Ajker Patrika

ঘুমের মধ্যেই পুড়ে কয়লা হলেন পাঁচ শ্রমিক

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৬ নভেম্বর ২০২১, ১২: ০০
ঘুমের মধ্যেই পুড়ে কয়লা  হলেন পাঁচ শ্রমিক

কারখানার দ্বিতীয় তলার ঘিঞ্জি ঘরে ঘুমাচ্ছিলেন ১৪ শ্রমিক। রাতের পালার কাজ চলছিল নিচতলায়। হঠাৎ হইচই আর ধোঁয়া দেখে ‘আগুন’ ‘আগুন’ করে চিৎকার করে দোতলা থেকে দৌড়ে নিচে নামেন শ্রমিক শান্ত মিয়া। তাঁর চিৎকার শুনে ঘুম থেকে জেগে আরও ৯ শ্রমিক দৌড়ে বের হন। সারা দিনের খাটুনিতে ক্লান্তি নিয়ে গভীর ঘুমে থাকা পাঁচ শ্রমিক জাগতে দেরি হওয়ায় আর বের হতে পারেনি। চকবাজারের রুমানা রাবার ইন্ডাস্ট্রি নামে জুতার কারখানায় রাসায়নিক আর রাবারের আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় পুড়ে অঙ্গার হয়ে যান তাঁরা।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বলছেন, স্বজনদের ডিএনএর সঙ্গে মেলানো ছাড়া তাঁদের শনাক্তের আর কোনো উপায় নেই। নিহত শ্রমিকদের লাশ স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের মর্গে রাখা হয়েছে। তবে ঘটনার পর থেকে কারখানার মালিক হাজি রফিক পলাতক বলে পুলিশ জানিয়েছে।

নিহত শ্রমিকেরা হলেন মানিকগঞ্জ সদরের আইমারা গ্রামের মৃত আব্দুর রশীদের ছেলে আমিনুল ইসলাম (৩৫), চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার বাইছরা গ্রামের আবুল হাসেম মির্জার ছেলে মনির হোসেন মির্জা (৩২), বরিশালের মুলাদির ছবিপুর গ্রামের সেকান্দার মৃধার ছেলে আব্দুর রহমান রুবেল (৪০), কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার উলুকান্দি গ্রামের শহর আলীর ছেলে শামীম মিয়া (৩৫) ও শেরপুরের শ্রীবর্দী উপজেলার চক্করিয়া গ্রামের মৃত সাইফুল ইসলামের ছেলে কামরুল হাসান (২৬)।

বেঁচে যাওয়া শ্রমিক শান্ত আজকের পত্রিকাকে বলেন, রাতে পরিবারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলায় ১৫ জনের মধ্যে তিনি শুধু জেগে ছিলেন। রাতের পালায় নিচতলায় ১৫ জন কাজ করছিল। চিৎকার আর ধোঁয়া দেখে তিনি দৌড়ে বের হন। তার পিছু পিছু অন্যরাও বের হন। কিন্তু যাঁরা দ্রুত জাগতে পারেননি, তাঁরাই পুড়ে মারা গেছেন। লাফিয়ে বের হওয়ার সময় দুজন শ্রমিকের পা ভেঙেছে। অন্যরা আহত হলেও গুরুতর নয়।

বেঁচে যাওয়া শ্রমিকেরা বলেন, দুই পালায় ১২ ঘণ্টা করে ৪৫ জন শ্রমিক কারখানাটিতে কাজ করেন। সকাল আটটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টা কাজ করে ৩০ জন এবং রাতের পালায় ১৫ জন। রাতের পালার কাজ চলার সময় রাত একটার দিকে নিচতলার রাসায়নিক পদার্থের গুদাম থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখেন শ্রমিকেরা। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে প্রচণ্ড শব্দে বিস্ফোরণে আগুন ধরে যায়। চিৎকার করে শ্রমিকেরা বের হয়ে আসেন। কিন্তু দ্বিতীয় তলায় ঘুমন্ত শ্রমিকদের পাঁচজন বের হতে পারেননি। মৃত্যুর কারণ হিসেবে শ্রমিকেরা বলেন, গুদামে ৫০ বস্তা ও ২৫টি ড্রাম ভর্তি ছিল রাসায়নিক। দ্বিতীয় তলার খুপরিঘর থেকে বের হওয়ার জন্য কারখানার ভেতরেই ছোট একটি সিঁড়ি। সেই সরু সিঁড়ি দিয়ে শ্রমিকেরা বের হতে পারেননি।

প্রিয়জনের মৃত্যুর খবর শুনে পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে ছুটে আসেন স্বজনেরা। বাবার অসুস্থতার খবর শুনে চাঁদপুরের কচুয়ার বাইছারা গ্রাম থেকে এসেছে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র নাহিদ হাসান মির্জা। নাহিদ হাসান আজকের পত্রিকাকে বলে, বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে বাবা মনির হোসেন মির্জা ফোন করে বলেন, বেতন পাওয়ার পর শনিবার বাড়ি আসবেন। শুক্রবার সকালেই শোনেন তিনি গুরুতর অসুস্থ। খবর পেয়ে মামার সঙ্গে ঢাকা আসেন। এরপর পুলিশ জানায় তার বাবা মারা গেছেন।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ঢাকা দক্ষিণ জোন-৫-এর উপসহকারী পরিচালক হাফিজুর রহমান জানান, ভবনের দ্বিতীয় তলার প্রবেশপথ খুবই সংকীর্ণ। নিচে রাসায়নিক থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বের হওয়ার পথ সংকীর্ণ হওয়ায় আগুনে পুড়ে পাঁচ শ্রমিক মারা যান।

চকবাজার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) উদয়ন বিকাশ বড়ুয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, স্বজন দাবিদারদের ডিএনএ সংগ্রহ করা হচ্ছে। নিহত ব্যক্তির মা-বাবা ও সন্তানদের যেকোনো একজনের ডিএনএ সংগ্রহ করা হবে। ভাই-বোন দাবিদার হলে দুজনের ডিএনএ সংগ্রহ করা হচ্ছে। ডিএনএর সঙ্গে মিলিয়ে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রশিক্ষণ ছাড়াই মাঠে ৪২৬ সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা

গ্রাহকের ২,৬৩৫ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৪৬ বিমা কোম্পানি

১০০ বছর পর জানা গেল ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত