Ajker Patrika

পথচারীরাই ‘ট্রাফিক পুলিশ’

আবির হাকিম, নারায়ণগঞ্জ থেকে ফিরে
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২১, ১৮: ২৫
পথচারীরাই ‘ট্রাফিক পুলিশ’

চারপাশ থেকে আসছে বাস-ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন। কোনো পাশেই নেই সিগন্যালের বালাই। রাস্তা পার হতে গেলে পথচারীদেরই হাত তুলে দাঁড় করাতে হয় গাড়ি। বন্দরনগরী নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে ব্যস্ততম চাষাঢ়া মোড়ের চিত্র এটি।

শুধু চাষাঢ়া নয়, ডিআইটি মোড়, সিদ্ধিরগঞ্জ, ২ নম্বর রেলগেটসহ নারায়ণগঞ্জের সব মোড়েই দেখা মেলে একই চিত্র। কয়েকজন পথচারী জানান, সিগন্যালের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকলে সারা দিনেও রাস্তা পার হওয়া যাবে না। তার চেয়ে হাত তুলে রাস্তা পার হওয়াই তাঁদের জন্য সহজ।

সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর প্রত্যেক মোড়েই লেগে আছে দীর্ঘ যানজট। সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণে কোনো মোড়েই দু-একজনের বেশি ট্রাফিক পুলিশ নেই। মোড়গুলোতে ট্রাফিকের কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় জট আরও বাড়ছেই। এ অবস্থায় পথচারীরাও বাধ্য হয়েই সিগন্যাল না মেনে নিজেরা রাস্তা পার হচ্ছেন।

নগরবাসীর অভিযোগ, মাঝেমধ্যে যানজটের কারণে পুরো শহরজুড়েই অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। তখন ট্রাফিক পুলিশেরও দেখা পাওয়া যায় না। যানজটের অন্যতম কারণ অবৈধ স্ট্যান্ড। এগুলোও ট্রাফিক পুলিশের সহযোগিতায় গড়ে উঠছে বলে অভিযোগ তাঁদের।

নগরীর মণ্ডলপাড়া এলাকার বাসিন্দা মুরাদ হাসান বলেন, শুধু উদাসীনতার কারণে শহরের কোনো মোড়েই শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে পারছে না ট্রাফিক পুলিশ। এর চেয়ে তারা অবৈধ স্ট্যান্ড আর রাস্তার ওপর দোকান বসাতেই ব্যস্ত থাকে বেশি।

ট্রাফিক পুলিশ বলছে, পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় অনেক সময় সড়কে অসহায় হয়ে পড়ে তারা। চালকেরা ঠিকমতো সিগন্যাল মানে না। একদিকে সিগন্যাল দিয়ে অন্যদিকে গেলে চালকেরাও সিগন্যাল ছেড়ে গাড়ি চালিয়ে দেন।

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) সালেহ উদ্দিন আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শহরে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য যে পরিমাণ লোকবল দরকার, আমাদের তা নেই। পুরো শহরের জন্য জনবল আছে মাত্র ১০০ জন। এর মধ্যে সবাই তো আর একসঙ্গে ডিউটিতে থাকতে পারে না। এ ছাড়া মোড়গুলোতে কোনো সিগন্যালবাতি না থাকায় শুধু হাত আর লাঠি দিয়েই শত শত গাড়িকে নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে।’

চালকদের স্বেচ্ছাচারিতা প্রসঙ্গে সালেহ উদ্দিন বলেন, ‘সিগন্যাল দিলে যদি চালকেরা না মানেন তাহলে কি করার থাকে। একটা মোড়ে দু-একজন পুলিশ সদস্য শত শত গাড়িকে আটকে রাখতে পারে না।’

অবৈধ স্ট্যান্ডের সঙ্গে ট্রাফিক পুলিশের জড়িত থাকার অভিযোগ সম্পর্কে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘সব সদস্য আসলে এক জায়গায়। আমাদের পর্যাপ্ত জনবলের অভাবে এসব স্ট্যান্ডে সার্বক্ষণিক নজরদারি করা সম্ভব হয় না। ভ্রাম্যমাণ আদালত বা আমাদের অভিযানের সময় স্ট্যান্ডগুলো ফাঁকা হয়ে যায়।’ এ ছাড়া নগরীর রাস্তা ও ফুটপাতজুড়ে গড়ে ওঠা ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলো স্থানীয় অসহায় লোকজন করেন বলে জানান তিনি।

নগরের কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, পৌরসভা থেকে সিটি করপোরেশন হওয়ার পর নগরের ট্রাফিক ব্যবস্থার কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি। এ ছাড়া জনসাধারণের আরও সচেতন হওয়া দরকার বলে মনে করেন তাঁরা।

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ শহরে যানজট আছে। কেননা, এখানে প্রচুর জনসংখ্যা এবং গাড়ির সংখ্যা অনেক। সেই সঙ্গে অনেক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। সাইনবোর্ড থেকে চাষাঢ়া মোড় পর্যন্ত রাস্তাটা ১৪৩ ফুটের মতো চওড়া। অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদে আমরা কাজ করছি।’

ট্রাফিক পুলিশের জনবল সংকট প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘সড়কে শৃঙ্খলার স্বার্থে বিআরটিএর মাধ্যমে কাজ করছে ট্রাফিক পুলিশ ও ভ্রাম্যমাণ আদালত। প্রয়োজনে আমরা আরও জনবল নিয়োগ দেব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে’, চিরকুটে লেখা

বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত আমদানির ঘোষণা দিতেই ভারতে হু হু করে বাড়ছে চালের দাম

ফেসবুকে ছাত্রলীগ নেতার ‘হুমকি’, রাবিতে ১৫ আগস্টের কনসার্টে যাচ্ছে না আর্টসেল

জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে উচ্চপদস্থ বোর্ড গঠন: আইএসপিআর

পাবনায় প্রবাসীর স্ত্রীকে নিয়ে এএসআই উধাও, থানায় শ্বশুরের জিডি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত