মোনায়েম সরকার

৫ আগস্ট দেশে যে অভূতপূর্ব ছাত্র ও গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে, তার অভিঘাতে রাজনীতির কী গুণগত পরিবর্তন সাধিত হবে, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। নানা ধরনের মতামত সামনে আসছে। আওয়ামী লীগের পরিবর্তে কি বিএনপির লুটেরা শাসন কায়েম হবে? নাকি বেনামে জামায়াতে ইসলামী ও অন্য ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতির আসন পোক্ত হবে? ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারই বা কত দিন ক্ষমতায় থেকে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ কতটা এগিয়ে নেবে?
হাসিনা সরকারের বিদায়ের এক মাস যেতে না যেতেই উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনার ফোলা বেলুন যে কিছুটা হলেও চুপসে গেছে, তা অস্বীকার করা যাবে না। আমাদের জনমনস্তত্ত্ব অস্থিরতায় ঠাসা। আমরা বিজয় অর্জন করি, কিন্তু অর্জিত বিজয় ধরে রাখতে পারি না। ডিম পাড়ে হাঁসে, খায় বাঘডাশে। জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের বিজয়ের সুফল কার ঘরে উঠবে, তা নিয়ে রীতিমতো কামড়াকামড়ি শুরু হয়েছে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে আওয়ামী লীগ সরকার ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল, সেই সরকারের এমন লজ্জাজনক পতনের বিষয়টি সম্ভবত আওয়ামী লীগের চরম বিরোধীরাও ভাবেনি, আওয়ামী লীগ দরদিরা তো নয়ই।
শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে না গেলে তাঁর কী পরিণতি হতো, তা নিয়ে অনুমাননির্ভর আলোচনা না করে তিনি দেশ ছাড়ায় তাঁর দল ও দলের লাখ লাখ কর্মী-সমর্থকের অবস্থা কী দাঁড়াল, সে বিষয়েই কিছু আলোচনা করা যেতে পারে।
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে প্রতিষ্ঠার পর থেকে আওয়ামী লীগ বিভিন্ন সময়ে সংকটে পড়েছে। দলের অনেক নেতা দল ত্যাগ করেছেন। দলে বিভক্তিও দেখা দিয়েছে। ১৯৭৫ সালে দলের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা, অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পরও আওয়ামী লীগ বড় ধরনের সমস্যায় পড়েছিল। তখন এমনও বলা হতো যে আওয়ামী লীগ আর কখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না, ক্ষমতায় যাওয়া তো অনেক দূরের ব্যাপার। কিন্তু এসব অনুমান কিংবা ভবিষ্যদ্বাণী ঠিক হয়নি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই আওয়ামী লীগ ঘুরে দাঁড়িয়েছে, ক্ষমতায় গিয়েছে এবং দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময়ের শাসক দল হওয়ার ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।
১৯৯৬ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে জনগণের রায় নিয়েই আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছিল, দেশ শাসনের অধিকার পেয়েছিল। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর। বিপুল ব্যবধানে জয়লাভ করে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথ নেন ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি। ওই সময়ের পর থেকে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা দেশত্যাগের আগপর্যন্ত দলটি ক্ষমতায় ছিল টানা ১৫ বছর ৭ মাস। এই সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগের অধীনে অনুষ্ঠিত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সবগুলোই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। বলা হয়, একধরনের তামাশার নির্বাচনে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করে আওয়ামী লীগের সর্বনাশ করেছেন হাসিনা। গণতান্ত্রিক রাজনীতির ঐতিহ্যবাহী দলটি স্বৈরাচারী শাসনের অপবাদ নিয়ে ক্ষমতাচ্যুত হলো। শেখ হাসিনা নিজে ফ্যাসিস্ট, খুনি শাসক হিসেবে নিন্দিত। দেশ ছেড়ে গিয়ে তিনি ব্যক্তিগতভাবে প্রাণে বাঁচলেও আওয়ামী লীগ নামক দলটিকে তিনি মৃত্যুশয্যায় তুলে দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ আবার সুস্থ-সবল হয়ে উঠবে কি না, সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
১৫ বছরের আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার হয়ে উঠেছিল স্বৈরতান্ত্রিক ও কর্তৃত্ববাদী। দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের কোনো সীমা ছিল না। এই সময়কালে পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থাকেই দুর্নীতিগ্রস্ত করে ফেলা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনসহ সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো দলীয়করণের মাধ্যমে আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা হয়েছিল। দুদক, পিএসসি, মানবাধিকার কমিশন—যত কমিশন আছে সবগুলোকে একধরনের দুর্নীতিসহায়ক জায়গায় ঠেলে দেওয়া হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ পরিণত হয়েছে শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের ইচ্ছাপূরণের যন্ত্রে। অসৎ ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট, সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র ও দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি—এই তিন চক্রের মাধ্যমে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার স্বেচ্ছাচারী বাসনা শেষ পর্যন্ত ধূলিসাৎ হয়েছে।
যেহেতু ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে মাত্র এক মাস আগে, তাই এখন শুধু ওই সরকারের খারাপ দিকগুলোই সামনে আসছে। এবার আন্দোলন যেহেতু শিক্ষার্থীদের দ্বারা সংগঠিত হয়েছে এবং এই শিক্ষার্থীরা আওয়ামী লীগের আগে যে বিএনপি-জামায়াতের সরকার ছিল, সেই সরকারের শাসনকাল দেখেনি, তাই তাদের কাছে ‘আওয়ামী দুঃশাসন’ খুবই ভয়াবহ বলে মনে হচ্ছে।
এক মাস আগে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, এমপি, নেতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি, চুরি, অর্থ আত্মসাতের পিলে চমকানো সব খবর যেভাবে সামনে আসছে, তাতে এটা মনে হওয়াই স্বাভাবিক যে আওয়ামী লীগ নামে দল পুনর্গঠন বুঝি আর সম্ভব হবে না। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এটাও মনে রাখতে হবে যে বাংলাদেশ হলো ‘সব সম্ভবের দেশ’। খাদে পড়াও যেমন এখানে সহজ, তেমনি খাদ থেকে ওঠাও খুব কঠিন নয়।
শেখ হাসিনা ও তাঁর দুষ্কর্মের সহযোগীদের শাস্তির আওতায় আনার পাশাপাশি এটাও মনে রাখতে হবে যে বাংলাদেশে আওয়ামী শাসন ছাড়া অন্য শাসনামলও প্রশংসাযোগ্য ছিল না। আওয়ামী লীগের শাসনকে এখন যেমন দুঃশাসন বলে অভিহিত করা হচ্ছে, তেমনি ২০০১-০৬ সময়কালে বিএনপি-জামায়াতের শাসনকালেও সুশাসনের দৃষ্টান্ত ছিল না। এখন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে অপশাসন, দুর্নীতি, লুটপাট, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ফেরত না দেওয়া, বিদেশে অর্থ পাচারসহ যেসব অনিয়মের অভিযোগ উঠছে, এর কোনটা বিএনপির বিরুদ্ধে ছিল না?
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও তাঁর দুই ছেলে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর বিভিন্ন দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে বহির্বিশ্বে লজ্জাজনক এক পরিচিতি পেয়েছিল বাংলাদেশ। দেশে ব্যাপকভাবে দুর্নীতির কারণে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের করাপশন পারসেপশন ইনডেক্সে (সিপিআই) বাংলাদেশ পরপর পাঁচবার দুর্নীতিতে বিশ্বের মধ্যে প্রথম হয়েছিল।
বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের সাবেক বিশেষ প্রতিনিধি ডেবরা লাপ্রিভেট গ্রিফিথ কয়েক বছর দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত করেছেন। বাংলাদেশে ২০০১-০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় কীভাবে দুর্নীতি হয়েছিল, তা নিয়েই মূলত তিনি তদন্ত করেছেন। ২০১৬ সালের ২১ নভেম্বর আদালতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা তারেক রহমান এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের বিরুদ্ধে তিনি যে জবানবন্দি দিয়েছেন, সেখানে তিনি কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং জিয়া পরিবার নিয়ে বাস্তবতার নিরিখে কিছু মন্তব্য করেন। সেই সময়ের সরকার এবং জিয়া পরিবারের ঔদ্ধত্যের কারণে কীভাবে তখন দেশে সর্বগ্রাসী দুর্নীতি হয়েছিল, তা তিনি তুলে ধরেন।
ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস ২০০৮ সালের ৩ নভেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টে এক গোপন তারবার্তায় তারেক রহমান সম্পর্কে লেখেন, যা পরে সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টিকারী উইকিলিকসের ফাঁস করা নথিতে পাওয়া যায়। মরিয়ার্টি তারেক রহমান সম্পর্কে লেখেন: ‘তারেক রহমান বিপুল পরিমাণ দুর্নীতির জন্য দায়ী, যা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলছে...সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান অত্যন্ত দুর্ধর্ষ ও ভয়ংকর এবং একটি দুর্নীতিপরায়ণ সরকার ও বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতার প্রতীক। তারেক রহমানের প্রকাশ্য দুর্নীতি মার্কিন সরকারের তিনটি লক্ষ্য যথা—গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, উন্নয়ন ও জঙ্গিবাদ নির্মূল করার মিশনকে প্রচণ্ডভাবে হুমকির সম্মুখীন করেছে...আইনের প্রতি তার প্রকাশ্য অশ্রদ্ধা বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের ভিত্তি শক্ত করতে সহায়তা করেছে।’
নিরীহ মানুষ হত্যার অভিযোগও কি শুধু শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধেই উঠছে? ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সূচনালগ্নেই সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় কত মানুষ নিহত হয়েছে, কত ধর্ষণ-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে, তা তখনকার পত্রপত্রিকায় পাওয়া যাবে। গোপাল কৃষ্ণ মুহুরীর রক্তাক্ত নিথর দেহের ছবি কিংবা পূর্ণিমা শীলকে দল বেঁধে ধর্ষণ করার খবরও তামাদি হয়ে যায়নি। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলা করে ২৪ জনকে হত্যা এবং শেখ হাসিনাসহ কয়েক শ নেতা-কর্মীর গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনা কোন সরকারের আমলে ঘটেছিল? শাহ এ এম এস কিবরিয়া, আহসান উল্লাহ মাস্টার, মঞ্জুরুল ইমামসহ আওয়ামী লীগের অসংখ্য জনপ্রিয় নেতাকে হত্যার কথা কি ভুলে যাওয়ার মতো? দেশজুড়ে বোমা হামলা, বাংলা ভাইয়ের উত্থানের মতো ঘটনা আড়াল করার উপায় আছে?
এগুলো কোনোটাই বানোয়াট কাহিনি নয়। গুগলে সার্চ দিয়ে যে কেউ দেখে নিতে পারেন।
এবার আওয়ামী লীগের পতনের পর বিএনপির যে উত্থান, তা যদি স্বাভাবিক হয়, তাহলে সময় গেলে আওয়ামী লীগের উত্থান কেন অসম্ভব হবে? বিএনপিকে চাপমুক্ত হতে যেমন আওয়ামী লীগের বাড়াবাড়ি সহায়ক হয়েছে, তেমনি বিএনপির বাড়াবাড়িও যে আওয়ামী লীগকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করবে, তার আলামত কি এখনই চারদিকে লক্ষ করা যাচ্ছে না?
আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিষিদ্ধ করার দাবি ছোট দুটি রাজনৈতিক দল কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদের এলডিপি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের দল গণঅধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে তোলা হলেও সেটা মানা হবে বলে মনে হয় না। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার একটি রিট উচ্চ আদালতে খারিজ হয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান শুনানিতে বলেছেন, ‘কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের ইচ্ছা অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। সংবিধানে সংগঠন ও রাজনৈতিক দল পরিচালনার যে স্বাধীনতা রয়েছে, এই সরকার সেটিতে বিশ্বাস করে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের এ-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, ‘আমাদের সংবিধান অনুসারে সংগঠন করার স্বাধীনতা আছে, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী দল, বিভিন্ন গণতান্ত্রিক সংগ্রামে তাদের অবদান ছিল। কিন্তু গেল ১৫ বছরে তারা যা করেছে, সেটা তাদের ঐতিহ্যের সঙ্গে যায় না, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে যায় না, বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বর্বরতম ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল আওয়ামী লীগ। এই কর্মকাণ্ডের জন্য ব্যক্তিগত দায় থাকতে পারে, নেতাদের সামষ্টিক দায় থাকতে পারে, কিন্তু দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা সমীচীন হবে বলে আমি মনে করি না।’
রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। গণতন্ত্র, বৈষম্যহীনতা, ধর্মীয় সহিষ্ণুতা, মানবাধিকার সুরক্ষা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, দুর্নীতি প্রতিরোধ—এগুলো অধরা থাকলে শুধু দল পরিবর্তনে মানুষ খুশি হবে বলে মনে হয় না।
মোনায়েম সরকার, রাজনীতিবিদ, লেখক, চেয়ারম্যান, বিএফডিআর

৫ আগস্ট দেশে যে অভূতপূর্ব ছাত্র ও গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে, তার অভিঘাতে রাজনীতির কী গুণগত পরিবর্তন সাধিত হবে, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। নানা ধরনের মতামত সামনে আসছে। আওয়ামী লীগের পরিবর্তে কি বিএনপির লুটেরা শাসন কায়েম হবে? নাকি বেনামে জামায়াতে ইসলামী ও অন্য ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতির আসন পোক্ত হবে? ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারই বা কত দিন ক্ষমতায় থেকে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ কতটা এগিয়ে নেবে?
হাসিনা সরকারের বিদায়ের এক মাস যেতে না যেতেই উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনার ফোলা বেলুন যে কিছুটা হলেও চুপসে গেছে, তা অস্বীকার করা যাবে না। আমাদের জনমনস্তত্ত্ব অস্থিরতায় ঠাসা। আমরা বিজয় অর্জন করি, কিন্তু অর্জিত বিজয় ধরে রাখতে পারি না। ডিম পাড়ে হাঁসে, খায় বাঘডাশে। জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের বিজয়ের সুফল কার ঘরে উঠবে, তা নিয়ে রীতিমতো কামড়াকামড়ি শুরু হয়েছে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে আওয়ামী লীগ সরকার ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল, সেই সরকারের এমন লজ্জাজনক পতনের বিষয়টি সম্ভবত আওয়ামী লীগের চরম বিরোধীরাও ভাবেনি, আওয়ামী লীগ দরদিরা তো নয়ই।
শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে না গেলে তাঁর কী পরিণতি হতো, তা নিয়ে অনুমাননির্ভর আলোচনা না করে তিনি দেশ ছাড়ায় তাঁর দল ও দলের লাখ লাখ কর্মী-সমর্থকের অবস্থা কী দাঁড়াল, সে বিষয়েই কিছু আলোচনা করা যেতে পারে।
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে প্রতিষ্ঠার পর থেকে আওয়ামী লীগ বিভিন্ন সময়ে সংকটে পড়েছে। দলের অনেক নেতা দল ত্যাগ করেছেন। দলে বিভক্তিও দেখা দিয়েছে। ১৯৭৫ সালে দলের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা, অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পরও আওয়ামী লীগ বড় ধরনের সমস্যায় পড়েছিল। তখন এমনও বলা হতো যে আওয়ামী লীগ আর কখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না, ক্ষমতায় যাওয়া তো অনেক দূরের ব্যাপার। কিন্তু এসব অনুমান কিংবা ভবিষ্যদ্বাণী ঠিক হয়নি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই আওয়ামী লীগ ঘুরে দাঁড়িয়েছে, ক্ষমতায় গিয়েছে এবং দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময়ের শাসক দল হওয়ার ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।
১৯৯৬ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে জনগণের রায় নিয়েই আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছিল, দেশ শাসনের অধিকার পেয়েছিল। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর। বিপুল ব্যবধানে জয়লাভ করে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথ নেন ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি। ওই সময়ের পর থেকে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা দেশত্যাগের আগপর্যন্ত দলটি ক্ষমতায় ছিল টানা ১৫ বছর ৭ মাস। এই সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগের অধীনে অনুষ্ঠিত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সবগুলোই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। বলা হয়, একধরনের তামাশার নির্বাচনে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করে আওয়ামী লীগের সর্বনাশ করেছেন হাসিনা। গণতান্ত্রিক রাজনীতির ঐতিহ্যবাহী দলটি স্বৈরাচারী শাসনের অপবাদ নিয়ে ক্ষমতাচ্যুত হলো। শেখ হাসিনা নিজে ফ্যাসিস্ট, খুনি শাসক হিসেবে নিন্দিত। দেশ ছেড়ে গিয়ে তিনি ব্যক্তিগতভাবে প্রাণে বাঁচলেও আওয়ামী লীগ নামক দলটিকে তিনি মৃত্যুশয্যায় তুলে দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ আবার সুস্থ-সবল হয়ে উঠবে কি না, সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
১৫ বছরের আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার হয়ে উঠেছিল স্বৈরতান্ত্রিক ও কর্তৃত্ববাদী। দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের কোনো সীমা ছিল না। এই সময়কালে পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থাকেই দুর্নীতিগ্রস্ত করে ফেলা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনসহ সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো দলীয়করণের মাধ্যমে আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা হয়েছিল। দুদক, পিএসসি, মানবাধিকার কমিশন—যত কমিশন আছে সবগুলোকে একধরনের দুর্নীতিসহায়ক জায়গায় ঠেলে দেওয়া হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ পরিণত হয়েছে শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের ইচ্ছাপূরণের যন্ত্রে। অসৎ ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট, সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র ও দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি—এই তিন চক্রের মাধ্যমে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার স্বেচ্ছাচারী বাসনা শেষ পর্যন্ত ধূলিসাৎ হয়েছে।
যেহেতু ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে মাত্র এক মাস আগে, তাই এখন শুধু ওই সরকারের খারাপ দিকগুলোই সামনে আসছে। এবার আন্দোলন যেহেতু শিক্ষার্থীদের দ্বারা সংগঠিত হয়েছে এবং এই শিক্ষার্থীরা আওয়ামী লীগের আগে যে বিএনপি-জামায়াতের সরকার ছিল, সেই সরকারের শাসনকাল দেখেনি, তাই তাদের কাছে ‘আওয়ামী দুঃশাসন’ খুবই ভয়াবহ বলে মনে হচ্ছে।
এক মাস আগে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, এমপি, নেতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি, চুরি, অর্থ আত্মসাতের পিলে চমকানো সব খবর যেভাবে সামনে আসছে, তাতে এটা মনে হওয়াই স্বাভাবিক যে আওয়ামী লীগ নামে দল পুনর্গঠন বুঝি আর সম্ভব হবে না। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এটাও মনে রাখতে হবে যে বাংলাদেশ হলো ‘সব সম্ভবের দেশ’। খাদে পড়াও যেমন এখানে সহজ, তেমনি খাদ থেকে ওঠাও খুব কঠিন নয়।
শেখ হাসিনা ও তাঁর দুষ্কর্মের সহযোগীদের শাস্তির আওতায় আনার পাশাপাশি এটাও মনে রাখতে হবে যে বাংলাদেশে আওয়ামী শাসন ছাড়া অন্য শাসনামলও প্রশংসাযোগ্য ছিল না। আওয়ামী লীগের শাসনকে এখন যেমন দুঃশাসন বলে অভিহিত করা হচ্ছে, তেমনি ২০০১-০৬ সময়কালে বিএনপি-জামায়াতের শাসনকালেও সুশাসনের দৃষ্টান্ত ছিল না। এখন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে অপশাসন, দুর্নীতি, লুটপাট, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ফেরত না দেওয়া, বিদেশে অর্থ পাচারসহ যেসব অনিয়মের অভিযোগ উঠছে, এর কোনটা বিএনপির বিরুদ্ধে ছিল না?
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও তাঁর দুই ছেলে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর বিভিন্ন দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে বহির্বিশ্বে লজ্জাজনক এক পরিচিতি পেয়েছিল বাংলাদেশ। দেশে ব্যাপকভাবে দুর্নীতির কারণে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের করাপশন পারসেপশন ইনডেক্সে (সিপিআই) বাংলাদেশ পরপর পাঁচবার দুর্নীতিতে বিশ্বের মধ্যে প্রথম হয়েছিল।
বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের সাবেক বিশেষ প্রতিনিধি ডেবরা লাপ্রিভেট গ্রিফিথ কয়েক বছর দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত করেছেন। বাংলাদেশে ২০০১-০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় কীভাবে দুর্নীতি হয়েছিল, তা নিয়েই মূলত তিনি তদন্ত করেছেন। ২০১৬ সালের ২১ নভেম্বর আদালতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা তারেক রহমান এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের বিরুদ্ধে তিনি যে জবানবন্দি দিয়েছেন, সেখানে তিনি কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং জিয়া পরিবার নিয়ে বাস্তবতার নিরিখে কিছু মন্তব্য করেন। সেই সময়ের সরকার এবং জিয়া পরিবারের ঔদ্ধত্যের কারণে কীভাবে তখন দেশে সর্বগ্রাসী দুর্নীতি হয়েছিল, তা তিনি তুলে ধরেন।
ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস ২০০৮ সালের ৩ নভেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টে এক গোপন তারবার্তায় তারেক রহমান সম্পর্কে লেখেন, যা পরে সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টিকারী উইকিলিকসের ফাঁস করা নথিতে পাওয়া যায়। মরিয়ার্টি তারেক রহমান সম্পর্কে লেখেন: ‘তারেক রহমান বিপুল পরিমাণ দুর্নীতির জন্য দায়ী, যা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলছে...সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান অত্যন্ত দুর্ধর্ষ ও ভয়ংকর এবং একটি দুর্নীতিপরায়ণ সরকার ও বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতার প্রতীক। তারেক রহমানের প্রকাশ্য দুর্নীতি মার্কিন সরকারের তিনটি লক্ষ্য যথা—গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, উন্নয়ন ও জঙ্গিবাদ নির্মূল করার মিশনকে প্রচণ্ডভাবে হুমকির সম্মুখীন করেছে...আইনের প্রতি তার প্রকাশ্য অশ্রদ্ধা বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের ভিত্তি শক্ত করতে সহায়তা করেছে।’
নিরীহ মানুষ হত্যার অভিযোগও কি শুধু শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধেই উঠছে? ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সূচনালগ্নেই সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় কত মানুষ নিহত হয়েছে, কত ধর্ষণ-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে, তা তখনকার পত্রপত্রিকায় পাওয়া যাবে। গোপাল কৃষ্ণ মুহুরীর রক্তাক্ত নিথর দেহের ছবি কিংবা পূর্ণিমা শীলকে দল বেঁধে ধর্ষণ করার খবরও তামাদি হয়ে যায়নি। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলা করে ২৪ জনকে হত্যা এবং শেখ হাসিনাসহ কয়েক শ নেতা-কর্মীর গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনা কোন সরকারের আমলে ঘটেছিল? শাহ এ এম এস কিবরিয়া, আহসান উল্লাহ মাস্টার, মঞ্জুরুল ইমামসহ আওয়ামী লীগের অসংখ্য জনপ্রিয় নেতাকে হত্যার কথা কি ভুলে যাওয়ার মতো? দেশজুড়ে বোমা হামলা, বাংলা ভাইয়ের উত্থানের মতো ঘটনা আড়াল করার উপায় আছে?
এগুলো কোনোটাই বানোয়াট কাহিনি নয়। গুগলে সার্চ দিয়ে যে কেউ দেখে নিতে পারেন।
এবার আওয়ামী লীগের পতনের পর বিএনপির যে উত্থান, তা যদি স্বাভাবিক হয়, তাহলে সময় গেলে আওয়ামী লীগের উত্থান কেন অসম্ভব হবে? বিএনপিকে চাপমুক্ত হতে যেমন আওয়ামী লীগের বাড়াবাড়ি সহায়ক হয়েছে, তেমনি বিএনপির বাড়াবাড়িও যে আওয়ামী লীগকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করবে, তার আলামত কি এখনই চারদিকে লক্ষ করা যাচ্ছে না?
আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিষিদ্ধ করার দাবি ছোট দুটি রাজনৈতিক দল কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদের এলডিপি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের দল গণঅধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে তোলা হলেও সেটা মানা হবে বলে মনে হয় না। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার একটি রিট উচ্চ আদালতে খারিজ হয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান শুনানিতে বলেছেন, ‘কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের ইচ্ছা অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। সংবিধানে সংগঠন ও রাজনৈতিক দল পরিচালনার যে স্বাধীনতা রয়েছে, এই সরকার সেটিতে বিশ্বাস করে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের এ-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, ‘আমাদের সংবিধান অনুসারে সংগঠন করার স্বাধীনতা আছে, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী দল, বিভিন্ন গণতান্ত্রিক সংগ্রামে তাদের অবদান ছিল। কিন্তু গেল ১৫ বছরে তারা যা করেছে, সেটা তাদের ঐতিহ্যের সঙ্গে যায় না, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে যায় না, বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বর্বরতম ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল আওয়ামী লীগ। এই কর্মকাণ্ডের জন্য ব্যক্তিগত দায় থাকতে পারে, নেতাদের সামষ্টিক দায় থাকতে পারে, কিন্তু দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা সমীচীন হবে বলে আমি মনে করি না।’
রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। গণতন্ত্র, বৈষম্যহীনতা, ধর্মীয় সহিষ্ণুতা, মানবাধিকার সুরক্ষা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, দুর্নীতি প্রতিরোধ—এগুলো অধরা থাকলে শুধু দল পরিবর্তনে মানুষ খুশি হবে বলে মনে হয় না।
মোনায়েম সরকার, রাজনীতিবিদ, লেখক, চেয়ারম্যান, বিএফডিআর
মোনায়েম সরকার

৫ আগস্ট দেশে যে অভূতপূর্ব ছাত্র ও গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে, তার অভিঘাতে রাজনীতির কী গুণগত পরিবর্তন সাধিত হবে, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। নানা ধরনের মতামত সামনে আসছে। আওয়ামী লীগের পরিবর্তে কি বিএনপির লুটেরা শাসন কায়েম হবে? নাকি বেনামে জামায়াতে ইসলামী ও অন্য ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতির আসন পোক্ত হবে? ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারই বা কত দিন ক্ষমতায় থেকে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ কতটা এগিয়ে নেবে?
হাসিনা সরকারের বিদায়ের এক মাস যেতে না যেতেই উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনার ফোলা বেলুন যে কিছুটা হলেও চুপসে গেছে, তা অস্বীকার করা যাবে না। আমাদের জনমনস্তত্ত্ব অস্থিরতায় ঠাসা। আমরা বিজয় অর্জন করি, কিন্তু অর্জিত বিজয় ধরে রাখতে পারি না। ডিম পাড়ে হাঁসে, খায় বাঘডাশে। জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের বিজয়ের সুফল কার ঘরে উঠবে, তা নিয়ে রীতিমতো কামড়াকামড়ি শুরু হয়েছে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে আওয়ামী লীগ সরকার ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল, সেই সরকারের এমন লজ্জাজনক পতনের বিষয়টি সম্ভবত আওয়ামী লীগের চরম বিরোধীরাও ভাবেনি, আওয়ামী লীগ দরদিরা তো নয়ই।
শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে না গেলে তাঁর কী পরিণতি হতো, তা নিয়ে অনুমাননির্ভর আলোচনা না করে তিনি দেশ ছাড়ায় তাঁর দল ও দলের লাখ লাখ কর্মী-সমর্থকের অবস্থা কী দাঁড়াল, সে বিষয়েই কিছু আলোচনা করা যেতে পারে।
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে প্রতিষ্ঠার পর থেকে আওয়ামী লীগ বিভিন্ন সময়ে সংকটে পড়েছে। দলের অনেক নেতা দল ত্যাগ করেছেন। দলে বিভক্তিও দেখা দিয়েছে। ১৯৭৫ সালে দলের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা, অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পরও আওয়ামী লীগ বড় ধরনের সমস্যায় পড়েছিল। তখন এমনও বলা হতো যে আওয়ামী লীগ আর কখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না, ক্ষমতায় যাওয়া তো অনেক দূরের ব্যাপার। কিন্তু এসব অনুমান কিংবা ভবিষ্যদ্বাণী ঠিক হয়নি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই আওয়ামী লীগ ঘুরে দাঁড়িয়েছে, ক্ষমতায় গিয়েছে এবং দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময়ের শাসক দল হওয়ার ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।
১৯৯৬ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে জনগণের রায় নিয়েই আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছিল, দেশ শাসনের অধিকার পেয়েছিল। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর। বিপুল ব্যবধানে জয়লাভ করে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথ নেন ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি। ওই সময়ের পর থেকে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা দেশত্যাগের আগপর্যন্ত দলটি ক্ষমতায় ছিল টানা ১৫ বছর ৭ মাস। এই সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগের অধীনে অনুষ্ঠিত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সবগুলোই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। বলা হয়, একধরনের তামাশার নির্বাচনে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করে আওয়ামী লীগের সর্বনাশ করেছেন হাসিনা। গণতান্ত্রিক রাজনীতির ঐতিহ্যবাহী দলটি স্বৈরাচারী শাসনের অপবাদ নিয়ে ক্ষমতাচ্যুত হলো। শেখ হাসিনা নিজে ফ্যাসিস্ট, খুনি শাসক হিসেবে নিন্দিত। দেশ ছেড়ে গিয়ে তিনি ব্যক্তিগতভাবে প্রাণে বাঁচলেও আওয়ামী লীগ নামক দলটিকে তিনি মৃত্যুশয্যায় তুলে দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ আবার সুস্থ-সবল হয়ে উঠবে কি না, সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
১৫ বছরের আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার হয়ে উঠেছিল স্বৈরতান্ত্রিক ও কর্তৃত্ববাদী। দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের কোনো সীমা ছিল না। এই সময়কালে পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থাকেই দুর্নীতিগ্রস্ত করে ফেলা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনসহ সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো দলীয়করণের মাধ্যমে আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা হয়েছিল। দুদক, পিএসসি, মানবাধিকার কমিশন—যত কমিশন আছে সবগুলোকে একধরনের দুর্নীতিসহায়ক জায়গায় ঠেলে দেওয়া হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ পরিণত হয়েছে শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের ইচ্ছাপূরণের যন্ত্রে। অসৎ ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট, সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র ও দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি—এই তিন চক্রের মাধ্যমে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার স্বেচ্ছাচারী বাসনা শেষ পর্যন্ত ধূলিসাৎ হয়েছে।
যেহেতু ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে মাত্র এক মাস আগে, তাই এখন শুধু ওই সরকারের খারাপ দিকগুলোই সামনে আসছে। এবার আন্দোলন যেহেতু শিক্ষার্থীদের দ্বারা সংগঠিত হয়েছে এবং এই শিক্ষার্থীরা আওয়ামী লীগের আগে যে বিএনপি-জামায়াতের সরকার ছিল, সেই সরকারের শাসনকাল দেখেনি, তাই তাদের কাছে ‘আওয়ামী দুঃশাসন’ খুবই ভয়াবহ বলে মনে হচ্ছে।
এক মাস আগে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, এমপি, নেতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি, চুরি, অর্থ আত্মসাতের পিলে চমকানো সব খবর যেভাবে সামনে আসছে, তাতে এটা মনে হওয়াই স্বাভাবিক যে আওয়ামী লীগ নামে দল পুনর্গঠন বুঝি আর সম্ভব হবে না। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এটাও মনে রাখতে হবে যে বাংলাদেশ হলো ‘সব সম্ভবের দেশ’। খাদে পড়াও যেমন এখানে সহজ, তেমনি খাদ থেকে ওঠাও খুব কঠিন নয়।
শেখ হাসিনা ও তাঁর দুষ্কর্মের সহযোগীদের শাস্তির আওতায় আনার পাশাপাশি এটাও মনে রাখতে হবে যে বাংলাদেশে আওয়ামী শাসন ছাড়া অন্য শাসনামলও প্রশংসাযোগ্য ছিল না। আওয়ামী লীগের শাসনকে এখন যেমন দুঃশাসন বলে অভিহিত করা হচ্ছে, তেমনি ২০০১-০৬ সময়কালে বিএনপি-জামায়াতের শাসনকালেও সুশাসনের দৃষ্টান্ত ছিল না। এখন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে অপশাসন, দুর্নীতি, লুটপাট, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ফেরত না দেওয়া, বিদেশে অর্থ পাচারসহ যেসব অনিয়মের অভিযোগ উঠছে, এর কোনটা বিএনপির বিরুদ্ধে ছিল না?
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও তাঁর দুই ছেলে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর বিভিন্ন দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে বহির্বিশ্বে লজ্জাজনক এক পরিচিতি পেয়েছিল বাংলাদেশ। দেশে ব্যাপকভাবে দুর্নীতির কারণে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের করাপশন পারসেপশন ইনডেক্সে (সিপিআই) বাংলাদেশ পরপর পাঁচবার দুর্নীতিতে বিশ্বের মধ্যে প্রথম হয়েছিল।
বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের সাবেক বিশেষ প্রতিনিধি ডেবরা লাপ্রিভেট গ্রিফিথ কয়েক বছর দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত করেছেন। বাংলাদেশে ২০০১-০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় কীভাবে দুর্নীতি হয়েছিল, তা নিয়েই মূলত তিনি তদন্ত করেছেন। ২০১৬ সালের ২১ নভেম্বর আদালতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা তারেক রহমান এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের বিরুদ্ধে তিনি যে জবানবন্দি দিয়েছেন, সেখানে তিনি কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং জিয়া পরিবার নিয়ে বাস্তবতার নিরিখে কিছু মন্তব্য করেন। সেই সময়ের সরকার এবং জিয়া পরিবারের ঔদ্ধত্যের কারণে কীভাবে তখন দেশে সর্বগ্রাসী দুর্নীতি হয়েছিল, তা তিনি তুলে ধরেন।
ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস ২০০৮ সালের ৩ নভেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টে এক গোপন তারবার্তায় তারেক রহমান সম্পর্কে লেখেন, যা পরে সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টিকারী উইকিলিকসের ফাঁস করা নথিতে পাওয়া যায়। মরিয়ার্টি তারেক রহমান সম্পর্কে লেখেন: ‘তারেক রহমান বিপুল পরিমাণ দুর্নীতির জন্য দায়ী, যা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলছে...সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান অত্যন্ত দুর্ধর্ষ ও ভয়ংকর এবং একটি দুর্নীতিপরায়ণ সরকার ও বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতার প্রতীক। তারেক রহমানের প্রকাশ্য দুর্নীতি মার্কিন সরকারের তিনটি লক্ষ্য যথা—গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, উন্নয়ন ও জঙ্গিবাদ নির্মূল করার মিশনকে প্রচণ্ডভাবে হুমকির সম্মুখীন করেছে...আইনের প্রতি তার প্রকাশ্য অশ্রদ্ধা বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের ভিত্তি শক্ত করতে সহায়তা করেছে।’
নিরীহ মানুষ হত্যার অভিযোগও কি শুধু শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধেই উঠছে? ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সূচনালগ্নেই সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় কত মানুষ নিহত হয়েছে, কত ধর্ষণ-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে, তা তখনকার পত্রপত্রিকায় পাওয়া যাবে। গোপাল কৃষ্ণ মুহুরীর রক্তাক্ত নিথর দেহের ছবি কিংবা পূর্ণিমা শীলকে দল বেঁধে ধর্ষণ করার খবরও তামাদি হয়ে যায়নি। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলা করে ২৪ জনকে হত্যা এবং শেখ হাসিনাসহ কয়েক শ নেতা-কর্মীর গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনা কোন সরকারের আমলে ঘটেছিল? শাহ এ এম এস কিবরিয়া, আহসান উল্লাহ মাস্টার, মঞ্জুরুল ইমামসহ আওয়ামী লীগের অসংখ্য জনপ্রিয় নেতাকে হত্যার কথা কি ভুলে যাওয়ার মতো? দেশজুড়ে বোমা হামলা, বাংলা ভাইয়ের উত্থানের মতো ঘটনা আড়াল করার উপায় আছে?
এগুলো কোনোটাই বানোয়াট কাহিনি নয়। গুগলে সার্চ দিয়ে যে কেউ দেখে নিতে পারেন।
এবার আওয়ামী লীগের পতনের পর বিএনপির যে উত্থান, তা যদি স্বাভাবিক হয়, তাহলে সময় গেলে আওয়ামী লীগের উত্থান কেন অসম্ভব হবে? বিএনপিকে চাপমুক্ত হতে যেমন আওয়ামী লীগের বাড়াবাড়ি সহায়ক হয়েছে, তেমনি বিএনপির বাড়াবাড়িও যে আওয়ামী লীগকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করবে, তার আলামত কি এখনই চারদিকে লক্ষ করা যাচ্ছে না?
আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিষিদ্ধ করার দাবি ছোট দুটি রাজনৈতিক দল কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদের এলডিপি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের দল গণঅধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে তোলা হলেও সেটা মানা হবে বলে মনে হয় না। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার একটি রিট উচ্চ আদালতে খারিজ হয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান শুনানিতে বলেছেন, ‘কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের ইচ্ছা অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। সংবিধানে সংগঠন ও রাজনৈতিক দল পরিচালনার যে স্বাধীনতা রয়েছে, এই সরকার সেটিতে বিশ্বাস করে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের এ-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, ‘আমাদের সংবিধান অনুসারে সংগঠন করার স্বাধীনতা আছে, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী দল, বিভিন্ন গণতান্ত্রিক সংগ্রামে তাদের অবদান ছিল। কিন্তু গেল ১৫ বছরে তারা যা করেছে, সেটা তাদের ঐতিহ্যের সঙ্গে যায় না, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে যায় না, বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বর্বরতম ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল আওয়ামী লীগ। এই কর্মকাণ্ডের জন্য ব্যক্তিগত দায় থাকতে পারে, নেতাদের সামষ্টিক দায় থাকতে পারে, কিন্তু দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা সমীচীন হবে বলে আমি মনে করি না।’
রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। গণতন্ত্র, বৈষম্যহীনতা, ধর্মীয় সহিষ্ণুতা, মানবাধিকার সুরক্ষা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, দুর্নীতি প্রতিরোধ—এগুলো অধরা থাকলে শুধু দল পরিবর্তনে মানুষ খুশি হবে বলে মনে হয় না।
মোনায়েম সরকার, রাজনীতিবিদ, লেখক, চেয়ারম্যান, বিএফডিআর

৫ আগস্ট দেশে যে অভূতপূর্ব ছাত্র ও গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে, তার অভিঘাতে রাজনীতির কী গুণগত পরিবর্তন সাধিত হবে, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। নানা ধরনের মতামত সামনে আসছে। আওয়ামী লীগের পরিবর্তে কি বিএনপির লুটেরা শাসন কায়েম হবে? নাকি বেনামে জামায়াতে ইসলামী ও অন্য ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতির আসন পোক্ত হবে? ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারই বা কত দিন ক্ষমতায় থেকে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ কতটা এগিয়ে নেবে?
হাসিনা সরকারের বিদায়ের এক মাস যেতে না যেতেই উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনার ফোলা বেলুন যে কিছুটা হলেও চুপসে গেছে, তা অস্বীকার করা যাবে না। আমাদের জনমনস্তত্ত্ব অস্থিরতায় ঠাসা। আমরা বিজয় অর্জন করি, কিন্তু অর্জিত বিজয় ধরে রাখতে পারি না। ডিম পাড়ে হাঁসে, খায় বাঘডাশে। জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের বিজয়ের সুফল কার ঘরে উঠবে, তা নিয়ে রীতিমতো কামড়াকামড়ি শুরু হয়েছে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে আওয়ামী লীগ সরকার ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল, সেই সরকারের এমন লজ্জাজনক পতনের বিষয়টি সম্ভবত আওয়ামী লীগের চরম বিরোধীরাও ভাবেনি, আওয়ামী লীগ দরদিরা তো নয়ই।
শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে না গেলে তাঁর কী পরিণতি হতো, তা নিয়ে অনুমাননির্ভর আলোচনা না করে তিনি দেশ ছাড়ায় তাঁর দল ও দলের লাখ লাখ কর্মী-সমর্থকের অবস্থা কী দাঁড়াল, সে বিষয়েই কিছু আলোচনা করা যেতে পারে।
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে প্রতিষ্ঠার পর থেকে আওয়ামী লীগ বিভিন্ন সময়ে সংকটে পড়েছে। দলের অনেক নেতা দল ত্যাগ করেছেন। দলে বিভক্তিও দেখা দিয়েছে। ১৯৭৫ সালে দলের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা, অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পরও আওয়ামী লীগ বড় ধরনের সমস্যায় পড়েছিল। তখন এমনও বলা হতো যে আওয়ামী লীগ আর কখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না, ক্ষমতায় যাওয়া তো অনেক দূরের ব্যাপার। কিন্তু এসব অনুমান কিংবা ভবিষ্যদ্বাণী ঠিক হয়নি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই আওয়ামী লীগ ঘুরে দাঁড়িয়েছে, ক্ষমতায় গিয়েছে এবং দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময়ের শাসক দল হওয়ার ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।
১৯৯৬ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে জনগণের রায় নিয়েই আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছিল, দেশ শাসনের অধিকার পেয়েছিল। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর। বিপুল ব্যবধানে জয়লাভ করে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথ নেন ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি। ওই সময়ের পর থেকে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা দেশত্যাগের আগপর্যন্ত দলটি ক্ষমতায় ছিল টানা ১৫ বছর ৭ মাস। এই সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগের অধীনে অনুষ্ঠিত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সবগুলোই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। বলা হয়, একধরনের তামাশার নির্বাচনে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করে আওয়ামী লীগের সর্বনাশ করেছেন হাসিনা। গণতান্ত্রিক রাজনীতির ঐতিহ্যবাহী দলটি স্বৈরাচারী শাসনের অপবাদ নিয়ে ক্ষমতাচ্যুত হলো। শেখ হাসিনা নিজে ফ্যাসিস্ট, খুনি শাসক হিসেবে নিন্দিত। দেশ ছেড়ে গিয়ে তিনি ব্যক্তিগতভাবে প্রাণে বাঁচলেও আওয়ামী লীগ নামক দলটিকে তিনি মৃত্যুশয্যায় তুলে দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ আবার সুস্থ-সবল হয়ে উঠবে কি না, সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
১৫ বছরের আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার হয়ে উঠেছিল স্বৈরতান্ত্রিক ও কর্তৃত্ববাদী। দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের কোনো সীমা ছিল না। এই সময়কালে পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থাকেই দুর্নীতিগ্রস্ত করে ফেলা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনসহ সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো দলীয়করণের মাধ্যমে আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা হয়েছিল। দুদক, পিএসসি, মানবাধিকার কমিশন—যত কমিশন আছে সবগুলোকে একধরনের দুর্নীতিসহায়ক জায়গায় ঠেলে দেওয়া হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ পরিণত হয়েছে শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের ইচ্ছাপূরণের যন্ত্রে। অসৎ ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট, সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র ও দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি—এই তিন চক্রের মাধ্যমে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার স্বেচ্ছাচারী বাসনা শেষ পর্যন্ত ধূলিসাৎ হয়েছে।
যেহেতু ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে মাত্র এক মাস আগে, তাই এখন শুধু ওই সরকারের খারাপ দিকগুলোই সামনে আসছে। এবার আন্দোলন যেহেতু শিক্ষার্থীদের দ্বারা সংগঠিত হয়েছে এবং এই শিক্ষার্থীরা আওয়ামী লীগের আগে যে বিএনপি-জামায়াতের সরকার ছিল, সেই সরকারের শাসনকাল দেখেনি, তাই তাদের কাছে ‘আওয়ামী দুঃশাসন’ খুবই ভয়াবহ বলে মনে হচ্ছে।
এক মাস আগে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, এমপি, নেতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি, চুরি, অর্থ আত্মসাতের পিলে চমকানো সব খবর যেভাবে সামনে আসছে, তাতে এটা মনে হওয়াই স্বাভাবিক যে আওয়ামী লীগ নামে দল পুনর্গঠন বুঝি আর সম্ভব হবে না। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এটাও মনে রাখতে হবে যে বাংলাদেশ হলো ‘সব সম্ভবের দেশ’। খাদে পড়াও যেমন এখানে সহজ, তেমনি খাদ থেকে ওঠাও খুব কঠিন নয়।
শেখ হাসিনা ও তাঁর দুষ্কর্মের সহযোগীদের শাস্তির আওতায় আনার পাশাপাশি এটাও মনে রাখতে হবে যে বাংলাদেশে আওয়ামী শাসন ছাড়া অন্য শাসনামলও প্রশংসাযোগ্য ছিল না। আওয়ামী লীগের শাসনকে এখন যেমন দুঃশাসন বলে অভিহিত করা হচ্ছে, তেমনি ২০০১-০৬ সময়কালে বিএনপি-জামায়াতের শাসনকালেও সুশাসনের দৃষ্টান্ত ছিল না। এখন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে অপশাসন, দুর্নীতি, লুটপাট, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ফেরত না দেওয়া, বিদেশে অর্থ পাচারসহ যেসব অনিয়মের অভিযোগ উঠছে, এর কোনটা বিএনপির বিরুদ্ধে ছিল না?
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও তাঁর দুই ছেলে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর বিভিন্ন দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে বহির্বিশ্বে লজ্জাজনক এক পরিচিতি পেয়েছিল বাংলাদেশ। দেশে ব্যাপকভাবে দুর্নীতির কারণে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের করাপশন পারসেপশন ইনডেক্সে (সিপিআই) বাংলাদেশ পরপর পাঁচবার দুর্নীতিতে বিশ্বের মধ্যে প্রথম হয়েছিল।
বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের সাবেক বিশেষ প্রতিনিধি ডেবরা লাপ্রিভেট গ্রিফিথ কয়েক বছর দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত করেছেন। বাংলাদেশে ২০০১-০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় কীভাবে দুর্নীতি হয়েছিল, তা নিয়েই মূলত তিনি তদন্ত করেছেন। ২০১৬ সালের ২১ নভেম্বর আদালতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা তারেক রহমান এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের বিরুদ্ধে তিনি যে জবানবন্দি দিয়েছেন, সেখানে তিনি কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং জিয়া পরিবার নিয়ে বাস্তবতার নিরিখে কিছু মন্তব্য করেন। সেই সময়ের সরকার এবং জিয়া পরিবারের ঔদ্ধত্যের কারণে কীভাবে তখন দেশে সর্বগ্রাসী দুর্নীতি হয়েছিল, তা তিনি তুলে ধরেন।
ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস ২০০৮ সালের ৩ নভেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টে এক গোপন তারবার্তায় তারেক রহমান সম্পর্কে লেখেন, যা পরে সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টিকারী উইকিলিকসের ফাঁস করা নথিতে পাওয়া যায়। মরিয়ার্টি তারেক রহমান সম্পর্কে লেখেন: ‘তারেক রহমান বিপুল পরিমাণ দুর্নীতির জন্য দায়ী, যা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলছে...সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান অত্যন্ত দুর্ধর্ষ ও ভয়ংকর এবং একটি দুর্নীতিপরায়ণ সরকার ও বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতার প্রতীক। তারেক রহমানের প্রকাশ্য দুর্নীতি মার্কিন সরকারের তিনটি লক্ষ্য যথা—গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, উন্নয়ন ও জঙ্গিবাদ নির্মূল করার মিশনকে প্রচণ্ডভাবে হুমকির সম্মুখীন করেছে...আইনের প্রতি তার প্রকাশ্য অশ্রদ্ধা বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের ভিত্তি শক্ত করতে সহায়তা করেছে।’
নিরীহ মানুষ হত্যার অভিযোগও কি শুধু শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধেই উঠছে? ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সূচনালগ্নেই সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় কত মানুষ নিহত হয়েছে, কত ধর্ষণ-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে, তা তখনকার পত্রপত্রিকায় পাওয়া যাবে। গোপাল কৃষ্ণ মুহুরীর রক্তাক্ত নিথর দেহের ছবি কিংবা পূর্ণিমা শীলকে দল বেঁধে ধর্ষণ করার খবরও তামাদি হয়ে যায়নি। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলা করে ২৪ জনকে হত্যা এবং শেখ হাসিনাসহ কয়েক শ নেতা-কর্মীর গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনা কোন সরকারের আমলে ঘটেছিল? শাহ এ এম এস কিবরিয়া, আহসান উল্লাহ মাস্টার, মঞ্জুরুল ইমামসহ আওয়ামী লীগের অসংখ্য জনপ্রিয় নেতাকে হত্যার কথা কি ভুলে যাওয়ার মতো? দেশজুড়ে বোমা হামলা, বাংলা ভাইয়ের উত্থানের মতো ঘটনা আড়াল করার উপায় আছে?
এগুলো কোনোটাই বানোয়াট কাহিনি নয়। গুগলে সার্চ দিয়ে যে কেউ দেখে নিতে পারেন।
এবার আওয়ামী লীগের পতনের পর বিএনপির যে উত্থান, তা যদি স্বাভাবিক হয়, তাহলে সময় গেলে আওয়ামী লীগের উত্থান কেন অসম্ভব হবে? বিএনপিকে চাপমুক্ত হতে যেমন আওয়ামী লীগের বাড়াবাড়ি সহায়ক হয়েছে, তেমনি বিএনপির বাড়াবাড়িও যে আওয়ামী লীগকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করবে, তার আলামত কি এখনই চারদিকে লক্ষ করা যাচ্ছে না?
আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিষিদ্ধ করার দাবি ছোট দুটি রাজনৈতিক দল কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদের এলডিপি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের দল গণঅধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে তোলা হলেও সেটা মানা হবে বলে মনে হয় না। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার একটি রিট উচ্চ আদালতে খারিজ হয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান শুনানিতে বলেছেন, ‘কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের ইচ্ছা অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। সংবিধানে সংগঠন ও রাজনৈতিক দল পরিচালনার যে স্বাধীনতা রয়েছে, এই সরকার সেটিতে বিশ্বাস করে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের এ-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, ‘আমাদের সংবিধান অনুসারে সংগঠন করার স্বাধীনতা আছে, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী দল, বিভিন্ন গণতান্ত্রিক সংগ্রামে তাদের অবদান ছিল। কিন্তু গেল ১৫ বছরে তারা যা করেছে, সেটা তাদের ঐতিহ্যের সঙ্গে যায় না, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে যায় না, বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বর্বরতম ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল আওয়ামী লীগ। এই কর্মকাণ্ডের জন্য ব্যক্তিগত দায় থাকতে পারে, নেতাদের সামষ্টিক দায় থাকতে পারে, কিন্তু দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা সমীচীন হবে বলে আমি মনে করি না।’
রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। গণতন্ত্র, বৈষম্যহীনতা, ধর্মীয় সহিষ্ণুতা, মানবাধিকার সুরক্ষা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, দুর্নীতি প্রতিরোধ—এগুলো অধরা থাকলে শুধু দল পরিবর্তনে মানুষ খুশি হবে বলে মনে হয় না।
মোনায়েম সরকার, রাজনীতিবিদ, লেখক, চেয়ারম্যান, বিএফডিআর

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

৫ আগস্ট দেশে যে অভূতপূর্ব ছাত্র ও গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে, তার অভিঘাতে রাজনীতির কী গুণগত পরিবর্তন সাধিত হবে, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। নানা ধরনের মতামত সামনে আসছে। আওয়ামী লীগের পরিবর্তে কি বিএনপির লুটেরা শাসন কায়েম হবে?
০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

৫ আগস্ট দেশে যে অভূতপূর্ব ছাত্র ও গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে, তার অভিঘাতে রাজনীতির কী গুণগত পরিবর্তন সাধিত হবে, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। নানা ধরনের মতামত সামনে আসছে। আওয়ামী লীগের পরিবর্তে কি বিএনপির লুটেরা শাসন কায়েম হবে?
০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

৫ আগস্ট দেশে যে অভূতপূর্ব ছাত্র ও গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে, তার অভিঘাতে রাজনীতির কী গুণগত পরিবর্তন সাধিত হবে, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। নানা ধরনের মতামত সামনে আসছে। আওয়ামী লীগের পরিবর্তে কি বিএনপির লুটেরা শাসন কায়েম হবে?
০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

৫ আগস্ট দেশে যে অভূতপূর্ব ছাত্র ও গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে, তার অভিঘাতে রাজনীতির কী গুণগত পরিবর্তন সাধিত হবে, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। নানা ধরনের মতামত সামনে আসছে। আওয়ামী লীগের পরিবর্তে কি বিএনপির লুটেরা শাসন কায়েম হবে?
০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫