জন কার্ক ও স্টিভেন কিম্বার

১১ সেপ্টেম্বর ছিল চিলিতে সেই বিপর্যয়কর সামরিক অভ্যুত্থানের ৫০তম বার্ষিকী, যা লাতিন আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে নৃশংস স্বৈরশাসনের সূচনা করেছিল।
১৯৭৩ সালের এই দিনে জেনারেল অগাস্তো পিনোশের নেতৃত্বে এক সামরিক জান্তা প্রেসিডেন্ট সালভাদর আইয়েন্দের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করেন। এরপর পিনোশের ১৭ বছরের স্বৈরশাসনে ৪০ হাজার মানুষ নির্যাতনের শিকার হয়। হত্যা করা হয় ৩ হাজারের বেশি মানুষকে এবং ১ হাজারের বেশি মানুষ ‘গুম’ হয়। দেশত্যাগে বাধ্য হয় হাজার হাজার মানুষ।
যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের প্রশাসন চিলিতে এই সামরিক অভ্যুত্থানকে উৎসাহিত ও সমর্থন করেছিল, যা এসব নৃশংসতার পথকে প্রশস্ত করে।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জেমস মনরো ১৮২৩ সালের ডিসেম্বরে কার্যকরভাবে পশ্চিম গোলার্ধের (যুক্তরাষ্ট্রের আশপাশের দেশ) জন্য একটি সুরক্ষা নীতি ঘোষণা করেছিলেন, যা মনরো মতবাদ নামে পরিচিত। এই নীতির সুযোগ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রায়ই তার নিজ স্বার্থে লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে হস্তক্ষেপ করে। কিন্তু সব সময় নিজে থাকে সুরক্ষার মোড়কে।
চিলিতে ১৯৭৩ সালের অভ্যুত্থান ছিল সে রকমই একটি হস্তক্ষেপ।
সরকারি নথি ও টেলিফোন কল ট্রান্সক্রিপ্ট যেগুলোকে শ্রেণিবদ্ধ এবং অনেক বছর ধরে প্রকাশ করা হয়েছিল। ১৯৭০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর চিলির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আইয়েন্দে খুব অল্প ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেন। এর পর থেকে ওয়াশিংটন কীভাবে তাঁর পতন নিশ্চিত করতে কাজ করেছিল তার একটি পরিষ্কার চিত্র এসব নথি ও টেলিফোন কল ট্রান্সক্রিপ্টে ফুটে ওঠে।
তৎকালীন সিআইএ পরিচালক রিচার্ড হেলমসের হাতে লেখা নোট অনুসারে, আইয়েন্দের বিজয়ের মাত্র এক সপ্তাহ পর, ১৯৭০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন তাঁকে ‘ইকোনমি স্ক্রিম’ (অর্থনীতি পঙ্গু হওয়ার অপপ্রচার চালানোর) নির্দেশ দিয়েছিলেন, যাতে ‘আইয়েন্দেকে ক্ষমতায় আসতে বাধা দেওয়া যায় বা বিরত রাখা যায়।’ এর তিন দিন আগে, হেলমসের কাছে একটি ফোন কল আসে, যা তিনি রেকর্ড করেছিলেন। নিক্সনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার ওই ফোনটি করেছিলেন। তিনি ইতিমধ্যেই আইয়েন্দেকে ক্ষমতাচ্যুত করার মার্কিন প্রশাসনের অভিপ্রায় নিশ্চিত করেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা চিলিকে নালায় ভেসে যেতে দেব না।’
১৯৭৩ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর, পিনোশের রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মাত্র ছয় দিন পরে, নিক্সন তাঁর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে ফোন করে জানতে চেয়েছিলেন যে এই অভ্যুত্থানে মার্কিন ‘হাত’ দেখাবে কি না। শ্রেণিবদ্ধ কল ট্রান্সক্রিপ্ট অনুসারে, কিসিঞ্জার স্বীকার করেছেন, ‘আমরা তাদের সাহায্য করেছি’ এবং ‘(মুছে দেওয়া রেফারেন্স) যা বিরাট এক সম্ভাবনার সুযোগ তৈরি করেছে।’
যুক্তরাষ্ট্র গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতার বিরুদ্ধে সফলভাবে একটি অভ্যুত্থান ঘটানোর পরও চিলির বিষয়ে তার বিধ্বংসী হস্তক্ষেপ
বন্ধ করেনি।
পিনোশের স্বৈরশাসনের তিন বছর পার হওয়ার পর, ১৯৭৬ সালের জুন মাসে কিসিঞ্জার তাঁর প্রতি ওয়াশিংটনের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করতে ব্যক্তিগতভাবে চিলির রাজধানী সান্তিয়াগোতে যান। তাঁদের কথোপকথনের একটি ট্রান্সক্রিপ্ট অনুসারে, কিসিঞ্জার পিনোশেকে কীভাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাঁর ভাবমূর্তি উন্নত করা যায়, সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছিলেন। পিনোশের শাসনের মানবাধিকার রেকর্ডের সব সমালোচনা ‘বামপন্থীদের অপপ্রচার’ বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিসিঞ্জার পিনোশেকে বলেছিলেন, ‘আপনি এখানে যা করার চেষ্টা করছেন তার প্রতি আমরা সহানুভূতিশীল।’ অথচ পিনোশে তত দিনে তাঁর শাসনের হাজার হাজার নিন্দাকারীকে হত্যা ও গুম করেছিলেন। কিসিঞ্জার বলেছিলেন, ‘আমরা আপনাকে সাহায্য করতে চাই, আপনাকে দুর্বল করতে নয়।’ কিসিঞ্জার আরও বলেছিলেন, ‘আপনি আইয়েন্দেকে উৎখাত করে পশ্চিমের জন্য একটি দুর্দান্ত কাজ করেছেন।’
চিলিতে আইয়েন্দের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান সম্ভবত লাতিন আমেরিকায় সবচেয়ে বিধ্বংসী মার্কিন হস্তক্ষেপ ছিল। তবে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম বা শেষ হস্তক্ষেপ ছিল না।
যুক্তরাষ্ট্র চিলিতে আইয়েন্দে সরকারকে অস্থিতিশীল করার জন্য কাজ শুরু করার আগেই ওয়াশিংটন ১৯৫৪ সালে গুয়াতেমালায় গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত আরবেনজ সরকারকে উৎখাত করার জন্য একটি অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করে। ১৯৫৬ সালে ২৪ হাজার সৈন্য নিয়ে ডোমিনিকান রিপাবলিক আক্রমণ করে। কিউবার নেতা ফিদেল কাস্ত্রোকে হত্যা করার জন্য অসংখ্যবার চেষ্টা চালায়। ফলে আইয়েন্দে একমাত্র নন।
মার্কিন-বান্ধব পিনোশে সরকারকে সফলভাবে চিলিতে ক্ষমতায় বসানোর পর, যুক্তরাষ্ট্র নিকারাগুয়ার সান্দিনিস্তা সরকারকে উৎখাত করার জন্য একটি ছায়া যুদ্ধ শুরু করে। এর জন্য প্রক্সি আর্মি হিসেবে প্রায় ছয় হাজার ‘কন্ট্রাস’কে (যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত ডানপন্থী বিদ্রোহী গোষ্ঠী) আর্থিক সাহায্য করা হয়। ওই অঞ্চলের অনেক স্বৈরশাসককে আমেরিকার স্কুলে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পানামার শাসককে হটাতে ২৪ হাজার সৈন্য নিয়ে ঢুকে পড়তে দ্বিধা করেনি যুক্তরাষ্ট্র।
দুঃখজনকভাবে, ‘বাড়ির পেছনের উঠোন’ নিয়ন্ত্রণের জন্য ধ্বংসাত্মক মার্কিন প্রচেষ্টা আজও অব্যাহত রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, ওয়াশিংটন এখনো লাতিন আমেরিকার জনগণকে অপরিমেয় কষ্ট দিচ্ছে। এটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য দিচ্ছে যে তারা এমনভাবে শাসিত হবে, যাতে তারা মার্কিন স্বার্থকে চ্যালেঞ্জ করতে না পারে। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্র এখনো কিউবাকে সন্ত্রাসবাদে সমর্থনকারী দেশের তালিকায় রাখে এই আশায় যে, এর ফলে অর্থনৈতিক মন্দা একটি অভ্যুত্থান ঘটাবে।
যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার শতকোটি ডলার আটকে দিয়েছে। নিষেধাজ্ঞার বেড়াজালে ফেলে দেশটির অর্থনীতিকে পঙ্গু করে ফেলছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন শয়তান ত্রয়ী বলে কিউবা, ভেনেজুয়েলা ও নিকারাগুয়ার নিন্দা করেছিলেন। কিন্তু গুয়াতেমালা, ইকুয়েডর, কলম্বিয়া, হন্ডুরাসের দুর্নীতিবাজ শাসকদের নিয়ে এল সালভাদর রা করেননি।
এটি এখন জনপ্রিয় এবং সহজ—অভ্যুত্থানের নিন্দা করা যা আইয়েন্দেকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল এবং পিনোশের অনেক মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং নৃশংসতার পথ প্রশস্ত করেছিল। নিঃসন্দেহে এর ৫০তম বার্ষিকীতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাথমিক ভূমিকার কিছু উল্লেখ থাকবে।
কিন্তু গত ৫০ বছরে ‘বাড়ির পেছনের উঠোন’ সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গির কেন পরিবর্তন হয়নি তা নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা নেই।
পিনোশেকে চিলির ক্ষমতায় বসতে সাহায্য করার পর, ওয়াশিংটন মনরো মতবাদের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখে, যার অর্থ এই যে যুক্তরাষ্ট্র যখনই প্রয়োজন অনুভব করবে, তখন পশ্চিম গোলার্ধের দেশগুলোর বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে।
বারাক ওবামা হলেন প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যিনি প্রকাশ্যে এই নীতি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তাঁর পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি, ২০১৩ সালের নভেম্বরে অর্গানাইজেশন অব আমেরিকান স্টেটসে ঘোষণা করেছিলেন, ‘মনরো মতবাদের যুগ শেষ।’ কিন্তু মাত্র পাঁচ বছর পর এবং কিউবা, ভেনেজুয়েলা ও অন্য অনেকের প্রতি মার্কিন নীতিতে কোনো বড় পরিবর্তন হয়নি; বরং ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বোল্টন মায়ামিতে এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন যে মনরো মতবাদ আবার ‘জীবিত হয়েছে এবং ভালো অবস্থায় আছে।’
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, যিনি ওবামার ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে লাতিন আমেরিকার রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার ব্যাপারে গভীর আগ্রহ দেখিয়েছিলেন, মনে হচ্ছে তিনি মনরো মতবাদকে আবার কবর দিয়েছেন—এটাই আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে।
তা সত্ত্বেও, যেহেতু আমরা চিলির ৫০ বছর আগের মর্মান্তিক ঘটনার কথা এবং ‘বাড়ির পেছনের উঠোন’ রক্ষার নামে অন্য অনেক মার্কিন হস্তক্ষেপের গুরুতর মানবিক পরিণতির কথা স্মরণ করি, আমাদের সচেতন হওয়া উচিত যে এখনো ওয়াশিংটনে মনরো মতবাদের অগণিত সমর্থক রয়েছেন।
আইয়েন্দের পতনের ঠিক ৫০ বছর এবং মনরো মতবাদের ২০০ বছর পরও লাতিন আমেরিকায় মার্কিন হস্তক্ষেপের হুমকি ক্রমেই প্রবল আকার ধারণ করছে।
জন কার্ক
ইমেরিটাস অধ্যাপক, লাতিন আমেরিকান স্টাডিজ, ডালহৌসি ইউনিভার্সিটি, কানাডা
স্টিভেন কিম্বার
অধ্যাপক, সাংবাদিকতা, ইউনিভার্সিটি অব কিংস কলেজ, কানাডা
(আল জাজিরায় প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত ও ঈষৎ সংক্ষেপিত)

১১ সেপ্টেম্বর ছিল চিলিতে সেই বিপর্যয়কর সামরিক অভ্যুত্থানের ৫০তম বার্ষিকী, যা লাতিন আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে নৃশংস স্বৈরশাসনের সূচনা করেছিল।
১৯৭৩ সালের এই দিনে জেনারেল অগাস্তো পিনোশের নেতৃত্বে এক সামরিক জান্তা প্রেসিডেন্ট সালভাদর আইয়েন্দের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করেন। এরপর পিনোশের ১৭ বছরের স্বৈরশাসনে ৪০ হাজার মানুষ নির্যাতনের শিকার হয়। হত্যা করা হয় ৩ হাজারের বেশি মানুষকে এবং ১ হাজারের বেশি মানুষ ‘গুম’ হয়। দেশত্যাগে বাধ্য হয় হাজার হাজার মানুষ।
যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের প্রশাসন চিলিতে এই সামরিক অভ্যুত্থানকে উৎসাহিত ও সমর্থন করেছিল, যা এসব নৃশংসতার পথকে প্রশস্ত করে।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জেমস মনরো ১৮২৩ সালের ডিসেম্বরে কার্যকরভাবে পশ্চিম গোলার্ধের (যুক্তরাষ্ট্রের আশপাশের দেশ) জন্য একটি সুরক্ষা নীতি ঘোষণা করেছিলেন, যা মনরো মতবাদ নামে পরিচিত। এই নীতির সুযোগ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রায়ই তার নিজ স্বার্থে লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে হস্তক্ষেপ করে। কিন্তু সব সময় নিজে থাকে সুরক্ষার মোড়কে।
চিলিতে ১৯৭৩ সালের অভ্যুত্থান ছিল সে রকমই একটি হস্তক্ষেপ।
সরকারি নথি ও টেলিফোন কল ট্রান্সক্রিপ্ট যেগুলোকে শ্রেণিবদ্ধ এবং অনেক বছর ধরে প্রকাশ করা হয়েছিল। ১৯৭০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর চিলির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আইয়েন্দে খুব অল্প ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেন। এর পর থেকে ওয়াশিংটন কীভাবে তাঁর পতন নিশ্চিত করতে কাজ করেছিল তার একটি পরিষ্কার চিত্র এসব নথি ও টেলিফোন কল ট্রান্সক্রিপ্টে ফুটে ওঠে।
তৎকালীন সিআইএ পরিচালক রিচার্ড হেলমসের হাতে লেখা নোট অনুসারে, আইয়েন্দের বিজয়ের মাত্র এক সপ্তাহ পর, ১৯৭০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন তাঁকে ‘ইকোনমি স্ক্রিম’ (অর্থনীতি পঙ্গু হওয়ার অপপ্রচার চালানোর) নির্দেশ দিয়েছিলেন, যাতে ‘আইয়েন্দেকে ক্ষমতায় আসতে বাধা দেওয়া যায় বা বিরত রাখা যায়।’ এর তিন দিন আগে, হেলমসের কাছে একটি ফোন কল আসে, যা তিনি রেকর্ড করেছিলেন। নিক্সনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার ওই ফোনটি করেছিলেন। তিনি ইতিমধ্যেই আইয়েন্দেকে ক্ষমতাচ্যুত করার মার্কিন প্রশাসনের অভিপ্রায় নিশ্চিত করেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা চিলিকে নালায় ভেসে যেতে দেব না।’
১৯৭৩ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর, পিনোশের রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মাত্র ছয় দিন পরে, নিক্সন তাঁর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে ফোন করে জানতে চেয়েছিলেন যে এই অভ্যুত্থানে মার্কিন ‘হাত’ দেখাবে কি না। শ্রেণিবদ্ধ কল ট্রান্সক্রিপ্ট অনুসারে, কিসিঞ্জার স্বীকার করেছেন, ‘আমরা তাদের সাহায্য করেছি’ এবং ‘(মুছে দেওয়া রেফারেন্স) যা বিরাট এক সম্ভাবনার সুযোগ তৈরি করেছে।’
যুক্তরাষ্ট্র গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতার বিরুদ্ধে সফলভাবে একটি অভ্যুত্থান ঘটানোর পরও চিলির বিষয়ে তার বিধ্বংসী হস্তক্ষেপ
বন্ধ করেনি।
পিনোশের স্বৈরশাসনের তিন বছর পার হওয়ার পর, ১৯৭৬ সালের জুন মাসে কিসিঞ্জার তাঁর প্রতি ওয়াশিংটনের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করতে ব্যক্তিগতভাবে চিলির রাজধানী সান্তিয়াগোতে যান। তাঁদের কথোপকথনের একটি ট্রান্সক্রিপ্ট অনুসারে, কিসিঞ্জার পিনোশেকে কীভাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাঁর ভাবমূর্তি উন্নত করা যায়, সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছিলেন। পিনোশের শাসনের মানবাধিকার রেকর্ডের সব সমালোচনা ‘বামপন্থীদের অপপ্রচার’ বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিসিঞ্জার পিনোশেকে বলেছিলেন, ‘আপনি এখানে যা করার চেষ্টা করছেন তার প্রতি আমরা সহানুভূতিশীল।’ অথচ পিনোশে তত দিনে তাঁর শাসনের হাজার হাজার নিন্দাকারীকে হত্যা ও গুম করেছিলেন। কিসিঞ্জার বলেছিলেন, ‘আমরা আপনাকে সাহায্য করতে চাই, আপনাকে দুর্বল করতে নয়।’ কিসিঞ্জার আরও বলেছিলেন, ‘আপনি আইয়েন্দেকে উৎখাত করে পশ্চিমের জন্য একটি দুর্দান্ত কাজ করেছেন।’
চিলিতে আইয়েন্দের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান সম্ভবত লাতিন আমেরিকায় সবচেয়ে বিধ্বংসী মার্কিন হস্তক্ষেপ ছিল। তবে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম বা শেষ হস্তক্ষেপ ছিল না।
যুক্তরাষ্ট্র চিলিতে আইয়েন্দে সরকারকে অস্থিতিশীল করার জন্য কাজ শুরু করার আগেই ওয়াশিংটন ১৯৫৪ সালে গুয়াতেমালায় গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত আরবেনজ সরকারকে উৎখাত করার জন্য একটি অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করে। ১৯৫৬ সালে ২৪ হাজার সৈন্য নিয়ে ডোমিনিকান রিপাবলিক আক্রমণ করে। কিউবার নেতা ফিদেল কাস্ত্রোকে হত্যা করার জন্য অসংখ্যবার চেষ্টা চালায়। ফলে আইয়েন্দে একমাত্র নন।
মার্কিন-বান্ধব পিনোশে সরকারকে সফলভাবে চিলিতে ক্ষমতায় বসানোর পর, যুক্তরাষ্ট্র নিকারাগুয়ার সান্দিনিস্তা সরকারকে উৎখাত করার জন্য একটি ছায়া যুদ্ধ শুরু করে। এর জন্য প্রক্সি আর্মি হিসেবে প্রায় ছয় হাজার ‘কন্ট্রাস’কে (যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত ডানপন্থী বিদ্রোহী গোষ্ঠী) আর্থিক সাহায্য করা হয়। ওই অঞ্চলের অনেক স্বৈরশাসককে আমেরিকার স্কুলে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পানামার শাসককে হটাতে ২৪ হাজার সৈন্য নিয়ে ঢুকে পড়তে দ্বিধা করেনি যুক্তরাষ্ট্র।
দুঃখজনকভাবে, ‘বাড়ির পেছনের উঠোন’ নিয়ন্ত্রণের জন্য ধ্বংসাত্মক মার্কিন প্রচেষ্টা আজও অব্যাহত রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, ওয়াশিংটন এখনো লাতিন আমেরিকার জনগণকে অপরিমেয় কষ্ট দিচ্ছে। এটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য দিচ্ছে যে তারা এমনভাবে শাসিত হবে, যাতে তারা মার্কিন স্বার্থকে চ্যালেঞ্জ করতে না পারে। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্র এখনো কিউবাকে সন্ত্রাসবাদে সমর্থনকারী দেশের তালিকায় রাখে এই আশায় যে, এর ফলে অর্থনৈতিক মন্দা একটি অভ্যুত্থান ঘটাবে।
যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার শতকোটি ডলার আটকে দিয়েছে। নিষেধাজ্ঞার বেড়াজালে ফেলে দেশটির অর্থনীতিকে পঙ্গু করে ফেলছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন শয়তান ত্রয়ী বলে কিউবা, ভেনেজুয়েলা ও নিকারাগুয়ার নিন্দা করেছিলেন। কিন্তু গুয়াতেমালা, ইকুয়েডর, কলম্বিয়া, হন্ডুরাসের দুর্নীতিবাজ শাসকদের নিয়ে এল সালভাদর রা করেননি।
এটি এখন জনপ্রিয় এবং সহজ—অভ্যুত্থানের নিন্দা করা যা আইয়েন্দেকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল এবং পিনোশের অনেক মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং নৃশংসতার পথ প্রশস্ত করেছিল। নিঃসন্দেহে এর ৫০তম বার্ষিকীতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাথমিক ভূমিকার কিছু উল্লেখ থাকবে।
কিন্তু গত ৫০ বছরে ‘বাড়ির পেছনের উঠোন’ সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গির কেন পরিবর্তন হয়নি তা নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা নেই।
পিনোশেকে চিলির ক্ষমতায় বসতে সাহায্য করার পর, ওয়াশিংটন মনরো মতবাদের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখে, যার অর্থ এই যে যুক্তরাষ্ট্র যখনই প্রয়োজন অনুভব করবে, তখন পশ্চিম গোলার্ধের দেশগুলোর বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে।
বারাক ওবামা হলেন প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যিনি প্রকাশ্যে এই নীতি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তাঁর পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি, ২০১৩ সালের নভেম্বরে অর্গানাইজেশন অব আমেরিকান স্টেটসে ঘোষণা করেছিলেন, ‘মনরো মতবাদের যুগ শেষ।’ কিন্তু মাত্র পাঁচ বছর পর এবং কিউবা, ভেনেজুয়েলা ও অন্য অনেকের প্রতি মার্কিন নীতিতে কোনো বড় পরিবর্তন হয়নি; বরং ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বোল্টন মায়ামিতে এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন যে মনরো মতবাদ আবার ‘জীবিত হয়েছে এবং ভালো অবস্থায় আছে।’
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, যিনি ওবামার ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে লাতিন আমেরিকার রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার ব্যাপারে গভীর আগ্রহ দেখিয়েছিলেন, মনে হচ্ছে তিনি মনরো মতবাদকে আবার কবর দিয়েছেন—এটাই আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে।
তা সত্ত্বেও, যেহেতু আমরা চিলির ৫০ বছর আগের মর্মান্তিক ঘটনার কথা এবং ‘বাড়ির পেছনের উঠোন’ রক্ষার নামে অন্য অনেক মার্কিন হস্তক্ষেপের গুরুতর মানবিক পরিণতির কথা স্মরণ করি, আমাদের সচেতন হওয়া উচিত যে এখনো ওয়াশিংটনে মনরো মতবাদের অগণিত সমর্থক রয়েছেন।
আইয়েন্দের পতনের ঠিক ৫০ বছর এবং মনরো মতবাদের ২০০ বছর পরও লাতিন আমেরিকায় মার্কিন হস্তক্ষেপের হুমকি ক্রমেই প্রবল আকার ধারণ করছে।
জন কার্ক
ইমেরিটাস অধ্যাপক, লাতিন আমেরিকান স্টাডিজ, ডালহৌসি ইউনিভার্সিটি, কানাডা
স্টিভেন কিম্বার
অধ্যাপক, সাংবাদিকতা, ইউনিভার্সিটি অব কিংস কলেজ, কানাডা
(আল জাজিরায় প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত ও ঈষৎ সংক্ষেপিত)
জন কার্ক ও স্টিভেন কিম্বার

১১ সেপ্টেম্বর ছিল চিলিতে সেই বিপর্যয়কর সামরিক অভ্যুত্থানের ৫০তম বার্ষিকী, যা লাতিন আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে নৃশংস স্বৈরশাসনের সূচনা করেছিল।
১৯৭৩ সালের এই দিনে জেনারেল অগাস্তো পিনোশের নেতৃত্বে এক সামরিক জান্তা প্রেসিডেন্ট সালভাদর আইয়েন্দের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করেন। এরপর পিনোশের ১৭ বছরের স্বৈরশাসনে ৪০ হাজার মানুষ নির্যাতনের শিকার হয়। হত্যা করা হয় ৩ হাজারের বেশি মানুষকে এবং ১ হাজারের বেশি মানুষ ‘গুম’ হয়। দেশত্যাগে বাধ্য হয় হাজার হাজার মানুষ।
যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের প্রশাসন চিলিতে এই সামরিক অভ্যুত্থানকে উৎসাহিত ও সমর্থন করেছিল, যা এসব নৃশংসতার পথকে প্রশস্ত করে।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জেমস মনরো ১৮২৩ সালের ডিসেম্বরে কার্যকরভাবে পশ্চিম গোলার্ধের (যুক্তরাষ্ট্রের আশপাশের দেশ) জন্য একটি সুরক্ষা নীতি ঘোষণা করেছিলেন, যা মনরো মতবাদ নামে পরিচিত। এই নীতির সুযোগ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রায়ই তার নিজ স্বার্থে লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে হস্তক্ষেপ করে। কিন্তু সব সময় নিজে থাকে সুরক্ষার মোড়কে।
চিলিতে ১৯৭৩ সালের অভ্যুত্থান ছিল সে রকমই একটি হস্তক্ষেপ।
সরকারি নথি ও টেলিফোন কল ট্রান্সক্রিপ্ট যেগুলোকে শ্রেণিবদ্ধ এবং অনেক বছর ধরে প্রকাশ করা হয়েছিল। ১৯৭০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর চিলির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আইয়েন্দে খুব অল্প ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেন। এর পর থেকে ওয়াশিংটন কীভাবে তাঁর পতন নিশ্চিত করতে কাজ করেছিল তার একটি পরিষ্কার চিত্র এসব নথি ও টেলিফোন কল ট্রান্সক্রিপ্টে ফুটে ওঠে।
তৎকালীন সিআইএ পরিচালক রিচার্ড হেলমসের হাতে লেখা নোট অনুসারে, আইয়েন্দের বিজয়ের মাত্র এক সপ্তাহ পর, ১৯৭০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন তাঁকে ‘ইকোনমি স্ক্রিম’ (অর্থনীতি পঙ্গু হওয়ার অপপ্রচার চালানোর) নির্দেশ দিয়েছিলেন, যাতে ‘আইয়েন্দেকে ক্ষমতায় আসতে বাধা দেওয়া যায় বা বিরত রাখা যায়।’ এর তিন দিন আগে, হেলমসের কাছে একটি ফোন কল আসে, যা তিনি রেকর্ড করেছিলেন। নিক্সনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার ওই ফোনটি করেছিলেন। তিনি ইতিমধ্যেই আইয়েন্দেকে ক্ষমতাচ্যুত করার মার্কিন প্রশাসনের অভিপ্রায় নিশ্চিত করেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা চিলিকে নালায় ভেসে যেতে দেব না।’
১৯৭৩ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর, পিনোশের রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মাত্র ছয় দিন পরে, নিক্সন তাঁর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে ফোন করে জানতে চেয়েছিলেন যে এই অভ্যুত্থানে মার্কিন ‘হাত’ দেখাবে কি না। শ্রেণিবদ্ধ কল ট্রান্সক্রিপ্ট অনুসারে, কিসিঞ্জার স্বীকার করেছেন, ‘আমরা তাদের সাহায্য করেছি’ এবং ‘(মুছে দেওয়া রেফারেন্স) যা বিরাট এক সম্ভাবনার সুযোগ তৈরি করেছে।’
যুক্তরাষ্ট্র গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতার বিরুদ্ধে সফলভাবে একটি অভ্যুত্থান ঘটানোর পরও চিলির বিষয়ে তার বিধ্বংসী হস্তক্ষেপ
বন্ধ করেনি।
পিনোশের স্বৈরশাসনের তিন বছর পার হওয়ার পর, ১৯৭৬ সালের জুন মাসে কিসিঞ্জার তাঁর প্রতি ওয়াশিংটনের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করতে ব্যক্তিগতভাবে চিলির রাজধানী সান্তিয়াগোতে যান। তাঁদের কথোপকথনের একটি ট্রান্সক্রিপ্ট অনুসারে, কিসিঞ্জার পিনোশেকে কীভাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাঁর ভাবমূর্তি উন্নত করা যায়, সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছিলেন। পিনোশের শাসনের মানবাধিকার রেকর্ডের সব সমালোচনা ‘বামপন্থীদের অপপ্রচার’ বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিসিঞ্জার পিনোশেকে বলেছিলেন, ‘আপনি এখানে যা করার চেষ্টা করছেন তার প্রতি আমরা সহানুভূতিশীল।’ অথচ পিনোশে তত দিনে তাঁর শাসনের হাজার হাজার নিন্দাকারীকে হত্যা ও গুম করেছিলেন। কিসিঞ্জার বলেছিলেন, ‘আমরা আপনাকে সাহায্য করতে চাই, আপনাকে দুর্বল করতে নয়।’ কিসিঞ্জার আরও বলেছিলেন, ‘আপনি আইয়েন্দেকে উৎখাত করে পশ্চিমের জন্য একটি দুর্দান্ত কাজ করেছেন।’
চিলিতে আইয়েন্দের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান সম্ভবত লাতিন আমেরিকায় সবচেয়ে বিধ্বংসী মার্কিন হস্তক্ষেপ ছিল। তবে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম বা শেষ হস্তক্ষেপ ছিল না।
যুক্তরাষ্ট্র চিলিতে আইয়েন্দে সরকারকে অস্থিতিশীল করার জন্য কাজ শুরু করার আগেই ওয়াশিংটন ১৯৫৪ সালে গুয়াতেমালায় গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত আরবেনজ সরকারকে উৎখাত করার জন্য একটি অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করে। ১৯৫৬ সালে ২৪ হাজার সৈন্য নিয়ে ডোমিনিকান রিপাবলিক আক্রমণ করে। কিউবার নেতা ফিদেল কাস্ত্রোকে হত্যা করার জন্য অসংখ্যবার চেষ্টা চালায়। ফলে আইয়েন্দে একমাত্র নন।
মার্কিন-বান্ধব পিনোশে সরকারকে সফলভাবে চিলিতে ক্ষমতায় বসানোর পর, যুক্তরাষ্ট্র নিকারাগুয়ার সান্দিনিস্তা সরকারকে উৎখাত করার জন্য একটি ছায়া যুদ্ধ শুরু করে। এর জন্য প্রক্সি আর্মি হিসেবে প্রায় ছয় হাজার ‘কন্ট্রাস’কে (যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত ডানপন্থী বিদ্রোহী গোষ্ঠী) আর্থিক সাহায্য করা হয়। ওই অঞ্চলের অনেক স্বৈরশাসককে আমেরিকার স্কুলে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পানামার শাসককে হটাতে ২৪ হাজার সৈন্য নিয়ে ঢুকে পড়তে দ্বিধা করেনি যুক্তরাষ্ট্র।
দুঃখজনকভাবে, ‘বাড়ির পেছনের উঠোন’ নিয়ন্ত্রণের জন্য ধ্বংসাত্মক মার্কিন প্রচেষ্টা আজও অব্যাহত রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, ওয়াশিংটন এখনো লাতিন আমেরিকার জনগণকে অপরিমেয় কষ্ট দিচ্ছে। এটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য দিচ্ছে যে তারা এমনভাবে শাসিত হবে, যাতে তারা মার্কিন স্বার্থকে চ্যালেঞ্জ করতে না পারে। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্র এখনো কিউবাকে সন্ত্রাসবাদে সমর্থনকারী দেশের তালিকায় রাখে এই আশায় যে, এর ফলে অর্থনৈতিক মন্দা একটি অভ্যুত্থান ঘটাবে।
যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার শতকোটি ডলার আটকে দিয়েছে। নিষেধাজ্ঞার বেড়াজালে ফেলে দেশটির অর্থনীতিকে পঙ্গু করে ফেলছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন শয়তান ত্রয়ী বলে কিউবা, ভেনেজুয়েলা ও নিকারাগুয়ার নিন্দা করেছিলেন। কিন্তু গুয়াতেমালা, ইকুয়েডর, কলম্বিয়া, হন্ডুরাসের দুর্নীতিবাজ শাসকদের নিয়ে এল সালভাদর রা করেননি।
এটি এখন জনপ্রিয় এবং সহজ—অভ্যুত্থানের নিন্দা করা যা আইয়েন্দেকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল এবং পিনোশের অনেক মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং নৃশংসতার পথ প্রশস্ত করেছিল। নিঃসন্দেহে এর ৫০তম বার্ষিকীতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাথমিক ভূমিকার কিছু উল্লেখ থাকবে।
কিন্তু গত ৫০ বছরে ‘বাড়ির পেছনের উঠোন’ সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গির কেন পরিবর্তন হয়নি তা নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা নেই।
পিনোশেকে চিলির ক্ষমতায় বসতে সাহায্য করার পর, ওয়াশিংটন মনরো মতবাদের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখে, যার অর্থ এই যে যুক্তরাষ্ট্র যখনই প্রয়োজন অনুভব করবে, তখন পশ্চিম গোলার্ধের দেশগুলোর বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে।
বারাক ওবামা হলেন প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যিনি প্রকাশ্যে এই নীতি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তাঁর পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি, ২০১৩ সালের নভেম্বরে অর্গানাইজেশন অব আমেরিকান স্টেটসে ঘোষণা করেছিলেন, ‘মনরো মতবাদের যুগ শেষ।’ কিন্তু মাত্র পাঁচ বছর পর এবং কিউবা, ভেনেজুয়েলা ও অন্য অনেকের প্রতি মার্কিন নীতিতে কোনো বড় পরিবর্তন হয়নি; বরং ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বোল্টন মায়ামিতে এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন যে মনরো মতবাদ আবার ‘জীবিত হয়েছে এবং ভালো অবস্থায় আছে।’
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, যিনি ওবামার ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে লাতিন আমেরিকার রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার ব্যাপারে গভীর আগ্রহ দেখিয়েছিলেন, মনে হচ্ছে তিনি মনরো মতবাদকে আবার কবর দিয়েছেন—এটাই আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে।
তা সত্ত্বেও, যেহেতু আমরা চিলির ৫০ বছর আগের মর্মান্তিক ঘটনার কথা এবং ‘বাড়ির পেছনের উঠোন’ রক্ষার নামে অন্য অনেক মার্কিন হস্তক্ষেপের গুরুতর মানবিক পরিণতির কথা স্মরণ করি, আমাদের সচেতন হওয়া উচিত যে এখনো ওয়াশিংটনে মনরো মতবাদের অগণিত সমর্থক রয়েছেন।
আইয়েন্দের পতনের ঠিক ৫০ বছর এবং মনরো মতবাদের ২০০ বছর পরও লাতিন আমেরিকায় মার্কিন হস্তক্ষেপের হুমকি ক্রমেই প্রবল আকার ধারণ করছে।
জন কার্ক
ইমেরিটাস অধ্যাপক, লাতিন আমেরিকান স্টাডিজ, ডালহৌসি ইউনিভার্সিটি, কানাডা
স্টিভেন কিম্বার
অধ্যাপক, সাংবাদিকতা, ইউনিভার্সিটি অব কিংস কলেজ, কানাডা
(আল জাজিরায় প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত ও ঈষৎ সংক্ষেপিত)

১১ সেপ্টেম্বর ছিল চিলিতে সেই বিপর্যয়কর সামরিক অভ্যুত্থানের ৫০তম বার্ষিকী, যা লাতিন আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে নৃশংস স্বৈরশাসনের সূচনা করেছিল।
১৯৭৩ সালের এই দিনে জেনারেল অগাস্তো পিনোশের নেতৃত্বে এক সামরিক জান্তা প্রেসিডেন্ট সালভাদর আইয়েন্দের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করেন। এরপর পিনোশের ১৭ বছরের স্বৈরশাসনে ৪০ হাজার মানুষ নির্যাতনের শিকার হয়। হত্যা করা হয় ৩ হাজারের বেশি মানুষকে এবং ১ হাজারের বেশি মানুষ ‘গুম’ হয়। দেশত্যাগে বাধ্য হয় হাজার হাজার মানুষ।
যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের প্রশাসন চিলিতে এই সামরিক অভ্যুত্থানকে উৎসাহিত ও সমর্থন করেছিল, যা এসব নৃশংসতার পথকে প্রশস্ত করে।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জেমস মনরো ১৮২৩ সালের ডিসেম্বরে কার্যকরভাবে পশ্চিম গোলার্ধের (যুক্তরাষ্ট্রের আশপাশের দেশ) জন্য একটি সুরক্ষা নীতি ঘোষণা করেছিলেন, যা মনরো মতবাদ নামে পরিচিত। এই নীতির সুযোগ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রায়ই তার নিজ স্বার্থে লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে হস্তক্ষেপ করে। কিন্তু সব সময় নিজে থাকে সুরক্ষার মোড়কে।
চিলিতে ১৯৭৩ সালের অভ্যুত্থান ছিল সে রকমই একটি হস্তক্ষেপ।
সরকারি নথি ও টেলিফোন কল ট্রান্সক্রিপ্ট যেগুলোকে শ্রেণিবদ্ধ এবং অনেক বছর ধরে প্রকাশ করা হয়েছিল। ১৯৭০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর চিলির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আইয়েন্দে খুব অল্প ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেন। এর পর থেকে ওয়াশিংটন কীভাবে তাঁর পতন নিশ্চিত করতে কাজ করেছিল তার একটি পরিষ্কার চিত্র এসব নথি ও টেলিফোন কল ট্রান্সক্রিপ্টে ফুটে ওঠে।
তৎকালীন সিআইএ পরিচালক রিচার্ড হেলমসের হাতে লেখা নোট অনুসারে, আইয়েন্দের বিজয়ের মাত্র এক সপ্তাহ পর, ১৯৭০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন তাঁকে ‘ইকোনমি স্ক্রিম’ (অর্থনীতি পঙ্গু হওয়ার অপপ্রচার চালানোর) নির্দেশ দিয়েছিলেন, যাতে ‘আইয়েন্দেকে ক্ষমতায় আসতে বাধা দেওয়া যায় বা বিরত রাখা যায়।’ এর তিন দিন আগে, হেলমসের কাছে একটি ফোন কল আসে, যা তিনি রেকর্ড করেছিলেন। নিক্সনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার ওই ফোনটি করেছিলেন। তিনি ইতিমধ্যেই আইয়েন্দেকে ক্ষমতাচ্যুত করার মার্কিন প্রশাসনের অভিপ্রায় নিশ্চিত করেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা চিলিকে নালায় ভেসে যেতে দেব না।’
১৯৭৩ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর, পিনোশের রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মাত্র ছয় দিন পরে, নিক্সন তাঁর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে ফোন করে জানতে চেয়েছিলেন যে এই অভ্যুত্থানে মার্কিন ‘হাত’ দেখাবে কি না। শ্রেণিবদ্ধ কল ট্রান্সক্রিপ্ট অনুসারে, কিসিঞ্জার স্বীকার করেছেন, ‘আমরা তাদের সাহায্য করেছি’ এবং ‘(মুছে দেওয়া রেফারেন্স) যা বিরাট এক সম্ভাবনার সুযোগ তৈরি করেছে।’
যুক্তরাষ্ট্র গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতার বিরুদ্ধে সফলভাবে একটি অভ্যুত্থান ঘটানোর পরও চিলির বিষয়ে তার বিধ্বংসী হস্তক্ষেপ
বন্ধ করেনি।
পিনোশের স্বৈরশাসনের তিন বছর পার হওয়ার পর, ১৯৭৬ সালের জুন মাসে কিসিঞ্জার তাঁর প্রতি ওয়াশিংটনের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করতে ব্যক্তিগতভাবে চিলির রাজধানী সান্তিয়াগোতে যান। তাঁদের কথোপকথনের একটি ট্রান্সক্রিপ্ট অনুসারে, কিসিঞ্জার পিনোশেকে কীভাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাঁর ভাবমূর্তি উন্নত করা যায়, সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছিলেন। পিনোশের শাসনের মানবাধিকার রেকর্ডের সব সমালোচনা ‘বামপন্থীদের অপপ্রচার’ বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিসিঞ্জার পিনোশেকে বলেছিলেন, ‘আপনি এখানে যা করার চেষ্টা করছেন তার প্রতি আমরা সহানুভূতিশীল।’ অথচ পিনোশে তত দিনে তাঁর শাসনের হাজার হাজার নিন্দাকারীকে হত্যা ও গুম করেছিলেন। কিসিঞ্জার বলেছিলেন, ‘আমরা আপনাকে সাহায্য করতে চাই, আপনাকে দুর্বল করতে নয়।’ কিসিঞ্জার আরও বলেছিলেন, ‘আপনি আইয়েন্দেকে উৎখাত করে পশ্চিমের জন্য একটি দুর্দান্ত কাজ করেছেন।’
চিলিতে আইয়েন্দের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান সম্ভবত লাতিন আমেরিকায় সবচেয়ে বিধ্বংসী মার্কিন হস্তক্ষেপ ছিল। তবে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম বা শেষ হস্তক্ষেপ ছিল না।
যুক্তরাষ্ট্র চিলিতে আইয়েন্দে সরকারকে অস্থিতিশীল করার জন্য কাজ শুরু করার আগেই ওয়াশিংটন ১৯৫৪ সালে গুয়াতেমালায় গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত আরবেনজ সরকারকে উৎখাত করার জন্য একটি অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করে। ১৯৫৬ সালে ২৪ হাজার সৈন্য নিয়ে ডোমিনিকান রিপাবলিক আক্রমণ করে। কিউবার নেতা ফিদেল কাস্ত্রোকে হত্যা করার জন্য অসংখ্যবার চেষ্টা চালায়। ফলে আইয়েন্দে একমাত্র নন।
মার্কিন-বান্ধব পিনোশে সরকারকে সফলভাবে চিলিতে ক্ষমতায় বসানোর পর, যুক্তরাষ্ট্র নিকারাগুয়ার সান্দিনিস্তা সরকারকে উৎখাত করার জন্য একটি ছায়া যুদ্ধ শুরু করে। এর জন্য প্রক্সি আর্মি হিসেবে প্রায় ছয় হাজার ‘কন্ট্রাস’কে (যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত ডানপন্থী বিদ্রোহী গোষ্ঠী) আর্থিক সাহায্য করা হয়। ওই অঞ্চলের অনেক স্বৈরশাসককে আমেরিকার স্কুলে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পানামার শাসককে হটাতে ২৪ হাজার সৈন্য নিয়ে ঢুকে পড়তে দ্বিধা করেনি যুক্তরাষ্ট্র।
দুঃখজনকভাবে, ‘বাড়ির পেছনের উঠোন’ নিয়ন্ত্রণের জন্য ধ্বংসাত্মক মার্কিন প্রচেষ্টা আজও অব্যাহত রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, ওয়াশিংটন এখনো লাতিন আমেরিকার জনগণকে অপরিমেয় কষ্ট দিচ্ছে। এটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য দিচ্ছে যে তারা এমনভাবে শাসিত হবে, যাতে তারা মার্কিন স্বার্থকে চ্যালেঞ্জ করতে না পারে। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্র এখনো কিউবাকে সন্ত্রাসবাদে সমর্থনকারী দেশের তালিকায় রাখে এই আশায় যে, এর ফলে অর্থনৈতিক মন্দা একটি অভ্যুত্থান ঘটাবে।
যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার শতকোটি ডলার আটকে দিয়েছে। নিষেধাজ্ঞার বেড়াজালে ফেলে দেশটির অর্থনীতিকে পঙ্গু করে ফেলছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন শয়তান ত্রয়ী বলে কিউবা, ভেনেজুয়েলা ও নিকারাগুয়ার নিন্দা করেছিলেন। কিন্তু গুয়াতেমালা, ইকুয়েডর, কলম্বিয়া, হন্ডুরাসের দুর্নীতিবাজ শাসকদের নিয়ে এল সালভাদর রা করেননি।
এটি এখন জনপ্রিয় এবং সহজ—অভ্যুত্থানের নিন্দা করা যা আইয়েন্দেকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল এবং পিনোশের অনেক মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং নৃশংসতার পথ প্রশস্ত করেছিল। নিঃসন্দেহে এর ৫০তম বার্ষিকীতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাথমিক ভূমিকার কিছু উল্লেখ থাকবে।
কিন্তু গত ৫০ বছরে ‘বাড়ির পেছনের উঠোন’ সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গির কেন পরিবর্তন হয়নি তা নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা নেই।
পিনোশেকে চিলির ক্ষমতায় বসতে সাহায্য করার পর, ওয়াশিংটন মনরো মতবাদের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখে, যার অর্থ এই যে যুক্তরাষ্ট্র যখনই প্রয়োজন অনুভব করবে, তখন পশ্চিম গোলার্ধের দেশগুলোর বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে।
বারাক ওবামা হলেন প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যিনি প্রকাশ্যে এই নীতি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তাঁর পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি, ২০১৩ সালের নভেম্বরে অর্গানাইজেশন অব আমেরিকান স্টেটসে ঘোষণা করেছিলেন, ‘মনরো মতবাদের যুগ শেষ।’ কিন্তু মাত্র পাঁচ বছর পর এবং কিউবা, ভেনেজুয়েলা ও অন্য অনেকের প্রতি মার্কিন নীতিতে কোনো বড় পরিবর্তন হয়নি; বরং ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বোল্টন মায়ামিতে এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন যে মনরো মতবাদ আবার ‘জীবিত হয়েছে এবং ভালো অবস্থায় আছে।’
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, যিনি ওবামার ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে লাতিন আমেরিকার রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার ব্যাপারে গভীর আগ্রহ দেখিয়েছিলেন, মনে হচ্ছে তিনি মনরো মতবাদকে আবার কবর দিয়েছেন—এটাই আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে।
তা সত্ত্বেও, যেহেতু আমরা চিলির ৫০ বছর আগের মর্মান্তিক ঘটনার কথা এবং ‘বাড়ির পেছনের উঠোন’ রক্ষার নামে অন্য অনেক মার্কিন হস্তক্ষেপের গুরুতর মানবিক পরিণতির কথা স্মরণ করি, আমাদের সচেতন হওয়া উচিত যে এখনো ওয়াশিংটনে মনরো মতবাদের অগণিত সমর্থক রয়েছেন।
আইয়েন্দের পতনের ঠিক ৫০ বছর এবং মনরো মতবাদের ২০০ বছর পরও লাতিন আমেরিকায় মার্কিন হস্তক্ষেপের হুমকি ক্রমেই প্রবল আকার ধারণ করছে।
জন কার্ক
ইমেরিটাস অধ্যাপক, লাতিন আমেরিকান স্টাডিজ, ডালহৌসি ইউনিভার্সিটি, কানাডা
স্টিভেন কিম্বার
অধ্যাপক, সাংবাদিকতা, ইউনিভার্সিটি অব কিংস কলেজ, কানাডা
(আল জাজিরায় প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত ও ঈষৎ সংক্ষেপিত)

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

১১ সেপ্টেম্বর ছিল চিলিতে সেই বিপর্যয়কর সামরিক অভ্যুত্থানের ৫০তম বার্ষিকী, যা লাতিন আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে নৃশংস স্বৈরশাসনের সূচনা করেছিল।
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

১১ সেপ্টেম্বর ছিল চিলিতে সেই বিপর্যয়কর সামরিক অভ্যুত্থানের ৫০তম বার্ষিকী, যা লাতিন আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে নৃশংস স্বৈরশাসনের সূচনা করেছিল।
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

১১ সেপ্টেম্বর ছিল চিলিতে সেই বিপর্যয়কর সামরিক অভ্যুত্থানের ৫০তম বার্ষিকী, যা লাতিন আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে নৃশংস স্বৈরশাসনের সূচনা করেছিল।
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

১১ সেপ্টেম্বর ছিল চিলিতে সেই বিপর্যয়কর সামরিক অভ্যুত্থানের ৫০তম বার্ষিকী, যা লাতিন আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে নৃশংস স্বৈরশাসনের সূচনা করেছিল।
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫