আবু তাহের খান

ক্রমবর্ধমান ডলার-সংকট মোকাবিলায় সরকার বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অন্তত ১৪টি প্রকল্পের জন্য বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ অর্থায়ন সংগ্রহের চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে (আজকের পত্রিকা, ৫ জুলাই ২০২৩)। এ-সংক্রান্ত প্রস্তাবও ইতিমধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে পাঠানো হয়েছে। পরিকল্পনামন্ত্রী বিষয়টি অকপটে স্বীকার করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীও একই কথা বলেছেন।
দেশে ডলার-সংকট আগে থেকেই চলছে, যা সরকার এত দিন আড়াল করার চেষ্টা করে এসেছে। বাস্তব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের প্রায় বাইরে চলে যাওয়ায় সরকার এখন তা স্বীকার করছে। এক বছর আগে এটা স্বীকার করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হলে, আজ পরিস্থিতি যতটা খারাপ, ততটা খারাপ না-ও হতে পারত। কিন্তু সরকারের পক্ষে রাজনীতিক বা আমলা কেউই সে পথে হাঁটেননি। বৈদেশিক মুদ্রার এরূপ চরম সংকট থাকা সত্ত্বেও এক বছরে পরিহারযোগ্য আমদানি, অপ্রয়োজনীয় বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ, বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোর উদ্যাপন, ঠুনকো প্রয়োজনে একা একা বা লাটবহর নিয়ে বিদেশ ভ্রমণ ইত্যাদি কোনোটাই থেমে থাকেনি। বৈদেশিক মুদ্রার চরম সংকটের এই মুহূর্তে কী প্রয়োজন ছিল এরদোয়ানের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতির তুরস্ক গমন? সাম্প্রতিক হজ মিশনে শত শত লোকের লাটবহর পাঠানোর কোনো প্রয়োজনই ছিল না। এ রকম আরও অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে।
ধারণাগত আলোচনা থেকে এবার প্রকল্পভিত্তিক আলোচনায় আসা যাক। যে ১৪টি প্রকল্পের জন্য বৈদেশিক মুদ্রায় অর্থায়ন সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে, উন্নয়ন অর্থনীতির বিষয়ে ছিটেফোঁটা জ্ঞান আছে এরূপ ব্যক্তিমাত্রই এ বিষয়ে এতটুকু দ্বিধা না করে বলবেন, দেশের চরম অর্থনৈতিক সংকটের মুহূর্তে এই প্রকল্পগুলোর কোনোটিই নেওয়া সমীচীন হবে না, ঋণ গ্রহণ তো নয়ই। এরপরও যদি সেটি করা হয়, তাহলে বিষয়টি শুধু আত্মঘাতীই হবে না, দেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থের বিপরীতে দাঁড়ানোর শামিল বলেও গণ্য হবে। বর্তমান লেখায় যে ১৪টি প্রকল্পের বাস্তবায়ন বা সেগুলোর জন্য বিদেশি ঋণ নেওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য বলা হলো, সেই পরামর্শ প্রত্যাখ্যাত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
ঢাকা মহানগরীর পরিবহনব্যবস্থার উন্নয়নে সাম্প্রতিক কালে মেট্রোরেলসহ যেসব মেগা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, এর অধিকাংশই বাস্তবে তেমন কোনো কাজে আসেনি; বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা নগরীর নান্দনিকতা ও পরিবেশকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং বহুক্ষেত্রে নতুন করে যানজট আরও বাড়িয়েছে। এমনটি ঘটার মূল কারণ, প্রকল্পগুলো কোনো দীর্ঘমেয়াদি সমন্বিত পরিকল্পনার আওতায় নেওয়া হয়নি এবং সেগুলো নেওয়ার ক্ষেত্রে স্থানীয় বিশেষজ্ঞদের মতামতের চেয়ে বিশেষ উদ্দেশ্যে দেশি-বিদেশি ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন সহযোগীদের আকাঙ্ক্ষাকেই অধিকতর প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। একই ধারাবাহিকতায় ডলার-সংকট মোকাবিলায় ঋণ নেওয়ার আশায় ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্টের মতো যে প্রকল্পের প্রস্তাব ইআরডিতে পাঠানো হয়েছে, অতীতের মতো এটিও রাজধানীর পরিবহনব্যবস্থার উন্নয়নে তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মনে হয় না। অথচ মানসম্মত সমীক্ষা ও গ্রহণযোগ্য মানের সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়াই এর জন্য বৈদেশিক ঋণ চাওয়া হয়েছে।
অন্য ১৩টি প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই পরিস্থিতিও প্রায় একই রকম। বিস্তারিত সমীক্ষা ছাড়াই নিছক ঋণ সংগ্রহের জন্য তাড়াহুড়া করে এসব প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে এবং বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য না থাকলে কোনো উন্নয়ন সহযোগীরই এগুলোতে শরিক হওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ থাকার কথা নয়। তারপরও
যদি কেউ বিশেষ উদ্দেশ্যে এগুলোর কোনো কোনোটিতে ঋণ অর্থায়ন করে, তাহলেও প্রশ্ন থেকে যায়, সেই ঋণ পরিশোধের সামর্থ্য কি এই প্রকল্পগুলোর আছে?
রাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায় থেকে প্রায়ই বলতে শোনা যায় যে বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ খুবই নিষ্ঠাবান। তা সেটি হবেই-বা না কেন? অসহায় জনগণের সংখ্যা যখন বিপুল, তখন তাদের ঘাড়ের ওপর বাড়তি করের বোঝা চাপিয়ে খুব সহজেই যে ঋণ পরিশোধ করে দেওয়া যায়! তাতে জনগণের কষ্ট ও ক্লান্তি যতই বাড়ুক না কেন। আর সে জন্যই তো ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়েছে বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধ বাবদ, যে ঋণের পরিমাণ বর্তমানে প্রায় ৯ লাখ কোটি টাকা।
যেসব প্রকল্পের জন্য বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ সংগ্রহের কথা ইআরডিকে বলা হয়েছে, এর সবগুলোর জন্যই যে শেষ পর্যন্ত দাতা পাওয়া যাবে—এমন সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। যেগুলোর জন্য দাতা পাওয়া যাবে না, সেগুলোর ভবিষ্যৎ কী হবে? অভিজ্ঞতা বলে, এ দেশে একবার যে প্রকল্প যাত্রা শুরু করে, সেটি আর প্রায় থামেই না। এখন বৈদেশিক ঋণ পাওয়া না গেলেও নিজেদের স্বার্থ রক্ষার প্রয়োজনে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা একপর্যায়ে স্থানীয় সম্পদ দিয়েই সম্ভাবনাহীন ও অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে।
দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায়, বিশেষ করে এর বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে রাষ্ট্রকে অবশ্যই কিছু একটা করতে হবে। এর মানে এই নয় যে এভাবে যাচ্ছেতাই প্রকল্পের জন্য বৈদেশিক ঋণ নিতে হবে। আসলে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হতে পারে বৈদেশিক মুদ্রাসংশ্লিষ্ট ব্যয় কমানো, যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, খাদ্যপণ্য, শিল্পের কাঁচামাল ও মৌলিক যন্ত্রপাতি ব্যতীত অন্য সব পণ্যের আমদানি স্থগিত রাখা। দ্বিতীয়ত, অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজন ব্যতীত মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, আমলাসহ সবার বিদেশ ভ্রমণ এক বছরের জন্য পুরোপুরি বন্ধ করা। তৃতীয়ত, বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোয় কর্মীদের বেতন-ভাতা ব্যতীত অন্যান্য ব্যয় ২০২৩-২৪ পর্যন্ত বন্ধ রাখা। চতুর্থত, বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে পরামর্শক বা অন্য কোনো জনবল নিয়োগ না করা। পঞ্চমত, বাংলাদেশে সম্ভব নয় এরূপ অস্ত্রোপচার ব্যতীত অন্যবিধ মামুলি চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়াকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা। এর বাইরে ব্যক্তিগত পর্যায়ের বিদেশ ভ্রমণ, বিশেষ করে পর্যটনমূলক বিদেশ ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা।
অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রার আহরণ বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীদের প্রত্যেকের কাছে সরকারের পক্ষ থেকে অনলাইনে এই মর্মে একটি আবেদন পাঠানো যেতে পারে যে দেশের এই দুঃসময়ে তাঁরা যেন তাঁদের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে হুন্ডি বা অন্য কোনো অবৈধ উপায়ের আশ্রয় না নেন। আশা করি এই আবেদন কাজে আসবে। কারণ প্রবাসী এই অসহায় কর্মীরা দেশকে সত্যিই ভালোবাসেন। আর সরকারের কাছ থেকে বরাবর পাওয়া উপেক্ষার বিপরীতে একটি লিখিত আবেদন যদি তাঁদের কাছে পৌঁছে, তাহলে তাঁরা নিজেদের জন্য তা অবশ্যই অত্যন্ত সম্মানজনক বলে বিবেচনা করবেন এবং তাতে সাড়া দেবেন।
বৈদেশিক মুদ্রার আহরণ বাড়ানোর জন্য রপ্তানি সম্প্রসারণের কোনো বিকল্প নেই। সে ক্ষেত্রে তৈরি পোশাক ও মুখচেনা কিছু খাত ব্যতীত অন্যদেরও এই ধারায় দ্রুত শামিল করতে হবে। বাণিজ্যমন্ত্রী তো সদা ব্যস্ত তাঁর নিজ বলয়ের বিদ্যমান ব্যবসায়িক মিত্রদের (যাঁদের অধিকাংশই বিভিন্ন সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ) স্বার্থের দেখাশোনা নিয়ে। নতুন রপ্তানিমুখী উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও তাঁদের জন্য নয়া রপ্তানিকৌশল খুঁজে পাওয়া নিয়ে চিন্তাভাবনা করার তাঁর সময় কোথায়?
বৈদেশিক মুদ্রার সংকট মোকাবিলায় অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পের অনুকূলে অযৌক্তিক ঋণ নেওয়ার মতো জোড়াতালির আত্মঘাতী উদ্যোগ কোনো কার্যকর কর্মকৌশল হতে পারে না। এ ধরনের সংকটময় পরিস্থিতিতে আসলে যা দরকার তা হচ্ছে, প্রতিটি স্তরের মানুষকে আস্থায় নিয়ে একধরনের গণঐকমত্য তৈরি, যেখানে দেশের প্রতিটি মানুষ যাঁর যাঁর অবস্থানে থেকে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় ও উপার্জনে ভূমিকা রাখবেন। উদাহরণস্বরূপ একজন শ্রমজীবী এবং অন্য একজন বিত্তবান মানুষ একসঙ্গে ভাববেন যে তাঁরা কেউই আপাতত বিদেশি পণ্য ব্যবহার করবেন না, কারণ তাতে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়। আবার একজন প্রবাসী শ্রমিক ও একজন বৃহৎ রপ্তানিকারক একসঙ্গে সচেষ্ট হবেন, বৈদেশিক মুদ্রার উপার্জন তাঁকে বাড়াতেই হবে। মোটকথা, বৈদেশিক মুদ্রার এই সংকটময় পরিস্থিতি সবাই মিলে একসঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে।
লেখক: সাবেক পরিচালক, বিসিক, শিল্প মন্ত্রণালয়

ক্রমবর্ধমান ডলার-সংকট মোকাবিলায় সরকার বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অন্তত ১৪টি প্রকল্পের জন্য বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ অর্থায়ন সংগ্রহের চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে (আজকের পত্রিকা, ৫ জুলাই ২০২৩)। এ-সংক্রান্ত প্রস্তাবও ইতিমধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে পাঠানো হয়েছে। পরিকল্পনামন্ত্রী বিষয়টি অকপটে স্বীকার করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীও একই কথা বলেছেন।
দেশে ডলার-সংকট আগে থেকেই চলছে, যা সরকার এত দিন আড়াল করার চেষ্টা করে এসেছে। বাস্তব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের প্রায় বাইরে চলে যাওয়ায় সরকার এখন তা স্বীকার করছে। এক বছর আগে এটা স্বীকার করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হলে, আজ পরিস্থিতি যতটা খারাপ, ততটা খারাপ না-ও হতে পারত। কিন্তু সরকারের পক্ষে রাজনীতিক বা আমলা কেউই সে পথে হাঁটেননি। বৈদেশিক মুদ্রার এরূপ চরম সংকট থাকা সত্ত্বেও এক বছরে পরিহারযোগ্য আমদানি, অপ্রয়োজনীয় বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ, বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোর উদ্যাপন, ঠুনকো প্রয়োজনে একা একা বা লাটবহর নিয়ে বিদেশ ভ্রমণ ইত্যাদি কোনোটাই থেমে থাকেনি। বৈদেশিক মুদ্রার চরম সংকটের এই মুহূর্তে কী প্রয়োজন ছিল এরদোয়ানের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতির তুরস্ক গমন? সাম্প্রতিক হজ মিশনে শত শত লোকের লাটবহর পাঠানোর কোনো প্রয়োজনই ছিল না। এ রকম আরও অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে।
ধারণাগত আলোচনা থেকে এবার প্রকল্পভিত্তিক আলোচনায় আসা যাক। যে ১৪টি প্রকল্পের জন্য বৈদেশিক মুদ্রায় অর্থায়ন সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে, উন্নয়ন অর্থনীতির বিষয়ে ছিটেফোঁটা জ্ঞান আছে এরূপ ব্যক্তিমাত্রই এ বিষয়ে এতটুকু দ্বিধা না করে বলবেন, দেশের চরম অর্থনৈতিক সংকটের মুহূর্তে এই প্রকল্পগুলোর কোনোটিই নেওয়া সমীচীন হবে না, ঋণ গ্রহণ তো নয়ই। এরপরও যদি সেটি করা হয়, তাহলে বিষয়টি শুধু আত্মঘাতীই হবে না, দেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থের বিপরীতে দাঁড়ানোর শামিল বলেও গণ্য হবে। বর্তমান লেখায় যে ১৪টি প্রকল্পের বাস্তবায়ন বা সেগুলোর জন্য বিদেশি ঋণ নেওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য বলা হলো, সেই পরামর্শ প্রত্যাখ্যাত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
ঢাকা মহানগরীর পরিবহনব্যবস্থার উন্নয়নে সাম্প্রতিক কালে মেট্রোরেলসহ যেসব মেগা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, এর অধিকাংশই বাস্তবে তেমন কোনো কাজে আসেনি; বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা নগরীর নান্দনিকতা ও পরিবেশকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং বহুক্ষেত্রে নতুন করে যানজট আরও বাড়িয়েছে। এমনটি ঘটার মূল কারণ, প্রকল্পগুলো কোনো দীর্ঘমেয়াদি সমন্বিত পরিকল্পনার আওতায় নেওয়া হয়নি এবং সেগুলো নেওয়ার ক্ষেত্রে স্থানীয় বিশেষজ্ঞদের মতামতের চেয়ে বিশেষ উদ্দেশ্যে দেশি-বিদেশি ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন সহযোগীদের আকাঙ্ক্ষাকেই অধিকতর প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। একই ধারাবাহিকতায় ডলার-সংকট মোকাবিলায় ঋণ নেওয়ার আশায় ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্টের মতো যে প্রকল্পের প্রস্তাব ইআরডিতে পাঠানো হয়েছে, অতীতের মতো এটিও রাজধানীর পরিবহনব্যবস্থার উন্নয়নে তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মনে হয় না। অথচ মানসম্মত সমীক্ষা ও গ্রহণযোগ্য মানের সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়াই এর জন্য বৈদেশিক ঋণ চাওয়া হয়েছে।
অন্য ১৩টি প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই পরিস্থিতিও প্রায় একই রকম। বিস্তারিত সমীক্ষা ছাড়াই নিছক ঋণ সংগ্রহের জন্য তাড়াহুড়া করে এসব প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে এবং বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য না থাকলে কোনো উন্নয়ন সহযোগীরই এগুলোতে শরিক হওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ থাকার কথা নয়। তারপরও
যদি কেউ বিশেষ উদ্দেশ্যে এগুলোর কোনো কোনোটিতে ঋণ অর্থায়ন করে, তাহলেও প্রশ্ন থেকে যায়, সেই ঋণ পরিশোধের সামর্থ্য কি এই প্রকল্পগুলোর আছে?
রাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায় থেকে প্রায়ই বলতে শোনা যায় যে বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ খুবই নিষ্ঠাবান। তা সেটি হবেই-বা না কেন? অসহায় জনগণের সংখ্যা যখন বিপুল, তখন তাদের ঘাড়ের ওপর বাড়তি করের বোঝা চাপিয়ে খুব সহজেই যে ঋণ পরিশোধ করে দেওয়া যায়! তাতে জনগণের কষ্ট ও ক্লান্তি যতই বাড়ুক না কেন। আর সে জন্যই তো ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়েছে বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধ বাবদ, যে ঋণের পরিমাণ বর্তমানে প্রায় ৯ লাখ কোটি টাকা।
যেসব প্রকল্পের জন্য বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ সংগ্রহের কথা ইআরডিকে বলা হয়েছে, এর সবগুলোর জন্যই যে শেষ পর্যন্ত দাতা পাওয়া যাবে—এমন সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। যেগুলোর জন্য দাতা পাওয়া যাবে না, সেগুলোর ভবিষ্যৎ কী হবে? অভিজ্ঞতা বলে, এ দেশে একবার যে প্রকল্প যাত্রা শুরু করে, সেটি আর প্রায় থামেই না। এখন বৈদেশিক ঋণ পাওয়া না গেলেও নিজেদের স্বার্থ রক্ষার প্রয়োজনে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা একপর্যায়ে স্থানীয় সম্পদ দিয়েই সম্ভাবনাহীন ও অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে।
দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায়, বিশেষ করে এর বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে রাষ্ট্রকে অবশ্যই কিছু একটা করতে হবে। এর মানে এই নয় যে এভাবে যাচ্ছেতাই প্রকল্পের জন্য বৈদেশিক ঋণ নিতে হবে। আসলে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হতে পারে বৈদেশিক মুদ্রাসংশ্লিষ্ট ব্যয় কমানো, যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, খাদ্যপণ্য, শিল্পের কাঁচামাল ও মৌলিক যন্ত্রপাতি ব্যতীত অন্য সব পণ্যের আমদানি স্থগিত রাখা। দ্বিতীয়ত, অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজন ব্যতীত মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, আমলাসহ সবার বিদেশ ভ্রমণ এক বছরের জন্য পুরোপুরি বন্ধ করা। তৃতীয়ত, বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোয় কর্মীদের বেতন-ভাতা ব্যতীত অন্যান্য ব্যয় ২০২৩-২৪ পর্যন্ত বন্ধ রাখা। চতুর্থত, বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে পরামর্শক বা অন্য কোনো জনবল নিয়োগ না করা। পঞ্চমত, বাংলাদেশে সম্ভব নয় এরূপ অস্ত্রোপচার ব্যতীত অন্যবিধ মামুলি চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়াকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা। এর বাইরে ব্যক্তিগত পর্যায়ের বিদেশ ভ্রমণ, বিশেষ করে পর্যটনমূলক বিদেশ ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা।
অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রার আহরণ বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীদের প্রত্যেকের কাছে সরকারের পক্ষ থেকে অনলাইনে এই মর্মে একটি আবেদন পাঠানো যেতে পারে যে দেশের এই দুঃসময়ে তাঁরা যেন তাঁদের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে হুন্ডি বা অন্য কোনো অবৈধ উপায়ের আশ্রয় না নেন। আশা করি এই আবেদন কাজে আসবে। কারণ প্রবাসী এই অসহায় কর্মীরা দেশকে সত্যিই ভালোবাসেন। আর সরকারের কাছ থেকে বরাবর পাওয়া উপেক্ষার বিপরীতে একটি লিখিত আবেদন যদি তাঁদের কাছে পৌঁছে, তাহলে তাঁরা নিজেদের জন্য তা অবশ্যই অত্যন্ত সম্মানজনক বলে বিবেচনা করবেন এবং তাতে সাড়া দেবেন।
বৈদেশিক মুদ্রার আহরণ বাড়ানোর জন্য রপ্তানি সম্প্রসারণের কোনো বিকল্প নেই। সে ক্ষেত্রে তৈরি পোশাক ও মুখচেনা কিছু খাত ব্যতীত অন্যদেরও এই ধারায় দ্রুত শামিল করতে হবে। বাণিজ্যমন্ত্রী তো সদা ব্যস্ত তাঁর নিজ বলয়ের বিদ্যমান ব্যবসায়িক মিত্রদের (যাঁদের অধিকাংশই বিভিন্ন সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ) স্বার্থের দেখাশোনা নিয়ে। নতুন রপ্তানিমুখী উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও তাঁদের জন্য নয়া রপ্তানিকৌশল খুঁজে পাওয়া নিয়ে চিন্তাভাবনা করার তাঁর সময় কোথায়?
বৈদেশিক মুদ্রার সংকট মোকাবিলায় অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পের অনুকূলে অযৌক্তিক ঋণ নেওয়ার মতো জোড়াতালির আত্মঘাতী উদ্যোগ কোনো কার্যকর কর্মকৌশল হতে পারে না। এ ধরনের সংকটময় পরিস্থিতিতে আসলে যা দরকার তা হচ্ছে, প্রতিটি স্তরের মানুষকে আস্থায় নিয়ে একধরনের গণঐকমত্য তৈরি, যেখানে দেশের প্রতিটি মানুষ যাঁর যাঁর অবস্থানে থেকে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় ও উপার্জনে ভূমিকা রাখবেন। উদাহরণস্বরূপ একজন শ্রমজীবী এবং অন্য একজন বিত্তবান মানুষ একসঙ্গে ভাববেন যে তাঁরা কেউই আপাতত বিদেশি পণ্য ব্যবহার করবেন না, কারণ তাতে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়। আবার একজন প্রবাসী শ্রমিক ও একজন বৃহৎ রপ্তানিকারক একসঙ্গে সচেষ্ট হবেন, বৈদেশিক মুদ্রার উপার্জন তাঁকে বাড়াতেই হবে। মোটকথা, বৈদেশিক মুদ্রার এই সংকটময় পরিস্থিতি সবাই মিলে একসঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে।
লেখক: সাবেক পরিচালক, বিসিক, শিল্প মন্ত্রণালয়
আবু তাহের খান

ক্রমবর্ধমান ডলার-সংকট মোকাবিলায় সরকার বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অন্তত ১৪টি প্রকল্পের জন্য বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ অর্থায়ন সংগ্রহের চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে (আজকের পত্রিকা, ৫ জুলাই ২০২৩)। এ-সংক্রান্ত প্রস্তাবও ইতিমধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে পাঠানো হয়েছে। পরিকল্পনামন্ত্রী বিষয়টি অকপটে স্বীকার করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীও একই কথা বলেছেন।
দেশে ডলার-সংকট আগে থেকেই চলছে, যা সরকার এত দিন আড়াল করার চেষ্টা করে এসেছে। বাস্তব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের প্রায় বাইরে চলে যাওয়ায় সরকার এখন তা স্বীকার করছে। এক বছর আগে এটা স্বীকার করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হলে, আজ পরিস্থিতি যতটা খারাপ, ততটা খারাপ না-ও হতে পারত। কিন্তু সরকারের পক্ষে রাজনীতিক বা আমলা কেউই সে পথে হাঁটেননি। বৈদেশিক মুদ্রার এরূপ চরম সংকট থাকা সত্ত্বেও এক বছরে পরিহারযোগ্য আমদানি, অপ্রয়োজনীয় বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ, বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোর উদ্যাপন, ঠুনকো প্রয়োজনে একা একা বা লাটবহর নিয়ে বিদেশ ভ্রমণ ইত্যাদি কোনোটাই থেমে থাকেনি। বৈদেশিক মুদ্রার চরম সংকটের এই মুহূর্তে কী প্রয়োজন ছিল এরদোয়ানের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতির তুরস্ক গমন? সাম্প্রতিক হজ মিশনে শত শত লোকের লাটবহর পাঠানোর কোনো প্রয়োজনই ছিল না। এ রকম আরও অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে।
ধারণাগত আলোচনা থেকে এবার প্রকল্পভিত্তিক আলোচনায় আসা যাক। যে ১৪টি প্রকল্পের জন্য বৈদেশিক মুদ্রায় অর্থায়ন সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে, উন্নয়ন অর্থনীতির বিষয়ে ছিটেফোঁটা জ্ঞান আছে এরূপ ব্যক্তিমাত্রই এ বিষয়ে এতটুকু দ্বিধা না করে বলবেন, দেশের চরম অর্থনৈতিক সংকটের মুহূর্তে এই প্রকল্পগুলোর কোনোটিই নেওয়া সমীচীন হবে না, ঋণ গ্রহণ তো নয়ই। এরপরও যদি সেটি করা হয়, তাহলে বিষয়টি শুধু আত্মঘাতীই হবে না, দেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থের বিপরীতে দাঁড়ানোর শামিল বলেও গণ্য হবে। বর্তমান লেখায় যে ১৪টি প্রকল্পের বাস্তবায়ন বা সেগুলোর জন্য বিদেশি ঋণ নেওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য বলা হলো, সেই পরামর্শ প্রত্যাখ্যাত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
ঢাকা মহানগরীর পরিবহনব্যবস্থার উন্নয়নে সাম্প্রতিক কালে মেট্রোরেলসহ যেসব মেগা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, এর অধিকাংশই বাস্তবে তেমন কোনো কাজে আসেনি; বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা নগরীর নান্দনিকতা ও পরিবেশকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং বহুক্ষেত্রে নতুন করে যানজট আরও বাড়িয়েছে। এমনটি ঘটার মূল কারণ, প্রকল্পগুলো কোনো দীর্ঘমেয়াদি সমন্বিত পরিকল্পনার আওতায় নেওয়া হয়নি এবং সেগুলো নেওয়ার ক্ষেত্রে স্থানীয় বিশেষজ্ঞদের মতামতের চেয়ে বিশেষ উদ্দেশ্যে দেশি-বিদেশি ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন সহযোগীদের আকাঙ্ক্ষাকেই অধিকতর প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। একই ধারাবাহিকতায় ডলার-সংকট মোকাবিলায় ঋণ নেওয়ার আশায় ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্টের মতো যে প্রকল্পের প্রস্তাব ইআরডিতে পাঠানো হয়েছে, অতীতের মতো এটিও রাজধানীর পরিবহনব্যবস্থার উন্নয়নে তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মনে হয় না। অথচ মানসম্মত সমীক্ষা ও গ্রহণযোগ্য মানের সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়াই এর জন্য বৈদেশিক ঋণ চাওয়া হয়েছে।
অন্য ১৩টি প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই পরিস্থিতিও প্রায় একই রকম। বিস্তারিত সমীক্ষা ছাড়াই নিছক ঋণ সংগ্রহের জন্য তাড়াহুড়া করে এসব প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে এবং বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য না থাকলে কোনো উন্নয়ন সহযোগীরই এগুলোতে শরিক হওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ থাকার কথা নয়। তারপরও
যদি কেউ বিশেষ উদ্দেশ্যে এগুলোর কোনো কোনোটিতে ঋণ অর্থায়ন করে, তাহলেও প্রশ্ন থেকে যায়, সেই ঋণ পরিশোধের সামর্থ্য কি এই প্রকল্পগুলোর আছে?
রাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায় থেকে প্রায়ই বলতে শোনা যায় যে বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ খুবই নিষ্ঠাবান। তা সেটি হবেই-বা না কেন? অসহায় জনগণের সংখ্যা যখন বিপুল, তখন তাদের ঘাড়ের ওপর বাড়তি করের বোঝা চাপিয়ে খুব সহজেই যে ঋণ পরিশোধ করে দেওয়া যায়! তাতে জনগণের কষ্ট ও ক্লান্তি যতই বাড়ুক না কেন। আর সে জন্যই তো ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়েছে বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধ বাবদ, যে ঋণের পরিমাণ বর্তমানে প্রায় ৯ লাখ কোটি টাকা।
যেসব প্রকল্পের জন্য বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ সংগ্রহের কথা ইআরডিকে বলা হয়েছে, এর সবগুলোর জন্যই যে শেষ পর্যন্ত দাতা পাওয়া যাবে—এমন সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। যেগুলোর জন্য দাতা পাওয়া যাবে না, সেগুলোর ভবিষ্যৎ কী হবে? অভিজ্ঞতা বলে, এ দেশে একবার যে প্রকল্প যাত্রা শুরু করে, সেটি আর প্রায় থামেই না। এখন বৈদেশিক ঋণ পাওয়া না গেলেও নিজেদের স্বার্থ রক্ষার প্রয়োজনে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা একপর্যায়ে স্থানীয় সম্পদ দিয়েই সম্ভাবনাহীন ও অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে।
দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায়, বিশেষ করে এর বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে রাষ্ট্রকে অবশ্যই কিছু একটা করতে হবে। এর মানে এই নয় যে এভাবে যাচ্ছেতাই প্রকল্পের জন্য বৈদেশিক ঋণ নিতে হবে। আসলে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হতে পারে বৈদেশিক মুদ্রাসংশ্লিষ্ট ব্যয় কমানো, যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, খাদ্যপণ্য, শিল্পের কাঁচামাল ও মৌলিক যন্ত্রপাতি ব্যতীত অন্য সব পণ্যের আমদানি স্থগিত রাখা। দ্বিতীয়ত, অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজন ব্যতীত মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, আমলাসহ সবার বিদেশ ভ্রমণ এক বছরের জন্য পুরোপুরি বন্ধ করা। তৃতীয়ত, বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোয় কর্মীদের বেতন-ভাতা ব্যতীত অন্যান্য ব্যয় ২০২৩-২৪ পর্যন্ত বন্ধ রাখা। চতুর্থত, বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে পরামর্শক বা অন্য কোনো জনবল নিয়োগ না করা। পঞ্চমত, বাংলাদেশে সম্ভব নয় এরূপ অস্ত্রোপচার ব্যতীত অন্যবিধ মামুলি চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়াকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা। এর বাইরে ব্যক্তিগত পর্যায়ের বিদেশ ভ্রমণ, বিশেষ করে পর্যটনমূলক বিদেশ ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা।
অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রার আহরণ বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীদের প্রত্যেকের কাছে সরকারের পক্ষ থেকে অনলাইনে এই মর্মে একটি আবেদন পাঠানো যেতে পারে যে দেশের এই দুঃসময়ে তাঁরা যেন তাঁদের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে হুন্ডি বা অন্য কোনো অবৈধ উপায়ের আশ্রয় না নেন। আশা করি এই আবেদন কাজে আসবে। কারণ প্রবাসী এই অসহায় কর্মীরা দেশকে সত্যিই ভালোবাসেন। আর সরকারের কাছ থেকে বরাবর পাওয়া উপেক্ষার বিপরীতে একটি লিখিত আবেদন যদি তাঁদের কাছে পৌঁছে, তাহলে তাঁরা নিজেদের জন্য তা অবশ্যই অত্যন্ত সম্মানজনক বলে বিবেচনা করবেন এবং তাতে সাড়া দেবেন।
বৈদেশিক মুদ্রার আহরণ বাড়ানোর জন্য রপ্তানি সম্প্রসারণের কোনো বিকল্প নেই। সে ক্ষেত্রে তৈরি পোশাক ও মুখচেনা কিছু খাত ব্যতীত অন্যদেরও এই ধারায় দ্রুত শামিল করতে হবে। বাণিজ্যমন্ত্রী তো সদা ব্যস্ত তাঁর নিজ বলয়ের বিদ্যমান ব্যবসায়িক মিত্রদের (যাঁদের অধিকাংশই বিভিন্ন সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ) স্বার্থের দেখাশোনা নিয়ে। নতুন রপ্তানিমুখী উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও তাঁদের জন্য নয়া রপ্তানিকৌশল খুঁজে পাওয়া নিয়ে চিন্তাভাবনা করার তাঁর সময় কোথায়?
বৈদেশিক মুদ্রার সংকট মোকাবিলায় অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পের অনুকূলে অযৌক্তিক ঋণ নেওয়ার মতো জোড়াতালির আত্মঘাতী উদ্যোগ কোনো কার্যকর কর্মকৌশল হতে পারে না। এ ধরনের সংকটময় পরিস্থিতিতে আসলে যা দরকার তা হচ্ছে, প্রতিটি স্তরের মানুষকে আস্থায় নিয়ে একধরনের গণঐকমত্য তৈরি, যেখানে দেশের প্রতিটি মানুষ যাঁর যাঁর অবস্থানে থেকে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় ও উপার্জনে ভূমিকা রাখবেন। উদাহরণস্বরূপ একজন শ্রমজীবী এবং অন্য একজন বিত্তবান মানুষ একসঙ্গে ভাববেন যে তাঁরা কেউই আপাতত বিদেশি পণ্য ব্যবহার করবেন না, কারণ তাতে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়। আবার একজন প্রবাসী শ্রমিক ও একজন বৃহৎ রপ্তানিকারক একসঙ্গে সচেষ্ট হবেন, বৈদেশিক মুদ্রার উপার্জন তাঁকে বাড়াতেই হবে। মোটকথা, বৈদেশিক মুদ্রার এই সংকটময় পরিস্থিতি সবাই মিলে একসঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে।
লেখক: সাবেক পরিচালক, বিসিক, শিল্প মন্ত্রণালয়

ক্রমবর্ধমান ডলার-সংকট মোকাবিলায় সরকার বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অন্তত ১৪টি প্রকল্পের জন্য বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ অর্থায়ন সংগ্রহের চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে (আজকের পত্রিকা, ৫ জুলাই ২০২৩)। এ-সংক্রান্ত প্রস্তাবও ইতিমধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে পাঠানো হয়েছে। পরিকল্পনামন্ত্রী বিষয়টি অকপটে স্বীকার করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীও একই কথা বলেছেন।
দেশে ডলার-সংকট আগে থেকেই চলছে, যা সরকার এত দিন আড়াল করার চেষ্টা করে এসেছে। বাস্তব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের প্রায় বাইরে চলে যাওয়ায় সরকার এখন তা স্বীকার করছে। এক বছর আগে এটা স্বীকার করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হলে, আজ পরিস্থিতি যতটা খারাপ, ততটা খারাপ না-ও হতে পারত। কিন্তু সরকারের পক্ষে রাজনীতিক বা আমলা কেউই সে পথে হাঁটেননি। বৈদেশিক মুদ্রার এরূপ চরম সংকট থাকা সত্ত্বেও এক বছরে পরিহারযোগ্য আমদানি, অপ্রয়োজনীয় বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ, বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোর উদ্যাপন, ঠুনকো প্রয়োজনে একা একা বা লাটবহর নিয়ে বিদেশ ভ্রমণ ইত্যাদি কোনোটাই থেমে থাকেনি। বৈদেশিক মুদ্রার চরম সংকটের এই মুহূর্তে কী প্রয়োজন ছিল এরদোয়ানের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতির তুরস্ক গমন? সাম্প্রতিক হজ মিশনে শত শত লোকের লাটবহর পাঠানোর কোনো প্রয়োজনই ছিল না। এ রকম আরও অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে।
ধারণাগত আলোচনা থেকে এবার প্রকল্পভিত্তিক আলোচনায় আসা যাক। যে ১৪টি প্রকল্পের জন্য বৈদেশিক মুদ্রায় অর্থায়ন সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে, উন্নয়ন অর্থনীতির বিষয়ে ছিটেফোঁটা জ্ঞান আছে এরূপ ব্যক্তিমাত্রই এ বিষয়ে এতটুকু দ্বিধা না করে বলবেন, দেশের চরম অর্থনৈতিক সংকটের মুহূর্তে এই প্রকল্পগুলোর কোনোটিই নেওয়া সমীচীন হবে না, ঋণ গ্রহণ তো নয়ই। এরপরও যদি সেটি করা হয়, তাহলে বিষয়টি শুধু আত্মঘাতীই হবে না, দেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থের বিপরীতে দাঁড়ানোর শামিল বলেও গণ্য হবে। বর্তমান লেখায় যে ১৪টি প্রকল্পের বাস্তবায়ন বা সেগুলোর জন্য বিদেশি ঋণ নেওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য বলা হলো, সেই পরামর্শ প্রত্যাখ্যাত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
ঢাকা মহানগরীর পরিবহনব্যবস্থার উন্নয়নে সাম্প্রতিক কালে মেট্রোরেলসহ যেসব মেগা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, এর অধিকাংশই বাস্তবে তেমন কোনো কাজে আসেনি; বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা নগরীর নান্দনিকতা ও পরিবেশকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং বহুক্ষেত্রে নতুন করে যানজট আরও বাড়িয়েছে। এমনটি ঘটার মূল কারণ, প্রকল্পগুলো কোনো দীর্ঘমেয়াদি সমন্বিত পরিকল্পনার আওতায় নেওয়া হয়নি এবং সেগুলো নেওয়ার ক্ষেত্রে স্থানীয় বিশেষজ্ঞদের মতামতের চেয়ে বিশেষ উদ্দেশ্যে দেশি-বিদেশি ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন সহযোগীদের আকাঙ্ক্ষাকেই অধিকতর প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। একই ধারাবাহিকতায় ডলার-সংকট মোকাবিলায় ঋণ নেওয়ার আশায় ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্টের মতো যে প্রকল্পের প্রস্তাব ইআরডিতে পাঠানো হয়েছে, অতীতের মতো এটিও রাজধানীর পরিবহনব্যবস্থার উন্নয়নে তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মনে হয় না। অথচ মানসম্মত সমীক্ষা ও গ্রহণযোগ্য মানের সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়াই এর জন্য বৈদেশিক ঋণ চাওয়া হয়েছে।
অন্য ১৩টি প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই পরিস্থিতিও প্রায় একই রকম। বিস্তারিত সমীক্ষা ছাড়াই নিছক ঋণ সংগ্রহের জন্য তাড়াহুড়া করে এসব প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে এবং বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য না থাকলে কোনো উন্নয়ন সহযোগীরই এগুলোতে শরিক হওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ থাকার কথা নয়। তারপরও
যদি কেউ বিশেষ উদ্দেশ্যে এগুলোর কোনো কোনোটিতে ঋণ অর্থায়ন করে, তাহলেও প্রশ্ন থেকে যায়, সেই ঋণ পরিশোধের সামর্থ্য কি এই প্রকল্পগুলোর আছে?
রাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায় থেকে প্রায়ই বলতে শোনা যায় যে বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ খুবই নিষ্ঠাবান। তা সেটি হবেই-বা না কেন? অসহায় জনগণের সংখ্যা যখন বিপুল, তখন তাদের ঘাড়ের ওপর বাড়তি করের বোঝা চাপিয়ে খুব সহজেই যে ঋণ পরিশোধ করে দেওয়া যায়! তাতে জনগণের কষ্ট ও ক্লান্তি যতই বাড়ুক না কেন। আর সে জন্যই তো ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়েছে বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধ বাবদ, যে ঋণের পরিমাণ বর্তমানে প্রায় ৯ লাখ কোটি টাকা।
যেসব প্রকল্পের জন্য বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ সংগ্রহের কথা ইআরডিকে বলা হয়েছে, এর সবগুলোর জন্যই যে শেষ পর্যন্ত দাতা পাওয়া যাবে—এমন সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। যেগুলোর জন্য দাতা পাওয়া যাবে না, সেগুলোর ভবিষ্যৎ কী হবে? অভিজ্ঞতা বলে, এ দেশে একবার যে প্রকল্প যাত্রা শুরু করে, সেটি আর প্রায় থামেই না। এখন বৈদেশিক ঋণ পাওয়া না গেলেও নিজেদের স্বার্থ রক্ষার প্রয়োজনে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা একপর্যায়ে স্থানীয় সম্পদ দিয়েই সম্ভাবনাহীন ও অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে।
দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায়, বিশেষ করে এর বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে রাষ্ট্রকে অবশ্যই কিছু একটা করতে হবে। এর মানে এই নয় যে এভাবে যাচ্ছেতাই প্রকল্পের জন্য বৈদেশিক ঋণ নিতে হবে। আসলে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হতে পারে বৈদেশিক মুদ্রাসংশ্লিষ্ট ব্যয় কমানো, যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, খাদ্যপণ্য, শিল্পের কাঁচামাল ও মৌলিক যন্ত্রপাতি ব্যতীত অন্য সব পণ্যের আমদানি স্থগিত রাখা। দ্বিতীয়ত, অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজন ব্যতীত মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, আমলাসহ সবার বিদেশ ভ্রমণ এক বছরের জন্য পুরোপুরি বন্ধ করা। তৃতীয়ত, বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোয় কর্মীদের বেতন-ভাতা ব্যতীত অন্যান্য ব্যয় ২০২৩-২৪ পর্যন্ত বন্ধ রাখা। চতুর্থত, বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে পরামর্শক বা অন্য কোনো জনবল নিয়োগ না করা। পঞ্চমত, বাংলাদেশে সম্ভব নয় এরূপ অস্ত্রোপচার ব্যতীত অন্যবিধ মামুলি চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়াকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা। এর বাইরে ব্যক্তিগত পর্যায়ের বিদেশ ভ্রমণ, বিশেষ করে পর্যটনমূলক বিদেশ ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা।
অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রার আহরণ বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীদের প্রত্যেকের কাছে সরকারের পক্ষ থেকে অনলাইনে এই মর্মে একটি আবেদন পাঠানো যেতে পারে যে দেশের এই দুঃসময়ে তাঁরা যেন তাঁদের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে হুন্ডি বা অন্য কোনো অবৈধ উপায়ের আশ্রয় না নেন। আশা করি এই আবেদন কাজে আসবে। কারণ প্রবাসী এই অসহায় কর্মীরা দেশকে সত্যিই ভালোবাসেন। আর সরকারের কাছ থেকে বরাবর পাওয়া উপেক্ষার বিপরীতে একটি লিখিত আবেদন যদি তাঁদের কাছে পৌঁছে, তাহলে তাঁরা নিজেদের জন্য তা অবশ্যই অত্যন্ত সম্মানজনক বলে বিবেচনা করবেন এবং তাতে সাড়া দেবেন।
বৈদেশিক মুদ্রার আহরণ বাড়ানোর জন্য রপ্তানি সম্প্রসারণের কোনো বিকল্প নেই। সে ক্ষেত্রে তৈরি পোশাক ও মুখচেনা কিছু খাত ব্যতীত অন্যদেরও এই ধারায় দ্রুত শামিল করতে হবে। বাণিজ্যমন্ত্রী তো সদা ব্যস্ত তাঁর নিজ বলয়ের বিদ্যমান ব্যবসায়িক মিত্রদের (যাঁদের অধিকাংশই বিভিন্ন সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ) স্বার্থের দেখাশোনা নিয়ে। নতুন রপ্তানিমুখী উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও তাঁদের জন্য নয়া রপ্তানিকৌশল খুঁজে পাওয়া নিয়ে চিন্তাভাবনা করার তাঁর সময় কোথায়?
বৈদেশিক মুদ্রার সংকট মোকাবিলায় অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পের অনুকূলে অযৌক্তিক ঋণ নেওয়ার মতো জোড়াতালির আত্মঘাতী উদ্যোগ কোনো কার্যকর কর্মকৌশল হতে পারে না। এ ধরনের সংকটময় পরিস্থিতিতে আসলে যা দরকার তা হচ্ছে, প্রতিটি স্তরের মানুষকে আস্থায় নিয়ে একধরনের গণঐকমত্য তৈরি, যেখানে দেশের প্রতিটি মানুষ যাঁর যাঁর অবস্থানে থেকে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় ও উপার্জনে ভূমিকা রাখবেন। উদাহরণস্বরূপ একজন শ্রমজীবী এবং অন্য একজন বিত্তবান মানুষ একসঙ্গে ভাববেন যে তাঁরা কেউই আপাতত বিদেশি পণ্য ব্যবহার করবেন না, কারণ তাতে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়। আবার একজন প্রবাসী শ্রমিক ও একজন বৃহৎ রপ্তানিকারক একসঙ্গে সচেষ্ট হবেন, বৈদেশিক মুদ্রার উপার্জন তাঁকে বাড়াতেই হবে। মোটকথা, বৈদেশিক মুদ্রার এই সংকটময় পরিস্থিতি সবাই মিলে একসঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে।
লেখক: সাবেক পরিচালক, বিসিক, শিল্প মন্ত্রণালয়

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

ক্রমবর্ধমান ডলার-সংকট মোকাবিলায় সরকার বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অন্তত ১৪টি প্রকল্পের জন্য বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ অর্থায়ন সংগ্রহের চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে (আজকের পত্রিকা, ৫ জুলাই ২০২৩)। এ-সংক্রান্ত প্রস্তাবও ইতিমধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে পাঠানো হয়েছে। পরিকল্পনামন্ত্রী বিষয়টি অকপটে স্বীকার করেছেন। পররাষ্
২৮ জুলাই ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

ক্রমবর্ধমান ডলার-সংকট মোকাবিলায় সরকার বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অন্তত ১৪টি প্রকল্পের জন্য বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ অর্থায়ন সংগ্রহের চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে (আজকের পত্রিকা, ৫ জুলাই ২০২৩)। এ-সংক্রান্ত প্রস্তাবও ইতিমধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে পাঠানো হয়েছে। পরিকল্পনামন্ত্রী বিষয়টি অকপটে স্বীকার করেছেন। পররাষ্
২৮ জুলাই ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ক্রমবর্ধমান ডলার-সংকট মোকাবিলায় সরকার বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অন্তত ১৪টি প্রকল্পের জন্য বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ অর্থায়ন সংগ্রহের চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে (আজকের পত্রিকা, ৫ জুলাই ২০২৩)। এ-সংক্রান্ত প্রস্তাবও ইতিমধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে পাঠানো হয়েছে। পরিকল্পনামন্ত্রী বিষয়টি অকপটে স্বীকার করেছেন। পররাষ্
২৮ জুলাই ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

ক্রমবর্ধমান ডলার-সংকট মোকাবিলায় সরকার বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অন্তত ১৪টি প্রকল্পের জন্য বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ অর্থায়ন সংগ্রহের চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে (আজকের পত্রিকা, ৫ জুলাই ২০২৩)। এ-সংক্রান্ত প্রস্তাবও ইতিমধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে পাঠানো হয়েছে। পরিকল্পনামন্ত্রী বিষয়টি অকপটে স্বীকার করেছেন। পররাষ্
২৮ জুলাই ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫