Ajker Patrika

ইতালি থেকে পার্সেলে আসা পিস্তলগুলো আগ্নেয়াস্ত্র নয়

সোহেল মারমা, চট্টগ্রাম
ইতালি থেকে পার্সেলে আসা পিস্তলগুলো আগ্নেয়াস্ত্র নয়

চট্টগ্রাম বন্দরে ইতালি থেকে পার্সেলে আসা পিস্তলগুলো আগ্নেয়াস্ত্র নয় বলে সিআইডি তাঁদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। এ ছাড়া কার্তুজগুলো ছিল প্রোজেক্টাইল বিহীন (নিক্ষেপযোগ্য নয়)। তবে ওই রিপোর্ট মনঃপূত না হওয়ায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুনরায় ব্যালিস্টিক পরীক্ষার জন্য আবেদন করেছেন।

জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বন্দর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ফয়সাল সরোয়ার বলেন, এখানে আরও অনেক বিষয় ছিল। যা প্রতিবেদনে উঠে আসেনি। নিখুঁত তদন্তের স্বার্থে সেগুলোর প্রয়োজন রয়েছে। এ জন্য পূর্ণাঙ্গ রিপোর্টের জন্য পুনরায় ব্যালিস্টিক পরীক্ষার আবেদন করেছি। 
গত ২৪ এপ্রিল মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এ আবেদন করা হয়েছে। ফয়সাল বলেন, আদালত এখনো এ বিষয়ে শুনানি করেননি। 
এর আগে গত ২০ ফেব্রুয়ারি ইতালি থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে আসা একটি পার্সেল সন্দেহবশত খোলেন কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। গৃহস্থলীর পণ্য ঘোষণা দিয়ে আনা পার্সেলটি পরীক্ষা করে সেখানে চারটি পিস্তল ও ৬০ রাউন্ড কার্তুজ পাওয়া যায়। এর মধ্যে দুটি খেলনা ও দুটি আসল পিস্তল বলে তখন কাস্টমসের সংশ্লিষ্টরা জানায়।

চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় পরদিন ২১ ফেব্রুয়ারি কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে বন্দর থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় আসামি করা হয় পার্সেলের প্রেরক ও প্রাপককে।

গত ৭ এপ্রিল জব্দ পিস্তল ও কার্তুজের আটটি আলামতের ফরেনসিক ব্যালিস্টিক পরীক্ষার জন্য সিআইডি ঢাকার ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয় বন্দর থানা-পুলিশের পক্ষ থেকে। এসব আলামতের মধ্যে রয়েছে, ৪টি পিস্তল, ৪টি কার্তুজ, ৪টি প্লাস্টিক বল ও সিসার পিলেট। গত ১৩ এপ্রিল ব্যালিস্টিক পরীক্ষা শেষে সিআইডি এ বিষয়ে মতামত দেন।

সিআইডি ইতালির তৈরি ৪টি পিস্তলের মধ্যে দুটির বিষয়ে বলেছে, সেগুলো ব্লাংক ফায়ারিং পিস্তল। এ ধরনের পিস্তল দ্বারা ফায়ার করলে বিস্ফোরক দ্রব্যের বিস্ফোরণে প্রচণ্ড শব্দ তৈরি হয়। কিন্তু প্রোজেক্টাইল বিহীন কার্তুজ ব্যবহারের কারণে ও পিস্তলের ব্যারেল ব্লক থাকায় কোনো প্রকার বুলেট বা পিলেট বা প্রোজেক্টাইল বের হয় না।

বাকি দুটি পিস্তলের বিষয়ে বলা হয়েছে সেগুলো এয়ার সফট পিস্তল। এগুলো দ্বারা বিস্ফোরণের ফলে প্রোজেক্টাইল নিক্ষেপ করা যায় না। এই ৪টি পিস্তল কোনোটিই আগ্নেয়াস্ত্র নয় বলে ফরেনসিক ব্যালিস্টিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

কার্তুজগুলোর বিষয়ে বলা হয়, এই ধরনের কার্তুজে বিস্ফোরণে প্রচণ্ড শব্দ তৈরি হলেও এখান থেকে কোনো বুলেট, পিলেট বা প্রোজেক্টাইল বের হয় না। এগুলো প্রোজেক্টাইল বিহীন কার্তুজ। আলামতে এয়ার সফট সেলের বিষয়ে বলা হয়, এগুলো কার্তুজ নয়।

সিআইডি’র এমন রিপোর্টের প্রেক্ষিত মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে করা আবেদনে উল্লেখ করেন, কার্তুজগুলো বিস্ফোরণে প্রচণ্ড শব্দ তৈরি করলেও সেখানে বিস্ফোরক দ্রব্যের উপস্থিতির বিষয়টি সিআইডির মতামতে উল্লেখ করা হয়নি।

অন্যদিকে ১ নম্বর আলামতে থাকা পিস্তলগুলো সচল রয়েছে বলে সিআইডি মতামত দিলেও পিস্তল দুটি টেম্পোরিং করে ব্যারেল বা অন্যান্য অংশ লাগিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র বা মারণাস্ত্র হিসেবে রূপান্তর করা যায় কিনা সেই বিষয়ে কোনো মতামত পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া পিস্তল দুটিতে সংযুক্ত বিভিন্ন অংশ আগ্নেয়াস্ত্রের অংশ কিনা সেই বিষয়ে কোনো মতামত নেই বলে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন। পুলিশের আবেদনে মূলত এসব বিষয় প্রাধান্য দেওয়া হয়।এদিকে ঘটনার পর এখনো পলাতক রয়েছে উক্ত পার্সেলের প্রেরক হিসেবে থাকা ইতালি টিবুরিনা রোমার প্রবাসী রাজীব বড়ুয়া ওরফে মুন্না। অন্যদিকে প্রাপক হিসেবে নাম থাকা আগ্রাবাদ সিজিএস কলোনির বাসিন্দা মজুমদার কামরুল হাসান বর্তমানে কারাগারে রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত