Ajker Patrika

‘লাইনে দাঁড় করানোর পর হঠাৎ গুলি’

পাবনা প্রতিনিধি
আপডেট : ২২ মার্চ ২০২২, ১৭: ৩৯
‘লাইনে দাঁড় করানোর পর হঠাৎ গুলি’

‘একাত্তরের ২৩ এপ্রিল। আট মাসের ছেলে ও আট বছরের মেয়েকে নিয়ে দুপুরে ঘুমিয়ে ছিলেন গৃহবধূ ফজিলা খাতুন। এ সময় আচমকা গুলির শব্দে দুপুরের নিস্তব্ধতা ভেঙে যায়। পাকিস্তানি হানাদারদের গুলি থেকে বাঁচতে সেদিন ছোট্ট শিশুকে বুকে জড়িয়ে এবং মেয়েকে নিয়ে ঘর থেকে বের হন ফজিলা। কিন্তু বাইরে বের হতেই গুলিতে ছোট্ট মেয়েটি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। সেখানেই মারা যায় সে। মায়ের কাছে ছুটে আসতে গিয়ে পায়ে গুলি লাগে তাঁর পাঁচ বছরের আরেক মেয়ের। স্বামী আব্দুল কাদেরের শরীরেও গুলি লাগে, রক্তাক্ত অবস্থায় বাড়ির পাশে পড়ে ছিলেন তিনি।’

সেদিনের ভয়াবহ গণহত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার বাঘইল গ্রামের ফজিলা খাতুন। যে গণহত্যায় অন্তত ২৩ জন নিহত ও ৮ জন আহত হয়েছিলেন।

আলাপকালে ফজিলা বলেন, ‘আমার বড় মেয়েটা আমার সামনে গুলি লেগে মরে গেল। আমার স্বামী আর ছোট মেয়েটাও গুলি খেয়ে পড়ে রইল। আমি আমার মরা মেয়েটার জন্য তখন কাঁদতেও পারিনি। কারণ আমাকে আমার স্বামী আর গুলিবিদ্ধ ছোট মেয়েটাকে বাঁচাতে ছুটে যেতে হয়েছিল।’

ফজিলা আরও বলেন, পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, কেউ তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ারও সাহস পায়নি। সবকিছু শান্ত হলে তিনি গ্রামের দোকান থেকে সিবাজল ট্যাবলেট কিনে সেগুলো গুঁড়া করে নারকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে তাঁর স্বামী আর মেয়ের ক্ষতস্থানে কয়েক দিন ধরে মলমের মতো করে ব্যবহার করেন। কিছুদিন পর তাঁরা সুস্থ হয়ে ওঠেন।

সেদিনের গণহত্যার বর্ণনা দেন আব্দুল কাদের। বলেন, ‘এমন হামলার জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম না। তখন বিকেল ৫টা, আমরা আমাদের রোজকার কাজে ব্যস্ত ছিলাম। সেই সময় পাকিস্তানি আর্মি আসে। তারা প্রথমে গ্রামবাসীকে জড়ো হওয়ার জন্য ডাকে এবং বলে, তারা পরিবারের সদস্যদের গুনবে। কেউ আহত হবেন না। যাঁরা সেখানে গিয়েছিলেন, তাঁদের লাইন ধরে দাঁড় করানো হয়েছিল। তারপর হঠাৎ করেই গুলি চালানো শুরু করে। আমার কোমরের নিচে গুলি লেগেছিল।’

পাকশী ইউনিয়নের বাঘইল গ্রামের গণহত্যা হয়তো এখন শুধুই ইতিহাস। কিন্তু গ্রামের আরও অনেকের কাছে এটি একটি দুঃস্বপ্ন।

বাঘইল শহীদপাড়া নামে গ্রামটি পরিচিত। তবে গ্রামবাসীরা বলেন, যাঁরা নিহত হয়েছিলেন, তাঁদের এখনো শহীদ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়নি।

পাকশী ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় যে কয়টা স্থানে গণহত্যা হয়েছে, তার মধ্যে এটি একটি। কিন্তু এই গ্রামের শহীদদের যথাযোগ্য স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন ইতিহাস জানতে পারে, সে জন্য হত্যাকাণ্ডের স্মৃতি সংরক্ষণ করার দাবি জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল নিয়ে ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা, চ্যালেঞ্জের মুখে বাংলাদেশ

ডিএনসিসির পদ ছাড়লেন এস্তোনিয়ার নাগরিক আমিনুল ইসলাম

কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর অতর্কিত গুলি, নিহত ২৬

র‍্যাবের গুলিতে নিহত কলেজছাত্র সিয়াম মাদক কারবারি নয়, দাবি পরিবারের

চীনা পণ্যে শুল্ক ‘উল্লেখযোগ্য’ পরিমাণে কমিয়ে সুখে বসবাসের ঘোষণা ট্রাম্পের

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত