Ajker Patrika

কমছেই সংরক্ষিত বনাঞ্চল

মো. খাইরুল ইসলাম, তালতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৫: ০৪
Thumbnail image

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বনদস্যুদের থাবায় দিন দিন ছোট হয়ে আসছে বরগুনার তালতলীর টেংরাগিরি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বন রক্ষায় উদাসীন বন বিভাগ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব বনাঞ্চল রক্ষা করতে না পারলে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়বে দক্ষিণাঞ্চল।

পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলোর দেওয়া তথ্যমতে, মিনি সুন্দরবন খ্যাত বরগুনার তালতলীর টেংরাগিরি বনাঞ্চল থেকে প্রতি বছরই ৭০ থেকে ৮০ হাজার বড় গাছ কেটে নিয়ে যান বনদস্যুরা। এ ছাড়া তীব্র নদীভাঙন ও ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে যে পরিমাণ গাছ নষ্ট হয়, তার কোনো হিসাব নেই। ফলে দিন দিন কমে যাচ্ছে গাছ। আর আয়তনে ছোট হচ্ছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল।

জেলা বন বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৩ হাজার ৬৪৮ দশমিক ৩ একর আয়তন নিয়ে তালতলীর টেংরাগিরি বনকে ১৯৬০ সালে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার। তবে গত ৬২ বছরে বনের ৩ হাজারেরও বেশি এলাকা বিলীন হয়েছে সাগরে। বনদস্যু, ঘূর্ণিঝড়, ভাঙন ও জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গেছে তিন লক্ষাধিক গাছ।

তালতলীর টেংরাগিরি সংরক্ষিত বনে গিয়ে দেখা গেছে, বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে হওয়ায় বনের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে তীব্র ভাঙনে অনেক গাছ উপড়ে গেছে। বনটি সংরক্ষিত হওয়ায় এ বনের ভেতরে জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ হলেও বনের ভেতরে অবাধে চলাফেরা করছেন স্থানীয়রা। বনদস্যুরা কেটে নিয়ে গেছেন বনের কেওড়া সুন্দরীসহ বিভিন্ন ধরনের বড় গাছ।

নাম প্রকাশ না করতে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয় ব্যক্তি বলেন, কিছু অসাধু বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহযোগিতায় বনের গাছ কেটে নিচ্ছেন বনদস্যুরা। এ ছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বনের আয়তন ছোট হয়ে আসছে।

মজিবর ফরাজী ও টুকু সিকদারসহ স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি বলেন, প্রতি বছরই কোনো না কোনো ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়তে হয় আমাদের। এই বন ঘূর্ণিঝড় থেকে আমাদের রক্ষা করে। কিন্তু প্রতিনিয়ত এই বনাঞ্চল ছোট হয়ে আসছে।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের বরগুনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মুশফিক আরিফ বলেন, ভাঙন এবং বন নিধনের কারণে প্রাকৃতিক ঢাল এই টেংরাগিরি বনাঞ্চল এখন হুমকির মুখে। প্রতি বছর এখান থেকে হাজার হাজার গাছ কেটে নিয়ে যায় দস্যুরা। বন বিভাগের এই দায় এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে চরম মূল্য দিতে হবে, যা পরিবেশের জন্য খুবই ভয়াবহ হবে।

বরগুনার সংরক্ষিত বন রক্ষা কমিটির সভাপতি হাসানুর রহমান ঝন্টু বলেন, বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বনদস্যুদের কাছে বনের গাছ পাচার করছেন। স্থানীয়দের কাছে যার অনেক প্রমাণ রয়েছে। এমনকি সংরক্ষিত বনের গাছ বিক্রি করার সময় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন একাধিক বনরক্ষী। বন বিভাগের হেঁয়ালিপনা না বন্ধ হলে অস্তিত্ব হারাবে টেংরাগিরি।

বন বিভাগ তালতলী রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, `সংরক্ষিত বন রক্ষায় বন বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কিছুটা আয়তন ছোট হয়ে আসছে। তবে বনের গাছ বনদস্যুরা কেটে নেওয়ার বিষয়ে বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত নেই। বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। এ ছাড়া নতুন করে কিছু চরাঞ্চলে বনায়ন করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বনদস্যু নির্মূলে তৎপর রয়েছি আমরা।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত