Ajker Patrika

অভিযুক্ত এক প্রতারকের গল্প

সম্পাদকীয়
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯: ০৩
অভিযুক্ত এক প্রতারকের গল্প

শুনুন, বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গল্প-উপন্যাসের সঙ্গে বাস্তব জীবনের খুব একটা অমিল নেই। মনে হতে পারে অবিশ্বাস্য ঘটনা, কিন্তু আসলে তা ঘটছে এই দেশেই! টাকা আত্মসাতে সহায়তার অভিযোগে যিনি অভিযুক্ত, তিনি বেমালুম কৌশলে সে অবস্থা সামলে নিয়েছেন। তিনি হিসাব কষে রেখেছিলেন কোথায় কখন কীভাবে জামিন পাবেন। আর সেভাবেই তৈরি করেছেন নিজের পরিকল্পনা। বৃহস্পতিবার অফিসে হাজিরা খাতায় সই করে তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। এর আগে কিছুদিনের জন্য অর্জিত ছুটি নিয়ে নেন। ফলে আদালতে তাঁর জামিন নামঞ্জুর হলে তিনি শুক্র-শনি ছুটির দুদিনের সঙ্গে অর্জিত ছুটি মিলিয়ে জামিন হওয়ার আগপর্যন্ত জেলে কাটান। কয়েক দিন পর উচ্চ আদালতে জামিন হওয়ার পর ফিরে এসে আবার অফিস করা শুরু করেন; যেন কিছুই ঘটেনি! অনুপস্থিতির সময়টা খাতায় দেখা যাচ্ছে লাল কালিতে লেখা আছে ‘ইএল’, অর্থাৎ ‘আর্ন লিভ’ বা ‘অর্জিত ছুটি’। অফিসের কেউ জানলই না, অভিযুক্ত ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের এই কর্মকর্তা জেল-ভ্রমণ করে এসেছেন।

প্রতারণার হরেক কৌশলে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে মানুষ। অর্থ আত্মসাতের ফন্দি-ফিকিরে জড়িয়ে যাচ্ছেন একশ্রেণির বিনিয়োগ-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। আমরা আইসিবির এই অতি বুদ্ধিমান কর্মকর্তার কর্মকাণ্ড দেখে যারপরনাই কৌতূহল বোধ করছি এবং সে সঙ্গে বোঝার চেষ্টা করছি, ঠগবাজি করার কতই না রাস্তা চোখের সামনে খোলা রয়েছে। নাদান মানুষ এসব বোঝে না। কিন্তু আমাদের প্রতারক, চালিয়াত শ্রেণির জন্য এ ধরনের ঘটনা ধ্রুপদি হিসেবে আখ্যা পেতে পারে এবং তাঁরা এ থেকে হাতে-কলমে ‘প্রতারণার প্রথম পাঠ’ নিতে পারেন।

এ ঘটনায় সবই আছে, নেই শুধু সততা এবং মারা পড়েছে নীতিবোধ। ঘটনাটি যখন প্রকাশ্যে এসেছে, তখন এই কর্মকর্তার ভাগ্যে সামনে কী ঘটবে, তার উত্তরের ওপর নির্ভর করবে, আগামী দিনগুলোতে এ ধরনের চালাকি করার দিকে যাবে অভিযুক্তরা, নাকি সাজা পাওয়ার কারণে অন্যরা দমে যাবে। চারদিকে প্রতারণার হাতছানিতে বিভ্রান্ত হতেই পারে মানুষ এবং যদি দেখা যায়, এই প্রতারকেরা ছলে-বলে-কৌশলে আইনের হাত গলে বেরিয়ে যাচ্ছে, তাহলে বুঝতে হবে, সততার নির্বাসনে রাষ্ট্র বা সমাজ মোটেই বিচলিত নয়। তখন এরা হয়ে উঠবে সেই চর্বিযুক্ত রাজহাঁসটি, যে চাইলেই পিঠ থেকে অবলীলায় ঝেড়ে ফেলতে পারে জল। পরিস্থিতি আরও ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে, এরাই প্রতিষ্ঠানের সেরা পদগুলো দখল করে নিলে। তখন সোজা পথ হয়ে উঠবে বাঁকা পথ আর বাঁকা পথ হয়ে উঠবে সোজা পথ। সে সময় এদের আইনের হাতে সোপর্দ করার আর কোনো পথ খোলা থাকবে কি না, তা নিয়েও থাকে শঙ্কা।

‘দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন’ প্রবাদবাক্যটি যদি সিলেবাসের জড় পদার্থ হয়ে থাকে, তাহলে তা আর মানুষের জীবনাচরণে কোনো প্রভাবই ফেলতে পারবে না। তখন সবাই এই আবদুল মোত্তালিবের মতোই গোলমেলে পথ তৈরির দিকেই নজর দেবে। সে হয়ে দাঁড়াবে বড় ভয়ংকর ব্যাপার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সোশ্যাল মিডিয়ায় বিবাদে জড়ালেন বাঁধন ও সাবা

সাবেক কেরানির ২৪টি আলিশান বাড়ি ও ৩০ হাজার কোটির সম্পদ

আরও বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

সব কমিটি থেকে নারীদের সিস্টেমেটিক্যালি সাইড করা হয়েছে: সামান্তা শারমিন

অবরোধকারীদের ‘ভুয়া’ আখ্যা দিয়ে ‘প্রকৃত জুলাই যোদ্ধাদের’ হামলা, পুলিশের লাঠিপেটায় শাহবাগ ফাঁকা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত