Ajker Patrika

শিশুর অতিরিক্ত চঞ্চলতা, কী করবেন

ডা. নূরজাহান বেগম 
আপডেট : ১৮ মার্চ ২০২৩, ০৯: ৫৯
শিশুর অতিরিক্ত চঞ্চলতা, কী করবেন

শিশুর মাত্রাতিরিক্ত চঞ্চলতা এবং অমনোযোগ যদি তার দৈনন্দিন কাজকে বাধাগ্রস্ত করে, পড়ালেখায় বিরূপ প্রভাব ফেলে, সামাজিক আচরণে বিঘ্ন ঘটায়, সে প্রবণতাই এডিএইচডি বা অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার অ্যাকটিভিটি ডিজঅর্ডার। তবে এই লক্ষণগুলো যদি সাত বছরের কম বয়সী শিশুর মধ্যে কমপক্ষে ছয় মাস ধরে দেখা যায়, তখনই কেবল সেটাকে এডিএইচডি বলা হয়। এটি মস্তিষ্কের মনোযোগ-সংক্রান্ত অসুস্থতা। আবার কেউ কেউ এটাকে স্নায়ুবিকাশজনিত বা আচরণগত সমস্যা বলে থাকেন। 
 
উপসর্গ
  • ইন-অ্যাটেনশন বা মনোযোগ রাখতে সক্ষম নয় এমন।
  • হাইপার অ্যাকটিভিটি বা প্রয়োজনের তুলনায় অতি-সক্রিয়।
  • ইম্পালসিভিটি বা চিন্তা ছাড়াই দ্রুত ঘটে এমন কাজ।
সাধারণত মা-বাবা বা স্কুলের শিক্ষকের নজরে এ সমস্যাগুলো সবার আগে ধরা পড়ে। মাত্রাতিরিক্ত চাঞ্চল্য লক্ষ করলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। 
 
লক্ষণ
  • কোনো কিছুর প্রতি বেশিক্ষণ মনোযোগ ধরে রাখতে না পারা।
  • পড়ালেখা এমনকি খেলাধুলায়ও মনঃসংযোগ রাখতে না পারা।
  • সারাক্ষণ ছোটাছুটি করা, চিন্তাভাবনা না করে হঠাৎ কিছু করে ফেলা।
  • স্থিরভাবে বসে থাকতে না পারা, বসলেও অনবরত পা নাড়াতে থাকে, টেবিল চাপড়াতে থাকা।
  • নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা, খুব দ্রুত রেগে যাওয়া।
  • বই-কলম প্রায়ই হারিয়ে ফেলা।
  • লাফিয়ে উঁচুতে উঠে যাওয়া, পড়ে যাওয়া, প্রায়ই আঘাত পাওয়া।
  • খুব দ্রুত কথা বলা, প্রশ্ন শোনার আগেই জবাব দেওয়ার জন্য 
  • অস্থির হয়ে পড়া।
  • বড়দের কাজ বা কথার মাঝে ক্রমাগত বাধা দিতে থাকা।
  • একসঙ্গে অনেক কিছু করার চেষ্টা করা, কিন্তু কোনোটাই শেষ না করা।
  • চারপাশের অবস্থা সম্পর্কে হেঁয়ালিপনা।
  • অসাবধানতার কারণে বারবার ভুল করা, নিয়মকানুন অনুসরণ করতে না পারা, অন্যমনস্ক থাকা এবং কোনো তথ্য মনে রাখতে না পারা।
 
এডিএইচডির কারণ
শিশু কেন এ ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত হয়, তার নির্দিষ্ট কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে এর পেছনে বিভিন্ন ধরনের প্রভাবকে দায়ী করা হয়। যেমন: 
  •  জন্মকালীন জটিলতা।
  • জিন ও বংশগত প্রভাব।
  • গর্ভাবস্থায় মায়ের ওষুধের প্রভাব, বিশেষ করে মানসিক রোগের ওষুধ।
  • গর্ভাবস্থায় মায়ের ধূমপান ও 
  • মাদক সেবন।
  • শরীরে জিংকের ঘাটতি।
  • খাদ্যে মেশানো কৃত্রিম রং এবং প্রিজারভেটিভ এডিএইচডির 
জন্য উল্লেখযোগ্য কারণ হিসেবে বিবেচিত।
 
করণীয়
এডিএইচডিতে আক্রান্ত শিশুদের আবেগ ও আচরণ নিয়ন্ত্রণ করা বেশ কঠিন। এর সমাধান শুধু ওষুধ নয়, ওষুধের পাশাপাশি কার্যকর চিকিৎসা হিসেবে আচরণগত ও জীবনযাত্রাগত নিয়মকানুন অনুসরণ করতে হবে ধৈর্য নিয়ে। এ ক্ষেত্রে পরিবার এবং স্কুলের সহযোগিতা জরুরি।
  • বয়স অনুযায়ী শিশুর খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে।
  • কখনো কখনো রক্ত পরীক্ষা করে চিকিৎসক কিছু খাবার কম বা না দিতে পরামর্শ দেন; বিশেষ করে চকলেট, মিষ্টি, দুধ বা দুধজাতীয় খাবার, বাদাম ইত্যাদি। তবে এ বিষয়ে নিজে থেকে সিদ্ধান্ত না নিয়ে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
  • মোবাইল ফোন, ট্যাব, টিভি ইত্যাদি ব্যবহার বা দেখার সময় কমিয়ে আনতে হবে। দুই বছরের নিচের শিশুদের স্ক্রিন থেকে দূরে রাখতে হবে। দুই বছরের বেশি বয়সের শিশুদের সারা দিনে এক থেকে দুই ঘণ্টার বেশি স্ক্রিন দেখতে দেওয়া যাবে না।
  •  শিশুর জন্য খাওয়া, ঘুমানো, খেলা ইত্যাদি বিষয়ে প্রতিদিনের একটি রুটিন তৈরি করুন। বাড়ির সবাই নিয়ম মেনে চলুন। 
  •  দিনের পরিকল্পনা করুন। শিশুর কাছে কোন ধরনের আচরণ আশা করা হচ্ছে, তা নির্দিষ্ট করে দিন।
  • শিশুকে কোনো নির্দেশ দিলে বিভ্রান্ত না করে সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিন। রূঢ় আচরণ করবেন না।
  •  শিশুর ভালো কাজের প্রশংসা করুন, ইতিবাচক আচরণকে পুরস্কার বা প্রশংসার মাধ্যমে স্বীকৃতি দিন।
  • শিশুর খাদ্যতালিকায় কৃত্রিম রং ও কনজারভেটিভ রাখবেন না।
  • শিশুকে পরিবারের বাইরেও মেলামেশার সুযোগ দিন। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন সে আত্মনিয়ন্ত্রণ হারিয়ে না ফেলে। সে ক্ষেত্রে শিশুর খেলা বা মেশার সময়কে সংক্ষিপ্ত রাখতে হবে।
  • পর্যাপ্ত ঘুমের জন্য শিশুকে শারীরিক ব্যায়ামে অভ্যস্ত করুন।
লেখক: স্পেশালিস্ট, পেডিয়াট্রিক আইসিইউ, এভারকেয়ার হাসপাতাল, ঢাকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত