Ajker Patrika

বৃষ্টি-ঢলে নিম্নাঞ্চলে পানি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
আপডেট : ১৪ মে ২০২২, ১৩: ০০
Thumbnail image

সিলেটের জৈন্তাপুরে তিন দিনের টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে করে সারী ও বড় নয়াগং নদীর পানি বিপৎসীমার দশমিক ৪৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এ ছাড়া আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সিলেট ও সুনামগঞ্জের সীমান্তবর্তী অন্যান্য নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত পারে বলে জানিয়েছে সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতের ত্রিপুরাতে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় এ আশঙ্কা করছেন তাঁরা। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

সিলেট: আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতের ত্রিপুরাতে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপবিভাগীয় প্রকৌশলী এ কে এম নিলয় পাশা।

জানা গেছে, উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও চলমান বৃষ্টিপাতে সিলেটের প্রায় সব নদনদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতিমধ্যে সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট উপজেলা দিয়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করছে। পাউবো সিলেট কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার ভোর ৬টা থেকে ওই অঞ্চলে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার দশমিক ৫৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

সিলেট আবহাওয়া কার্যালয়ের তথ্যমতে, জেলায় গত বুধবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ৭৮ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বুধবার সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত ৩ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

সিলেট আবহাওয়া কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী বলেন, আগামী ১৮ তারিখ পর্যন্ত সিলেটে বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দিনের চেয়ে রাতে বেশি বৃষ্টিপাত হবে।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী এ কে এম নিলয় পাশা বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারতে ভারী বৃষ্টিপাত হবে। যেহেতু আমাদের প্রধান নদীগুলোর উৎসমুখ ভারতের দিকে, তাই সিলেটের বেশ কয়েকটি নদীসহ সীমান্তবর্তী নদনদীগুলোর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। পাশাপাশি আমাদের দেশেও বৃষ্টিপাত চলমান রয়েছে। তাই এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

জৈন্তাপুর: গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে দেখা গেছে, গত তিন দিনে টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে নিজপাট, জৈন্তাপুর ও চারিকাটা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে বাস করা পরিবারগুলো। বন্যায় আটকে পড়া লোকজন নৌকা অথবা ভেলায় করে উঁচু স্থানে আশ্রয়ের জন্য ছুটতে দেখা যায়। বন্যায় পরিস্থিতি ও বন্যায় আটকা পড়া ব্যক্তিদের খোঁজ নিতে দুর্ঘনাস্থল পরিদর্শন করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা।

বন্যাকবলিত এলাকাগুলো হলো মেঘলী, বন্দরহাটি, লামাপাড়া, ময়নাহাটি, মোরগাহাটি, জাঙ্গালহাটি, মজুমদারপাড়া, নয়াবাড়ী, হর্নি, বাইরাখেল, গোয়াবাড়ী, তিলকৈপাড়া, বড়খেল, ফুলবাড়ী, বন্দরহাটি, ডিবিরহাওর, ঘিলাতৈল, মাস্তিং, হেলিরাই, মুক্তাপুর, বিরাইমারা, বিরাইমারা হাওর, লামনীগ্রাম, কাটাখাল, খারুবিল, চাতলারপাড়, ডুলটিরপাড়, ১ নম্বর লক্ষ্মীপুর, ২ নম্বর লক্ষ্মীপুর, আমবাড়ী, ঝিঙ্গাবাড়ী, কাঁঠালবাড়ী, নলজুরী হাওর, বালিদাঁড়া, রামপ্রসাদ, থুবাং, বাউরভাগ উত্তর, বাউরভাগ দক্ষিণ।

উপজেলা সর্ববৃহৎ সারী নদী ও বড় নয়াগাং নদীর পানি বিপৎসীমার দশমিক ৪৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানান সারী-গোয়াইন বেড়িবাঁধ প্রকল্পের কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন জানান। তিনি আরও বলেন, বৃষ্টি থামলে পানি নিচের দিকে প্রবাহিত হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল বশিরুল ইসলাম জানান, বন্যায় প্লাবিত এলাকাগুলোর খোঁজ-খবর রাখা হচ্ছে। ইউপি চেয়ারম্যান, সদস্য ও গ্রাম পুলিশদের বন্যার পরিস্থিতির পর্যবেক্ষণের জন্য সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

সুনামগঞ্জ: ভারতের মেঘালয়ে ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর পানি বেড়েছে। শুক্রবার বেলা ৩টা পর্যন্ত সুনামগঞ্জ পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বেড়েছে ৭ দশমিক ৩২ মিটার। তবে বিপদ সীমা ৭ দশমিক ৮০ মিটার নিচে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ রেকর্ড করা হয়েছে ১০০ মিলিমিটার।

এদিকে উজানের ঢল অব্যাহত থাকায় জেলার জাদুকাটা, বৌলাই ও পাটলাই নদীর পানি বাড়ছে। তবে ধান কাটা শতভাগ শেষ হয়ে গেলেও মাঠে থাকা ধান শুকানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষকেরা।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সূত্রমতে, আগামী ৭২ ঘণ্টায় ভারতের আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরা রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদ-নদীসমূহের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত