Ajker Patrika

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর: ই-গেট রইল শুধু শোভা হয়ে

শাহরিয়ার হাসান, ঢাকা
Thumbnail image

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনের ই-গেটের (ইলেকট্রনিক গেট) স্ক্রিনে নীল আলো জ্বলছে। পাশেই বড় পর্দায় প্রচার করা হচ্ছে, এ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গেলে দ্রুতই ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হবে। তা দেখে দুবাইফেরত আশিকুর ইসলাম পাশে থাকা লম্বা সারি ছেড়ে নিজের পাসপোর্ট ব্যবহারের চেষ্টা করেন। কিন্তু ই-গেটে মেশিন তাঁর পাসপোর্ট পড়তে পারে না। আবার গিয়ে পাশের কাউন্টারেই দাঁড়ান তিনি। দীর্ঘ সারিতে ঘণ্টাখানেক থেকে ইমিগ্রেশন শেষ করে বেরিয়ে আসেন। যদিও ই-পাসপোর্টধারী এই যাত্রীর ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে ১৮ সেকেন্ডে শেষ হওয়া কথা ছিল।

আশিকুর ইসলাম গত রোববার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শুনেছি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বপ্রথম আমরা ই-গেট সুবিধা পেয়েছি। স্বয়ংক্রিয়ভাবে সব কাজ করে। কিন্তু যাওয়া-আসার সময় একবারও এই সুবিধা পেলাম না। সেই লাইনেই দাঁড়াতে হলো আমাকে। তাহলে এত টাকা খরচ আর প্রচারের কী দরকার ছিল?’

আশিকুর ইসলামের এই প্রশ্নের জবাব সংশ্লিষ্ট অনেকের কাছে জানার চেষ্টা করলেও কেউ এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি। কারিগরি ত্রুটির অজুহাতে প্রসঙ্গ এড়িয়ে দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। 

ই-গেট সেবার অবস্থা জানতে চাইলে বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহরিয়ার কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

জানা যায়, কোনো ধরনের প্রস্তুতি ছাড়াই বছর দেড়েক আগে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ই-পাসপোর্টধারীদের জন্য ২৭টি ই-গেট সেবা চালু করা হয়। তারও আগে ১১ মাস পরীক্ষামূলকভাবে তা ব্যবহার করতে দেওয়া হয়। শুরুতে কয়েক দিন ঠিকমতো চললেও হঠাৎ জটিলতা দেখা দেওয়ায় গেটগুলো এখন অকার্যকর অবস্থায় পড়ে আছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, কেন্দ্রীয় ই-পাসপোর্টের সঙ্গে ই-গেটের সার্ভারের সংযোগ নিয়ে জটিলতা দেখা গেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ এখনো ই-গেট ব্যবহার-সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সনদও পায়নি। ফলে ভবিষ্যতেও ইমিগ্রেশনে ই-গেট ব্যবহার করা যাবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা আছে।

ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাদাত হোসেন অবশ্য বলেন, দ্রুতই সার্বিক সমস্যার সমাধান হবে।
২০২০ সালের ২২ মার্চ দেশে ই-পাসপোর্ট উদ্বোধন করা হয়। বিশ্বে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ১১৯তম। এরপর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৭০ লাখ নাগরিককে ই-পাসপোর্ট দিয়েছে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর। 

আরও প্রায় ১ কোটি মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) আছে।

বিমানবন্দর সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৭ জুলাই ই-গেটের কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। এরপর থেকে এ পর্যন্ত মাত্র ১ লাখ ১৫ হাজার যাত্রী ই-গেট ব্যবহার করেছেন। যদিও শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে মাসে গড়ে ৫ লাখ যাত্রী আসা-যাওয়া করেন।

ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের দাবি, ঠিকভাবে চালু হলে একজন ই-পাসপোর্টধারী মাত্র ১৮ সেকেন্ডে নিজের ইমিগ্রেশন শেষ করতে পারেন। ই-পাসপোর্টধারী যাত্রী ভেরিফিকেশন শেষে ই-গেট অতিক্রম করতে পারেন। প্রথমে পাসপোর্টের ডিজিটাল ছবিযুক্ত পৃষ্ঠা ই-গেটের মনিটরে ছোঁয়াতে হয়। ১০-১৫ সেকেন্ডের মধ্যে কাচের দরজা খুলে যায়। ই-গেট দিয়ে ঢুকে স্ক্যানিং গেটের সামনে দাঁড়ালে ৫-৬ সেকেন্ডের মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ই-পাসপোর্টের যাবতীয় তথ্য যাচাই হয়ে যায়। গেট খুলে গেলে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হয়। 

তবে ইমিগ্রেশন পুলিশ বলছে, শুধু ই-গেট পার হলেই ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হয় না; ই-গেট পার হওয়ার পর আগের মতোই ইমিগ্রেশন ডেস্কে ভিসা ও অন্যান্য তথ্য যাচাই করা হয়।

পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি (ইমিগ্রেশন) জি এম আজিজুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ভিসা পরীক্ষার সক্ষমতা ই-গেটের নেই। ই-গেট শুধু পাসপোর্ট ও পাসপোর্টধারী যাত্রী একই ব্যক্তি কি না, তা শনাক্ত করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত