Ajker Patrika

অপর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা খাবার মেলে অর্ধেক

সাজন আহম্মেদ পাপন, কিশোরগঞ্জ 
অপর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা খাবার মেলে অর্ধেক

কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সেবার মান নিয়ে রোগী ও স্বজনদের অভিযোগের তালিকা প্রতিদিন লম্বা হচ্ছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযানেও এর সত্যতা পাওয়া গেছে। সংস্থাটি চলতি বছর দুবার এখানে অভিযান চালিয়েছে। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি দল পরিদর্শনে এসে নানা সমস্যা চিহ্নিত করেছে।

হাসপাতালটি ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠা হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় ২০২০ সালের মার্চে। উদ্বোধনের পর থেকেই এখানকার সেবা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করছে রোগী ও স্বজনেরা। তাদের অভিযোগ, গুরুতর ও জটিল রোগে আক্রান্তদের হাসপাতালে আসতে নিরুৎসাহিত করা হয়। সময়মতো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পাওয়া যায় না। চিকিৎসকেরা রোগী ঠিকমতো না দেখেই অন্য প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে দেন। পরীক্ষার জন্য টিকিট কাউন্টারে গেলে সেখানকার কর্মীরা পাশের ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে যাওয়ার পরামর্শ দেন। আর হাসপাতালে পরীক্ষার জন্য এক থেকে দেড় মাস পরের সিরিয়াল দেওয়া হয়। 
এক রোগীর ছেলে সানাউল্লাহ সাদী বলেন, ‘বাবার চোখের ছানি অপারেশনের জন্য হাসপাতালে গিয়েছিলাম। সেখানে কোনো পরীক্ষা না করেই জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে রেফার করে। পরে স্থানীয় ক্লিনিকে অপারেশন করানো হয়।’

গলায় মাছের কাঁটা আটকে হাসপাতালে যাওয়া হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘জরুরি বিভাগের টিকিট কাউন্টার থেকে বলা হয় কোনো চিকিৎসক নেই। পরে স্থানীয় ক্লিনিকে গেলে এক চিকিৎসক গলা থেকে কাঁটা বের করে দেন।’

হাসপাতালে ভর্তি ব্যক্তিরা জানান, সকালের নাশতায় আপেল বা কমলা বরাদ্দ থাকলেও তা সরবরাহ করা হয় না। দুটি করে কলা ও ডিমের পরিবর্তে একটি করে দেওয়া হয়। দুপুর ও রাতের খাবারও খুবই নিম্নমানের।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি দুদকের কিশোরগঞ্জ কার্যালয় হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় চিকিৎসকদের সময়মতো উপস্থিত না থাকা, সেবাদানে অবহেলা, অফিস সময়ে ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখাসহ বিভিন্ন অনিয়মের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়।

দুদক সর্বশেষ ২৭ আগস্ট অভিযান চালায়। তখন দুপুর ও রাতের খাবারে রোগীপ্রতি ২০০ গ্রাম মুরগির মাংসের বিপরীতে ১২০ গ্রাম এবং ১৮০ গ্রাম মাছের বিপরীতে ৭০ গ্রাম সরবরাহের সত্যতা পায় দুদক।

হাসপাতালে শুরু থেকে খাবার সরবরাহ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তালহা ট্রেড সিস্টেম। ওজনে কম ও নিম্নমানের কারণে হাসপাতাল প্রশাসন ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠানটিকে দুবার কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে; কিন্তু কোনো উত্তর পায়নি।

তবে ঠিকাদার মাইনুল ইসলাম বলেন, ‘আমার লাইসেন্স দিয়ে আরেকজন খাবার সরবরাহ করছে। আমার কাজ খাদ্যদ্রব্য হাসপাতালের রান্নাঘরে পৌঁছে দেওয়া। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রান্না করে খাবার রোগীদের কাছে পৌঁছে দেবে। আর আমাকে যে শোকজ করা হয়েছে, তার উত্তর আমি আজকালের মধ্যে দেব।’

সূত্র আরও জানায়, ২৬ এবং ২৭ আগস্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঁচ সদস্যের একটি দল হাসপাতাল পরিদর্শন করে। এ সময় সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকদের অনীহা ও অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের চিকিৎসকদের সহযোগিতার অভাবে অস্ত্রোপচার হয় না বলে চিহ্নিত করা হয়।
তবে এ নিয়ে কথা হলে অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহাব বাদল বলেন, ‘কিছু কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘কিশোরগঞ্জবাসীকে যে সেবা দেওয়া দরকার, সেটা পুরোপুরি হচ্ছে না। তবে আমরা সর্বোচ্চ সেবা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

সার্বিক বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘খাবার সরবরাহ নিয়ে আমি সন্তুষ্ট নই। আর ওষুধ সরবরাহ নিয়ে কোনো অনিয়ম এই হাসপাতালে হয় না। ধাপে ধাপে চিকিৎসাসেবার মান বাড়ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত