Ajker Patrika

রানা প্লাজা ধস: ‘বাচ্চাদের একটু কোলেও নিতেপারি না’

মেহেদী হাসান, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) 
রানা প্লাজা ধস: ‘বাচ্চাদের একটু কোলেও নিতেপারি না’

‘অন্য বাচ্চাদের মতো আমার বাচ্চা দুইটাও কোলে উঠতে চায়। আমি এমন অভাগা মা তাদের কোলেও নিতে পারি না। পারি না স্বামীর সেবা করতে।’ কথাগুলো বলার সময় কণ্ঠ জড়িয়ে আসে রেবেকা খাতুনের। ঢাকার সাভারে রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় দুই পা হারিয়েছিলেন তিনি। 

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ধসে পড়ে রানা প্লাজা। এতে হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারান। দুই পা হারিয়ে প্রাণে বেঁচে যান দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার রেবেকা খাতুন। তিনি উপজেলার আলাদীপুর ইউনিয়নের বারাই চেয়ারম্যানপাড়া গ্রামের মোস্তাফিজার রহমানের স্ত্রী।

ধসের ঘটনা ৯ বছর পেরোলেও আজও কান্না থামেনি রেবেকার। তিনি বলেন, ‘এখনো সেদিনের কথা মনে এলে আতঙ্কে গা শিউরে ওঠে। ওই দুর্ঘটনা আমার দুটি পা কেড়ে নিয়েছে, কেড়ে নিয়েছে আমার মা, ফুপু ও দাদির জীবন।’

রেবেকা জানান, ঘটনার আগের দিন রানা প্লাজায় ফাটল দেখে বিকেল ৪টায় ছুটি দেয় কর্তৃপক্ষ। পরের দিন সকাল ৮টায় যথারীতি কাজে এসে বিল্ডিংয়ের ফাটলের কারণে কাজে যোগ দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে বলা হয়, বেতন-ভাতাসহ ওভার টাইমের টাকা দেওয়া হবে না এবং কারও চাকরিও থাকবে না। টাকা ও চাকরি হারানোর ভয়ে সব শ্রমিকের সঙ্গে তিনিও কাজে যোগ দেন। এরপর ঘটে সেই বিভীষিকাময় ঘটনা।

রানা প্লাজার ধসের নিচে নিচে তিন দিন আটকে ছিলেন রেবেকা। অচেতন অবস্থায় উদ্ধার হওয়ার পর নিজেকে আবিষ্কার করেন হাসপাতালে। তিনি দেখেন শরীরের অপরিহার্য অংশ দুটি পা ঊরুর নিচ থেকে কেটে ফেলা হয়েছে। এরই মধ্যে তাঁর দুই পায়ে ৮ বার অপারেশন করা হয়েছে। এক বছর ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে গ্রামে ফেরেন রেবেকা। পঙ্গুজীবনে তাঁর কোলজুড়ে আসে প্রথম সন্তান ছিদরাতুন মুনতাহা (৭) এবং দ্বিতীয় সন্তান মাদানী আন নুর (৩)। পঙ্গুত্বর কারণে সন্তানদের ঠিকমতো সেবা করতে পারেন না। কিন্তু তাঁর ইচ্ছে করে অন্য মায়েদের মতো নিজের সন্তানদের নিয়ে একটু ঘুরতে-ফিরতে।

রেবেকা বলেন, ‘ওই সময় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে যা পেয়েছি, তা ভেঙেই সংসার চলছে। এ ছাড়া বেসরকারি কিছু সংস্থাও সহায়তা করে। একটি বেসরকারি সংস্থা আমার দুটি কৃত্রিম পায়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছে এবং একটি বাড়ি করে দিয়েছে। কিন্তু ওই পা দিয়ে একা চলাচল করা সম্ভব না।’

রেবেকার স্বামী মো. মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ‘ওই সময় চিকিৎসার কারণে ক্ষতিপূরণের জন্য যেখানে ১৫ লাখ টাকা পাওয়ার কথা ছিল, সেখানে পেয়েছি ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র। বাকি ৫ লাখ টাকা পাইনি।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের বিপক্ষে সেমির আগেই ধাক্কা খেল অস্ট্রেলিয়া

পরমাণু শক্তিধর হতে চেয়েছিল তাইওয়ান, সিআইএ এজেন্টের বিশ্বাসঘাতকতায় স্বপ্নভঙ্গ

এলপি গ্যাস, তেল, আটাসহ বেশ কিছু পণ্যে ভ্যাট তুলে দিল এনবিআর

চ্যাম্পিয়নস ট্রফি: রিজার্ভ-ডেতেও সেমিফাইনাল না হলে হৃদয়বিদারক সমীকরণ

চট্টগ্রামে হামলায় ‘নিরাপত্তাহীন’ পুলিশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত