Ajker Patrika

ঠাঁই নেই কক্সবাজারে

রামু ও উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪: ০১
Thumbnail image

বছরের শেষের দিকে বিজয় দিবসের ছুটির সঙ্গে দুই দিনের সাপ্তাহিক ছুটি। সপ্তাহান্তের এই টানা তিন দিনের ছুটিতে পর্যটকেরা যেন হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন কক্সবাজারে। কোথাও ঠাঁই নেই, না হোটেল-মোটেল-রেস্টহাউস, না আত্মীয়স্বজনের বাড়ি। অনেকে রাস্তার পাশে কিংবা সৈকতের কাছে তাঁবু খাটিয়ে আর রাতভর আগুন জ্বালিয়ে রাত পার করছেন। আবার অনেকে বাস, মাইক্রোবাস কিংবা প্রাইভেট কারেও রাতযাপনের উদ্যোগ নিয়েছেন। সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়েছেন, ছোট সন্তানদের নিয়ে কক্সবাজার বেড়াতে আসা লোকজন। সারা দিন এদিক-সেদিক ঘুরে বাড়ালেও রাতযাপন তাঁদের জন্য কষ্টকর হয়ে পড়েছে।

হোটেল কক্স টুডের কর্মকর্তা আবু তালেব চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে জানান, আমাদের কয়েকজন নিয়মিত অতিথির জন্য কোথাও থাকার ব্যবস্থা করতে না পেরে পরিচিত একটি টিনশেড হোটেলে এক রাতের জন্য একটি রুম ভাড়া চেয়েছিলাম। তাঁরা এক রাতের জন্য প্রতি রুমের ভাড়া চেয়েছেন সাত হাজার টাকা। বেশি পর্যটকের চাপে কমদামি হোটেল-রেস্টহাউস এভাবে গলাকাটা রুম ভাড়া নিলেও নামী-দামি হোটেলের ক্ষেত্রে এই সুযোগ নেই বলে জানান তিনি।

হোটেল-মোটেল মালিকদের সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারে সব মিলিয়ে হোটেল-মোটেলের সংখ্যা সাড়ে চার শ’র মতো। এর মধ্যে উন্নতমানের হোটেলের সংখ্যা ১০টির বেশি হবে না। এসব ভালো হোটেলে আগে থেকেই বুকিং করেই পর্যটকেরা এসেছেন বলে তাঁদের থাকা-খাওয়ার ভোগান্তি কম। বাকি ৪৪০টি মাঝারি ও কোনোমতে থাকা হোটেলের রুম ভাড়া এখন চড়া। স্বাভাবিকের তুলনায় দ্বিগুণ দাম দিয়েও এসব হোটেলে এখন রুম পাওয়া দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। সব হোটেল-মোটেলে সব মিলিয়ে লাখখানেক লোকের রাতযাপনের ব্যবস্থা থাকলেও গতকাল শুক্রবার রাত পর্যন্ত কক্সবাজারে অবস্থান করছিল অন্তত লাখ চারেক লোক, এমন হিজাব দিয়েছে হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির একজন কর্মকর্তা।

খবর নিয়ে জানা গেছে, শুধু থাকার সংকট নয়, এত বিপুলসংখ্যক মানুষের খাওয়া-দাওয়া এবং বাথরুমের সমস্যাও মারাত্মকভাবে দেখা দিয়েছে কক্সবাজারে। কারণ ছোট এই শহরটিতে হঠাৎ করে বাড়তি মানুষের খাওয়ার জোগাড়ের ব্যবস্থা নেই। নেই পাবলিক টয়লেটও। ফলে বেড়াতো আসা পর্যটকদের ভোগান্তির অন্ত নেই। একই সঙ্গে বেড়ে গেছে যাতায়াতের খরচও। ইঞ্জিনচালিত রিকশা (স্থানীয় ভাষায় টমটম) আগে যে পথ যাওয়ার জন্য ৪০-৫০ টাকা নিত, এখন সেটা দাবি করছে ৮০-১০০ টাকা। থাকা-খাওয়া আর যাতায়াতের বাড়তি খরচের কারণে সীমিত বাজেটের পর্যটকদের বাড়তি বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে।

নীলফামারী থেকে পরিবারের তিন সদস্যকে নিয়ে বেড়াতে আসা এক রেল কর্মকর্তা জানান, করোনায় দুই বছরেরও বেশি সময় ঘরে আটকা থাকার পর এক ছেলে এক মেয়েকে কক্সবাজার দেখাতে আনার পরিকল্পনা করেছিলাম ছয় মাস আগে। ছেলেমেয়ের স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ বলেই এই বেড়াতে আসা। এখনে এসে দেখি খাওয়া-থাকার মহাসংকট। গতকাল দুপুরের দিকে কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকতের লাবণি পয়েন্টে যখন তাঁর সঙ্গে কথা হয় তখনো তিনি কোথাও থাকার ব্যবস্থা করতে পারেননি বলে জানান। নীলফামারী থেকে রেলে করে ঢাকা-চট্টগ্রাম হয়ে গতকাল সকালেই তিনি কক্সবাজার পৌঁছান সড়কপথে।

এই পরিবারের মতো অসংখ্য পর্যটক পরিবারকে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত এই হোটেল থেকে সেই হোটেলে ঘুরেও একটি রুমের ব্যবস্থা করতে না পারার মতো অসহায় অবস্থায় দেখা গেছে।

জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হোটেল–মোটেলের কোথাও জায়গা না পাওয়া আমার এক দূর আত্মীয়কে আমি হাসপাতালে বেডে রাত্রি যাপনের ব্যবস্থা করতে বলেছি।

গতকাল বিকেলে সমুদ্রসৈকতে নামার তিনটি জায়গা কলাতলী, সুগন্ধা বিচ ও লাবনীপয়েন্ট ঘুরে দেশের নানা জায়গা থেকে আসা বাস–মাইক্রোবাস আর প্রাইভেটকারের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। পাশাপাশি এই সব এলাকায় সমুদ্র নামার পয়েন্টেও ছিল মানুষের উপচে পড়া ভিড়। স্থানীয়রা বলছেন, অতীতে কখনো তারা এত বেশি লোক কখনো সমুদ্রপাড়ে দেখেননি। করোনার কারণে গত দুই বছর বেড়াতে না পারা এবং বছর শেষে ছেলে মেয়েদের স্কুল–কলেজের পরীক্ষা শেষের কারণে অভিভাবকেরা তাদের সন্তানদের নিয়ে এবার সবাই একসঙ্গে আসায় এই ভিড় বলে তারা মনে করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত