Ajker Patrika

ফেসবুক কহে যাহা সামাজিকগণ কহে তাহা

মামুনুর রশীদ
আপডেট : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭: ৪৩
ফেসবুক কহে যাহা সামাজিকগণ কহে তাহা

এ কথা আজ প্রমাণের অপেক্ষা রাখে না যে ফেসবুক সব ধরনের সোশ্যাল মিডিয়ার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং শক্তিশালী। প্রিন্ট মিডিয়া মানে সংবাদপত্র, ইলেকট্রনিক মিডিয়া মানে টেলিভিশন– এসবকে অতিক্রম করেছে ফেসবুক। ফেসবুকের ক্ষমতা অসীম। ফেসবুক অনেক তাৎপর্যপূর্ণ সংবাদের নতুন ব্যাখ্যা নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হয় এবং একটি টেলিফোন সেটের মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে বিষয়টি চাউর হয়ে যায়। এর অনেক ইতিবাচক ফল আছে। কিন্তু মানব চরিত্রের মতোই তার মধ্যে রয়েছে অনেক নেতিবাচক দিক।

এত সহজলভ্য একটি মাধ্যম কখনো কখনো মানুষকে খুব সংকীর্ণ এবং ছোট করে ফেলে। সাম্প্রতিক গণ-অভ্যুত্থানে এই সোশ্যাল মিডিয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এই মাধ্যমটির আবার যান্ত্রিক পরিচালনায় থাকে নেটওয়ার্ক। নেটওয়ার্ক বন্ধ হয়ে গেলে তার শক্তি আরও বেড়ে যায়। যন্ত্রের সঙ্গে যন্ত্রের সম্পর্ক ভেঙে সে মানুষ হয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। তার ক্ষোভ, যন্ত্রণা তখন রাজপথে সঙ্গীদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। এই টেলিফোন সেটটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে একটি অত্যন্ত শক্তিশালী ক্যামেরা। সেই আগের ক্যামেরার মতো এত জটিল নয়, যেকোনো জায়গায় যেকোনো আলোতে বলতে গেলে ন্যূনতম আলো থাকলেই এটি ছবি এবং ভিডিও ধারণ করতে সক্ষম হয়। তাই শুধু কথা নয়, চিন্তার প্রকাশ নয়, সেই সঙ্গে একটি ছবি ও ভিডিও বিশাল এক ভাবনার বা বিদ্রোহের জন্ম দিতে পারে।

পৃথিবীর বড় বড় বিপ্লবে, গণ-অভ্যুত্থানে একটা উত্তেজনাকর মুহূর্ত থাকে। সেই মুহূর্ত কখনো প্রলম্বিত, কখনো সংক্ষিপ্ত। সেই মুহূর্তের বহিঃপ্রকাশ ঘটে একটা পুরোনো শক্তির মধ্য দিয়ে। এই সময় ক্ষমতা জনগণের মধ্যে চলে আসে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তখন অচল ও দৃশ্যমান হয় না। এবারেও ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে তাই হয়েছে। কেউ কেউ সেই সঙ্গে কিছু বিশৃঙ্খল অভ্যুত্থানের মহিমাকে দারুণভাবে খর্ব করেছে। তাৎক্ষণিক এই উত্তেজনা স্বাভাবিক। কিন্তু যদি তা ছড়িয়ে পড়ে নতুন আধিপত্য প্রতিষ্ঠায়, তখন কিন্তু থমকে দাঁড়াতে হয়। কর্তৃত্ববাদ যখন অর্থ উপার্জনে বা অন্যের অধিকার হরণে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, তখন পূর্ববর্তী শাসনের কথাই মানুষ মনে করে এবং ভীত হয়ে ওঠে। যে কর্তৃত্ববাদ দুর্নীতির জন্ম দেয়, দখলের জন্ম দেয়, মানবাধিকার লঙ্ঘন করে, তার বিরুদ্ধেই মানুষের চিরায়ত প্রতিবাদ।

কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করা যাচ্ছে, সমাজের যেসব স্থানে আমাদের মূল্যবোধ, আমাদের সম্মানবোধ দীর্ঘ সময় ধরে একেবারে নির্দিষ্ট করা আছে, সেইসব জায়গায় একটা নতুন ধরনের অভিঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। শিক্ষার ক্ষেত্রে তা সবচেয়ে দৃশ্যমান। ছাত্ররা শিক্ষকদের জোর করে পদত্যাগ করিয়েছে। এ কথা অস্বীকার করব না যে কিছু শিক্ষক অবশ্যই শিক্ষাবান্ধব বা ছাত্রবান্ধব নন। সেখানেও প্রতিবাদ করার ভাষা আছে, কিন্তু তাঁকে দৈহিক বলপ্রয়োগ, অপমানিত করা একেবারেই সমীচীন বলে কেউ মনে করছেন না। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা আছেন তাঁরা বারবার এ কথা বললেও বাস্তবে তা কার্যকর হচ্ছে না—একেবারেই ধরাছোঁয়ার বাইরে, যেখানে কারও কর্তৃত্ব খাটে না। 
মানুষের ভাবনা, বিবেক দ্বারা যা পরিচালিত হয়, একমাত্র সেই ফেসবুকে লেখালেখির স্বাধীনতাও অন্যের প্রতি ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে এবং তা মানবাধিকার লঙ্ঘনের পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। এ যেন যেকোনো কিছু লেখার জায়গা; তাতে কার ক্ষতি হলো, কার মর্যাদা ক্ষুণ্ন হলো, সমাজের বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে গেল কি না—তা ভাববার অবকাশ নেই। এই ক্ষতিকর স্বাধীনতা অন্য ধরনের প্রবণতারও জন্ম দিয়েছে। যেমন, ইচ্ছেমতো মামলা দেওয়া, যেগুলোর আসামি এক শ, দুই শ, তিন শ কিংবা চার শ। এই ধরনের মামলা ক্ষোভ প্রকাশের একটা ব্যবস্থা হতে পারে, কিন্তু তাতে অভিযুক্তরা বেশ আনন্দের সঙ্গেই খালাস হয়ে যান।

একটা কথা কি আমরা মনে রাখব না যে, কোনো গণ-অভ্যুত্থান আমাদের ব্যক্তিগত ক্ষোভ প্রকাশের সুযোগ নয়? অথচ এমনটাই ঘটছে ফেসবুকে এবং আদালতে। এর একটা ভয়াবহ রূপ আমরা দেখতে পাই সামাজিক আচরণে। সেই আচরণে আবার সেই পুরোনো প্রথা চলে এসেছে, যার নাম চাঁদাবাজি। পুরোনো চাঁদাবাজদের পরিবর্তে আমরা নতুনদের দেখতে পাই। অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে আমরা দেখেছি বাজারে নিত্যপণ্যের দাম কমে গেছে, ফুটপাতের দোকানিরা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন; রিকশাচালক, সিএনজিচালক থেকে শুরু করে বাস-ট্রাকচালকেরাও উচ্ছ্বসিত হয়েছেন যে এখন আর তাঁদের চাঁদা দিতে হচ্ছে না। কিন্তু সময় পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবার সেই প্রবণতাগুলো খুব খারাপভাবে দৃশ্যমান হচ্ছে। এ যেন অতীতেরই পুনরাবৃত্তি।

চাঁদাবাজি যেন এক মজার জিনিস, আমাদের এই উপমহাদেশে সর্বত্রই দৃশ্যমান! রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় কিছু লোক এই কাজটি করে থাকেন এবং প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক লোক এই কাজে নিয়োজিত থেকে নিজের জন্য এবং দলের জন্য বেশ কিছু অর্থ নানান জায়গা থেকে আদায় করে থাকেন এবং কর্মজীবী মানুষের ওপর তাঁদের নিয়ন্ত্রণকে বিভিন্ন দমনমূলক কায়দায় প্রতিষ্ঠা করেন। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর আবার আরেক দল এসে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করে থাকে। এই চাঁদার টাকা দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে এবং পরিবহনের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং যা পরিশোধ করে থাকে সাধারণ জনগণ। ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে যখন উপদল সৃষ্টি হয়, নেতৃত্বের সংকট দেখা দেয়, তখন আবার এদের মধ্যেই দ্বন্দ্বের সর্বোচ্চ রূপ মারামারি এমনকি খুনোখুনি পর্যন্ত হয়।

এ তো গেল চাঁদাবাজির বিষয়। এর চেয়েও একটা বড় বিষয় হচ্ছে রাষ্ট্রের সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ—রাষ্ট্রের খাসজমি, বন, পাহাড়, নদী এসবের ওপর নিয়ন্ত্রণ এবং রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে রাষ্ট্রের কাছ থেকে কর্তৃত্ব গ্রহণ। একসময় শুরু হয়েছিল বন উজাড় করা এবং সেটি রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায়ায়, যেটার প্রবণতা আজও আছে। বিপুল পরিমাণে নদী দখল করা হয়েছে, নদীর জায়গায় আমরা দেখেছি বড় বড় ভবন, বাসস্থান, দোকানপাট তৈরি করে একদিকে নদীর নাব্যতা নষ্ট করেছে, আবার অন্যদিকে রাষ্ট্রেরই সম্পদকে একটা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছে। মাঝে মাঝে পাহাড় কাটার মহোৎসব দেখি। সরকার পরিবর্তনের পরে এখন হয়তো একটু থমকে আছে, কিন্তু কোনো একটি নির্বাচিত সরকার এলেই আবার সেই উৎসব শুরু হয়ে যাবে।

প্রকৃতির দান এইসব নদী, পাহাড়, বন যখন রাষ্ট্রের মালিকানায় চলে আসে, তখন রাজনৈতিক দল মনে করে এগুলো তাদেরই সম্পত্তি। এইভাবেই রাষ্ট্রের সম্পদ আমরা বহুবার হাতছাড়া হতে দেখেছি। তারপর একটা সময় যারা দখলদার, তাদেরকেই এই সম্পদের মালিক বলে মনে হয়েছে। আমাদের এই প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করার জন্য, বিশেষ করে বন এবং পাহাড়ে রয়েছে বিশেষ জাতিসত্তার মানুষেরা। যারা শত শত বছর ধরে ধরিত্রীকে মনে করে তাদের মা, নদীকে মনে করে ভগ্নি। আর এই ধরিত্রীর যে অংশে তারা বসবাস করে, সেটিকে মায়ের স্থান দেয়। বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই মানুষগুলোকে উচ্ছেদের কাজে দীর্ঘদিন ধরে লেগে আছেন। নানা ধরনের মামলা দিয়ে বিশেষ জাতিসত্তার মানুষকে ব্যতিব্যস্ত করে শুধু এলাকা ছাড়তে নয়, দেশত্যাগ করতেও বাধ্য করেছেন। ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট থেকে শুরু করে শেরপুর পর্যন্ত অনেক বিশেষ জাতিসত্তার মানুষ বাধ্য হয়ে ভারতের মেঘালয়ে চলে গিয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামও একদা সম্পূর্ণভাবে তাদের আবাসভূমি ছিল। তারা পাহাড়, বনভূমি, নদী এসবকে রক্ষা করে চলত। কিন্তু ষাটের দশকে কাপ্তাই হ্রদ নির্মাণের সময় তাদের ভাসিয়ে দেওয়া হলো। কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের সময় তাদের ঘরবাড়ি, গবাদিপশু, স্কুল, এমনকি চাকমা রাজার প্রাসাদটিও নদীর পানিতে ডুবিয়ে দেওয়া হয়। এই আশ্রয়হীন মানুষেরা তখন তেমন কোনো ক্ষতিপূরণ পায়নি। তাদের অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করেছে এবং কেউ কেউ দেশত্যাগ করে চলে গিয়েছে। সবকিছুর মূলেই আছে রাজনৈতিক কর্তৃত্ববাদ।

যেকোনো গণ-অভ্যুত্থান রাজনৈতিক কর্তৃত্ববাদকে সমূলে বিনাশ করতে চায়। কিন্তু সেখানেই প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায় মানুষের নেতিবাচক কর্মস্পৃহা। ফরাসি বিপ্লবের আদর্শ ছিল স্বাধীনতা, সমতা এবং ভ্রাতৃত্ব। অর্থাৎ সেখানেও বৈষম্যহীনতার কথা বলা হয়েছে। সেই সময়ে ১৭৮৯ সালে এইসব উদ্দেশ্য নিয়ে রাজতন্ত্রের পতন হলেও সেখানে বিশৃঙ্খলা রোধ করা যায়নি। অনেক ধরনের ব্যক্তিগত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হয়েছে, অনেক ধরনের বড় বড় অঘটন ঘটেছে এবং সেই বিশৃঙ্খলা বহুদিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল, যার ফলে নেপোলিয়ানের আবির্ভাব হয়। আমাদের দেশে মুক্তিযুদ্ধের পরেও তাই। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেখা গেল একদিকে যেমন স্বাধীনতার আনন্দ, স্বজন হারানোর বেদনা, অন্যদিকে অসহিষ্ণু এবং দুষ্কৃতকারীদের লুণ্ঠনকাজ। পরবর্তীকালেও সেই প্রবণতা রোধ করা যায়নি। একদিকে দেশপ্রেমিক সৎ নাগরিকদের কষ্টকর জীবনযাপন আর অন্যদিকে দুষ্কৃতকারীদের রাতারাতি ফুলেফেঁপে ওঠার কাহিনি।

বিভিন্ন ধরনের শাসনকালেই নতুন ধরনের নব্য ধনীর সৃষ্টি হয়েছে। লুটপাটের নতুন নতুন সুযোগও হয়েছে। আর এই লুটপাটের অর্থ বিদেশে পাচার করার ঘটনাও জনগণ জানতে পেরেছে। ফেসবুকে এসব ঘটনা কমই আসে, বরং ব্যক্তিগত ক্ষোভ মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়। যেকোনো সামাজিক আন্দোলনে এই সামাজিক মিডিয়া ব্যবহার অপরিহার্য। কিন্তু আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, তা যেন ব্যক্তিগত না হয়ে সামাজিকই হয়ে দাঁড়ায়।

লেখক:  নাট্যব্যক্তিত্ব

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত