Ajker Patrika

সমুদ্রতীরে দল বেঁধে ইফতার

তাসনীম হাসান, চট্টগ্রাম
আপডেট : ২৮ এপ্রিল ২০২২, ১২: ৪৪
Thumbnail image

সামনে আদিগন্ত সমুদ্র। সেই সমুদ্র থেকে ঝিরঝিরে হাওয়া এসে কপালে ছুঁয়ে যাচ্ছে। সঙ্গে মন ভালো করে দেওয়া সমুদ্রের গর্জন আর ঢেউ তো আছেই। পেছনে আবার শিল্পীর তুলির আঁচড়ের মতো সবুজ সৈকত। এর মাঝখানে বসেই ঢেউ গুনতে গুনতে চলছে দল বেঁধে ইফতার গ্রহণ।

বর্ষার কাঠফাটা রোদে দিনভর রোজা রাখার পর সমুদ্র বা নদী তীরে ইফতার করার এমন দৃশ্য এখন দেখা যাচ্ছে নিয়মিতই। বদ্ধ ঘর ছেড়ে মুক্ত হাওয়ায় ইফতার করার বিষয়টি আজকাল তরুণদের বেশ প্রিয় হয়ে উঠেছে। ফেসবুকে ঢুকলেই প্রতিদিন দেখা মিলছে এমন সব মুহূর্তের।

সমুদ্র আর নদী তীরে ইফতারে অংশ নেওয়া তরুণ-তরুণীদের সঙ্গে কথা হয় আজকের পত্রিকার। তাঁরা বলেন, দুই বছর করোনায় প্রায় সময়ই ঘরবন্দী সময় কেটেছে। এতে সবার মনের ওপর বিরাট নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এখন পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হওয়ায় তাঁরা সেটি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন। দিনভর রোজা রাখার পর হোটেল–রেস্তোরাঁর দমবন্ধ পরিবেশে ইফতারে মন আরও খিটখিটে হতে পারে। সে জন্য তাঁরা ইফতারসামগ্রী নিয়ে ছুটছেন সমুদ্রতীরে।

এসএসসি ২০০৬ ও এইচএসসি ২০০৮ সালের ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ফেসবুকভিত্তিক গ্রুপের উদ্যোগে চট্টগ্রামের বন্ধুরা মিলে ইফতার করেছেন সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতে। এই ইফতারে অংশ নেন অন্তত ৭০ জন। হোটেল থেকে ইফতারসামগ্রী কিনে মোটরসাইকেলে চড়ে তাঁরা যান শহরের অদূরের সেই সৈকতে। এরপর সৈকতে ত্রিপল বিছিয়ে সবাই বসে সারেন ইফতার। একদিকে যেমন হলো ভ্রমণ, তেমনি হলো ইফতার আয়োজনও।

এই আয়োজনের অন্যতম উদ্যোক্তা ফাহিম পিয়াসের কাছে সমুদ্রসৈকতে এমন উদ্যোগের কারণ জানতে চাইলে বলেন, ‘সমুদ্র সৈকতের পরিবেশটাই অন্যরকম। এখানে শীতল বাতাস, ঢেউ, গর্জন মিলে অন্যরকম এক আবহই তৈরি হয়। দিনভরের রোজার ক্লান্তি শেষে সেই পরিবেশে ইফতার করলে মন–শরীর দুটোই ভালো হয়ে যায়। সে জন্যই মূলত বন্ধুদের নিয়ে এখানে ইফতার করতে আসা।’ এই আয়োজনে বেশির ভাগই ছিলেন তরুণ।

তবে সমুদ্রের তীরে ইফতার আয়োজনে পিছিয়ে নেই তরুণীরাও। স্কুটি চালানো শিখতে শিখতে বন্ধু হয়ে পড়া তরুণীদের ‘পঙ্খীরাজ’ নামের একটি পেজ আছে ফেসবুকে। সেই পেজের উদ্যোগেও আয়োজন করা হয়েছে এমন ভিন্নরকম ইফতার আয়োজন। তবে তরুণীরা বঙ্গোপসাগরের তীরে নয়, ইফতার আয়োজন করেছেন শাহ আমানত সেতুর নিচে কর্ণফুলী নদী তীরে।

তরুণীদের এই আয়োজনে আরও একটা ভিন্নতা ছিল। সেটি হলো ইফতার সামগ্রী তাঁরা কোনো হোটেল-রেস্তোরাঁ থেকে কিনে নিয়ে যাননি। ঘর থেকে কেউ বানিয়ে নিয়েছেন বিরিয়ানি, কেউবা পিঠা, সমুচা, শিঙারা। আবার কেউবা ছোলা-শরবত।

পঙ্খীরাজের স্বপ্নদ্রষ্টা চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে কর্মরত খতিজা বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা বরাবরই প্রাণ খুলে নিশ্বাস নিতে চাই। রেস্তোরাঁর বদ্ধ জায়গায় সেটি সম্ভব নয়। সে জন্যই আমরা নদীর পাড়ে খোলা পরিবেশে ইফতার আয়োজন করেছি।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকের শিক্ষার্থী রবি হোসাইনও এই রমজানে অনেকবার বন্ধুদের নিয়ে ইফতার সেরেছেন ফৌজদারহাটের তুলাতলি এলাকার সৈকতে। সৈকতে ইফতারের পেছনে অন্যরকম এক ভালো লাগা খুঁজে পেয়েছেন এই তরুণ। তাঁর ভাষায়, ‘রোজার দিনে এমনিতেই স্নিগ্ধতা কাজ করে সবকিছুর প্রতি। ইফতারের আগে সমুদ্রতীরে সূর্যাস্তের আগে যে রক্তিম আলো ছড়িয়ে পড়ে সেটা দেখে খুব ভালো লাগে। এরপর আজানের সঙ্গে সঙ্গে খুব দ্রুত প্রকৃতি বদলাতে থাকে। এটা দেখতে দেখতে ইফতার সারার সময় সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ কাজ করে। এ জন্যই মূলত সমুদ্রতীরে ইফতার করা।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত