Ajker Patrika

পোড়া কয়লায় ভাগ্যবদল

মিজানুর রহমান নয়ন, কুমারখালী (কুষ্টিয়া)
পোড়া কয়লায় ভাগ্যবদল

পোড়া কয়লা অল্প মূল্যে সংগ্রহ করেন মো. আনোয়ার হোসেন (৩৫)। সংগ্রহের পর তা রোদে শুকিয়ে পরিষ্কার ও বাছাই করে বস্তাবন্দী করেন তিনি। এরপর প্রতি বস্তা ৫০০ টাকা মূল্যে ট্রাকে করে পাঠিয়ে দেন ঢাকার কয়েকটি ব্যাটারি তৈরির কারখানায়। কারখানার মালিকেরা সেই কয়লা ব্যবহারের পর তাঁকে মূল্য পাঠান মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে।

খরচ বাদ দিয়ে এ কাজ করেই প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা আয় করছেন কুষ্টিয়ার কুমারখালীর যুবক মো. আনোয়ার হোসেন। তিনি উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের বেতবাড়িয়া গ্রামের প্রয়াত দবির উদ্দিনের ছেলে। তাঁর স্ত্রী ও দুই ছেলেসহ চারজনের সংসার। তাঁর এ কাজে সহযোগিতা করে প্রতি মাসে ১০-১৮ হাজার টাকা আয় করছেন দুজন নারীসহ আটজন শ্রমিক।

এই উদ্যোক্তা, শ্রমিক ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাত্র দুই বছর আগেও আনোয়ার ছিলেন একজন শ্যালো ইঞ্জিনচালিত করিমন গাড়িচালক। প্রায় পাঁচ-সাত বছর আগে থেকেই জগন্নাথপুর ইউনিয়নের দয়রামপুর গ্রামের দুধ জ্বালানো কাঠ পোড়ানো কয়লা যায় ঢাকার বিভিন্ন কারখানায়। আনোয়ার সেই কারখানা মালিকদের এ কাজে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে সহযোগিতা করতেন। কখনো আবার আনোয়ারের বাড়িতেই কয়লা মজুত রাখতেন মালিকেরা।

এরপর ২০২০ সালে মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে ঢাকার কারখানা মালিকেরা কুমারখালী এলাকায় আসা বন্ধ করে দেন। আর নিজের দূরদর্শিতা কাজে লাগিয়ে আনোয়ার হোসেন নিজেই উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের তাঁরাপুর বাজার এলাকায় প্রায় ১০ শতাংশ জায়গা ভাড়া নিয়ে কয়লার ব্যবসা শুরু করেন। সে সময় তাঁর কোনো পুঁজি ছিল না। গ্রামীণ এক মহাজনের কাছ থেকে মাসিক ১০ শতাংশ সুদে ১ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন।

আরও জানা গেছে, আনোয়ার গ্রাম থেকে প্রায় ১৫ কেজি ওজনের এক বস্তা কয়লা কেনেন ২৫০ টাকায়। সেই কয়লা পরিবহন, শুকানো ও মজুতের স্থান ভাড়া, শ্রমিকদের মজুরিসহ আনুষঙ্গিক খরচ হয় আরও ১০০ টাকা। আর এক বস্তা কয়লা বিক্রি করেন প্রায় ৫০০ টাকা। প্রতি মাসে গড়ে ২ হাজার বস্তা কয়লা আমদানি ও রপ্তানি করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় প্রায় ৮ লাখ টাকা এবং বিক্রি করেন প্রায় ১০ লাখ টাকা। খরচ বাদে প্রতি মাসে প্রায় ২ লাখ টাকা আয় বা লাভ করেন আনোয়ার।

জানা গেছে, বর্তমানে তাঁর এ কাজে দুজন নারীসহ মোট আটজন শ্রমিক সহযোগিতা করছেন। একজন নারী শ্রমিক প্রতিদিন ৩৫০ টাকা মজুরি পান আর পুরুষ শ্রমিকেরা মজুরি পান ৪৫০ টাকা। ভ্যানগাড়িসহ শ্রমিক রয়েছেন দুজন। তাঁরা প্রতিদিন ৬০০ টাকা করে মজুরি পান। কয়লার পাশাপাশি তিনি ধান থেকে চিড়া তৈরির মিল নির্মাণ করেছেন। সহজ শর্তে সরকারি ঋণ বা সহযোগিতা পেলে বড় পরিসরে করতে চান কয়লার ব্যবসা। নির্মাণ করতে চান একটি ধান থেকে মুড়ি তৈরির মিল।

মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আগে করিমন ড্রাইভার (চালক) ছিলাম। একসময় ঢাকা থেকে কারখানার মালিকেরা এলাকায় কয়লা কিনতে আসতেন। আমি তাঁদের কাজ করে দিতাম। হঠাৎ করোনায় তাঁরা (ঢাকার মালিক) এলাকায় আসা বন্ধ করে দেন। তখন ১ লাখ টাকা সুদে নিয়ে নিজেই ব্যবসা শুরু করি। প্রথমে ব্যবসা ছোট ছিল। আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে। এখন প্রতি মাসে প্রায় ২ হাজার বস্তা কয়লা আমদানি-রপ্তানি হচ্ছে। এতে খরচ হচ্ছে প্রায় ৮ লাখ আর বিক্রি হচ্ছে প্রায় ১০ লাখ টাকা। প্রতি মাসে গড়ে প্রায় দুই লক্ষাধিক টাকা আয় হচ্ছে।’

আনোয়ার আরও বলেন, ‘সরকারি ঋণ বা সহযোগিতা পেলে ব্যবসা আরও বড় করতে চাই। নিজের পাশাপাশি আরও অধিক মানুষের কাজের ব্যবস্থা করতে চাই।’

আনোয়ারের কয়লা ব্যবসার ব্যবস্থাপক মো. শাজাহান বলেন, ‘এখানে কাজ করে খুব ভালো লাগে। প্রতিদিন ৬০০ টাকা করে মাসে প্রায় ১৮ হাজার টাকা পাই। এখানে আমরা আটজন কাজ করি।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিতান কুমার মণ্ডল বলেন, উপজেলা প্রশাসন উদ্যোক্তা সংগ্রহের কাজ হাতে নিয়েছে। ইতিমধ্যে উদ্যোক্তা ম্যাপ তৈরির মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের পণ্যের প্রচার ও প্রসারের কাজ করা হচ্ছে। কয়লা উদ্যোক্তাকেও সরকারি ঋণসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে।

জাল বিছিয়ে কয়লা শুকানো হচ্ছে। আনোয়ার শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়ে সেই কয়লা থেকে ইট, পাথরসহ অন্যান্য আবর্জনা বাছাই করছেন। কুমারখালীর জগন্নাথপুর ইউনিয়নের তারাপুর বাজার এলাকা থেকে তোলা। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১০০ বছর পর জানা গেল, ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস মোয়াজ্জেমকে অব্যাহতি

ঘন ঘন নাক খুঁটিয়ে স্মৃতিভ্রংশ ডেকে আনছেন না তো!

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত