Ajker Patrika

মুক্তিযোদ্ধাদের হাসপাতালটি যেন এক ভুতুড়ে ভাগাড়

আবদুল হামিদ, ঢাকা
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২১, ১১: ২২
মুক্তিযোদ্ধাদের হাসপাতালটি যেন এক ভুতুড়ে ভাগাড়

রাজধানীতে মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের জন্য একটি হাসপাতাল আছে। তবে ‘আছে’ শব্দটি ব্যবহার না করে ‘ছিল’ বলাই ভালো। কেননা, ২৬ বছর পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে হাসপাতালটি। ভেতরে-বাইরে সব দিক দিয়েই এটি এখন একটু ভুতুড়ে ভাগাড়।

মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের পরিচালনাধীন হাসপাতালটির নাম ‘ট্রাস্ট আধুনিক হাসপাতাল’। রাজধানীর মিরপুরের চিড়িয়াখানা এলাকায় হাসপাতালটির খোঁজ নিতে গিয়ে শুরুতেই পড়তে হলো বিড়ম্বনায়। লোকজনই শুধু নন, যাদের জন্য হাসপাতাল সেই মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেও জানেন না তার খবর। পরিত্যক্ত চার তলা ভবনের হাসপাতালটিতে এখন সুনসান নীরবতা। সেখানে হাসপাতালের কোনো লোক পাওয়া গেল না।  আছেন মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অন্য প্রতিষ্ঠানের লোকজন। ওই প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তারক্ষীরা সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। হাসপাতালের সামনে যেতেই তেমন একজনের সঙ্গে দেখা। হাসপাতালের খোঁজে এসেছি শুনে তিনি বললেন, ‘এখানে আপনাকে তথ্য দেওয়ার মতো কেউ নেই। আমরা এই হাসপাতালের লোক না। মুক্তিযোদ্ধা ট্রাস্টের আরেকটি প্রতিষ্ঠান (তাবানি বেভারেজ কোম্পানি) নিরাপত্তাকর্মী।’

ভেতরে ঢোকার প্রধান ফটকের সামনে রিকশা গ্যারেজ, ট্রাস্টের গাড়ি রাখার গ্যারেজ, বিভিন্ন ধরনের দোকান ও হোটেলসহ ভ্রাম্যমাণ চায়ের দোকানে চোখ আটকে যায়। হাসপাতালে ঢোকার মুখেই রাস্তার পাশে জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে কয়েকটি পরিত্যক্ত বাস। ভবনের সম্মুখভাগে লেখা হাসপাতালের নামটাও প্রায় মুছে যাওয়ার অবস্থা। ভেতরে ঢুকতেই জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গেল তৎকালীন ফ্রান্স সরকারের দেওয়া দুটি অত্যাধুনিক ভ্রাম্যমাণ ইউনিট অ্যাম্বুলেন্স, একটি খোলা অ্যাম্বুলেন্স ট্রাক, দুটি প্রাইভেট কার, একটি ছোট পিকআপ ও একটি বেবিট্যাক্সি। চার তলা ভবনটির নিচেই অভ্যর্থনা কেন্দ্র। ডান দিকের নামফলকে লেখা-জরুরি বিভাগ। 

জরুরি বিভাগের কক্ষে দেখা গেছে তিনটি বেডসহ বেশ কিছু আসবাবপত্র। সেখানে রয়েছে বিদ্যুৎ ও নেট সংযোগ। ডাক্তারদের পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত একটি পরিত্যক্ত প্রাইভেটকারও আছে। বাম দিকে আছে হিসাব, মেডিসিন ও টিকাকেন্দ্রসহ নানা বিভাগ। আল্ট্রাসনোগ্রাম, প্যাথলজি, এক্স-রে, ই. সি. জি, ও এনডোস্কপি নামেও আছে পৃথক বিভাগ। শুধু নেই চিকিৎসক, আর রোগী। যন্ত্রপাতি যা আছে, মরিচা আর আবর্জনায় ভরা সেসব আর ব্যবহারের উপযোগী নেই। সন্ধ্যার পরে ভুতুড়ে এক পরিবেশ সৃষ্টি হয় হাসপাতালটিতে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ১৯৯১ সালে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে প্রতিষ্ঠা করা হয় ট্রাস্ট আধুনিক হাসপাতাল। ফ্রান্সের অনুদানে চালু হওয়া এই হাসপাতালে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য সাশ্রয়ী খরচে চিকিৎসার সুবিধা ছিল। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের জন্যও ছিল চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা। দুই বছর পরে ফ্রান্সের অর্থের জোগান বন্ধ হলে হাসপাতালও বন্ধ হয়ে যায়। ওই বছরই (১৯৯৩) একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে হাসপাতালটি ইজারা দেওয়া হয়। ‘ইসলামি উম্মাহ মেডিকেল কলেজ’ নামে দুই বছর হাসপাতালটি চালায় ওই প্রতিষ্ঠান। পরে ১৯৯৫ সাল তারা ছেড়ে চলে গেলে একেবারেই বন্ধ হয়ে যায় হাসপাতাল। এরপর আর চালু হয়নি হাসপাতালটি।

স্থানীয় বাসিন্দা যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা সোনা মিয়া খান জানান, হাসপাতালটি বন্ধ হওয়ার পরে ২০ থেকে ২৫টি মুক্তিযোদ্ধা পরিবার হাসপাতাল বসবাসের জন্য দখলে নেয়। এটা নিয়ে একটা ঝামেলা তৈরি হলে ওই পরিবারগুলোকে বের করে দেওয়া হয়। এরই মধ্যে হাসপাতালের কিছু যন্ত্রাংশ কেউ বিক্রি করে দিয়েছে।

যুদ্ধাহত আরেক মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে শাহীনা আক্তার বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এমন একটি হাসপাতাল আসলেই গৌরবের। এই এলাকায় কয়েক হাজার মুক্তিযোদ্ধা পরিবার বসবাস করেন। তাদের জন্য একটি হাসপাতাল খুবই জরুরি।

যোগাযোগ করা হলে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম মাহবুবুর রহমান (অতিরিক্ত সচিব) আজকের পত্রিকাকে বলেন, হাসপাতালটি পুনর্নির্মাণ করতে ফের ভূমি বরাদ্দের জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে ট্রাস্ট আধুনিক হাসপাতালের জন্য পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

আর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, হাসপাতালটি নতুন আঙ্গিকে আধুনিকায়নের উদ্যোগ নিয়েছি। এই বিষয়ে পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা প্রণয়ন হলে তা বাস্তবায়ন করা হবে।

 

 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত