Ajker Patrika

প্রাইভেটের জমানো টাকায় খামার দিয়ে সচ্ছল নাজমিন

শিপুল ইসলাম, রংপুর
প্রাইভেটের জমানো টাকায় খামার দিয়ে সচ্ছল নাজমিন

উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোতেই নাজমিন নাহারকে বিয়ে দেন মা-বাবা। স্বামীর সংসারের দারিদ্র্য বিষিয়ে তোলে তাঁর মন। ভালোভাবে বাঁচতে চিন্তা করেন নিজে কিছু করার। সেই ভাবনা থেকে গ্রামের শিশুদের প্রাইভেট পড়ানো শুরু করেন। এতে কিছু টাকা জমে। সেই টাকা দিয়ে ছাগল-গাভি কেনেন। দেখতে দেখতে ছোটখাটো একটি খামার হয়ে যায় তাঁর। সঙ্গে সংসারের দৈন্যও কাটতে থাকে।

এখন অভাব তাড়িয়ে গাভির বদৌলতে নাজমিনের সংসারে এসেছে সচ্ছলতা। মাসে আয় করছেন ২৫ হাজার টাকা। শুধু নিজের ভাগ্য বদলায়নি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের শেরমস্ত পাতিলভাঙা গ্রামের এই গৃহবধূ। তাঁর উপদেশে গ্রামের আরও অনেক নারীও গাভি পালন শুরু করেছেন।

নাজমিনের বাড়িতে ঢুকতেই দেখা গেল, তিনি গাভির দুধ দোহাচ্ছেন। কিছুক্ষণ পর খামার থেকে বালতি ভরা দুধ নিয়ে বেরিয়ে এলেন। বাড়ির উঠানে গাছের ছায়ায় বসতে দিলেন। সংগ্রামী জীবনের কথা জানতে চাইলেই চকচক করে ওঠে তাঁর চোখমুখ। কোনো ভূমিকা ছাড়াই শুরু করেন নাজমিন।

নাজমিন নাহার জানান, ছয় মাস প্রাইভেট পড়ানোর ১২ হাজার টাকা দিয়ে হাঁস-মুরগি ও ছাগল কেনেন। ছাগল বাচ্চা দেয়, হাঁস-মুরগি দেয় ডিম। এরপর হাঁস-মুরগি ও ছাগল বিক্রি করে ২০১৫ সালে কেনেন সংকর জাতের দুটি বকনা বাছুর। বছর দুয়েক পর বাছুর দুটি গাভিতে পরিণত হয় এবং প্রতিদিন ৩৬ লিটার করে দুধ দিতে শুরু করে।

এ দুধ বিক্রি করে দিনে প্রায় ৬০০ টাকা আয় হয়। এভাবে তিন বছরে আরও তিনটি সংকর জাতের গাভি কেনেন। পাঁচটি গাভি দিয়ে শুরু করেন ডেইরি খামার। বর্তমানে দেশি-বিদেশি মিলে মোট গরু ১৩টি। প্রতিদিন খামার থেকে ৮৫-৯০ লিটার দুধ পান। খরচ বাদে দৈনিক এক হাজার টাকা লাভ থাকে। বছরে দুই লাখ টাকার গাভির বাছুরও বিক্রি করেন তিনি।

এই আয়ের টাকায় নাজমিন টিনের ঘরের জায়গায় পাকা বাড়ি করেছেন। কিনেছেন ৭০ শতক আবাদি জমি। গাভির খামারও করেছেন পাকা।

আলমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম রাসেল বলেন, ‘নাজমিন যখন বউ হয়ে আসেন, এলাকায় তখন তাঁর শ্বশুরের পরিবারে অবস্থা নাজুক ছিল। অভাব লেগেই ছিল। পরিশ্রমী নাজমিন সংসারের সেই দারিদ্র্য দূর করেছেন।’

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ফরহাদ নোমান বলেন, ‘নাজমিন একজন আদর্শ খামারি। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, ইচ্ছে থাকলে আর পরিশ্রম করলে কোনো কিছুই আটকায় না। তাঁকে দেখে নারীদের পাশাপাশি পুরুষেরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন পশু পালনে। আমরা সব সময় তাঁকে সহযোগিতার চেষ্টা করি।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত