Ajker Patrika

‘দিন: দ্য ডে’ নিয়ে আলোচনায় অনন্ত-বর্ষা

‘দিন: দ্য ডে’ নিয়ে আলোচনায় অনন্ত-বর্ষা

এবার ঈদে সারা দেশে মুক্তি পেয়েছে তিনটি সিনেমা—নির্মাতা রায়হান রাফীর ‘পরাণ’, অনন্য মামুনের ‘সাইকো’ এবং অনন্ত-বর্ষা অভিনীত ‘দিন: দ্য ডে’। সর্বাধিক ১০৭টা সিনেমা হলে মুক্তি পেয়েছে ‘দিন: দ্য ডে’। অনন্ত-বর্ষা অভিনীত দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এই সিনেমাটি এরই মধ্যে নানা আলোচনা-সমালোচনায় মুখর।

চিত্রনায়ক ও প্রযোজক অনন্ত জলিলের দাবি ১০০ কোটি টাকা দিয়ে ‘দিন: দ্য ডে’ বানিয়েছেন। বাংলাদেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির জন্য এটা চমক বলা যায়। এখানে ১ কোটি টাকা বাজেটের সিনেমার লগ্নি তুলতে প্রযোজকেরা হিমশিম খান, তাই অনন্তর এই উদ্যোগকে সিনেমার প্রতি তাঁর ‘ডেডিকেশন’ হিসেবেই দেখছেন অনেকে, সাধুবাদও জানাচ্ছেন।

বড় বাজেট হলেও সেটা ১০০ কোটি কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন কেউ কেউ। তবে অনন্ত বলেছেন, ‘ইরানের অ্যাকশন কিংবা যুদ্ধভিত্তিক সিনেমাগুলোর বাজেট ৩০ থেকে ৪০ মিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় ৩০০-৪০০ কোটি টাকা। গল্প তৈরি করার পর তাঁরা জানালেন, “দিন: দ্য ডে” সিনেমায় ১০ মিলিয়ন ডলার বা ১০০ কোটি টাকার মতো লাগবে। আমি বলেছিলাম, বাংলাদেশের মার্কেট ছোট, সিনেমা হল কম। যদি সিনেমা করতে চান, শুধু বাংলাদেশ অংশের শুটিংয়ের খরচ আমি দিতে পারব। তখন ইরানের ফারাবি ফাউন্ডেশন ও ট্যুরিজমের সহযোগিতায় বাজেট ফাইনাল হয়। ইরানে শুটিং প্ল্যান ছিল ৪৫ দিন, কিন্তু দুই লটে শুটিং করতে হয় ৫৭ দিন। এখানে বাজেট বাড়ে। পরে তুরস্কে শুটিং করতে হয়। এতে আরও খরচ বাড়ে। ছবিতে স্ক্রিনে বাংলাদেশ অংশ রয়েছে ১৭ মিনিটের মতো, যার শুটিং হয়েছে বাংলাদেশে।’

‘দিন: দ্য ডে’ দেখার পর অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তাঁদের প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। কেউ কেউ ইউটিউবে রিভিউ প্রকাশ করছেন। অ্যাকশন দৃশ্যের প্রশংসা করেছেন সবাই। অনেকে বলছেন, সিনেমা দেখে ব্যাপক বিনোদন মিলেছে। সংলাপ প্রক্ষেপণ থেকে শুরু করে ইংরেজি উচ্চারণগুলোতে দর্শক বিনোদিত হয়েছে।

অভিনেতা ও উপস্থাপক শাহরিয়ার নাজিম জয় স্টার সিনেপ্লেক্সে সিনেমা দেখে এক ভিডিওতে বলেছেন, ‘অনন্ত-বর্ষার সিনেমায় দর্শক বিনোদন পান, এটা নিশ্চিত। অনন্ত যখন কাঁদেন দর্শক তখন হাসেন, অনন্ত যখন প্রেমের কথা বলেন তখনো দর্শক হাসেন।’ জয়ের ধারণা, অনন্ত পরিকল্পনা করেই অদ্ভুত উচ্চারণে ইংরেজি বলেন।

সিনেমা দেখেই বোঝা যায়, বাজেট বড়। বিশেষ করে ইরান, তুরস্ক, আফগানিস্তানে যেসব এলাকায় শুটিং হয়েছে, তা সচরাচর বলিউড সিনেমাতেও দেখা যায় না। পরিচালক অনিমেষ আইচ বলেন, ‘যাঁরা বলিউডের অ্যাকশন সিনেমা দেখতে ভালোবাসেন, তাঁদের জন্য সিনেমাটি হতে পারে দারুণ উপভোগ্য। এমন লোকেশন আর ধুন্ধুমার অ্যাকশন এর আগে বাংলা সিনেমায় দেখা যায়নি। আমি যেদিন বসুন্ধরা সিনেপ্লেক্সে সিনেমাটি দেখলাম, সেদিন ছিল উপচে পড়া ভিড়। সিনেমাটি আমার ভালো লেগেছে।’

‘দিন: দ্য ডে’ সিনেমার পোস্টারকেমন চলছে
গত মঙ্গলবার ঢাকার মধুমিতা সিনেমা হলে সিনেমা দেখেছেন অনন্ত ও বর্ষা। পরিকল্পনা ছিল মিরপুরের সনি স্কয়ারে সিনেমাটি দেখবেন। আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ইলিয়াস কাঞ্চন এবং ওমর সানীর মতো তারকাদের। টিকিট না থাকায় সিদ্ধান্ত বাতিল করে গেছেন মতিঝিলের মধুমিতায়। অনন্ত বলেন, ‘সনি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী দুই দিনের সব টিকিট বিক্রি শেষ। মধুমিতায়ও সব শো হাউসফুল।’

বর্ষা বলেন, ‘মিরপুরের সনিতে সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে শুনে খুব আনন্দ হলো। দর্শক হলে ফিরছেন, বাংলা সিনেমা দেখছেন—এর চেয়ে ভালো দৃশ্য আর কী হতে পারে! আজ আমরা বগুড়ায় সিনেমাটি দেখব।’

এরই মধ্যে নানা বিষয়ে কথা বলে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন অনন্ত-বর্ষা। বিশেষ করে ‘দিন: দ্য ডে’র সঙ্গে মুক্তি পাওয়া অন্য সিনেমা দুটি নিয়ে তাঁদের মন্তব্য বিস্মিত করেছে অনেককে। এমনকি দর্শকের নানা ধরনের প্রতিক্রিয়ায় গতকাল কান্নায় ভেঙে পড়েন বর্ষা। রাগে-ক্ষোভে সিনেমা ছাড়ারও ঘোষণা দেন তিনি।

অনন্য মামুনকে হুমকি
অনন্য মামুনের ‘সাইকো’ ১৭টি হলে মুক্তি পেয়েছে বলে জানা গেছে। ‘দিন: দ্য ডে’র বাজেট নিয়ে মন্তব্য করায় অনন্য মামুনের ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন অনন্ত জলিল। অনন্য মামুনকে সামনে পেলে কান ধরিয়ে ওঠবস করাবেন বলেও একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে মন্তব্য করেন তিনি। পাল্টা উত্তরে মামুন বলেছেন, ‘মি. অনন্ত জলিল সাহেব, আমি আপনার বেতনভুক্ত কর্মচারী নই, ব্যাপারটা মাথায় রাখবেন।’ ২০১২ সালে  অনন্ত জলিল অভিনীত ও প্রযোজিত ‘মোস্ট ওয়েলকাম’ সিনেমা দিয়ে পরিচালক হিসেবে অভিষেক হয় মামুনের।

রাজকে চেনেন না বর্ষা
‘দিন: দ্য ডে’ সিনেমার সঙ্গে মুক্তি পাওয়া অন্য সিনেমাটি রায়হান রাফীর ‘পরাণ’। এতে অভিনয় করেছেন শরিফুল রাজ ও বিদ্যা সিনহা মিম। এক সাক্ষাৎকারে এই সিনেমা নিয়ে বর্ষা বলেছেন, ‘রায়হান রাফীকে আমরা চিনি না।’ যদিও এই তরুণ নির্মাতার সঙ্গে একই চ্যানেলে অনুষ্ঠান করেছিলেন অনন্ত-বর্ষা দুজনেই। এরপর বর্ষা বলেছেন, ‘রাজ নামের কাউকে চিনি না। একজন নায়িকার জামাই, সেটা শুনেছি।’ 

সিনেমা ছাড়ার ঘোষণা
মঙ্গলবার রাজধানীর মধুমিতা সিনেমা হল পরিদর্শনে গিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে বর্ষা উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘অনেকেই বলছে, আমরা আমাদের পোশাককর্মীদের এনে সিনেমা দেখাচ্ছি। কীভাবে সম্ভব, মানুষ দেশে (গ্রামে) গিয়েছে ঈদ করার জন্য, এটা কি হতে পারে? “নেত্রী: দ্য লিডার” আমরা শুটিং করেছি; হতে পারে, এটা শেষ নাও করতে পারি, এটাই (দিন: দ্য ডে) আমাদের জীবনের শেষ সিনেমা। এরপর আমরা আর করব না, যদি মানুষ এভাবে আমাদের ছোট করে, ছোট করার চেষ্টা করে গায়ের জোরে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত