Ajker Patrika

ঈদের সিনেমার ব্যবসা নিয়ে সন্তুষ্ট সবাই, তবে…

খায়রুল বাসার নির্ঝর
আপডেট : ১২ জুলাই ২০২৩, ১৬: ০১
ঈদের সিনেমার ব্যবসা নিয়ে সন্তুষ্ট সবাই, তবে…

গতবারের মতো এবার ঈদেও মুক্তির মিছিলে ছিল রেকর্ডসংখ্যক সিনেমা। শেষ পর্যন্ত পাঁচটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। ঈদের দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে দেখা যাচ্ছে, অন্যবারের তুলনায় এবার বেশিসংখ্যক দর্শক এসেছেন হলে। প্রথম দিকে প্রায় সব সিনেমার প্রতিটি শো ছিল হাউসফুল। সিনেমাসংশ্লিষ্টরা এবার ঈদের সিনেমার ব্যবসা নিয়ে সন্তুষ্ট। তবে তা খানিকটা ম্লান হয়ে গেছে নির্মাতা-কলাকুশলীদের কদর্য লড়াইয়ে। বিস্তারিত জানাচ্ছেন খায়রুল বাসার নির্ঝর

সিঙ্গেল স্ক্রিনে শাকিবের দাপট
রোজার ঈদে ‘লিডার: আমিই বাংলাদেশ’-এর মতো এবারও ‘প্রিয়তমা’য় সবচেয়ে বেশি হল পেয়েছেন শাকিব খান। প্রথম সপ্তাহে হিমেল আশরাফ পরিচালিত প্রিয়তমা মুক্তি পায় ১০৫টি হলে। ‘সুড়ঙ্গ’ পেয়েছিল ২৮টি হল, ‘ক্যাসিনো’ ১৫, ‘লালশাড়ি’ ১১ ও ‘প্রহেলিকা’ ৮টি। ঈদের দিন থেকেই প্রতিটি হলে শাকিবভক্তদের সমাগম চোখে পড়েছে। প্রিয়তমায় শাকিবের লুক থেকে শুরু করে সিনেমার গান—সবই ছিল আলোচনায়। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গল্পের ভিন্নতা। সব মিলিয়ে শুধু শাকিবভক্তরা নন, বাংলা সিনেমার নিয়মিত দর্শক নন এমন অনেকেই গিয়েছেন প্রিয়তমা দেখতে। দর্শকদের এই আগ্রহ আছে এখনো। দ্বিতীয় সপ্তাহে তাই প্রিয়তমার চারটি হল বেড়েছে। সিঙ্গেল স্ক্রিনে প্রিয়তমার পরেই আছে সুড়ঙ্গর অবস্থান। আর বাকি তিনটি সিনেমা প্রহেলিকা, ক্যাসিনো ও লাল শাড়ি সিঙ্গেল স্ক্রিনে মোটামুটি সাড়া ফেলতে পেরেছে।

‘প্রহেলিকা’ সিনেমায় বুবলী ও মাহফুজসিঙ্গেল স্ক্রিনে গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার ব্যবসা বেড়েছে—স্বীকার করে হল মালিক সমিতির সভাপতি কাজী শোয়েব রশীদ বলেন, ‘এবার ঈদের সিনেমাগুলো গত কয়েক বছরের তুলনায় বেশ ভালো ব্যবসা করছে। সুড়ঙ্গ ও প্রিয়তমা বেশি ভালো যাচ্ছে। তুলনায় প্রিয়তমা সিনেমাটি বেশি ব্যবসা করছে। ঈদের সিনেমার ব্যবসা নিয়ে হলমালিকেরা এবার সন্তুষ্ট।’

হলমালিকেরা ব্যবসায়িক কোনো পরিসংখ্যান না জানালেও প্রিয়তমার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ভার্সেটাইল মিডিয়ার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, প্রথম ৭ দিনে সারা দেশে প্রিয়তমার ৩ হাজার ১৫০টির বেশি শোতে ১০ কোটি ৩০ লাখ টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে।

তমা মির্জা ও আফরান নিশোমাল্টিপ্লেক্সে এগিয়ে নিশো
রায়হান রাফীর সুড়ঙ্গ দিয়ে বড় পর্দায় অভিষেক হয়েছে আফরান নিশোর। অভিষেকেই বাজিমাত করেছেন তিনি। সিঙ্গেল স্ক্রিনে শাকিবের দাপট দেখা গেলেও মাল্টিপ্লেক্সে এগিয়ে রয়েছেন নিশো। ঈদের দিন থেকে স্টার সিনেপ্লেক্স, যমুনা ব্লকবাস্টার, লায়ন সিনেমাসে দর্শকেরা ভিড় করছেন সুড়ঙ্গ দেখতে। ফলে বাড়ানো হয়েছে শোর সংখ্যা। সুড়ঙ্গ প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিল এখনই সিনেমাটির কোনো ব্যবসায়িক পরিসংখ্যান দিতে চাইছেন না। তবে জানিয়েছেন, স্টার সিনেপ্লেক্সে প্রথম সপ্তাহে সুড়ঙ্গ সিনেমার আড়াই কোটি টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া লায়ন সিনেমাসে ৯ দিনে বিক্রি হয়েছে ৩৮ লাখ টাকার টিকিট। স্টার সিনেপ্লেক্সে সুড়ঙ্গের পরেই আলোচনায় আছে চয়নিকা চৌধুরীর ‘প্রহেলিকা’। এ ছাড়া মাল্টিপ্লেক্সগুলোয় প্রিয়তমা, ক্যাসিনো ও লাল শাড়ি ভালো সাড়া ফেলেছে।

‘লাল শাড়ি’ সিনেমায় সাইমন ও অপু বিশ্বাসকদর্য প্রতিযোগিতা
ঈদের সিনেমা নিয়ে আগে থেকেই শাকিব খান ও আফরান নিশোর ভক্তদের মধ্যে একধরনের ভার্চুয়াল যুদ্ধ চলছিল। পরে সে বিবাদে শামিল হন এ দুই সিনেমার নির্মাতা, শিল্পী ও কলাকুশলীরা। নিজেদের সিনেমাকে ‘বেশি হিট’ প্রমাণ করতে তাঁরা কদর্য ভাষায় আক্রমণ করেছেন পরস্পরকে, যা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। দীর্ঘদিন পর বাংলা সিনেমা দেখতে দর্শক হলে ভিড় করছেন। প্রত্যাশা ছিল, এটাকে ইতিবাচকভাবে নিয়ে আগামীর পরিকল্পনা সাজাবেন প্রযোজক-নির্মাতারা। কিন্তু দেখা গেল কাদা ছোড়াছুড়ির চিত্র। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক নির্মাতা, অভিনয়শিল্পী ও প্রযোজক।
নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘এবারের ঈদে মানুষ হলে গেছে, তিনটা ছবি নিয়ে কথাবার্তা হয়েছে। কারও হয়তো এটা ভালো লেগেছে, কারও লাগে নাই। এই যে মানুষ হলে যাচ্ছে, এই জিনিসটা সেলিব্রেট করার কথা ছিল। কিন্তু নিজের সাফল্য সেলিব্রেশনের পরিবর্তে আমরা দেখলাম অন্যকে টেনে নামানোর প্রাণান্ত চেষ্টা। খুবই দুঃখজনক ছিল ব্যাপারটা।’

‘ক্যাসিনো’ সিনেমায় নিরবঈদ ছাড়া ব্যবসা নেই
হল মালিক সমিতির সভাপতি কাজী শোয়েব রশীদ হিসাব দিচ্ছেন, ‘বাংলাদেশে ১ হাজার ২৩০ থেকে ৩৫টি হল ছিল, এখন তা নেমে এসেছে মাত্র ৬০-৭০টিতে। মৌসুমি সিনেমা হল যেগুলো আছে, দুটো ঈদ বা এ রকম ফেস্টিভ্যালকে সামনে রেখে তারা কোনোমতে চালু করে। তারপর বন্ধ করে দেয়। এসব মৌসুমি হল মিলিয়ে সংখ্যা দাঁড়ায় ১৬০-১৭০। এর মধ্যে বেশির ভাগ হলই সারা বছর দর্শক-খরায় ধুঁকতে থাকে।’ দুই ঈদ ছাড়া বাংলা সিনেমার দর্শক এখন তেমন পাওয়া যায় না। দর্শকদের হলে আসার ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে কাজী শোয়েব রশীদ জোর দিচ্ছেন ভালো সিনেমা নির্মাণের প্রতি। তিনি বলেন, ‘ঈদে একটা উৎসবমুখর পরিবেশ থাকে। এ কারণে সবাই হলে যায়। আমার মনে হয়, সারা বছর যদি এ রকম কনটেন্ট তৈরি করা হয়, তাহলে অসুবিধা হয় না। ভালো সিনেমা মানুষ দেখে। আগেও আমরা দেখেছি, ঈদ উৎসব ছাড়াও অনেক সিনেমা বরাবরই ভালো ব্যবসা করেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত