Ajker Patrika

‘কালো ধানের’ আশা পাঁচ উদ্যোক্তার

ফরিদ আহম্মেদ রুবেল, শ্রীবরদী
আপডেট : ০১ জুন ২০২২, ১১: ০৬
‘কালো ধানের’ আশা পাঁচ উদ্যোক্তার

শেরপুরের শ্রীবরদীতে প্রথমবারের মতো ‘ব্ল্যাক রাইস’ বা ‘কালো ধান’ চাষ করে ভালো ফলনের আশা দেখছেন পাঁচ উদ্যোক্তা। দেশের বাইরে থেকে এ ধানের বীজ সংগ্রহ করে লাগিয়েছিলেন প্রায় পাঁচ একর জায়গা। এখন বাতাসে দোল খাচ্ছে সেই কালো ধান। তাঁদের ইচ্ছা, কৃষি বিভাগের মাধ্যমে এই বীজ অন্য জেলায় ছড়িয়ে দেওয়ার।

কৃষি সম্প্রসারণ অফিস থেকে বলা হয়েছে, খেতের ধান খুব ভালো হয়েছে। তাঁদের কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করে অন্য কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। কৃষি বিভাগ সব সময় তাঁদের পাশে থাকবে।

জানা গেছে, শ্রীবরদী উপজেলার চককাউরিয়া গ্রামের চার বন্ধু মুক্তাদির আহম্মেদ নয়ন, স্বপন আহসান, নিশাত, শান্ত ও রাণীশিমুল ইউনিয়নের হাঁসধরা গ্রামের মো. গোলাম রসুল চীন থেকে তিন হাজার টাকা কেজি দরে ১৮ কেজি কালো ধানের বীজ সংগ্রহ করেন। পরে তাঁরা প্রথমবারের মতো পাঁচ একর জায়গাজুড়ে লাগান ব্ল্যাক রাইস বা কালো ধান। এতে সবকিছু মিলিয়ে তাঁদের খরচ হয় এক লাখ টাকা।

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় প্রথমবারের মতো কালো ধানের আবাদ হয়েছে। এই ধান সৌন্দর্য ও পুষ্টিগুণে ভরপুর। এই ধানগাছের পাতা এবং কাণ্ডের রং সবুজ হলেও ধান ও চালের রং কালো। তাই এ ধানের জাতটি কালো চালের ধান নামে পরিচিত। গুণাগুণের জন্য ব্ল্যাক রাইস এই চালকে ‘ওয়ার্ল্ড সুপার ফুড’ বলা হয়। তাই এর দামও অন্য সব চালের তুলনায় অনেক বেশি। বিশ্বের ধনী দেশগুলোয় এই চালের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

এই ধান চাষের উদ্যোক্তা মুক্তাদির আহম্মেদ নয়ন বলেন, ‘আমরা চিন্তা করেছি, চাকরির পিছে না ঘুরে নিজেরাই কিছু করব। এই চিন্তা থেকেই আমরা চারজন মিলে ১০ কেজি ব্ল্যাক রাইস ধানের বীজ সংগ্রহ করি চীন থেকে। পরে তিন একর জায়গা ভাড়া করি। সেই ভাড়া জমিতে সবকিছু করে আমাদের মোট খরচ হয় প্রায় ১ লাখ টাকা। প্রথমে আমরা একটু চিন্তায় ছিলাম, এই ধান হবে কি হবে না। পরে কৃষি বিভাগের দেখাশোনা ও পরামর্শক্রমে আস্তে আস্তে ফলন আসতে শুরু করে। ধীরে ধীরে ধানও পাকতে শুরু করে। আমরা হিসাব করে দেখেছি এই তিন একরের খেত থেকে আমাদের প্রায় ১০ লাখ টাকা আয় হবে।’

আরেক উদ্যোক্তা স্বপন আহসান বলেন, ‘এই বীজ আমরা জেলায় ছড়িয়ে দিতে চাই। এজন্য আমাদের কৃষি বিভাগের সহযোগিতা প্রয়োজন। আমরা তিন হাজার টাকা কেজি ধরে ধান কিনলেও কৃষকদের ১ হাজার টাকা দামে বীজ দেব। কারণ, কৃষকেরা যেন খুব সহজে অল্প খরচে, বেশি লাভ ও ডায়বেটিস এবং ক্যানসার প্রতিরোধক হিসেবে এই ধান সবাই চাষ করতে পারেন।’

হাঁসধরা গ্রামের কৃষক গোলাম রসুল বলেন, ‘আমি বিদেশ থেকে এই ধানের বীজ সংগ্রহ করি। কৃষি অফিসের সহযোগিতায় আমি প্রায় দুই একর জায়গায় এ ধান চাষ করেছি। আশা করি লাভবান হব।’

উপজেলা কৃষি অফিসার মো. হুমায়ুন দিলদার বলেন, উদ্যোক্তারা বারবার আমার অফিসে এসেছেন। আমরা তাঁদের সার্বিক সহযোগিতা করেছি। এ ধান চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ানোর জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ ধান চাষ বাড়ালে কৃষক খুবই লাভবান হবেন।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক ডা. মুহিত কুমার দে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ওই চার উদ্যোক্তার ধানখেত পরিদর্শন করেছি। খেতের ধান খুব ভালো হয়েছে। আমরা চাচ্ছি, তাঁদের কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করে জেলার অন্য কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে। কৃষি বিভাগ সব সময় তাঁদের পাশে থাকবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত