জাহীদ রেজা নূর

সাংবাদিকতার স্বর্ণযুগের শেষ ডাকসাইটে প্রতিনিধি তোয়াব খান চলে গেলেন। তাঁর মৃত্যুর মাঝ দিয়ে সমাপ্তি ঘটল বর্ণাঢ্য একটি ইতিহাসের। স্বাধিকার আন্দোলনের সময়, বিশেষ করে গত শতাব্দীর পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে রাজনীতি ও সাংবাদিকতা যখন পরস্পর হাত ধরাধরি করে চলেছে, তখন সাংবাদিকদের মূল্য ছিল, রাজনীতিবিদদের মধ্যে আদর্শ ছিল। লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য রাজনীতিক এবং সাংবাদিক একজোট হয়ে পথ পাড়ি দিয়েছেন। সেই পথের একজন উল্লেখযোগ্য প্রতিনিধি ছিলেন তোয়াব খান।
আমাদের সাংবাদিকতার ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে মওলানা আকরম খাঁদের যুগের পর আমরা তিনজন সম্পাদককে পেয়েছিলাম, যাঁরা সব দিক থেকেই সাংবাদিকতাকে বসিয়েছিলেন সমাজের উচ্চাসনে। তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, জহুর হোসেন চৌধুরী এবং আবদুস সালাম—সেই তিনটি নাম। সে সময় বা তারও আগে থেকে এই পেশায় এসে যুক্ত হচ্ছিলেন তীক্ষ্ণ মেধাবী তরুণেরা।
পাকিস্তান সৃষ্টির আগে ১৯৩৬ সাল থেকে দৈনিক আজাদ পত্রিকাটি প্রকাশিত হতো কলকাতা থেকে। সম্পাদক ছিলেন আকরম খাঁ, বার্তা সম্পাদক ছিলেন মোহাম্মদ মোদাব্বের। দেশভাগের পর দৈনিক আজাদ চলে আসে পূর্ব বাংলার ঢাকায়। সেটা ১৯৪৮ সালের ১৯ অক্টোবর। দৈনিক ইত্তেহাদ তখনো প্রকাশ হতো কলকাতা থেকে। দৈনিক আজাদ মুসলিম লীগের মুখপত্র হলেও লীগ নেতৃত্বের দ্বন্দ্বের কারণে ভাষা আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারীদের পক্ষ নিয়েছিল। এ সময় দৈনিক আজাদের বার্তা সম্পাদক ছিলেন সিরাজুদ্দীন হোসেন। ভাষা আন্দোলনের খবর ছাপানোর ব্যাপারে তিনি মওলানা আকরম খাঁর কাছ থেকে কোনো বাধার সম্মুখীন হননি।
ভাষা আন্দোলনের সময় গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকাগুলোর মধ্যে ছিল আজাদ, মর্নিং নিউজ, অবজারভার, সংবাদ। সাপ্তাহিকগুলোর মধ্যে ছিল সৈনিক ও ইত্তেফাক। সিলেট থেকে প্রকাশিত নওবেলাল পত্রিকায়ও ভাষা আন্দোলন হয়ে উঠেছিল গুরুত্বপূর্ণ। ভাষা আন্দোলনের খবর প্রকাশে ‘সংবাদ’ আর ‘মর্নিং নিউজ’-এর ভূমিকা সন্তোষজনক ছিল না।
পরবর্তীকালে, মূলত ষাটের দশকে পূর্ব পাকিস্তানে যখন সাংবাদিকতা পেশাটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, তখন সংবাদপত্রের বার্তা বিভাগে যাঁরা পূর্ণ কর্তৃত্ব নিয়ে শাসন করেছেন, তাঁদের মধ্যে সিরাজুদ্দীন হোসেন, কে জি মুস্তাফা, এবিএম মূসা এবং তোয়াব খানের কথা অগ্রগণ্য। সিরাজুদ্দীন হোসেন সাংবাদিকতায় এসেছেন ভারতভাগের আগে। আজাদ পত্রিকায় তিনি কাজ করতেন। সেকালেই কে জি মুস্তাফা আজাদে কাজ করে সাংবাদিকতা শুরু করেছেন। এবিএম মূসা সাংবাদিকতায় এসেছেন দৈনিক ইনসাফের মাধ্যমে, ১৯৫০ সালে। এরপর পাকিস্তান অবজারভারে কেটেছে তাঁর সাংবাদিকতার সেরা সময়টা। আর তোয়াব খান সাংবাদিকতায় আসেন দৈনিক জনতার মাধ্যমে, ১৯৫৩ সালে। দৈনিক পাকিস্তানে যোগ দেওয়ার আগে ১৯৬১ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত তিনি দৈনিক সংবাদের বার্তা সম্পাদক ছিলেন।
এই ইতিহাস টেনে আনার ব্যাপারে একটা ছোট কৈফিয়ত দিতে চাই। সিরাজুদ্দীন হোসেনের পুত্র হিসেবে শৈশব থেকেই সাংবাদিকতা ও তাঁর সঙ্গে যুক্ত মানুষদের সঙ্গে আমাদের চেনা-জানা-পরিচিতি গড়ে উঠেছিল। যে চারজন বার্তা সম্পাদকের কথা এখানে বললাম, তাঁরা ছাড়াও অনেক প্রতিভাবান সাংবাদিক এই সময়ে কাজ করেছেন। বার্তা বিভাগে সৈয়দ নুরুদ্দীন, আসাফউদ্দৌলা রেজা, নূরুল ইসলাম পাটোয়ারী, এহতেশাম হায়দার চৌধুরী, এম আর আখতার মুকুল, খন্দকার আবু তালেব প্রমুখের নাম এখানে অনায়াসেই আসতে পারে। সম্পাদকীয় বিভাগে রণেশ দাশগুপ্ত, সত্যেন সেন, শহীদুল্লা কায়সার, আহমেদুর রহমান, মোজাম্মেল হক, সন্তোষ গুপ্ত, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী প্রমুখের নামও আসবে। আসবে কাজী মোহাম্মদ ইদ্রিসের নাম। তাঁরা ছাড়া আরও অনেক কীর্তিমান সাংবাদিক সে সময় পত্রিকা অফিসগুলোকে আন্দোলনের সূতিকাগারে পরিণত করেছিলেন।
ভাষা আন্দোলনের পর যখন এ দেশে সাংবাদিকতা একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে ওঠে, পূর্ব বাংলার মানুষ যখন বুঝতে শুরু করে পশ্চিম পাকিস্তানিরা এই ভূখণ্ডকে তাদের শোষণ-ভূমি হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে, তখন অন্য রকম একটি সময় এসে হাজির হয়। বাংলার মানুষ তখন তার সংস্কৃতি, তার ভাষা, তার অতীত ঐতিহ্য ইত্যাদির দিকে চোখ ফেরায় এবং এ কাজে রাজনীতি, সংস্কৃতির পাশাপাশি সংবাদপত্র হয়ে ওঠে আন্দোলনের হাতিয়ার।
এরও যে পটভূমি, তা ব্যাখ্যা না করলে একালের পাঠকের কাছে সময়টি ধোঁয়াটে হয়ে থাকবে। পঞ্চাশ দশকের শেষে ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান ক্ষমতায় এসেছেন। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রনাথের জন্মশতবার্ষিকী পালন নিয়ে টগবগ করে ফুটছে বাঙালির রক্ত, বাষট্টি সালে শিক্ষানীতি বিষয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে আইয়ুব খানকে বুঝিয়ে দিয়েছেন, স্বৈরাচারী রাষ্ট্রক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ জানানোর ক্ষমতা তাঁদের আছে। এই পটভূমিতে তৎকালীন সাংবাদিকতা বিকশিত হয়েছে। ফলে চৌষট্টির দাঙ্গা যখন বাধানো হলো, তখন পূর্ব বাংলায় নির্বিচারে হিন্দু নিধন শুরু করেছিল ইসলামি জোশে বলীয়ান মুসলমানরা। শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ রুখে দাঁড়িয়েছিল এবং সে দাঙ্গাকে প্রতিহত করার জন্য যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, তা ছিল এ দেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে এক বলিষ্ঠ সংযোজন।
তৎকালীন সাংবাদিকতার দুটো উদাহরণ দিয়ে বলতে চাইব, জনগণের সঙ্গে রাজনীতি, সংস্কৃতি ও সাংবাদিকতার এ রকম অপূর্ব মিলন ঘটানোর জন্য যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁদের অন্যতম ছিলেন তোয়াব খান। ঘটনা দুটোর একটি ১৯৬১ সালের, অন্যটি ১৯৬৪ সালের।
রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন নিয়ে ১৯৬১ সালে পত্রপত্রিকায় যে দ্বৈরথ চলে, সেটা নিয়েই আমাদের প্রথম আলোচনা। সে বছর এপ্রিল মাসে আজাদ পত্রিকায় ‘রবীন্দ্রনাথ ও মওলানা আজাদ’ নামে একটি সম্পাদকীয় ছাপা হয়। তাতে রবীন্দ্রনাথ ও মওলানা আজাদের সমালোচনা করা হয়। সে প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথের বিষয়ে বলা হয়, ‘রবীন্দ্রনাথের দোহাই পাড়িয়া অখণ্ড বাংলার আড়ালে আমাদের তামদ্দুনিক
জীবনের বিপদ ডাকিয়া আনার সুযোগ দেওয়া চলিবে না।’
এরপর এ প্রসঙ্গে প্রতিবাদী হয়ে ওঠে ইত্তেফাক এবং সংবাদ। বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে এই বিতর্ক একটি ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে। সে সময় সিরাজুদ্দীন হোসেন ইত্তেফাকে এবং তোয়াব খান সংবাদে চাকরি করতেন। অতিগুরুত্বের সঙ্গে তাঁরা ইত্তেফাক ও সংবাদে রবীন্দ্রনাথের সমর্থনে প্রচারণা চালিয়ে যান। আজাদ নিয়েছিল রবীন্দ্রবিরোধী ভূমিকা। খবরের পাতা আর সম্পাদকীয় পাতা মিলে যে অনবদ্য কাজগুলো হয়েছিল, তার কিছুটা প্রশংসা পেতেই পারেন তোয়াব খান। সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মীদের যুগল পদচারণে সেবার
মোট এগারো দিন ধরে ঢাকায় পালিত হয়েছিল রবীন্দ্র উৎসব।
দ্বিতীয় ঘটনাটি ১৯৬৪ সালের। ১৯৬৩ সালের ২৭ ডিসেম্বর ভারতের শ্রীনগরের হজরতবাল দরগাহ শরিফে সংরক্ষিত হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মাথার চুল চুরি হয়ে যায়। এর প্রতিবাদে ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। আব্দুল হাই নামে এক লোক, যিনি ইসলামিক বোর্ডের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য, পূর্ব পাকিস্তানের সব হিন্দু এবং অমুসলিমদের বিরুদ্ধে জিহাদের ডাক দেন। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান বলেন, হজরতবাল ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের মুসলিমরা কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখালে তার কোনো দায় নেই।
ফলে পূর্ব পাকিস্তান হয়ে উঠল দাঙ্গার আদর্শ ক্ষেত্র। মোনায়েম খান আর সবুর খান ছিলেন এই দাঙ্গা বাধানোর নাটের গুরু। পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল মানুষ রুখে দাঁড়ালেন। ইত্তেফাক, সংবাদ, আজাদ এবং অবজারভার পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় ১৯৬৪ সালের ১৬ জানুয়ারি অভিন্ন সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়, যার শিরোনাম ছিল ‘পূর্ব পাকিস্তান রুখিয়া দাঁড়াও’। এই সম্পাদকীয় খসড়া তৈরি করেছিলেন সিরাজুদ্দীন হোসেন। এরপর তা চার পত্রিকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সে সময় সংবাদের বার্তা সম্পাদক ছিলেন তোয়াব খান।
অবজারভারের বার্তা সম্পাদক ছিলেন সম্ভবত এবিএম মূসা। আজাদের বার্তা সম্পাদক কে ছিলেন, তা স্মরণে আসছে না। তবে ওই দিন চারটি পত্রিকাতেই প্রথম পাতায় এই সম্পাদকীয় ছাপা হলে দাঙ্গার লেলিহান শিখা স্তিমিত হয়েছিল। সেই কালের কথা যত জানানো যাবে, ততই তা হবে ভবিষ্যৎ সাংবাদিকতার জন্য দামি। যাঁরা জানেন, তাঁরা লিখলে ভালো হয়।
২. এবার ব্যক্তিগত ঋণের বিষয়ে দুটো কথা। ১৯৯৬ সালে পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরেছি। লেখালেখির অভ্যাস আছে। দৈনিক সংবাদে কয়েকটি উপসম্পাদকীয় প্রকাশ পেয়েছে। এ রকম সময় আমার মেজো ভাই শাহীন রেজা নূর আমাকে নিয়ে গেলেন তোয়াব কাকার কাছে। তিনি তখন দৈনিক জনকণ্ঠের উপদেষ্টা সম্পাদক। মতিঝিলে অফিস।
আমার পড়াশোনার বিষয়, লেখালেখির ধরন বিষয়ে সব শুনে তিনি বললেন, ‘রুশ ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে পড়েছ। তুমি ওই ভাষা আর সাহিত্য থেকেই জীবনের পথ বেছে নিতে পারবে। ওদের ভাষা আর সাহিত্য দুটোই খুব ধনী। লেগে থাকো। দেখবে এই পড়াশোনাই তোমাকে পথ দেখাবে।’ তিনি চতুরঙ্গ পাতায় ধারাবাহিকভাবে আমার ‘আজকের রাশিয়া’ সিরিজটি ছেপেছিলেন। চেখভ ও ম্যাক্সিম গোর্কির কথোপকথন ছেপেছিলেন।
এখন বুঝি, এ বিষয়ে কতটা দূরদৃষ্টি ছিল তাঁর। এখনো কোনো গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় রুশ পত্রিকা, ভাষা এবং সাহিত্য আমার প্রধান অবলম্বন।সিরাজুদ্দীন হোসেনের লেখা ‘মঞ্চে নেপথ্যে’ বই প্রকাশনা উৎসবে তিনি সেকালের সাংবাদিকতা নিয়ে যে কথাগুলো বলেছিলেন, সেটাও ছিল গুরুত্বপূর্ণ। সর্বশেষ গত বছর আমি আর আজকের পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক সেলিম খান তাঁর কাছে গিয়েছিলাম ১৫ আগস্ট বিষয়ে শুনতে। সেটাই তাঁর সঙ্গে শেষ দেখা। খুবই আদর করেছিলেন তিনি। তাঁর সেই মুখাবয়বটিই এখন ভাসছে আমার চোখে।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

সাংবাদিকতার স্বর্ণযুগের শেষ ডাকসাইটে প্রতিনিধি তোয়াব খান চলে গেলেন। তাঁর মৃত্যুর মাঝ দিয়ে সমাপ্তি ঘটল বর্ণাঢ্য একটি ইতিহাসের। স্বাধিকার আন্দোলনের সময়, বিশেষ করে গত শতাব্দীর পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে রাজনীতি ও সাংবাদিকতা যখন পরস্পর হাত ধরাধরি করে চলেছে, তখন সাংবাদিকদের মূল্য ছিল, রাজনীতিবিদদের মধ্যে আদর্শ ছিল। লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য রাজনীতিক এবং সাংবাদিক একজোট হয়ে পথ পাড়ি দিয়েছেন। সেই পথের একজন উল্লেখযোগ্য প্রতিনিধি ছিলেন তোয়াব খান।
আমাদের সাংবাদিকতার ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে মওলানা আকরম খাঁদের যুগের পর আমরা তিনজন সম্পাদককে পেয়েছিলাম, যাঁরা সব দিক থেকেই সাংবাদিকতাকে বসিয়েছিলেন সমাজের উচ্চাসনে। তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, জহুর হোসেন চৌধুরী এবং আবদুস সালাম—সেই তিনটি নাম। সে সময় বা তারও আগে থেকে এই পেশায় এসে যুক্ত হচ্ছিলেন তীক্ষ্ণ মেধাবী তরুণেরা।
পাকিস্তান সৃষ্টির আগে ১৯৩৬ সাল থেকে দৈনিক আজাদ পত্রিকাটি প্রকাশিত হতো কলকাতা থেকে। সম্পাদক ছিলেন আকরম খাঁ, বার্তা সম্পাদক ছিলেন মোহাম্মদ মোদাব্বের। দেশভাগের পর দৈনিক আজাদ চলে আসে পূর্ব বাংলার ঢাকায়। সেটা ১৯৪৮ সালের ১৯ অক্টোবর। দৈনিক ইত্তেহাদ তখনো প্রকাশ হতো কলকাতা থেকে। দৈনিক আজাদ মুসলিম লীগের মুখপত্র হলেও লীগ নেতৃত্বের দ্বন্দ্বের কারণে ভাষা আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারীদের পক্ষ নিয়েছিল। এ সময় দৈনিক আজাদের বার্তা সম্পাদক ছিলেন সিরাজুদ্দীন হোসেন। ভাষা আন্দোলনের খবর ছাপানোর ব্যাপারে তিনি মওলানা আকরম খাঁর কাছ থেকে কোনো বাধার সম্মুখীন হননি।
ভাষা আন্দোলনের সময় গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকাগুলোর মধ্যে ছিল আজাদ, মর্নিং নিউজ, অবজারভার, সংবাদ। সাপ্তাহিকগুলোর মধ্যে ছিল সৈনিক ও ইত্তেফাক। সিলেট থেকে প্রকাশিত নওবেলাল পত্রিকায়ও ভাষা আন্দোলন হয়ে উঠেছিল গুরুত্বপূর্ণ। ভাষা আন্দোলনের খবর প্রকাশে ‘সংবাদ’ আর ‘মর্নিং নিউজ’-এর ভূমিকা সন্তোষজনক ছিল না।
পরবর্তীকালে, মূলত ষাটের দশকে পূর্ব পাকিস্তানে যখন সাংবাদিকতা পেশাটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, তখন সংবাদপত্রের বার্তা বিভাগে যাঁরা পূর্ণ কর্তৃত্ব নিয়ে শাসন করেছেন, তাঁদের মধ্যে সিরাজুদ্দীন হোসেন, কে জি মুস্তাফা, এবিএম মূসা এবং তোয়াব খানের কথা অগ্রগণ্য। সিরাজুদ্দীন হোসেন সাংবাদিকতায় এসেছেন ভারতভাগের আগে। আজাদ পত্রিকায় তিনি কাজ করতেন। সেকালেই কে জি মুস্তাফা আজাদে কাজ করে সাংবাদিকতা শুরু করেছেন। এবিএম মূসা সাংবাদিকতায় এসেছেন দৈনিক ইনসাফের মাধ্যমে, ১৯৫০ সালে। এরপর পাকিস্তান অবজারভারে কেটেছে তাঁর সাংবাদিকতার সেরা সময়টা। আর তোয়াব খান সাংবাদিকতায় আসেন দৈনিক জনতার মাধ্যমে, ১৯৫৩ সালে। দৈনিক পাকিস্তানে যোগ দেওয়ার আগে ১৯৬১ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত তিনি দৈনিক সংবাদের বার্তা সম্পাদক ছিলেন।
এই ইতিহাস টেনে আনার ব্যাপারে একটা ছোট কৈফিয়ত দিতে চাই। সিরাজুদ্দীন হোসেনের পুত্র হিসেবে শৈশব থেকেই সাংবাদিকতা ও তাঁর সঙ্গে যুক্ত মানুষদের সঙ্গে আমাদের চেনা-জানা-পরিচিতি গড়ে উঠেছিল। যে চারজন বার্তা সম্পাদকের কথা এখানে বললাম, তাঁরা ছাড়াও অনেক প্রতিভাবান সাংবাদিক এই সময়ে কাজ করেছেন। বার্তা বিভাগে সৈয়দ নুরুদ্দীন, আসাফউদ্দৌলা রেজা, নূরুল ইসলাম পাটোয়ারী, এহতেশাম হায়দার চৌধুরী, এম আর আখতার মুকুল, খন্দকার আবু তালেব প্রমুখের নাম এখানে অনায়াসেই আসতে পারে। সম্পাদকীয় বিভাগে রণেশ দাশগুপ্ত, সত্যেন সেন, শহীদুল্লা কায়সার, আহমেদুর রহমান, মোজাম্মেল হক, সন্তোষ গুপ্ত, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী প্রমুখের নামও আসবে। আসবে কাজী মোহাম্মদ ইদ্রিসের নাম। তাঁরা ছাড়া আরও অনেক কীর্তিমান সাংবাদিক সে সময় পত্রিকা অফিসগুলোকে আন্দোলনের সূতিকাগারে পরিণত করেছিলেন।
ভাষা আন্দোলনের পর যখন এ দেশে সাংবাদিকতা একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে ওঠে, পূর্ব বাংলার মানুষ যখন বুঝতে শুরু করে পশ্চিম পাকিস্তানিরা এই ভূখণ্ডকে তাদের শোষণ-ভূমি হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে, তখন অন্য রকম একটি সময় এসে হাজির হয়। বাংলার মানুষ তখন তার সংস্কৃতি, তার ভাষা, তার অতীত ঐতিহ্য ইত্যাদির দিকে চোখ ফেরায় এবং এ কাজে রাজনীতি, সংস্কৃতির পাশাপাশি সংবাদপত্র হয়ে ওঠে আন্দোলনের হাতিয়ার।
এরও যে পটভূমি, তা ব্যাখ্যা না করলে একালের পাঠকের কাছে সময়টি ধোঁয়াটে হয়ে থাকবে। পঞ্চাশ দশকের শেষে ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান ক্ষমতায় এসেছেন। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রনাথের জন্মশতবার্ষিকী পালন নিয়ে টগবগ করে ফুটছে বাঙালির রক্ত, বাষট্টি সালে শিক্ষানীতি বিষয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে আইয়ুব খানকে বুঝিয়ে দিয়েছেন, স্বৈরাচারী রাষ্ট্রক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ জানানোর ক্ষমতা তাঁদের আছে। এই পটভূমিতে তৎকালীন সাংবাদিকতা বিকশিত হয়েছে। ফলে চৌষট্টির দাঙ্গা যখন বাধানো হলো, তখন পূর্ব বাংলায় নির্বিচারে হিন্দু নিধন শুরু করেছিল ইসলামি জোশে বলীয়ান মুসলমানরা। শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ রুখে দাঁড়িয়েছিল এবং সে দাঙ্গাকে প্রতিহত করার জন্য যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, তা ছিল এ দেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে এক বলিষ্ঠ সংযোজন।
তৎকালীন সাংবাদিকতার দুটো উদাহরণ দিয়ে বলতে চাইব, জনগণের সঙ্গে রাজনীতি, সংস্কৃতি ও সাংবাদিকতার এ রকম অপূর্ব মিলন ঘটানোর জন্য যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁদের অন্যতম ছিলেন তোয়াব খান। ঘটনা দুটোর একটি ১৯৬১ সালের, অন্যটি ১৯৬৪ সালের।
রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন নিয়ে ১৯৬১ সালে পত্রপত্রিকায় যে দ্বৈরথ চলে, সেটা নিয়েই আমাদের প্রথম আলোচনা। সে বছর এপ্রিল মাসে আজাদ পত্রিকায় ‘রবীন্দ্রনাথ ও মওলানা আজাদ’ নামে একটি সম্পাদকীয় ছাপা হয়। তাতে রবীন্দ্রনাথ ও মওলানা আজাদের সমালোচনা করা হয়। সে প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথের বিষয়ে বলা হয়, ‘রবীন্দ্রনাথের দোহাই পাড়িয়া অখণ্ড বাংলার আড়ালে আমাদের তামদ্দুনিক
জীবনের বিপদ ডাকিয়া আনার সুযোগ দেওয়া চলিবে না।’
এরপর এ প্রসঙ্গে প্রতিবাদী হয়ে ওঠে ইত্তেফাক এবং সংবাদ। বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে এই বিতর্ক একটি ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে। সে সময় সিরাজুদ্দীন হোসেন ইত্তেফাকে এবং তোয়াব খান সংবাদে চাকরি করতেন। অতিগুরুত্বের সঙ্গে তাঁরা ইত্তেফাক ও সংবাদে রবীন্দ্রনাথের সমর্থনে প্রচারণা চালিয়ে যান। আজাদ নিয়েছিল রবীন্দ্রবিরোধী ভূমিকা। খবরের পাতা আর সম্পাদকীয় পাতা মিলে যে অনবদ্য কাজগুলো হয়েছিল, তার কিছুটা প্রশংসা পেতেই পারেন তোয়াব খান। সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মীদের যুগল পদচারণে সেবার
মোট এগারো দিন ধরে ঢাকায় পালিত হয়েছিল রবীন্দ্র উৎসব।
দ্বিতীয় ঘটনাটি ১৯৬৪ সালের। ১৯৬৩ সালের ২৭ ডিসেম্বর ভারতের শ্রীনগরের হজরতবাল দরগাহ শরিফে সংরক্ষিত হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মাথার চুল চুরি হয়ে যায়। এর প্রতিবাদে ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। আব্দুল হাই নামে এক লোক, যিনি ইসলামিক বোর্ডের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য, পূর্ব পাকিস্তানের সব হিন্দু এবং অমুসলিমদের বিরুদ্ধে জিহাদের ডাক দেন। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান বলেন, হজরতবাল ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের মুসলিমরা কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখালে তার কোনো দায় নেই।
ফলে পূর্ব পাকিস্তান হয়ে উঠল দাঙ্গার আদর্শ ক্ষেত্র। মোনায়েম খান আর সবুর খান ছিলেন এই দাঙ্গা বাধানোর নাটের গুরু। পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল মানুষ রুখে দাঁড়ালেন। ইত্তেফাক, সংবাদ, আজাদ এবং অবজারভার পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় ১৯৬৪ সালের ১৬ জানুয়ারি অভিন্ন সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়, যার শিরোনাম ছিল ‘পূর্ব পাকিস্তান রুখিয়া দাঁড়াও’। এই সম্পাদকীয় খসড়া তৈরি করেছিলেন সিরাজুদ্দীন হোসেন। এরপর তা চার পত্রিকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সে সময় সংবাদের বার্তা সম্পাদক ছিলেন তোয়াব খান।
অবজারভারের বার্তা সম্পাদক ছিলেন সম্ভবত এবিএম মূসা। আজাদের বার্তা সম্পাদক কে ছিলেন, তা স্মরণে আসছে না। তবে ওই দিন চারটি পত্রিকাতেই প্রথম পাতায় এই সম্পাদকীয় ছাপা হলে দাঙ্গার লেলিহান শিখা স্তিমিত হয়েছিল। সেই কালের কথা যত জানানো যাবে, ততই তা হবে ভবিষ্যৎ সাংবাদিকতার জন্য দামি। যাঁরা জানেন, তাঁরা লিখলে ভালো হয়।
২. এবার ব্যক্তিগত ঋণের বিষয়ে দুটো কথা। ১৯৯৬ সালে পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরেছি। লেখালেখির অভ্যাস আছে। দৈনিক সংবাদে কয়েকটি উপসম্পাদকীয় প্রকাশ পেয়েছে। এ রকম সময় আমার মেজো ভাই শাহীন রেজা নূর আমাকে নিয়ে গেলেন তোয়াব কাকার কাছে। তিনি তখন দৈনিক জনকণ্ঠের উপদেষ্টা সম্পাদক। মতিঝিলে অফিস।
আমার পড়াশোনার বিষয়, লেখালেখির ধরন বিষয়ে সব শুনে তিনি বললেন, ‘রুশ ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে পড়েছ। তুমি ওই ভাষা আর সাহিত্য থেকেই জীবনের পথ বেছে নিতে পারবে। ওদের ভাষা আর সাহিত্য দুটোই খুব ধনী। লেগে থাকো। দেখবে এই পড়াশোনাই তোমাকে পথ দেখাবে।’ তিনি চতুরঙ্গ পাতায় ধারাবাহিকভাবে আমার ‘আজকের রাশিয়া’ সিরিজটি ছেপেছিলেন। চেখভ ও ম্যাক্সিম গোর্কির কথোপকথন ছেপেছিলেন।
এখন বুঝি, এ বিষয়ে কতটা দূরদৃষ্টি ছিল তাঁর। এখনো কোনো গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় রুশ পত্রিকা, ভাষা এবং সাহিত্য আমার প্রধান অবলম্বন।সিরাজুদ্দীন হোসেনের লেখা ‘মঞ্চে নেপথ্যে’ বই প্রকাশনা উৎসবে তিনি সেকালের সাংবাদিকতা নিয়ে যে কথাগুলো বলেছিলেন, সেটাও ছিল গুরুত্বপূর্ণ। সর্বশেষ গত বছর আমি আর আজকের পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক সেলিম খান তাঁর কাছে গিয়েছিলাম ১৫ আগস্ট বিষয়ে শুনতে। সেটাই তাঁর সঙ্গে শেষ দেখা। খুবই আদর করেছিলেন তিনি। তাঁর সেই মুখাবয়বটিই এখন ভাসছে আমার চোখে।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
জাহীদ রেজা নূর

সাংবাদিকতার স্বর্ণযুগের শেষ ডাকসাইটে প্রতিনিধি তোয়াব খান চলে গেলেন। তাঁর মৃত্যুর মাঝ দিয়ে সমাপ্তি ঘটল বর্ণাঢ্য একটি ইতিহাসের। স্বাধিকার আন্দোলনের সময়, বিশেষ করে গত শতাব্দীর পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে রাজনীতি ও সাংবাদিকতা যখন পরস্পর হাত ধরাধরি করে চলেছে, তখন সাংবাদিকদের মূল্য ছিল, রাজনীতিবিদদের মধ্যে আদর্শ ছিল। লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য রাজনীতিক এবং সাংবাদিক একজোট হয়ে পথ পাড়ি দিয়েছেন। সেই পথের একজন উল্লেখযোগ্য প্রতিনিধি ছিলেন তোয়াব খান।
আমাদের সাংবাদিকতার ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে মওলানা আকরম খাঁদের যুগের পর আমরা তিনজন সম্পাদককে পেয়েছিলাম, যাঁরা সব দিক থেকেই সাংবাদিকতাকে বসিয়েছিলেন সমাজের উচ্চাসনে। তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, জহুর হোসেন চৌধুরী এবং আবদুস সালাম—সেই তিনটি নাম। সে সময় বা তারও আগে থেকে এই পেশায় এসে যুক্ত হচ্ছিলেন তীক্ষ্ণ মেধাবী তরুণেরা।
পাকিস্তান সৃষ্টির আগে ১৯৩৬ সাল থেকে দৈনিক আজাদ পত্রিকাটি প্রকাশিত হতো কলকাতা থেকে। সম্পাদক ছিলেন আকরম খাঁ, বার্তা সম্পাদক ছিলেন মোহাম্মদ মোদাব্বের। দেশভাগের পর দৈনিক আজাদ চলে আসে পূর্ব বাংলার ঢাকায়। সেটা ১৯৪৮ সালের ১৯ অক্টোবর। দৈনিক ইত্তেহাদ তখনো প্রকাশ হতো কলকাতা থেকে। দৈনিক আজাদ মুসলিম লীগের মুখপত্র হলেও লীগ নেতৃত্বের দ্বন্দ্বের কারণে ভাষা আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারীদের পক্ষ নিয়েছিল। এ সময় দৈনিক আজাদের বার্তা সম্পাদক ছিলেন সিরাজুদ্দীন হোসেন। ভাষা আন্দোলনের খবর ছাপানোর ব্যাপারে তিনি মওলানা আকরম খাঁর কাছ থেকে কোনো বাধার সম্মুখীন হননি।
ভাষা আন্দোলনের সময় গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকাগুলোর মধ্যে ছিল আজাদ, মর্নিং নিউজ, অবজারভার, সংবাদ। সাপ্তাহিকগুলোর মধ্যে ছিল সৈনিক ও ইত্তেফাক। সিলেট থেকে প্রকাশিত নওবেলাল পত্রিকায়ও ভাষা আন্দোলন হয়ে উঠেছিল গুরুত্বপূর্ণ। ভাষা আন্দোলনের খবর প্রকাশে ‘সংবাদ’ আর ‘মর্নিং নিউজ’-এর ভূমিকা সন্তোষজনক ছিল না।
পরবর্তীকালে, মূলত ষাটের দশকে পূর্ব পাকিস্তানে যখন সাংবাদিকতা পেশাটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, তখন সংবাদপত্রের বার্তা বিভাগে যাঁরা পূর্ণ কর্তৃত্ব নিয়ে শাসন করেছেন, তাঁদের মধ্যে সিরাজুদ্দীন হোসেন, কে জি মুস্তাফা, এবিএম মূসা এবং তোয়াব খানের কথা অগ্রগণ্য। সিরাজুদ্দীন হোসেন সাংবাদিকতায় এসেছেন ভারতভাগের আগে। আজাদ পত্রিকায় তিনি কাজ করতেন। সেকালেই কে জি মুস্তাফা আজাদে কাজ করে সাংবাদিকতা শুরু করেছেন। এবিএম মূসা সাংবাদিকতায় এসেছেন দৈনিক ইনসাফের মাধ্যমে, ১৯৫০ সালে। এরপর পাকিস্তান অবজারভারে কেটেছে তাঁর সাংবাদিকতার সেরা সময়টা। আর তোয়াব খান সাংবাদিকতায় আসেন দৈনিক জনতার মাধ্যমে, ১৯৫৩ সালে। দৈনিক পাকিস্তানে যোগ দেওয়ার আগে ১৯৬১ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত তিনি দৈনিক সংবাদের বার্তা সম্পাদক ছিলেন।
এই ইতিহাস টেনে আনার ব্যাপারে একটা ছোট কৈফিয়ত দিতে চাই। সিরাজুদ্দীন হোসেনের পুত্র হিসেবে শৈশব থেকেই সাংবাদিকতা ও তাঁর সঙ্গে যুক্ত মানুষদের সঙ্গে আমাদের চেনা-জানা-পরিচিতি গড়ে উঠেছিল। যে চারজন বার্তা সম্পাদকের কথা এখানে বললাম, তাঁরা ছাড়াও অনেক প্রতিভাবান সাংবাদিক এই সময়ে কাজ করেছেন। বার্তা বিভাগে সৈয়দ নুরুদ্দীন, আসাফউদ্দৌলা রেজা, নূরুল ইসলাম পাটোয়ারী, এহতেশাম হায়দার চৌধুরী, এম আর আখতার মুকুল, খন্দকার আবু তালেব প্রমুখের নাম এখানে অনায়াসেই আসতে পারে। সম্পাদকীয় বিভাগে রণেশ দাশগুপ্ত, সত্যেন সেন, শহীদুল্লা কায়সার, আহমেদুর রহমান, মোজাম্মেল হক, সন্তোষ গুপ্ত, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী প্রমুখের নামও আসবে। আসবে কাজী মোহাম্মদ ইদ্রিসের নাম। তাঁরা ছাড়া আরও অনেক কীর্তিমান সাংবাদিক সে সময় পত্রিকা অফিসগুলোকে আন্দোলনের সূতিকাগারে পরিণত করেছিলেন।
ভাষা আন্দোলনের পর যখন এ দেশে সাংবাদিকতা একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে ওঠে, পূর্ব বাংলার মানুষ যখন বুঝতে শুরু করে পশ্চিম পাকিস্তানিরা এই ভূখণ্ডকে তাদের শোষণ-ভূমি হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে, তখন অন্য রকম একটি সময় এসে হাজির হয়। বাংলার মানুষ তখন তার সংস্কৃতি, তার ভাষা, তার অতীত ঐতিহ্য ইত্যাদির দিকে চোখ ফেরায় এবং এ কাজে রাজনীতি, সংস্কৃতির পাশাপাশি সংবাদপত্র হয়ে ওঠে আন্দোলনের হাতিয়ার।
এরও যে পটভূমি, তা ব্যাখ্যা না করলে একালের পাঠকের কাছে সময়টি ধোঁয়াটে হয়ে থাকবে। পঞ্চাশ দশকের শেষে ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান ক্ষমতায় এসেছেন। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রনাথের জন্মশতবার্ষিকী পালন নিয়ে টগবগ করে ফুটছে বাঙালির রক্ত, বাষট্টি সালে শিক্ষানীতি বিষয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে আইয়ুব খানকে বুঝিয়ে দিয়েছেন, স্বৈরাচারী রাষ্ট্রক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ জানানোর ক্ষমতা তাঁদের আছে। এই পটভূমিতে তৎকালীন সাংবাদিকতা বিকশিত হয়েছে। ফলে চৌষট্টির দাঙ্গা যখন বাধানো হলো, তখন পূর্ব বাংলায় নির্বিচারে হিন্দু নিধন শুরু করেছিল ইসলামি জোশে বলীয়ান মুসলমানরা। শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ রুখে দাঁড়িয়েছিল এবং সে দাঙ্গাকে প্রতিহত করার জন্য যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, তা ছিল এ দেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে এক বলিষ্ঠ সংযোজন।
তৎকালীন সাংবাদিকতার দুটো উদাহরণ দিয়ে বলতে চাইব, জনগণের সঙ্গে রাজনীতি, সংস্কৃতি ও সাংবাদিকতার এ রকম অপূর্ব মিলন ঘটানোর জন্য যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁদের অন্যতম ছিলেন তোয়াব খান। ঘটনা দুটোর একটি ১৯৬১ সালের, অন্যটি ১৯৬৪ সালের।
রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন নিয়ে ১৯৬১ সালে পত্রপত্রিকায় যে দ্বৈরথ চলে, সেটা নিয়েই আমাদের প্রথম আলোচনা। সে বছর এপ্রিল মাসে আজাদ পত্রিকায় ‘রবীন্দ্রনাথ ও মওলানা আজাদ’ নামে একটি সম্পাদকীয় ছাপা হয়। তাতে রবীন্দ্রনাথ ও মওলানা আজাদের সমালোচনা করা হয়। সে প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথের বিষয়ে বলা হয়, ‘রবীন্দ্রনাথের দোহাই পাড়িয়া অখণ্ড বাংলার আড়ালে আমাদের তামদ্দুনিক
জীবনের বিপদ ডাকিয়া আনার সুযোগ দেওয়া চলিবে না।’
এরপর এ প্রসঙ্গে প্রতিবাদী হয়ে ওঠে ইত্তেফাক এবং সংবাদ। বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে এই বিতর্ক একটি ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে। সে সময় সিরাজুদ্দীন হোসেন ইত্তেফাকে এবং তোয়াব খান সংবাদে চাকরি করতেন। অতিগুরুত্বের সঙ্গে তাঁরা ইত্তেফাক ও সংবাদে রবীন্দ্রনাথের সমর্থনে প্রচারণা চালিয়ে যান। আজাদ নিয়েছিল রবীন্দ্রবিরোধী ভূমিকা। খবরের পাতা আর সম্পাদকীয় পাতা মিলে যে অনবদ্য কাজগুলো হয়েছিল, তার কিছুটা প্রশংসা পেতেই পারেন তোয়াব খান। সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মীদের যুগল পদচারণে সেবার
মোট এগারো দিন ধরে ঢাকায় পালিত হয়েছিল রবীন্দ্র উৎসব।
দ্বিতীয় ঘটনাটি ১৯৬৪ সালের। ১৯৬৩ সালের ২৭ ডিসেম্বর ভারতের শ্রীনগরের হজরতবাল দরগাহ শরিফে সংরক্ষিত হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মাথার চুল চুরি হয়ে যায়। এর প্রতিবাদে ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। আব্দুল হাই নামে এক লোক, যিনি ইসলামিক বোর্ডের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য, পূর্ব পাকিস্তানের সব হিন্দু এবং অমুসলিমদের বিরুদ্ধে জিহাদের ডাক দেন। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান বলেন, হজরতবাল ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের মুসলিমরা কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখালে তার কোনো দায় নেই।
ফলে পূর্ব পাকিস্তান হয়ে উঠল দাঙ্গার আদর্শ ক্ষেত্র। মোনায়েম খান আর সবুর খান ছিলেন এই দাঙ্গা বাধানোর নাটের গুরু। পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল মানুষ রুখে দাঁড়ালেন। ইত্তেফাক, সংবাদ, আজাদ এবং অবজারভার পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় ১৯৬৪ সালের ১৬ জানুয়ারি অভিন্ন সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়, যার শিরোনাম ছিল ‘পূর্ব পাকিস্তান রুখিয়া দাঁড়াও’। এই সম্পাদকীয় খসড়া তৈরি করেছিলেন সিরাজুদ্দীন হোসেন। এরপর তা চার পত্রিকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সে সময় সংবাদের বার্তা সম্পাদক ছিলেন তোয়াব খান।
অবজারভারের বার্তা সম্পাদক ছিলেন সম্ভবত এবিএম মূসা। আজাদের বার্তা সম্পাদক কে ছিলেন, তা স্মরণে আসছে না। তবে ওই দিন চারটি পত্রিকাতেই প্রথম পাতায় এই সম্পাদকীয় ছাপা হলে দাঙ্গার লেলিহান শিখা স্তিমিত হয়েছিল। সেই কালের কথা যত জানানো যাবে, ততই তা হবে ভবিষ্যৎ সাংবাদিকতার জন্য দামি। যাঁরা জানেন, তাঁরা লিখলে ভালো হয়।
২. এবার ব্যক্তিগত ঋণের বিষয়ে দুটো কথা। ১৯৯৬ সালে পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরেছি। লেখালেখির অভ্যাস আছে। দৈনিক সংবাদে কয়েকটি উপসম্পাদকীয় প্রকাশ পেয়েছে। এ রকম সময় আমার মেজো ভাই শাহীন রেজা নূর আমাকে নিয়ে গেলেন তোয়াব কাকার কাছে। তিনি তখন দৈনিক জনকণ্ঠের উপদেষ্টা সম্পাদক। মতিঝিলে অফিস।
আমার পড়াশোনার বিষয়, লেখালেখির ধরন বিষয়ে সব শুনে তিনি বললেন, ‘রুশ ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে পড়েছ। তুমি ওই ভাষা আর সাহিত্য থেকেই জীবনের পথ বেছে নিতে পারবে। ওদের ভাষা আর সাহিত্য দুটোই খুব ধনী। লেগে থাকো। দেখবে এই পড়াশোনাই তোমাকে পথ দেখাবে।’ তিনি চতুরঙ্গ পাতায় ধারাবাহিকভাবে আমার ‘আজকের রাশিয়া’ সিরিজটি ছেপেছিলেন। চেখভ ও ম্যাক্সিম গোর্কির কথোপকথন ছেপেছিলেন।
এখন বুঝি, এ বিষয়ে কতটা দূরদৃষ্টি ছিল তাঁর। এখনো কোনো গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় রুশ পত্রিকা, ভাষা এবং সাহিত্য আমার প্রধান অবলম্বন।সিরাজুদ্দীন হোসেনের লেখা ‘মঞ্চে নেপথ্যে’ বই প্রকাশনা উৎসবে তিনি সেকালের সাংবাদিকতা নিয়ে যে কথাগুলো বলেছিলেন, সেটাও ছিল গুরুত্বপূর্ণ। সর্বশেষ গত বছর আমি আর আজকের পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক সেলিম খান তাঁর কাছে গিয়েছিলাম ১৫ আগস্ট বিষয়ে শুনতে। সেটাই তাঁর সঙ্গে শেষ দেখা। খুবই আদর করেছিলেন তিনি। তাঁর সেই মুখাবয়বটিই এখন ভাসছে আমার চোখে।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

সাংবাদিকতার স্বর্ণযুগের শেষ ডাকসাইটে প্রতিনিধি তোয়াব খান চলে গেলেন। তাঁর মৃত্যুর মাঝ দিয়ে সমাপ্তি ঘটল বর্ণাঢ্য একটি ইতিহাসের। স্বাধিকার আন্দোলনের সময়, বিশেষ করে গত শতাব্দীর পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে রাজনীতি ও সাংবাদিকতা যখন পরস্পর হাত ধরাধরি করে চলেছে, তখন সাংবাদিকদের মূল্য ছিল, রাজনীতিবিদদের মধ্যে আদর্শ ছিল। লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য রাজনীতিক এবং সাংবাদিক একজোট হয়ে পথ পাড়ি দিয়েছেন। সেই পথের একজন উল্লেখযোগ্য প্রতিনিধি ছিলেন তোয়াব খান।
আমাদের সাংবাদিকতার ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে মওলানা আকরম খাঁদের যুগের পর আমরা তিনজন সম্পাদককে পেয়েছিলাম, যাঁরা সব দিক থেকেই সাংবাদিকতাকে বসিয়েছিলেন সমাজের উচ্চাসনে। তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, জহুর হোসেন চৌধুরী এবং আবদুস সালাম—সেই তিনটি নাম। সে সময় বা তারও আগে থেকে এই পেশায় এসে যুক্ত হচ্ছিলেন তীক্ষ্ণ মেধাবী তরুণেরা।
পাকিস্তান সৃষ্টির আগে ১৯৩৬ সাল থেকে দৈনিক আজাদ পত্রিকাটি প্রকাশিত হতো কলকাতা থেকে। সম্পাদক ছিলেন আকরম খাঁ, বার্তা সম্পাদক ছিলেন মোহাম্মদ মোদাব্বের। দেশভাগের পর দৈনিক আজাদ চলে আসে পূর্ব বাংলার ঢাকায়। সেটা ১৯৪৮ সালের ১৯ অক্টোবর। দৈনিক ইত্তেহাদ তখনো প্রকাশ হতো কলকাতা থেকে। দৈনিক আজাদ মুসলিম লীগের মুখপত্র হলেও লীগ নেতৃত্বের দ্বন্দ্বের কারণে ভাষা আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারীদের পক্ষ নিয়েছিল। এ সময় দৈনিক আজাদের বার্তা সম্পাদক ছিলেন সিরাজুদ্দীন হোসেন। ভাষা আন্দোলনের খবর ছাপানোর ব্যাপারে তিনি মওলানা আকরম খাঁর কাছ থেকে কোনো বাধার সম্মুখীন হননি।
ভাষা আন্দোলনের সময় গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকাগুলোর মধ্যে ছিল আজাদ, মর্নিং নিউজ, অবজারভার, সংবাদ। সাপ্তাহিকগুলোর মধ্যে ছিল সৈনিক ও ইত্তেফাক। সিলেট থেকে প্রকাশিত নওবেলাল পত্রিকায়ও ভাষা আন্দোলন হয়ে উঠেছিল গুরুত্বপূর্ণ। ভাষা আন্দোলনের খবর প্রকাশে ‘সংবাদ’ আর ‘মর্নিং নিউজ’-এর ভূমিকা সন্তোষজনক ছিল না।
পরবর্তীকালে, মূলত ষাটের দশকে পূর্ব পাকিস্তানে যখন সাংবাদিকতা পেশাটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, তখন সংবাদপত্রের বার্তা বিভাগে যাঁরা পূর্ণ কর্তৃত্ব নিয়ে শাসন করেছেন, তাঁদের মধ্যে সিরাজুদ্দীন হোসেন, কে জি মুস্তাফা, এবিএম মূসা এবং তোয়াব খানের কথা অগ্রগণ্য। সিরাজুদ্দীন হোসেন সাংবাদিকতায় এসেছেন ভারতভাগের আগে। আজাদ পত্রিকায় তিনি কাজ করতেন। সেকালেই কে জি মুস্তাফা আজাদে কাজ করে সাংবাদিকতা শুরু করেছেন। এবিএম মূসা সাংবাদিকতায় এসেছেন দৈনিক ইনসাফের মাধ্যমে, ১৯৫০ সালে। এরপর পাকিস্তান অবজারভারে কেটেছে তাঁর সাংবাদিকতার সেরা সময়টা। আর তোয়াব খান সাংবাদিকতায় আসেন দৈনিক জনতার মাধ্যমে, ১৯৫৩ সালে। দৈনিক পাকিস্তানে যোগ দেওয়ার আগে ১৯৬১ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত তিনি দৈনিক সংবাদের বার্তা সম্পাদক ছিলেন।
এই ইতিহাস টেনে আনার ব্যাপারে একটা ছোট কৈফিয়ত দিতে চাই। সিরাজুদ্দীন হোসেনের পুত্র হিসেবে শৈশব থেকেই সাংবাদিকতা ও তাঁর সঙ্গে যুক্ত মানুষদের সঙ্গে আমাদের চেনা-জানা-পরিচিতি গড়ে উঠেছিল। যে চারজন বার্তা সম্পাদকের কথা এখানে বললাম, তাঁরা ছাড়াও অনেক প্রতিভাবান সাংবাদিক এই সময়ে কাজ করেছেন। বার্তা বিভাগে সৈয়দ নুরুদ্দীন, আসাফউদ্দৌলা রেজা, নূরুল ইসলাম পাটোয়ারী, এহতেশাম হায়দার চৌধুরী, এম আর আখতার মুকুল, খন্দকার আবু তালেব প্রমুখের নাম এখানে অনায়াসেই আসতে পারে। সম্পাদকীয় বিভাগে রণেশ দাশগুপ্ত, সত্যেন সেন, শহীদুল্লা কায়সার, আহমেদুর রহমান, মোজাম্মেল হক, সন্তোষ গুপ্ত, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী প্রমুখের নামও আসবে। আসবে কাজী মোহাম্মদ ইদ্রিসের নাম। তাঁরা ছাড়া আরও অনেক কীর্তিমান সাংবাদিক সে সময় পত্রিকা অফিসগুলোকে আন্দোলনের সূতিকাগারে পরিণত করেছিলেন।
ভাষা আন্দোলনের পর যখন এ দেশে সাংবাদিকতা একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে ওঠে, পূর্ব বাংলার মানুষ যখন বুঝতে শুরু করে পশ্চিম পাকিস্তানিরা এই ভূখণ্ডকে তাদের শোষণ-ভূমি হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে, তখন অন্য রকম একটি সময় এসে হাজির হয়। বাংলার মানুষ তখন তার সংস্কৃতি, তার ভাষা, তার অতীত ঐতিহ্য ইত্যাদির দিকে চোখ ফেরায় এবং এ কাজে রাজনীতি, সংস্কৃতির পাশাপাশি সংবাদপত্র হয়ে ওঠে আন্দোলনের হাতিয়ার।
এরও যে পটভূমি, তা ব্যাখ্যা না করলে একালের পাঠকের কাছে সময়টি ধোঁয়াটে হয়ে থাকবে। পঞ্চাশ দশকের শেষে ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান ক্ষমতায় এসেছেন। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রনাথের জন্মশতবার্ষিকী পালন নিয়ে টগবগ করে ফুটছে বাঙালির রক্ত, বাষট্টি সালে শিক্ষানীতি বিষয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে আইয়ুব খানকে বুঝিয়ে দিয়েছেন, স্বৈরাচারী রাষ্ট্রক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ জানানোর ক্ষমতা তাঁদের আছে। এই পটভূমিতে তৎকালীন সাংবাদিকতা বিকশিত হয়েছে। ফলে চৌষট্টির দাঙ্গা যখন বাধানো হলো, তখন পূর্ব বাংলায় নির্বিচারে হিন্দু নিধন শুরু করেছিল ইসলামি জোশে বলীয়ান মুসলমানরা। শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ রুখে দাঁড়িয়েছিল এবং সে দাঙ্গাকে প্রতিহত করার জন্য যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, তা ছিল এ দেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে এক বলিষ্ঠ সংযোজন।
তৎকালীন সাংবাদিকতার দুটো উদাহরণ দিয়ে বলতে চাইব, জনগণের সঙ্গে রাজনীতি, সংস্কৃতি ও সাংবাদিকতার এ রকম অপূর্ব মিলন ঘটানোর জন্য যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁদের অন্যতম ছিলেন তোয়াব খান। ঘটনা দুটোর একটি ১৯৬১ সালের, অন্যটি ১৯৬৪ সালের।
রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন নিয়ে ১৯৬১ সালে পত্রপত্রিকায় যে দ্বৈরথ চলে, সেটা নিয়েই আমাদের প্রথম আলোচনা। সে বছর এপ্রিল মাসে আজাদ পত্রিকায় ‘রবীন্দ্রনাথ ও মওলানা আজাদ’ নামে একটি সম্পাদকীয় ছাপা হয়। তাতে রবীন্দ্রনাথ ও মওলানা আজাদের সমালোচনা করা হয়। সে প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথের বিষয়ে বলা হয়, ‘রবীন্দ্রনাথের দোহাই পাড়িয়া অখণ্ড বাংলার আড়ালে আমাদের তামদ্দুনিক
জীবনের বিপদ ডাকিয়া আনার সুযোগ দেওয়া চলিবে না।’
এরপর এ প্রসঙ্গে প্রতিবাদী হয়ে ওঠে ইত্তেফাক এবং সংবাদ। বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে এই বিতর্ক একটি ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে। সে সময় সিরাজুদ্দীন হোসেন ইত্তেফাকে এবং তোয়াব খান সংবাদে চাকরি করতেন। অতিগুরুত্বের সঙ্গে তাঁরা ইত্তেফাক ও সংবাদে রবীন্দ্রনাথের সমর্থনে প্রচারণা চালিয়ে যান। আজাদ নিয়েছিল রবীন্দ্রবিরোধী ভূমিকা। খবরের পাতা আর সম্পাদকীয় পাতা মিলে যে অনবদ্য কাজগুলো হয়েছিল, তার কিছুটা প্রশংসা পেতেই পারেন তোয়াব খান। সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মীদের যুগল পদচারণে সেবার
মোট এগারো দিন ধরে ঢাকায় পালিত হয়েছিল রবীন্দ্র উৎসব।
দ্বিতীয় ঘটনাটি ১৯৬৪ সালের। ১৯৬৩ সালের ২৭ ডিসেম্বর ভারতের শ্রীনগরের হজরতবাল দরগাহ শরিফে সংরক্ষিত হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মাথার চুল চুরি হয়ে যায়। এর প্রতিবাদে ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। আব্দুল হাই নামে এক লোক, যিনি ইসলামিক বোর্ডের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য, পূর্ব পাকিস্তানের সব হিন্দু এবং অমুসলিমদের বিরুদ্ধে জিহাদের ডাক দেন। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান বলেন, হজরতবাল ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের মুসলিমরা কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখালে তার কোনো দায় নেই।
ফলে পূর্ব পাকিস্তান হয়ে উঠল দাঙ্গার আদর্শ ক্ষেত্র। মোনায়েম খান আর সবুর খান ছিলেন এই দাঙ্গা বাধানোর নাটের গুরু। পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল মানুষ রুখে দাঁড়ালেন। ইত্তেফাক, সংবাদ, আজাদ এবং অবজারভার পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় ১৯৬৪ সালের ১৬ জানুয়ারি অভিন্ন সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়, যার শিরোনাম ছিল ‘পূর্ব পাকিস্তান রুখিয়া দাঁড়াও’। এই সম্পাদকীয় খসড়া তৈরি করেছিলেন সিরাজুদ্দীন হোসেন। এরপর তা চার পত্রিকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সে সময় সংবাদের বার্তা সম্পাদক ছিলেন তোয়াব খান।
অবজারভারের বার্তা সম্পাদক ছিলেন সম্ভবত এবিএম মূসা। আজাদের বার্তা সম্পাদক কে ছিলেন, তা স্মরণে আসছে না। তবে ওই দিন চারটি পত্রিকাতেই প্রথম পাতায় এই সম্পাদকীয় ছাপা হলে দাঙ্গার লেলিহান শিখা স্তিমিত হয়েছিল। সেই কালের কথা যত জানানো যাবে, ততই তা হবে ভবিষ্যৎ সাংবাদিকতার জন্য দামি। যাঁরা জানেন, তাঁরা লিখলে ভালো হয়।
২. এবার ব্যক্তিগত ঋণের বিষয়ে দুটো কথা। ১৯৯৬ সালে পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরেছি। লেখালেখির অভ্যাস আছে। দৈনিক সংবাদে কয়েকটি উপসম্পাদকীয় প্রকাশ পেয়েছে। এ রকম সময় আমার মেজো ভাই শাহীন রেজা নূর আমাকে নিয়ে গেলেন তোয়াব কাকার কাছে। তিনি তখন দৈনিক জনকণ্ঠের উপদেষ্টা সম্পাদক। মতিঝিলে অফিস।
আমার পড়াশোনার বিষয়, লেখালেখির ধরন বিষয়ে সব শুনে তিনি বললেন, ‘রুশ ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে পড়েছ। তুমি ওই ভাষা আর সাহিত্য থেকেই জীবনের পথ বেছে নিতে পারবে। ওদের ভাষা আর সাহিত্য দুটোই খুব ধনী। লেগে থাকো। দেখবে এই পড়াশোনাই তোমাকে পথ দেখাবে।’ তিনি চতুরঙ্গ পাতায় ধারাবাহিকভাবে আমার ‘আজকের রাশিয়া’ সিরিজটি ছেপেছিলেন। চেখভ ও ম্যাক্সিম গোর্কির কথোপকথন ছেপেছিলেন।
এখন বুঝি, এ বিষয়ে কতটা দূরদৃষ্টি ছিল তাঁর। এখনো কোনো গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় রুশ পত্রিকা, ভাষা এবং সাহিত্য আমার প্রধান অবলম্বন।সিরাজুদ্দীন হোসেনের লেখা ‘মঞ্চে নেপথ্যে’ বই প্রকাশনা উৎসবে তিনি সেকালের সাংবাদিকতা নিয়ে যে কথাগুলো বলেছিলেন, সেটাও ছিল গুরুত্বপূর্ণ। সর্বশেষ গত বছর আমি আর আজকের পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক সেলিম খান তাঁর কাছে গিয়েছিলাম ১৫ আগস্ট বিষয়ে শুনতে। সেটাই তাঁর সঙ্গে শেষ দেখা। খুবই আদর করেছিলেন তিনি। তাঁর সেই মুখাবয়বটিই এখন ভাসছে আমার চোখে।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

সাংবাদিকতার স্বর্ণযুগের শেষ ডাকসাইটে প্রতিনিধি তোয়াব খান চলে গেলেন। তাঁর মৃত্যুর মাঝ দিয়ে সমাপ্তি ঘটল বর্ণাঢ্য একটি ইতিহাসের। স্বাধিকার আন্দোলনের সময়, বিশেষ করে গত শতাব্দীর পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে রাজনীতি ও সাংবাদিকতা যখন পরস্পর হাত ধরাধরি করে চলেছে...
০৩ অক্টোবর ২০২২
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

সাংবাদিকতার স্বর্ণযুগের শেষ ডাকসাইটে প্রতিনিধি তোয়াব খান চলে গেলেন। তাঁর মৃত্যুর মাঝ দিয়ে সমাপ্তি ঘটল বর্ণাঢ্য একটি ইতিহাসের। স্বাধিকার আন্দোলনের সময়, বিশেষ করে গত শতাব্দীর পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে রাজনীতি ও সাংবাদিকতা যখন পরস্পর হাত ধরাধরি করে চলেছে...
০৩ অক্টোবর ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

সাংবাদিকতার স্বর্ণযুগের শেষ ডাকসাইটে প্রতিনিধি তোয়াব খান চলে গেলেন। তাঁর মৃত্যুর মাঝ দিয়ে সমাপ্তি ঘটল বর্ণাঢ্য একটি ইতিহাসের। স্বাধিকার আন্দোলনের সময়, বিশেষ করে গত শতাব্দীর পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে রাজনীতি ও সাংবাদিকতা যখন পরস্পর হাত ধরাধরি করে চলেছে...
০৩ অক্টোবর ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

সাংবাদিকতার স্বর্ণযুগের শেষ ডাকসাইটে প্রতিনিধি তোয়াব খান চলে গেলেন। তাঁর মৃত্যুর মাঝ দিয়ে সমাপ্তি ঘটল বর্ণাঢ্য একটি ইতিহাসের। স্বাধিকার আন্দোলনের সময়, বিশেষ করে গত শতাব্দীর পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে রাজনীতি ও সাংবাদিকতা যখন পরস্পর হাত ধরাধরি করে চলেছে...
০৩ অক্টোবর ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫