতা থাকলে কিন্তু একটা সময় পর কানাগলিতে ধাক্কা খাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু সে জন্য নিজের ভাষাকে বিসর্জন দেওয়ার মতো যে সর্বনাশের খেলায় আমরা ক্রমেই মেতে উঠেছি, তা হলে সেই ভাষাকে বাঁচানোর রসদ আমরা কোথায় পাব?
আসলে আর্থসামাজিক-রাষ্ট্রীয় শক্তিতে সংখ্যাগুরু সব ভাষাভাষীর দ্বারাই অপরাপর অপেক্ষাকৃত দুর্বল গোষ্ঠী (জনসংখ্যা-আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক নিরিখে) শিকার হয়। আমরা ইংরেজি দ্বারা নিয়মিত পিষ্ট হই—এ কথা যেমন সত্য, তেমনি আমরা বাংলাভাষীরা সাঁওতালি, খাসি, চাকমা, মুন্ডাসহ ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক ভাষাভাষীদের কি কখনো প্রাপ্য স্বীকৃতিটুকু দিয়ে থাকি? প্রকৃতপক্ষে ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর অধিকারী বহু ভাষা এই অসম লড়াইয়ে হেরেছে অবিরত। নতুন শাসকশ্রেণির কাছে বহু সময় নতুন ভাষা গুরুত্ব পেয়েছে, কিন্তু তাতে সব ভাষাভাষী পুষ্ট হয়নি।
কিছু স্লোগান, কিছু প্রচারসর্বস্ব কর্মসূচিতে ভাষার বিলোপকে রোখা সম্ভব নয়। প্রত্যেকের মাতৃভাষার অধিকার ও বিকাশকে অন্তর থেকে স্বীকার করতে পারলে, বৈচিত্র্যকে শক্তি এবং সৌন্দর্য হিসাবে স্বীকার করতে পারলে বিশ্বব্যাপী বহু ভাষা, বহু ভাষাভাষী রক্ষা পায়। নচেৎ নয়।
বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে ভাবার সময় এসেছে। আমাদের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভাষাকে রক্ষার জন্য যেমন ইতিবাচক মানসিকতা প্রয়োজন, ঠিক তেমনি বাংলাকে কীভাবে বড়লোক-গরিব সবার প্রাণের ভাষায় পরিণত করা যায়, তা নিয়ে ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী উদ্যোগ প্রয়োজন। বাংলা ভাষা নিশ্চয়ই মরবে না। তেমন কোনো আশঙ্কা আপাতত দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু শুধু গরিব-মেহনতি মানুষের ভাষা হয়ে বাংলা টিকে থাকলে কী লাভ? যারা বাংলা বর্জন করে ইংরেজি শিখবে, কিংবা বাংলা কম জানবে, তারাই যদি শাসক-প্রশাসক-সংস্কৃতির ধ্বজাধারী হয়, তাহলে তো ভবিষ্যৎ ইতিহাস অন্য রকম হতে বাধ্য।
বাংলার মাটি, বাংলার জল, বাংলার আলো, বাংলার বায়ুতে আমাদের জন্ম, জীবন, মৃত্যু। আত্মশক্তি ও দেশীয় সম্পদ অবলম্বন করে বাইরের জগৎ থেকে প্রয়োজন ও সামর্থ্য অনুযায়ী পুষ্টি গ্রহণ করে আমরা আমাদের সত্তাকে এবং দেশকে সমৃদ্ধ করব—এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু নিজেদের নৃতাত্ত্বিক ও ভৌগোলিক পরিচয় পরিত্যাগ করে যখন আমরা বিদেশি-বিভাষী-বিজাতি হয়ে উঠতে চাই, তখন কি আমরা ঠিক কাজ করি?
আমরা চাইলে এবং চেষ্টা করলে বাইরের জগৎ থেকে গ্রহণ করে অবশ্যই আরও উন্নত বাঙালি হতে পারব। কিন্তু আত্মপরিচয় ত্যাগ করে, পশ্চিমা আধিপত্যবাদীদের মগজধোলাই প্রক্রিয়ায় আত্মসমর্পণ করে, তাদের চাপিয়ে দেওয়া ‘উন্নয়ন মডেল’ অনুযায়ী চলে আমরা কি মোক্ষলাভ করতে পারব? নীতিনির্ধারকদের আজ এ প্রশ্নটির সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।
চিররঞ্জন সরকার, গবেষক ও কলামিস্ট
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৮ দিন আগে‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।
বাংলা ভাষা নিশ্চয়ই মরবে না। তেমন কোনো আশঙ্কা আপাতত দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু শুধু গরিব-মেহনতি মানুষের ভাষা হয়ে বাংলা টিকে থাকলে কী লাভ? যারা বাংলা বর্জন করে ইংরেজি শিখবে, কিংবা বাংলা কম জানবে, তারাই যদি শাসক-প্রশাসক-সংস্কৃতির ধ্বজাধারী হয়, তাহলে তো ভবিষ্যৎ ইতিহাস অন্য রকম হতে বাধ্য।
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]
বাংলা ভাষা নিশ্চয়ই মরবে না। তেমন কোনো আশঙ্কা আপাতত দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু শুধু গরিব-মেহনতি মানুষের ভাষা হয়ে বাংলা টিকে থাকলে কী লাভ? যারা বাংলা বর্জন করে ইংরেজি শিখবে, কিংবা বাংলা কম জানবে, তারাই যদি শাসক-প্রশাসক-সংস্কৃতির ধ্বজাধারী হয়, তাহলে তো ভবিষ্যৎ ইতিহাস অন্য রকম হতে বাধ্য।
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৮ দিন আগেভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।
বাংলা ভাষা নিশ্চয়ই মরবে না। তেমন কোনো আশঙ্কা আপাতত দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু শুধু গরিব-মেহনতি মানুষের ভাষা হয়ে বাংলা টিকে থাকলে কী লাভ? যারা বাংলা বর্জন করে ইংরেজি শিখবে, কিংবা বাংলা কম জানবে, তারাই যদি শাসক-প্রশাসক-সংস্কৃতির ধ্বজাধারী হয়, তাহলে তো ভবিষ্যৎ ইতিহাস অন্য রকম হতে বাধ্য।
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৮ দিন আগে‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।
বাংলা ভাষা নিশ্চয়ই মরবে না। তেমন কোনো আশঙ্কা আপাতত দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু শুধু গরিব-মেহনতি মানুষের ভাষা হয়ে বাংলা টিকে থাকলে কী লাভ? যারা বাংলা বর্জন করে ইংরেজি শিখবে, কিংবা বাংলা কম জানবে, তারাই যদি শাসক-প্রশাসক-সংস্কৃতির ধ্বজাধারী হয়, তাহলে তো ভবিষ্যৎ ইতিহাস অন্য রকম হতে বাধ্য।
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৮ দিন আগে‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫