Ajker Patrika

গামছা তুলে কথা বললেন?

বিরস
আপডেট : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৭: ২৮
গামছা তুলে কথা বললেন?

‘প্রথমে ভেবেছিলাম যে মন্দির বানাব। শিবমন্দির। তারপর ভেবে দেখলাম, সেটা ঠিক হবে না। সেখানে কেবল হিন্দুরাই আসবে। মুসলমান, ক্রিশ্চিয়ান এরা কেউ ছায়া মাড়াবে না। মসজিদ গড়লেও সেই কথা। মুসলমান ছাড়া আর কেউ ঘেঁষবে না তার দরজায়। গির্জা হলেও তাই। যা-ই করতে যাই, সর্বধর্ম সমন্বয় আর হয় না। তা ছাড়া, পাশাপাশি মন্দির, মসজিদ, গির্জা গড়লে একদিন হয়তো মারামারি, লাঠালাঠিও বেধে যেতে পারে। তাই অনেক ভেবেচিন্তে এই পায়খানা বানিয়েছি। সবাই আসছে এখানে, আসবে চিরদিন।’

আজ এই ধর্মের হানাহানিকর পরিবেশে দাঁড়িয়ে বুঝতে পারি তাঁর কথা কতটা প্রাসঙ্গিক ছিল!

শিবরাম চক্রবর্তী, যিনি হাসির ছলে নিগূঢ় সত্যকে লিখে গেছেন তাঁর অম্লান কলমে। বাংলা সাহিত্যের হাসির রাজার নিজের জীবনটাই ছিল একটা মস্ত ঠাট্টা। রাজপরিবারের উত্তরাধিকারী হয়েও আজীবন মুক্তরামবাবু স্ট্রিটের একটা মেস বাড়িতে কাটিয়ে দিয়েছিলেন। যেটাকে অনেকেই ‘শিবরাম মেস’ বলে চেনেন। চিরটাকাল অভাবের মধ্যে থেকেও যাঁর প্রতিটা লেখার মধ্যে বাঙালি সরসতা খুঁজে পেয়েছেন, তিনি হলেন হাসির রাজা শিবরাম চক্রবর্তী। যিনি মৃত্যুর পাঁচ মিনিট আগেও ডাক্তারবাবুকে ‘ফার্স্টক্লাস আছি’ বলে মৃত্যুকে হেয় করতে পারতেন।

একবার তিনি পুকুর থেকে জল তুলছিলেন, এক ভদ্রমহিলা জিজ্ঞেস করেছিলেন, আপনি এত বড় বংশের সন্তান। আপনার বাপ, ঠাকুরদাদা এত বড় বংশের আর আপনি কিনা গামছা পরে জল তুলছেন?

আমাদের হাসির সম্রাট বেশ গম্ভীর মুখে বলেছিলেন, ‘বাপ, ঠাকুরদা, বংশ, সব তুললেন, তাতেও হলো না? শেষ পর্যন্ত গামছা তুলে কথা বললেন?’ এমন মজা বোধ হয় ওই একটি মানুষই করতে পারতেন।

শোনা যায় একবার আমাদের চক্রবর্তী মহাশয় কদিনের জন্য গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলেন। উনি ফিরে আসতে মেস মালিক বলেছিলেন, শিবরামবাবু, আপনার ঘরটা চুনকাম করে দিলাম। দেয়ালগুলো যা নোংরা করে রেখেছিলেন। চারদিক শুধু পেনসিলের লেখা।

উনি মাথায় হাত দিয়ে রাস্তায় বসে পড়েছিলেন। হায় হায় একি করলেন! মেস মালিক ধন্দে পড়ে বলেছিলেন, খারাপটা কী করলাম মশাই?

শিবরামবাবু বলেন, আরে দেয়ালের ওই নম্বর, ঠিকানা, টাকার হিসাব—ওগুলো হলো কোন কোন প্রকাশকের কাছে আমার কত টাকা পাওনা আছে তার হিসাব, আর তাদের ঠিকানা। আপনি সব চুন ঢেলে দিলেন!

খ. বিরোধী রাজনৈতিক দলের মাঠপর্যায়ের একজন কর্মী রাস্তার পাশে একটি ছোট চায়ের দোকানে চা খেতে বসে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে কয়েকজনের সঙ্গে আড্ডা-আলোচনায় মেতে উঠলেন। একসময় কী একটা জরুরি কাজের কথা মনে হতেই উঠে পড়লেন। চায়ের দাম মিটিয়ে পাশে তাকিয়ে দেখেন তাঁর সাইকেলটি নেই। সাইকেল না দেখে তাঁর মাথা গরম হয়ে উঠল। হুংকার দিয়ে বললেন, ‘আমার সাইকেল কে নিল?’ উপস্থিত সবাই এদিক-ওদিক তাকায়। কোথায় সাইকেল? এবার বিরোধী দলের পাতি নেতা কণ্ঠ চড়িয়ে বললেন, দশ মিনিটের মধ্যে আমি আমার সাইকেল না পেলে আগেরবার যা করেছিলাম, এবারও কিন্তু তা-ই করব। আমি এক্স দলের কর্মী। কাউকে পরোয়া করি না।

দোকানের পেছন থেকে একজন সাইকেলটি এগিয়ে দিয়ে বলল, ‘এই যে ভাই, আপনার সাইকেল পাওয়া গেছে।’

পাতি নেতা তাকে ধন্যবাদ দিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নিতেই সাইকেল ফিরিয়ে দেওয়া লোকটি জানতে চাইল, ‘ভাই, কিছু মনে করবেন না। সাইকেলটি না পেলে আপনি কী করতেন?’

কী আর করতাম, আগেরবারের মতো হেঁটে হেঁটে বাড়ি চলে যেতাম। জবাব দিয়ে সাইকেলের সিটে বসে প্যাডেলে জোরে চাপ দিয়ে চলতে লাগলেন খুদে নেতাটি!

গ. যখন থেকে রাজনীতির শুরু তখন থেকেই সম্ভবত ষড়যন্ত্রেরও যাত্রা আরম্ভ। তাই বলা হয়ে থাকে পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো যন্ত্র হচ্ছে ষড়যন্ত্র। সার্ভিসিং ছাড়াই বছরের পর বছর শুধু নয়, যুগ যুগ ধরে কাজ করে যাচ্ছে এই যন্ত্র-ষড়যন্ত্র।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পালানোর গুঞ্জনের অবসান ঘটিয়ে দেশে ফিরলেন আবদুল হামিদ

মেঘালয়ে হানিমুনের সময় ভাড়াটে খুনি দিয়ে স্বামীকে হত্যা, উত্তর প্রদেশে নববধূর আত্মসমর্পণ

কানাডার লেকে বোট উল্টে বাংলাদেশের পাইলট ও গার্মেন্টস ব্যবসায়ীর মৃত্যু

এআই যুগে চাকরি পেতে যে দক্ষতা লাগবেই, জানালেন মাইক্রোসফটের সিইও

ঈদের ছুটির সুযোগে মাদ্রাসার গাছ বেচে দিলেন সুপার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত