Ajker Patrika

বেগুনের গ্রাম ঘাগড়ার কুল

রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
বেগুনের গ্রাম ঘাগড়ার কুল

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ১৫ নম্বর লালানগর ইউনিয়নের ঘাগড়ার কুল গ্রামের নাম বদলাতে শুরু করেছে। এলাকার মানুষেরাই এই গ্রামকে ‘বেগুন গ্রাম’ বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন। ইছামতি নদীর পলিবাহিত এই গ্রামের এক খণ্ড জমিও খালি নেই। বাড়ির আঙিনা থেকে শুরু করে বিস্তীর্ণ মাঠ সবখানেই বেগুনের চাষাবাদ। যেন ঘাগড়ার কুলের কৃষকেরা অন্য কোনো ফসলের চাষই করতে জানেন না। চাষাবাদ বলতে তাঁরা বোঝেন কেবল বেগুন চাষ। আর বেগুন চাষ করে এ গ্রামের প্রতিটি কৃষক আজ স্বাবলম্বী।

ঘাগড়ার কুলের প্রবীণ বেগুন চাষি আবদুল চোবহান বলেন, ‘প্রায় ৫০ বছর ধরে বেগুন চাষ করে আসছি। আগের দিনে কেবল বাড়িতে খাওয়ার চাহিদা আর আশপাশের বাড়িগুলোতে বিক্রি করার জন্যই অল্প কিছু জমিতে বেগুন চাষ করতাম। এখন আমার তিন ছেলে বেগুন চাষ করেন।’

আবদুল চোবহানের মেজ ছেলে আবুল কালাম বলেন, ‘আমাদের বাপ-দাদার সময় থেকে এ চাষ করে আসছি। এ মৌসুমে আমরা তিন ভাই মিলে এক একরেরও বেশি জমিতে বেগুন চাষ করেছি। ফলনও খুব ভালো হয়েছে।’

অপর বেগুন চাষি লোকমান হোসেন বলেন, তিনি ৩০ শতক জমিতে বেগুন চাষ করেছেন। অল্প জমিতে আগাম চাষ করায় একটু আগেভাগেই গাছে বেগুন ধরেছে। তাই বাজারে দামও পাওয়া যাচ্ছে। এক কেজি বেগুনের মূল্য ৬০ টাকা থেকে ৮০ টাকা। বাজারে গিয়ে জেলার পাইকারদের কাছে সরাসরি বিক্রি করতে পারায় চাষিরা এখন আর ঠকে না। বিশেষ করে মোবাইল প্রযুক্তির কারণে এখন চাষিরা নিজেই বাজার দর যাচাই করে ফসল বিক্রি করেন। এতে গ্রামীণ চাষিদের রক্তচোষা মধ্যস্বত্বভোগীদের উৎপাত কমে গেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

উত্তর রাঙ্গুনিয়া আলমশাহ পাড়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মীর জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জীবনের অর্ধেক সময় এ মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করে কাটিয়েছি। আর এ মাদ্রাসাকে ঘিরে ঘাগড়ার কুল গ্রামের দিগন্ত জোড়া বেগুন চাষ দেখে বিমোহিত হয়েছি। বাজারের কৃত্রিম ও ভেজাল খাদ্যদ্রব্যের মাঝে ঘাগড়ার কুল গ্রামের শীতের শিশির ভেজা টাটকা বেগুনের স্বাদ যেন অনন্য।

লালানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মীর তৌহিদুল ইসলাম কাঞ্চন বলেন, বাপ-দাদার সময় থেকে এ গ্রামের কৃষকেরা বেগুন চাষ করে আসছেন। তবে সেই সময় বেগুনের পাশাপাশি অন্যান্য শাকসবজিও চাষ করতেন। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে মাঠের পরে মাঠ জুড়ে কেবল বেগুনের চাষ হয়ে আসছে। এতে গ্রামের দরিদ্র কৃষকগুলোও ধীরে ধীরে সচ্ছল হয়ে উঠছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কারিমা আকতার বলেন, কিছু কিছু এলাকার মাটি বিশেষ গুণসম্পন্ন হয়ে থাকে। সে হিসেবে উপজেলার লালানগর ইউনিয়নের ঘাগড়ার কুলের মাটি বেগুন চাষের উপযোগী বলেই কৃষকেরা বেগুন চাষ করে সাফল্য পাচ্ছেন। ঘাগড়ার কুলের জমি বেগুন ছাড়াও অন্যান্য ফসলের জন্যও বেশ উপযোগী। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে এ এলাকার মানুষ বেগুন চাষ করে আশাতীত সাফল্য পাওয়ায় সবাই বেগুন চাষকেই সাফল্যের মূল চাবিকাঠি হিসেবে ধরে নিয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত