পিরোজপুর-৩: দুর্গে ফিরতে মরিয়া আ.লীগ

মঠবাড়িয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত পিরোজপুর জেলার একমাত্র আসন পিরোজপুর-৩। আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে খ্যাত এই আসন চারবার নিজেদের দখলে থাকলেও গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন। ক্ষমতাসীন দলের অন্তঃকোন্দলে গতবার এখানে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন ডা. রুস্তম আলী ফরাজী। জাতীয় পার্টির এ নেতাই এখন আসনটির সংসদ সদস্য। এবার অবশ্য দুর্গ ফিরে পেতে মরিয়া আওয়ামী লীগ।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন অনিয়মের কারণে মাঠপর্যায়ে এমপি রুস্তমের জনপ্রিয়তা কমেছে। তাঁর দলীয় নেতা-কর্মীদের অবস্থান ঠেকেছে তলানিতে। জাতীয় পার্টির জোটবদ্ধ একক প্রার্থী হিসেবে তিনি এবারও মনোনয়নপ্রত্যাশী হলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগ চাইছে নিজ দলের প্রার্থী। কিন্তু আসনটিতে একক আধিপত্য থাকলেও দলীয় কোন্দল কিছুটা শঙ্কার জন্ম দিচ্ছে; বিশেষ করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আশরাফুর রহমান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মহারাজের মধ্যে চরম রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা বিরাজ করছে। দুই পক্ষের মধ্যে মাঝেমধ্যেই দেখা দেয় টান টান উত্তেজনা। ভোটের মাঠে দলটির জন্য এটা একটা নেতিবাচক ফ্যাক্টর।

ক্ষমতাসীন দল থেকে এবার এই আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মঠবাড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিউদ্দিন আহম্মেদ ফেরদৌস, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আশরাফুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মহারাজ, সাবেক সংসদ সদস্য ডা. আনোয়ার হোসেন, কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য তাজউদ্দিন আহমেদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক সেলিম মাতুব্বরের নাম শোনা যাচ্ছে।

মনোনয়ন বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আশরাফুর রহমানের ভাই মঠবাড়িয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘আসনটিতে আশরাফুর রহমানের জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। মাটি ও মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করছেন আমার ভাই। তাঁকে নৌকা প্রতীক দেওয়া হলে তিনি বিপুল ভোটে জয়ী হবেন।’

মঠবাড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিউদ্দিন আহম্মেদ ফেরদৌস বলেন, ‘আমি দুই দশক ধরে উপজেলার নেতৃত্বে আছি।দলীয় নেতা-কর্মীরা আমার সঙ্গে আছেন। মনোনয়ন দিলে বিজয়ে শতভাগ আত্মবিশ্বাসী।’

জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মহারাজ বলেন, আগামী নির্বাচনে নেত্রী নৌকা প্রতীক আমাকে দিলে দলকে এই আসন উপহার দেব।’

তবে মনোনয়ন বিষয়ে জানতে একাধিকবার ফোন করলেও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও সংসদ সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজীর সাড়া পাওয়া যায়নি।

এদিকে কেন্দ্রীয়ভাবে বলা হচ্ছে, নির্বাচিত সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। তবে ভেতরে-ভেতরে মাঠ গোছাচ্ছেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক রুহুল আমীন দুলাল। তিনি গত নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এবারও প্রার্থী হতে চান। এ ছাড়া মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি মো. ওয়াহিদুজ্জামান জাকিরের নামও সম্ভাব্য তালিকায় রয়েছে।

উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক রুহুল আমীন দুলাল বলেন, ‘একাই মঠবাড়িয়ায় বিএনপির অস্তিত্ব রক্ষায় আন্দোলন সংগ্রাম করে যাচ্ছি। কিন্তু এবারের নির্বাচন বিএনপির জন্য ভিন্ন হবে। বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ নেয়, তাহলে অবশ্যই দলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব।’

জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি মো. ওয়াহিদুজ্জামান জাকির বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে দলীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছি। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে এই আসনে বড় ব্যবধানে জয়ী হব।’