অরুণ কর্মকার

আমাদের সুনসান নিস্তরঙ্গ গ্রামীণ জীবনে এক মার্চ এসেছিল ১৯৭১-এ। উন্মাতাল করা উত্তাপ ছিল তার। অনন্য এক বজ্রকণ্ঠের নির্দেশে সে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছিল সাড়ে সাত কোটি মানুষের অন্তরে। অন্তর থেকে বাইরে। জলে-স্থলে-অন্তরিক্ষে। এই মাটির প্রতিটি ধূলিকণায়। তারপর সীমানা পেরিয়ে। দূর থেকে দূরান্তে। দেশ থেকে দেশে। পৃথিবীময়।
সেই মার্চে অমিত তেজদীপ্ত বজ্রকণ্ঠের নির্দেশ ছিল, ‘যার যা আছে তা-ই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে।’ তারপরই অস্ত্র হাতে দলবদ্ধ তরুণেরা ছড়িয়ে পড়তে থাকে। গ্রামে-গঞ্জে-মফস্বল শহরে ঝাঁকে ঝাঁকে। আমাদের গ্রামীণ জীবনেও আবির্ভাব ঘটেছিল তেমনই একঝাঁক তরুণের। হাতে তাঁদের বেয়নেটখচিত থ্রি নট থ্রি রাইফেল। সাব মেশিন গান। কিছু দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র। বিস্ফোরক। আর অন্তরজুড়ে শত্রুকে মোকাবিলা করার প্রত্যয়।
তারা এসেই আমাদের গ্রামীণ বাজারে বন্দরে আড্ডায় খেলার মাঠে ছড়িয়ে পড়ে। ঘুরে ঘুরে ছেলে-বুড়ো সবার সঙ্গে ভাব জমাতে শুরু করে। কিশোর-তরুণদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ, ভাববিনিময় বেশি নিবিড়। ফলে আমরাও সেই ঝাঁকের মধ্যে মিশে যেতে থাকি। কিন্তু তা নিয়ে অভিভাবকদের উদ্বেগ দেখি না; বরং আমাদের বাবা-চাচা-বড় ভাই কিংবা প্রতিবেশী মুরব্বিদের মুখেও শোনা যেতে থাকে যুদ্ধের অনিবার্যতার কথা। ছেলে-বুড়ো সবাইকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে হবে, চতুর্দিকে এমন কথাও চাউর হয়ে যায়। খুব দ্রুতই কিছু পরিবর্তন ঘটে যেতে থাকে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পল্টনে যাওয়ার সুবাদে একটি বন্দুকের বৈধ মালিকানা পেয়েছিলেন আমাদের তুজম্বর আলী মীর। মার্চের উত্তাপ সেই প্রৌঢ়কেও ব্যস্ত করে তোলে অস্ত্রটির খোলনলচে পরিষ্কারের কাজে। তারপর প্রতিদিন সকালে-বিকেলে সেই বন্দুক কাঁধে তাঁর আনাগোনা সবার নজর কাড়ে। তাতে সবাই আরও বেশি সাহসী হয়ে ওঠে। মার্চের উত্তাপ সেই একনলা বন্দুকের সামান্য শক্তিকেও জনমানসে অপরিমেয় করে তোলে।
আমরা হাইস্কুলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা তত দিনে ইংরেজি র্যাপিড রিডারের ‘ওয়াইজ মেন অব দ্য ওল্ড’ পড়া শেষ করেছি। কিন্তু সক্রেটিসের দার্শনিক উক্তি ‘নো দাইসেল্ফ’-এর ঘোর তখনো কাটেনি। ইংরেজির শিক্ষক সুধাংশু বাবু আবার ওই উক্তির সঙ্গে ফকির লালন সাঁই আর রবীন্দ্রনাথকে যুক্ত করে সেই ঘোরকে ঘোরতর করে তোলেন। লালন ফকিরও তো বলেছেন, ‘আপনারে চিনতে পারলে রে, যাবে অচেনারে চেনা...’। একই কথা রবীন্দ্রনাথেরও, ‘আপনারে জানা আমার ফুরাবে না...’। কী আশ্চর্য দার্শনিক যোগসূত্র! প্রাচীন গ্রিস থেকে বাংলার লালন ফকির হয়ে রবীন্দ্রনাথ! ঘোর লাগার কথাই বটে।
কিন্তু সন্ধ্যার মশাল মিছিল সেই ঘোর কাটিয়ে আমাদের নিয়ে যায় ভিন্ন এক জগতে। সেই মিছিলে আমাদের কণ্ঠ উচ্চকিত হয় ‘ইয়াহিয়ার ক্যান্টনমেন্ট জ্বালিয়ে দাও পুড়িয়ে দাও’ স্লোগানে। কিন্তু এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে ক্যান্টনমেন্ট নামক কোনো বস্তুর অস্তিত্ব আছে বলে আমাদের জানা ছিল না। মিছিল শেষে তাই ক্যান্টনমেন্ট বিষয়টি কী, তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা হয়। কিন্তু তাতেও স্পষ্ট কোনো ধারণা মেলে না। তবে সেই মার্চ সদ্য কৈশোরোত্তীর্ণ আমাদের মনের গভীরে যে দৃঢ় প্রত্যয় জন্ম দেয় তাতে ইয়াহিয়ার ক্যান্টনমেন্ট জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে না দেওয়া পর্যন্ত যে থামা যাবে না, তা অনুধাবন করে নিজেরাই বিস্মিত হই।
মার্চের দিনগুলো যতই গড়িয়ে যেতে থাকে, পরিস্থিতির পরিবর্তনও ততই প্রকট হয়ে ওঠে। শহরে থেকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া আমাদের অগ্রজেরা একে একে চলে আসেন গ্রামে। নিয়ে আসেন অনিবার্য যুদ্ধের বার্তা। তাঁদেরও সংঘবদ্ধ হওয়ার জন্য তাড়াহুড়া দেখি। তাতে আমাদের মনে হয় যেন যুদ্ধের মাঠে নামতে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছেন তাঁরা। তবে তাঁদের পথ দেখি ভিন্নতর। সে পথে আসন্ন যুদ্ধে শত্রু শুধু পাকিস্তানিরা। তাদের বিরুদ্ধে সব বাঙালি একপক্ষে ঐক্যবদ্ধ। এটা ঔপনিবেশিক শোষণের বিরুদ্ধে জাতীয় মুক্তির সংগ্রাম। এই পর্বে কোনো শ্রেণিশত্রু নেই।
আমরা তখনো এসব কথার তাৎপর্য বুঝি না। রাজনীতি বোঝার বয়সও আমাদের নয়। তবে শত্রু যে পাকিস্তান, আর তাদের বিরুদ্ধে সব বাঙালি যে এককাট্টা, তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। তা সত্ত্বেও আমাদের কয়েকজনের গাঁটছড়া বাঁধা পড়ে শ্রেণিশত্রু তত্ত্বে বিশ্বাসী সশস্ত্র তরুণ দলের সঙ্গে। সে অনেকটা পরিস্থিতির ফেরেও বটে।
তত দিনে ২৫ মার্চ কালরাতে ঘটনা ঘটে গেছে। পাকিস্তানি হানাদারেরা একের পর এক শহরগুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে। আমাদের চিরচেনা অগ্রজের দল তখন উধাও। কোথাও কাউকে দেখা যাচ্ছে না। খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে না। পরে খবর পাওয়া গেল তাঁরা সব মুক্তিযুদ্ধে গেছেন। শশাঙ্ক পাল, সাত্তার ভাইসহ কয়েকজন দেশের মধ্যেই তাঁদের সমমনা দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। অন্যরা সব ভারতের উদ্দেশে যাত্রা করেছেন। সেখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধে যোগ দেবেন। আমরা তখন কিছুটা অসহায় বোধ করি। মনে মনে আমরা বোধ হয় চাইছিলাম তাঁদের সঙ্গে যেতে।
এরই মধ্যে একদিন আমাদের নিকটতম শহর ঝালকাঠিতে হানা দেয় পাকিস্তানি বাহিনী। প্রথম দিন বেলা শেষে গানবোটে এসে শহরে এলোপাতাড়ি শেল ছুড়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। বার্মা ইস্টার্নের তেলের ডিপোতে শেল ছুড়ে আগুন লাগায়। ভীতসন্ত্রস্ত দিশেহারা শহরবাসী তখন আশপাশের গ্রামাঞ্চলের দিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। অবিরাম লাইন ধরে, হাজার হাজার। শুরু হয় তাঁদের উদ্বাস্তু শরণার্থী জীবন। আমাদের গ্রাম কীর্তিপাশার দিকেও স্রোতের মতো আসতে থাকে মানুষের ঢল। পথে গোবিন্দধবল গ্রামের একদল দুষ্কৃতকারী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাঁদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। জিনিসপত্র লুট করতে শুরু করে।
আমরা তখন গ্রামের বিভিন্ন স্থানে জড়ো হয়ে ঝালকাঠি শহরের লেলিহান অগ্নিশিখা দেখছি। দেখছি গ্রামের প্রান্তে এসে পৌঁছানো শহরবাসী মানুষের ঢল। তাঁদের কাছেই খবর পাওয়া যায় পথে লুটপাটের। আমাদের সশস্ত্র তরুণ দলের কাছেও পৌঁছে যায় সে খবর। সঙ্গে সঙ্গে তারা রওনা দেয় ঘটনাস্থলের দিকে। আমরাও পিছু নিই। ঘটনাস্থলের কাছাকাছি পৌঁছেই তারা গুলি ছুড়তে শুরু করে। আমরা অবাক হয়ে দেখি। সেই আমাদের প্রথম রাইফেলের গুলি ছুড়তে দেখা।
গুলির শব্দে মুহূর্তের মধ্যে পুরো এলাকা স্তব্ধ হয়ে যায়। পরক্ষণেই শরণার্থীর ঢল, লুটেরানির্বিশেষে সবাই রাস্তার পাশের বাড়ি, খেত-খামারের মধ্যে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যেতে থাকে। তখন গুলি থেমে যায়। হ্যান্ড মাইকে ঘোষণা আসে, ‘ভয় নাই। আমরা মুক্তিবাহিনী। আপনাদের সাহায্য করতে এসেছি।’ মুহূর্তেই আমরাও মুক্তিবাহিনীর অংশ হয়ে যাই। চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ে। বুকের বল অসীম, অপরিমেয় বলে মনে হয়।
মাইকের ঘোষণা শুনে শরণার্থীর দল আবার রাস্তায় উঠে আসতে শুরু করে। আর লুটেরার দল কী ভেবে যেন সেই মুক্তিবাহিনীর দলকে চ্যালেঞ্জ জানাতে এগিয়ে আসে ঢাল-সড়কি নিয়ে। মুক্তিবাহিনী তখন আরও কয়েকটি গুলি ছোড়ে এবং ধাওয়া করে সরদারসহ লুটেরাদের কয়েকজনকে ধরে ফেলে। তাদের হাত ও চোখ বেঁধে নিয়ে আসা হয়। সেই বাঁধা অবস্থায়ই শিরশ্ছেদ করার ভঙ্গিতে লুটেরাদের বসানো হয় স্কুলের মাঠে। মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পের সামনে। তখন সন্ধ্যা গড়িয়ে গেছে। আমাদেরও সেখান থেকে চলে যেতে বলা হয়।
পরদিন আমাদের জানানো হয়, আমরা চলে যাওয়ার পর সেখানে আদালত বসিয়ে লুটেরাদের বিচার করা হয়। বিচারে তাদের গণশত্রু হিসেবে অভিযুক্ত করে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার। রাতেই সেই দণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। গলা কেটে হত্যা। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর আমাদের চেনাজানা তখনকার খুব ছোট্ট পরিসরে সেই প্রথম শত্রু নিধন। ওই ঘটনা আমাদের আরও উদ্দীপিত করে। আমরা আরও সাহসী হয়ে উঠি। শত্রুর সঙ্গে আমাদের করণীয় ঠিকঠাক বুঝে নিই।
ওই ঘটনার মধ্য দিয়ে মুক্তিবাহিনী এলাকার সর্বস্তরের মানুষের ভরসাস্থল হয়ে ওঠে। তাদের প্রতি মানুষের সম্মান ভালোবাসা বেড়ে যায়। এলাকায় প্রশান্তির ছায়া নেমে আসে। কিন্তু এর কয়েক দিন পরেই পরিস্থিতির উল্টো যাত্রা শুরু হয়ে যায়। পাকিস্তানি বাহিনী ঝালকাঠিতে স্থায়ী ক্যাম্প বসায়। সেই ক্যাম্পে যোগাযোগ করতে শুরু করে নানা শ্রেণির অপরাধী ও দালালের দল। খবর পেয়ে গোবিন্দধবলের লুটেরাদের কয়েকজনও সেখানে গিয়ে সেদিনের ঘটনা জানায় সরাসরি মেজরের কাছে। কীর্তিপাশা ও এর আশপাশের এলাকায় বিপুলসংখ্যক মুক্তিবাহিনীর শক্ত ঘাঁটি গাড়ার খবরও তারা পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে বিশ্বাসযোগ্যভাবে উপস্থাপন করে। শুরু হয় পাকিস্তানি বাহিনীর কীর্তিপাশা অপারেশনের প্রস্তুতি।
মুক্তিবাহিনীর কাছেও এ খবর চলে আসে। সিদ্ধান্ত হয় কীর্তিপাশার ক্যাম্প তিন কিলোমিটার উত্তরে পেয়ারাবাগান এলাকায় সরিয়ে নেওয়ার। তাৎক্ষণিকভাবে সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয়। আমাদের কয়েকজনকে করণীয় সম্পর্কে কিছু পরামর্শ দিয়ে সশস্ত্র মুক্তিবাহিনীর দল কীর্তিপাশা ছেড়ে উত্তরে যাত্রা করে। আশপাশের আরও কয়েকটি এলাকা থেকেও সশস্ত্র যোদ্ধারা জড়ো হতে থাকে পেয়ারাবাগানে।
প্রাথমিকভাবে তারা পেয়ারাবাগান ঘেরা ভীমরুলী ও শতদশকাঠিতে ক্যাম্প স্থাপন করে। তারপরই পেয়ারবাগানকে ঢাল (হাইড) হিসেবে ব্যবহার করে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধের পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ শুরু করে। আসলে পেয়ারাবাগানকে ঘিরে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর এই দলের যুদ্ধ করার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত আগেই নেওয়া হয়। ওই এলাকায় গিয়ে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কৌশল ও খুঁটিনাটি চূড়ান্ত করা হয়।
শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বহুল আলোচিত পেয়ারাবাগানের যুদ্ধের প্রস্তুতি। তার কেন্দ্রস্থলে ছিল সশস্ত্র মুক্তিবাহিনীর একটি দল। আর তাদের ঘিরে তথ্য ও রসদ সরবরাহের জন্য ছিলাম আমরা অনেকে।
অরুণ কর্মকার, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

আমাদের সুনসান নিস্তরঙ্গ গ্রামীণ জীবনে এক মার্চ এসেছিল ১৯৭১-এ। উন্মাতাল করা উত্তাপ ছিল তার। অনন্য এক বজ্রকণ্ঠের নির্দেশে সে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছিল সাড়ে সাত কোটি মানুষের অন্তরে। অন্তর থেকে বাইরে। জলে-স্থলে-অন্তরিক্ষে। এই মাটির প্রতিটি ধূলিকণায়। তারপর সীমানা পেরিয়ে। দূর থেকে দূরান্তে। দেশ থেকে দেশে। পৃথিবীময়।
সেই মার্চে অমিত তেজদীপ্ত বজ্রকণ্ঠের নির্দেশ ছিল, ‘যার যা আছে তা-ই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে।’ তারপরই অস্ত্র হাতে দলবদ্ধ তরুণেরা ছড়িয়ে পড়তে থাকে। গ্রামে-গঞ্জে-মফস্বল শহরে ঝাঁকে ঝাঁকে। আমাদের গ্রামীণ জীবনেও আবির্ভাব ঘটেছিল তেমনই একঝাঁক তরুণের। হাতে তাঁদের বেয়নেটখচিত থ্রি নট থ্রি রাইফেল। সাব মেশিন গান। কিছু দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র। বিস্ফোরক। আর অন্তরজুড়ে শত্রুকে মোকাবিলা করার প্রত্যয়।
তারা এসেই আমাদের গ্রামীণ বাজারে বন্দরে আড্ডায় খেলার মাঠে ছড়িয়ে পড়ে। ঘুরে ঘুরে ছেলে-বুড়ো সবার সঙ্গে ভাব জমাতে শুরু করে। কিশোর-তরুণদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ, ভাববিনিময় বেশি নিবিড়। ফলে আমরাও সেই ঝাঁকের মধ্যে মিশে যেতে থাকি। কিন্তু তা নিয়ে অভিভাবকদের উদ্বেগ দেখি না; বরং আমাদের বাবা-চাচা-বড় ভাই কিংবা প্রতিবেশী মুরব্বিদের মুখেও শোনা যেতে থাকে যুদ্ধের অনিবার্যতার কথা। ছেলে-বুড়ো সবাইকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে হবে, চতুর্দিকে এমন কথাও চাউর হয়ে যায়। খুব দ্রুতই কিছু পরিবর্তন ঘটে যেতে থাকে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পল্টনে যাওয়ার সুবাদে একটি বন্দুকের বৈধ মালিকানা পেয়েছিলেন আমাদের তুজম্বর আলী মীর। মার্চের উত্তাপ সেই প্রৌঢ়কেও ব্যস্ত করে তোলে অস্ত্রটির খোলনলচে পরিষ্কারের কাজে। তারপর প্রতিদিন সকালে-বিকেলে সেই বন্দুক কাঁধে তাঁর আনাগোনা সবার নজর কাড়ে। তাতে সবাই আরও বেশি সাহসী হয়ে ওঠে। মার্চের উত্তাপ সেই একনলা বন্দুকের সামান্য শক্তিকেও জনমানসে অপরিমেয় করে তোলে।
আমরা হাইস্কুলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা তত দিনে ইংরেজি র্যাপিড রিডারের ‘ওয়াইজ মেন অব দ্য ওল্ড’ পড়া শেষ করেছি। কিন্তু সক্রেটিসের দার্শনিক উক্তি ‘নো দাইসেল্ফ’-এর ঘোর তখনো কাটেনি। ইংরেজির শিক্ষক সুধাংশু বাবু আবার ওই উক্তির সঙ্গে ফকির লালন সাঁই আর রবীন্দ্রনাথকে যুক্ত করে সেই ঘোরকে ঘোরতর করে তোলেন। লালন ফকিরও তো বলেছেন, ‘আপনারে চিনতে পারলে রে, যাবে অচেনারে চেনা...’। একই কথা রবীন্দ্রনাথেরও, ‘আপনারে জানা আমার ফুরাবে না...’। কী আশ্চর্য দার্শনিক যোগসূত্র! প্রাচীন গ্রিস থেকে বাংলার লালন ফকির হয়ে রবীন্দ্রনাথ! ঘোর লাগার কথাই বটে।
কিন্তু সন্ধ্যার মশাল মিছিল সেই ঘোর কাটিয়ে আমাদের নিয়ে যায় ভিন্ন এক জগতে। সেই মিছিলে আমাদের কণ্ঠ উচ্চকিত হয় ‘ইয়াহিয়ার ক্যান্টনমেন্ট জ্বালিয়ে দাও পুড়িয়ে দাও’ স্লোগানে। কিন্তু এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে ক্যান্টনমেন্ট নামক কোনো বস্তুর অস্তিত্ব আছে বলে আমাদের জানা ছিল না। মিছিল শেষে তাই ক্যান্টনমেন্ট বিষয়টি কী, তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা হয়। কিন্তু তাতেও স্পষ্ট কোনো ধারণা মেলে না। তবে সেই মার্চ সদ্য কৈশোরোত্তীর্ণ আমাদের মনের গভীরে যে দৃঢ় প্রত্যয় জন্ম দেয় তাতে ইয়াহিয়ার ক্যান্টনমেন্ট জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে না দেওয়া পর্যন্ত যে থামা যাবে না, তা অনুধাবন করে নিজেরাই বিস্মিত হই।
মার্চের দিনগুলো যতই গড়িয়ে যেতে থাকে, পরিস্থিতির পরিবর্তনও ততই প্রকট হয়ে ওঠে। শহরে থেকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া আমাদের অগ্রজেরা একে একে চলে আসেন গ্রামে। নিয়ে আসেন অনিবার্য যুদ্ধের বার্তা। তাঁদেরও সংঘবদ্ধ হওয়ার জন্য তাড়াহুড়া দেখি। তাতে আমাদের মনে হয় যেন যুদ্ধের মাঠে নামতে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছেন তাঁরা। তবে তাঁদের পথ দেখি ভিন্নতর। সে পথে আসন্ন যুদ্ধে শত্রু শুধু পাকিস্তানিরা। তাদের বিরুদ্ধে সব বাঙালি একপক্ষে ঐক্যবদ্ধ। এটা ঔপনিবেশিক শোষণের বিরুদ্ধে জাতীয় মুক্তির সংগ্রাম। এই পর্বে কোনো শ্রেণিশত্রু নেই।
আমরা তখনো এসব কথার তাৎপর্য বুঝি না। রাজনীতি বোঝার বয়সও আমাদের নয়। তবে শত্রু যে পাকিস্তান, আর তাদের বিরুদ্ধে সব বাঙালি যে এককাট্টা, তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। তা সত্ত্বেও আমাদের কয়েকজনের গাঁটছড়া বাঁধা পড়ে শ্রেণিশত্রু তত্ত্বে বিশ্বাসী সশস্ত্র তরুণ দলের সঙ্গে। সে অনেকটা পরিস্থিতির ফেরেও বটে।
তত দিনে ২৫ মার্চ কালরাতে ঘটনা ঘটে গেছে। পাকিস্তানি হানাদারেরা একের পর এক শহরগুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে। আমাদের চিরচেনা অগ্রজের দল তখন উধাও। কোথাও কাউকে দেখা যাচ্ছে না। খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে না। পরে খবর পাওয়া গেল তাঁরা সব মুক্তিযুদ্ধে গেছেন। শশাঙ্ক পাল, সাত্তার ভাইসহ কয়েকজন দেশের মধ্যেই তাঁদের সমমনা দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। অন্যরা সব ভারতের উদ্দেশে যাত্রা করেছেন। সেখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধে যোগ দেবেন। আমরা তখন কিছুটা অসহায় বোধ করি। মনে মনে আমরা বোধ হয় চাইছিলাম তাঁদের সঙ্গে যেতে।
এরই মধ্যে একদিন আমাদের নিকটতম শহর ঝালকাঠিতে হানা দেয় পাকিস্তানি বাহিনী। প্রথম দিন বেলা শেষে গানবোটে এসে শহরে এলোপাতাড়ি শেল ছুড়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। বার্মা ইস্টার্নের তেলের ডিপোতে শেল ছুড়ে আগুন লাগায়। ভীতসন্ত্রস্ত দিশেহারা শহরবাসী তখন আশপাশের গ্রামাঞ্চলের দিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। অবিরাম লাইন ধরে, হাজার হাজার। শুরু হয় তাঁদের উদ্বাস্তু শরণার্থী জীবন। আমাদের গ্রাম কীর্তিপাশার দিকেও স্রোতের মতো আসতে থাকে মানুষের ঢল। পথে গোবিন্দধবল গ্রামের একদল দুষ্কৃতকারী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাঁদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। জিনিসপত্র লুট করতে শুরু করে।
আমরা তখন গ্রামের বিভিন্ন স্থানে জড়ো হয়ে ঝালকাঠি শহরের লেলিহান অগ্নিশিখা দেখছি। দেখছি গ্রামের প্রান্তে এসে পৌঁছানো শহরবাসী মানুষের ঢল। তাঁদের কাছেই খবর পাওয়া যায় পথে লুটপাটের। আমাদের সশস্ত্র তরুণ দলের কাছেও পৌঁছে যায় সে খবর। সঙ্গে সঙ্গে তারা রওনা দেয় ঘটনাস্থলের দিকে। আমরাও পিছু নিই। ঘটনাস্থলের কাছাকাছি পৌঁছেই তারা গুলি ছুড়তে শুরু করে। আমরা অবাক হয়ে দেখি। সেই আমাদের প্রথম রাইফেলের গুলি ছুড়তে দেখা।
গুলির শব্দে মুহূর্তের মধ্যে পুরো এলাকা স্তব্ধ হয়ে যায়। পরক্ষণেই শরণার্থীর ঢল, লুটেরানির্বিশেষে সবাই রাস্তার পাশের বাড়ি, খেত-খামারের মধ্যে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যেতে থাকে। তখন গুলি থেমে যায়। হ্যান্ড মাইকে ঘোষণা আসে, ‘ভয় নাই। আমরা মুক্তিবাহিনী। আপনাদের সাহায্য করতে এসেছি।’ মুহূর্তেই আমরাও মুক্তিবাহিনীর অংশ হয়ে যাই। চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ে। বুকের বল অসীম, অপরিমেয় বলে মনে হয়।
মাইকের ঘোষণা শুনে শরণার্থীর দল আবার রাস্তায় উঠে আসতে শুরু করে। আর লুটেরার দল কী ভেবে যেন সেই মুক্তিবাহিনীর দলকে চ্যালেঞ্জ জানাতে এগিয়ে আসে ঢাল-সড়কি নিয়ে। মুক্তিবাহিনী তখন আরও কয়েকটি গুলি ছোড়ে এবং ধাওয়া করে সরদারসহ লুটেরাদের কয়েকজনকে ধরে ফেলে। তাদের হাত ও চোখ বেঁধে নিয়ে আসা হয়। সেই বাঁধা অবস্থায়ই শিরশ্ছেদ করার ভঙ্গিতে লুটেরাদের বসানো হয় স্কুলের মাঠে। মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পের সামনে। তখন সন্ধ্যা গড়িয়ে গেছে। আমাদেরও সেখান থেকে চলে যেতে বলা হয়।
পরদিন আমাদের জানানো হয়, আমরা চলে যাওয়ার পর সেখানে আদালত বসিয়ে লুটেরাদের বিচার করা হয়। বিচারে তাদের গণশত্রু হিসেবে অভিযুক্ত করে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার। রাতেই সেই দণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। গলা কেটে হত্যা। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর আমাদের চেনাজানা তখনকার খুব ছোট্ট পরিসরে সেই প্রথম শত্রু নিধন। ওই ঘটনা আমাদের আরও উদ্দীপিত করে। আমরা আরও সাহসী হয়ে উঠি। শত্রুর সঙ্গে আমাদের করণীয় ঠিকঠাক বুঝে নিই।
ওই ঘটনার মধ্য দিয়ে মুক্তিবাহিনী এলাকার সর্বস্তরের মানুষের ভরসাস্থল হয়ে ওঠে। তাদের প্রতি মানুষের সম্মান ভালোবাসা বেড়ে যায়। এলাকায় প্রশান্তির ছায়া নেমে আসে। কিন্তু এর কয়েক দিন পরেই পরিস্থিতির উল্টো যাত্রা শুরু হয়ে যায়। পাকিস্তানি বাহিনী ঝালকাঠিতে স্থায়ী ক্যাম্প বসায়। সেই ক্যাম্পে যোগাযোগ করতে শুরু করে নানা শ্রেণির অপরাধী ও দালালের দল। খবর পেয়ে গোবিন্দধবলের লুটেরাদের কয়েকজনও সেখানে গিয়ে সেদিনের ঘটনা জানায় সরাসরি মেজরের কাছে। কীর্তিপাশা ও এর আশপাশের এলাকায় বিপুলসংখ্যক মুক্তিবাহিনীর শক্ত ঘাঁটি গাড়ার খবরও তারা পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে বিশ্বাসযোগ্যভাবে উপস্থাপন করে। শুরু হয় পাকিস্তানি বাহিনীর কীর্তিপাশা অপারেশনের প্রস্তুতি।
মুক্তিবাহিনীর কাছেও এ খবর চলে আসে। সিদ্ধান্ত হয় কীর্তিপাশার ক্যাম্প তিন কিলোমিটার উত্তরে পেয়ারাবাগান এলাকায় সরিয়ে নেওয়ার। তাৎক্ষণিকভাবে সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয়। আমাদের কয়েকজনকে করণীয় সম্পর্কে কিছু পরামর্শ দিয়ে সশস্ত্র মুক্তিবাহিনীর দল কীর্তিপাশা ছেড়ে উত্তরে যাত্রা করে। আশপাশের আরও কয়েকটি এলাকা থেকেও সশস্ত্র যোদ্ধারা জড়ো হতে থাকে পেয়ারাবাগানে।
প্রাথমিকভাবে তারা পেয়ারাবাগান ঘেরা ভীমরুলী ও শতদশকাঠিতে ক্যাম্প স্থাপন করে। তারপরই পেয়ারবাগানকে ঢাল (হাইড) হিসেবে ব্যবহার করে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধের পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ শুরু করে। আসলে পেয়ারাবাগানকে ঘিরে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর এই দলের যুদ্ধ করার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত আগেই নেওয়া হয়। ওই এলাকায় গিয়ে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কৌশল ও খুঁটিনাটি চূড়ান্ত করা হয়।
শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বহুল আলোচিত পেয়ারাবাগানের যুদ্ধের প্রস্তুতি। তার কেন্দ্রস্থলে ছিল সশস্ত্র মুক্তিবাহিনীর একটি দল। আর তাদের ঘিরে তথ্য ও রসদ সরবরাহের জন্য ছিলাম আমরা অনেকে।
অরুণ কর্মকার, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
অরুণ কর্মকার

আমাদের সুনসান নিস্তরঙ্গ গ্রামীণ জীবনে এক মার্চ এসেছিল ১৯৭১-এ। উন্মাতাল করা উত্তাপ ছিল তার। অনন্য এক বজ্রকণ্ঠের নির্দেশে সে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছিল সাড়ে সাত কোটি মানুষের অন্তরে। অন্তর থেকে বাইরে। জলে-স্থলে-অন্তরিক্ষে। এই মাটির প্রতিটি ধূলিকণায়। তারপর সীমানা পেরিয়ে। দূর থেকে দূরান্তে। দেশ থেকে দেশে। পৃথিবীময়।
সেই মার্চে অমিত তেজদীপ্ত বজ্রকণ্ঠের নির্দেশ ছিল, ‘যার যা আছে তা-ই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে।’ তারপরই অস্ত্র হাতে দলবদ্ধ তরুণেরা ছড়িয়ে পড়তে থাকে। গ্রামে-গঞ্জে-মফস্বল শহরে ঝাঁকে ঝাঁকে। আমাদের গ্রামীণ জীবনেও আবির্ভাব ঘটেছিল তেমনই একঝাঁক তরুণের। হাতে তাঁদের বেয়নেটখচিত থ্রি নট থ্রি রাইফেল। সাব মেশিন গান। কিছু দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র। বিস্ফোরক। আর অন্তরজুড়ে শত্রুকে মোকাবিলা করার প্রত্যয়।
তারা এসেই আমাদের গ্রামীণ বাজারে বন্দরে আড্ডায় খেলার মাঠে ছড়িয়ে পড়ে। ঘুরে ঘুরে ছেলে-বুড়ো সবার সঙ্গে ভাব জমাতে শুরু করে। কিশোর-তরুণদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ, ভাববিনিময় বেশি নিবিড়। ফলে আমরাও সেই ঝাঁকের মধ্যে মিশে যেতে থাকি। কিন্তু তা নিয়ে অভিভাবকদের উদ্বেগ দেখি না; বরং আমাদের বাবা-চাচা-বড় ভাই কিংবা প্রতিবেশী মুরব্বিদের মুখেও শোনা যেতে থাকে যুদ্ধের অনিবার্যতার কথা। ছেলে-বুড়ো সবাইকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে হবে, চতুর্দিকে এমন কথাও চাউর হয়ে যায়। খুব দ্রুতই কিছু পরিবর্তন ঘটে যেতে থাকে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পল্টনে যাওয়ার সুবাদে একটি বন্দুকের বৈধ মালিকানা পেয়েছিলেন আমাদের তুজম্বর আলী মীর। মার্চের উত্তাপ সেই প্রৌঢ়কেও ব্যস্ত করে তোলে অস্ত্রটির খোলনলচে পরিষ্কারের কাজে। তারপর প্রতিদিন সকালে-বিকেলে সেই বন্দুক কাঁধে তাঁর আনাগোনা সবার নজর কাড়ে। তাতে সবাই আরও বেশি সাহসী হয়ে ওঠে। মার্চের উত্তাপ সেই একনলা বন্দুকের সামান্য শক্তিকেও জনমানসে অপরিমেয় করে তোলে।
আমরা হাইস্কুলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা তত দিনে ইংরেজি র্যাপিড রিডারের ‘ওয়াইজ মেন অব দ্য ওল্ড’ পড়া শেষ করেছি। কিন্তু সক্রেটিসের দার্শনিক উক্তি ‘নো দাইসেল্ফ’-এর ঘোর তখনো কাটেনি। ইংরেজির শিক্ষক সুধাংশু বাবু আবার ওই উক্তির সঙ্গে ফকির লালন সাঁই আর রবীন্দ্রনাথকে যুক্ত করে সেই ঘোরকে ঘোরতর করে তোলেন। লালন ফকিরও তো বলেছেন, ‘আপনারে চিনতে পারলে রে, যাবে অচেনারে চেনা...’। একই কথা রবীন্দ্রনাথেরও, ‘আপনারে জানা আমার ফুরাবে না...’। কী আশ্চর্য দার্শনিক যোগসূত্র! প্রাচীন গ্রিস থেকে বাংলার লালন ফকির হয়ে রবীন্দ্রনাথ! ঘোর লাগার কথাই বটে।
কিন্তু সন্ধ্যার মশাল মিছিল সেই ঘোর কাটিয়ে আমাদের নিয়ে যায় ভিন্ন এক জগতে। সেই মিছিলে আমাদের কণ্ঠ উচ্চকিত হয় ‘ইয়াহিয়ার ক্যান্টনমেন্ট জ্বালিয়ে দাও পুড়িয়ে দাও’ স্লোগানে। কিন্তু এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে ক্যান্টনমেন্ট নামক কোনো বস্তুর অস্তিত্ব আছে বলে আমাদের জানা ছিল না। মিছিল শেষে তাই ক্যান্টনমেন্ট বিষয়টি কী, তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা হয়। কিন্তু তাতেও স্পষ্ট কোনো ধারণা মেলে না। তবে সেই মার্চ সদ্য কৈশোরোত্তীর্ণ আমাদের মনের গভীরে যে দৃঢ় প্রত্যয় জন্ম দেয় তাতে ইয়াহিয়ার ক্যান্টনমেন্ট জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে না দেওয়া পর্যন্ত যে থামা যাবে না, তা অনুধাবন করে নিজেরাই বিস্মিত হই।
মার্চের দিনগুলো যতই গড়িয়ে যেতে থাকে, পরিস্থিতির পরিবর্তনও ততই প্রকট হয়ে ওঠে। শহরে থেকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া আমাদের অগ্রজেরা একে একে চলে আসেন গ্রামে। নিয়ে আসেন অনিবার্য যুদ্ধের বার্তা। তাঁদেরও সংঘবদ্ধ হওয়ার জন্য তাড়াহুড়া দেখি। তাতে আমাদের মনে হয় যেন যুদ্ধের মাঠে নামতে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছেন তাঁরা। তবে তাঁদের পথ দেখি ভিন্নতর। সে পথে আসন্ন যুদ্ধে শত্রু শুধু পাকিস্তানিরা। তাদের বিরুদ্ধে সব বাঙালি একপক্ষে ঐক্যবদ্ধ। এটা ঔপনিবেশিক শোষণের বিরুদ্ধে জাতীয় মুক্তির সংগ্রাম। এই পর্বে কোনো শ্রেণিশত্রু নেই।
আমরা তখনো এসব কথার তাৎপর্য বুঝি না। রাজনীতি বোঝার বয়সও আমাদের নয়। তবে শত্রু যে পাকিস্তান, আর তাদের বিরুদ্ধে সব বাঙালি যে এককাট্টা, তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। তা সত্ত্বেও আমাদের কয়েকজনের গাঁটছড়া বাঁধা পড়ে শ্রেণিশত্রু তত্ত্বে বিশ্বাসী সশস্ত্র তরুণ দলের সঙ্গে। সে অনেকটা পরিস্থিতির ফেরেও বটে।
তত দিনে ২৫ মার্চ কালরাতে ঘটনা ঘটে গেছে। পাকিস্তানি হানাদারেরা একের পর এক শহরগুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে। আমাদের চিরচেনা অগ্রজের দল তখন উধাও। কোথাও কাউকে দেখা যাচ্ছে না। খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে না। পরে খবর পাওয়া গেল তাঁরা সব মুক্তিযুদ্ধে গেছেন। শশাঙ্ক পাল, সাত্তার ভাইসহ কয়েকজন দেশের মধ্যেই তাঁদের সমমনা দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। অন্যরা সব ভারতের উদ্দেশে যাত্রা করেছেন। সেখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধে যোগ দেবেন। আমরা তখন কিছুটা অসহায় বোধ করি। মনে মনে আমরা বোধ হয় চাইছিলাম তাঁদের সঙ্গে যেতে।
এরই মধ্যে একদিন আমাদের নিকটতম শহর ঝালকাঠিতে হানা দেয় পাকিস্তানি বাহিনী। প্রথম দিন বেলা শেষে গানবোটে এসে শহরে এলোপাতাড়ি শেল ছুড়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। বার্মা ইস্টার্নের তেলের ডিপোতে শেল ছুড়ে আগুন লাগায়। ভীতসন্ত্রস্ত দিশেহারা শহরবাসী তখন আশপাশের গ্রামাঞ্চলের দিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। অবিরাম লাইন ধরে, হাজার হাজার। শুরু হয় তাঁদের উদ্বাস্তু শরণার্থী জীবন। আমাদের গ্রাম কীর্তিপাশার দিকেও স্রোতের মতো আসতে থাকে মানুষের ঢল। পথে গোবিন্দধবল গ্রামের একদল দুষ্কৃতকারী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাঁদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। জিনিসপত্র লুট করতে শুরু করে।
আমরা তখন গ্রামের বিভিন্ন স্থানে জড়ো হয়ে ঝালকাঠি শহরের লেলিহান অগ্নিশিখা দেখছি। দেখছি গ্রামের প্রান্তে এসে পৌঁছানো শহরবাসী মানুষের ঢল। তাঁদের কাছেই খবর পাওয়া যায় পথে লুটপাটের। আমাদের সশস্ত্র তরুণ দলের কাছেও পৌঁছে যায় সে খবর। সঙ্গে সঙ্গে তারা রওনা দেয় ঘটনাস্থলের দিকে। আমরাও পিছু নিই। ঘটনাস্থলের কাছাকাছি পৌঁছেই তারা গুলি ছুড়তে শুরু করে। আমরা অবাক হয়ে দেখি। সেই আমাদের প্রথম রাইফেলের গুলি ছুড়তে দেখা।
গুলির শব্দে মুহূর্তের মধ্যে পুরো এলাকা স্তব্ধ হয়ে যায়। পরক্ষণেই শরণার্থীর ঢল, লুটেরানির্বিশেষে সবাই রাস্তার পাশের বাড়ি, খেত-খামারের মধ্যে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যেতে থাকে। তখন গুলি থেমে যায়। হ্যান্ড মাইকে ঘোষণা আসে, ‘ভয় নাই। আমরা মুক্তিবাহিনী। আপনাদের সাহায্য করতে এসেছি।’ মুহূর্তেই আমরাও মুক্তিবাহিনীর অংশ হয়ে যাই। চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ে। বুকের বল অসীম, অপরিমেয় বলে মনে হয়।
মাইকের ঘোষণা শুনে শরণার্থীর দল আবার রাস্তায় উঠে আসতে শুরু করে। আর লুটেরার দল কী ভেবে যেন সেই মুক্তিবাহিনীর দলকে চ্যালেঞ্জ জানাতে এগিয়ে আসে ঢাল-সড়কি নিয়ে। মুক্তিবাহিনী তখন আরও কয়েকটি গুলি ছোড়ে এবং ধাওয়া করে সরদারসহ লুটেরাদের কয়েকজনকে ধরে ফেলে। তাদের হাত ও চোখ বেঁধে নিয়ে আসা হয়। সেই বাঁধা অবস্থায়ই শিরশ্ছেদ করার ভঙ্গিতে লুটেরাদের বসানো হয় স্কুলের মাঠে। মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পের সামনে। তখন সন্ধ্যা গড়িয়ে গেছে। আমাদেরও সেখান থেকে চলে যেতে বলা হয়।
পরদিন আমাদের জানানো হয়, আমরা চলে যাওয়ার পর সেখানে আদালত বসিয়ে লুটেরাদের বিচার করা হয়। বিচারে তাদের গণশত্রু হিসেবে অভিযুক্ত করে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার। রাতেই সেই দণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। গলা কেটে হত্যা। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর আমাদের চেনাজানা তখনকার খুব ছোট্ট পরিসরে সেই প্রথম শত্রু নিধন। ওই ঘটনা আমাদের আরও উদ্দীপিত করে। আমরা আরও সাহসী হয়ে উঠি। শত্রুর সঙ্গে আমাদের করণীয় ঠিকঠাক বুঝে নিই।
ওই ঘটনার মধ্য দিয়ে মুক্তিবাহিনী এলাকার সর্বস্তরের মানুষের ভরসাস্থল হয়ে ওঠে। তাদের প্রতি মানুষের সম্মান ভালোবাসা বেড়ে যায়। এলাকায় প্রশান্তির ছায়া নেমে আসে। কিন্তু এর কয়েক দিন পরেই পরিস্থিতির উল্টো যাত্রা শুরু হয়ে যায়। পাকিস্তানি বাহিনী ঝালকাঠিতে স্থায়ী ক্যাম্প বসায়। সেই ক্যাম্পে যোগাযোগ করতে শুরু করে নানা শ্রেণির অপরাধী ও দালালের দল। খবর পেয়ে গোবিন্দধবলের লুটেরাদের কয়েকজনও সেখানে গিয়ে সেদিনের ঘটনা জানায় সরাসরি মেজরের কাছে। কীর্তিপাশা ও এর আশপাশের এলাকায় বিপুলসংখ্যক মুক্তিবাহিনীর শক্ত ঘাঁটি গাড়ার খবরও তারা পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে বিশ্বাসযোগ্যভাবে উপস্থাপন করে। শুরু হয় পাকিস্তানি বাহিনীর কীর্তিপাশা অপারেশনের প্রস্তুতি।
মুক্তিবাহিনীর কাছেও এ খবর চলে আসে। সিদ্ধান্ত হয় কীর্তিপাশার ক্যাম্প তিন কিলোমিটার উত্তরে পেয়ারাবাগান এলাকায় সরিয়ে নেওয়ার। তাৎক্ষণিকভাবে সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয়। আমাদের কয়েকজনকে করণীয় সম্পর্কে কিছু পরামর্শ দিয়ে সশস্ত্র মুক্তিবাহিনীর দল কীর্তিপাশা ছেড়ে উত্তরে যাত্রা করে। আশপাশের আরও কয়েকটি এলাকা থেকেও সশস্ত্র যোদ্ধারা জড়ো হতে থাকে পেয়ারাবাগানে।
প্রাথমিকভাবে তারা পেয়ারাবাগান ঘেরা ভীমরুলী ও শতদশকাঠিতে ক্যাম্প স্থাপন করে। তারপরই পেয়ারবাগানকে ঢাল (হাইড) হিসেবে ব্যবহার করে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধের পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ শুরু করে। আসলে পেয়ারাবাগানকে ঘিরে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর এই দলের যুদ্ধ করার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত আগেই নেওয়া হয়। ওই এলাকায় গিয়ে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কৌশল ও খুঁটিনাটি চূড়ান্ত করা হয়।
শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বহুল আলোচিত পেয়ারাবাগানের যুদ্ধের প্রস্তুতি। তার কেন্দ্রস্থলে ছিল সশস্ত্র মুক্তিবাহিনীর একটি দল। আর তাদের ঘিরে তথ্য ও রসদ সরবরাহের জন্য ছিলাম আমরা অনেকে।
অরুণ কর্মকার, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

আমাদের সুনসান নিস্তরঙ্গ গ্রামীণ জীবনে এক মার্চ এসেছিল ১৯৭১-এ। উন্মাতাল করা উত্তাপ ছিল তার। অনন্য এক বজ্রকণ্ঠের নির্দেশে সে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছিল সাড়ে সাত কোটি মানুষের অন্তরে। অন্তর থেকে বাইরে। জলে-স্থলে-অন্তরিক্ষে। এই মাটির প্রতিটি ধূলিকণায়। তারপর সীমানা পেরিয়ে। দূর থেকে দূরান্তে। দেশ থেকে দেশে। পৃথিবীময়।
সেই মার্চে অমিত তেজদীপ্ত বজ্রকণ্ঠের নির্দেশ ছিল, ‘যার যা আছে তা-ই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে।’ তারপরই অস্ত্র হাতে দলবদ্ধ তরুণেরা ছড়িয়ে পড়তে থাকে। গ্রামে-গঞ্জে-মফস্বল শহরে ঝাঁকে ঝাঁকে। আমাদের গ্রামীণ জীবনেও আবির্ভাব ঘটেছিল তেমনই একঝাঁক তরুণের। হাতে তাঁদের বেয়নেটখচিত থ্রি নট থ্রি রাইফেল। সাব মেশিন গান। কিছু দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র। বিস্ফোরক। আর অন্তরজুড়ে শত্রুকে মোকাবিলা করার প্রত্যয়।
তারা এসেই আমাদের গ্রামীণ বাজারে বন্দরে আড্ডায় খেলার মাঠে ছড়িয়ে পড়ে। ঘুরে ঘুরে ছেলে-বুড়ো সবার সঙ্গে ভাব জমাতে শুরু করে। কিশোর-তরুণদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ, ভাববিনিময় বেশি নিবিড়। ফলে আমরাও সেই ঝাঁকের মধ্যে মিশে যেতে থাকি। কিন্তু তা নিয়ে অভিভাবকদের উদ্বেগ দেখি না; বরং আমাদের বাবা-চাচা-বড় ভাই কিংবা প্রতিবেশী মুরব্বিদের মুখেও শোনা যেতে থাকে যুদ্ধের অনিবার্যতার কথা। ছেলে-বুড়ো সবাইকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে হবে, চতুর্দিকে এমন কথাও চাউর হয়ে যায়। খুব দ্রুতই কিছু পরিবর্তন ঘটে যেতে থাকে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পল্টনে যাওয়ার সুবাদে একটি বন্দুকের বৈধ মালিকানা পেয়েছিলেন আমাদের তুজম্বর আলী মীর। মার্চের উত্তাপ সেই প্রৌঢ়কেও ব্যস্ত করে তোলে অস্ত্রটির খোলনলচে পরিষ্কারের কাজে। তারপর প্রতিদিন সকালে-বিকেলে সেই বন্দুক কাঁধে তাঁর আনাগোনা সবার নজর কাড়ে। তাতে সবাই আরও বেশি সাহসী হয়ে ওঠে। মার্চের উত্তাপ সেই একনলা বন্দুকের সামান্য শক্তিকেও জনমানসে অপরিমেয় করে তোলে।
আমরা হাইস্কুলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা তত দিনে ইংরেজি র্যাপিড রিডারের ‘ওয়াইজ মেন অব দ্য ওল্ড’ পড়া শেষ করেছি। কিন্তু সক্রেটিসের দার্শনিক উক্তি ‘নো দাইসেল্ফ’-এর ঘোর তখনো কাটেনি। ইংরেজির শিক্ষক সুধাংশু বাবু আবার ওই উক্তির সঙ্গে ফকির লালন সাঁই আর রবীন্দ্রনাথকে যুক্ত করে সেই ঘোরকে ঘোরতর করে তোলেন। লালন ফকিরও তো বলেছেন, ‘আপনারে চিনতে পারলে রে, যাবে অচেনারে চেনা...’। একই কথা রবীন্দ্রনাথেরও, ‘আপনারে জানা আমার ফুরাবে না...’। কী আশ্চর্য দার্শনিক যোগসূত্র! প্রাচীন গ্রিস থেকে বাংলার লালন ফকির হয়ে রবীন্দ্রনাথ! ঘোর লাগার কথাই বটে।
কিন্তু সন্ধ্যার মশাল মিছিল সেই ঘোর কাটিয়ে আমাদের নিয়ে যায় ভিন্ন এক জগতে। সেই মিছিলে আমাদের কণ্ঠ উচ্চকিত হয় ‘ইয়াহিয়ার ক্যান্টনমেন্ট জ্বালিয়ে দাও পুড়িয়ে দাও’ স্লোগানে। কিন্তু এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে ক্যান্টনমেন্ট নামক কোনো বস্তুর অস্তিত্ব আছে বলে আমাদের জানা ছিল না। মিছিল শেষে তাই ক্যান্টনমেন্ট বিষয়টি কী, তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা হয়। কিন্তু তাতেও স্পষ্ট কোনো ধারণা মেলে না। তবে সেই মার্চ সদ্য কৈশোরোত্তীর্ণ আমাদের মনের গভীরে যে দৃঢ় প্রত্যয় জন্ম দেয় তাতে ইয়াহিয়ার ক্যান্টনমেন্ট জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে না দেওয়া পর্যন্ত যে থামা যাবে না, তা অনুধাবন করে নিজেরাই বিস্মিত হই।
মার্চের দিনগুলো যতই গড়িয়ে যেতে থাকে, পরিস্থিতির পরিবর্তনও ততই প্রকট হয়ে ওঠে। শহরে থেকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া আমাদের অগ্রজেরা একে একে চলে আসেন গ্রামে। নিয়ে আসেন অনিবার্য যুদ্ধের বার্তা। তাঁদেরও সংঘবদ্ধ হওয়ার জন্য তাড়াহুড়া দেখি। তাতে আমাদের মনে হয় যেন যুদ্ধের মাঠে নামতে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছেন তাঁরা। তবে তাঁদের পথ দেখি ভিন্নতর। সে পথে আসন্ন যুদ্ধে শত্রু শুধু পাকিস্তানিরা। তাদের বিরুদ্ধে সব বাঙালি একপক্ষে ঐক্যবদ্ধ। এটা ঔপনিবেশিক শোষণের বিরুদ্ধে জাতীয় মুক্তির সংগ্রাম। এই পর্বে কোনো শ্রেণিশত্রু নেই।
আমরা তখনো এসব কথার তাৎপর্য বুঝি না। রাজনীতি বোঝার বয়সও আমাদের নয়। তবে শত্রু যে পাকিস্তান, আর তাদের বিরুদ্ধে সব বাঙালি যে এককাট্টা, তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। তা সত্ত্বেও আমাদের কয়েকজনের গাঁটছড়া বাঁধা পড়ে শ্রেণিশত্রু তত্ত্বে বিশ্বাসী সশস্ত্র তরুণ দলের সঙ্গে। সে অনেকটা পরিস্থিতির ফেরেও বটে।
তত দিনে ২৫ মার্চ কালরাতে ঘটনা ঘটে গেছে। পাকিস্তানি হানাদারেরা একের পর এক শহরগুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে। আমাদের চিরচেনা অগ্রজের দল তখন উধাও। কোথাও কাউকে দেখা যাচ্ছে না। খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে না। পরে খবর পাওয়া গেল তাঁরা সব মুক্তিযুদ্ধে গেছেন। শশাঙ্ক পাল, সাত্তার ভাইসহ কয়েকজন দেশের মধ্যেই তাঁদের সমমনা দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। অন্যরা সব ভারতের উদ্দেশে যাত্রা করেছেন। সেখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধে যোগ দেবেন। আমরা তখন কিছুটা অসহায় বোধ করি। মনে মনে আমরা বোধ হয় চাইছিলাম তাঁদের সঙ্গে যেতে।
এরই মধ্যে একদিন আমাদের নিকটতম শহর ঝালকাঠিতে হানা দেয় পাকিস্তানি বাহিনী। প্রথম দিন বেলা শেষে গানবোটে এসে শহরে এলোপাতাড়ি শেল ছুড়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। বার্মা ইস্টার্নের তেলের ডিপোতে শেল ছুড়ে আগুন লাগায়। ভীতসন্ত্রস্ত দিশেহারা শহরবাসী তখন আশপাশের গ্রামাঞ্চলের দিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। অবিরাম লাইন ধরে, হাজার হাজার। শুরু হয় তাঁদের উদ্বাস্তু শরণার্থী জীবন। আমাদের গ্রাম কীর্তিপাশার দিকেও স্রোতের মতো আসতে থাকে মানুষের ঢল। পথে গোবিন্দধবল গ্রামের একদল দুষ্কৃতকারী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাঁদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। জিনিসপত্র লুট করতে শুরু করে।
আমরা তখন গ্রামের বিভিন্ন স্থানে জড়ো হয়ে ঝালকাঠি শহরের লেলিহান অগ্নিশিখা দেখছি। দেখছি গ্রামের প্রান্তে এসে পৌঁছানো শহরবাসী মানুষের ঢল। তাঁদের কাছেই খবর পাওয়া যায় পথে লুটপাটের। আমাদের সশস্ত্র তরুণ দলের কাছেও পৌঁছে যায় সে খবর। সঙ্গে সঙ্গে তারা রওনা দেয় ঘটনাস্থলের দিকে। আমরাও পিছু নিই। ঘটনাস্থলের কাছাকাছি পৌঁছেই তারা গুলি ছুড়তে শুরু করে। আমরা অবাক হয়ে দেখি। সেই আমাদের প্রথম রাইফেলের গুলি ছুড়তে দেখা।
গুলির শব্দে মুহূর্তের মধ্যে পুরো এলাকা স্তব্ধ হয়ে যায়। পরক্ষণেই শরণার্থীর ঢল, লুটেরানির্বিশেষে সবাই রাস্তার পাশের বাড়ি, খেত-খামারের মধ্যে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যেতে থাকে। তখন গুলি থেমে যায়। হ্যান্ড মাইকে ঘোষণা আসে, ‘ভয় নাই। আমরা মুক্তিবাহিনী। আপনাদের সাহায্য করতে এসেছি।’ মুহূর্তেই আমরাও মুক্তিবাহিনীর অংশ হয়ে যাই। চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ে। বুকের বল অসীম, অপরিমেয় বলে মনে হয়।
মাইকের ঘোষণা শুনে শরণার্থীর দল আবার রাস্তায় উঠে আসতে শুরু করে। আর লুটেরার দল কী ভেবে যেন সেই মুক্তিবাহিনীর দলকে চ্যালেঞ্জ জানাতে এগিয়ে আসে ঢাল-সড়কি নিয়ে। মুক্তিবাহিনী তখন আরও কয়েকটি গুলি ছোড়ে এবং ধাওয়া করে সরদারসহ লুটেরাদের কয়েকজনকে ধরে ফেলে। তাদের হাত ও চোখ বেঁধে নিয়ে আসা হয়। সেই বাঁধা অবস্থায়ই শিরশ্ছেদ করার ভঙ্গিতে লুটেরাদের বসানো হয় স্কুলের মাঠে। মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পের সামনে। তখন সন্ধ্যা গড়িয়ে গেছে। আমাদেরও সেখান থেকে চলে যেতে বলা হয়।
পরদিন আমাদের জানানো হয়, আমরা চলে যাওয়ার পর সেখানে আদালত বসিয়ে লুটেরাদের বিচার করা হয়। বিচারে তাদের গণশত্রু হিসেবে অভিযুক্ত করে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার। রাতেই সেই দণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। গলা কেটে হত্যা। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর আমাদের চেনাজানা তখনকার খুব ছোট্ট পরিসরে সেই প্রথম শত্রু নিধন। ওই ঘটনা আমাদের আরও উদ্দীপিত করে। আমরা আরও সাহসী হয়ে উঠি। শত্রুর সঙ্গে আমাদের করণীয় ঠিকঠাক বুঝে নিই।
ওই ঘটনার মধ্য দিয়ে মুক্তিবাহিনী এলাকার সর্বস্তরের মানুষের ভরসাস্থল হয়ে ওঠে। তাদের প্রতি মানুষের সম্মান ভালোবাসা বেড়ে যায়। এলাকায় প্রশান্তির ছায়া নেমে আসে। কিন্তু এর কয়েক দিন পরেই পরিস্থিতির উল্টো যাত্রা শুরু হয়ে যায়। পাকিস্তানি বাহিনী ঝালকাঠিতে স্থায়ী ক্যাম্প বসায়। সেই ক্যাম্পে যোগাযোগ করতে শুরু করে নানা শ্রেণির অপরাধী ও দালালের দল। খবর পেয়ে গোবিন্দধবলের লুটেরাদের কয়েকজনও সেখানে গিয়ে সেদিনের ঘটনা জানায় সরাসরি মেজরের কাছে। কীর্তিপাশা ও এর আশপাশের এলাকায় বিপুলসংখ্যক মুক্তিবাহিনীর শক্ত ঘাঁটি গাড়ার খবরও তারা পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে বিশ্বাসযোগ্যভাবে উপস্থাপন করে। শুরু হয় পাকিস্তানি বাহিনীর কীর্তিপাশা অপারেশনের প্রস্তুতি।
মুক্তিবাহিনীর কাছেও এ খবর চলে আসে। সিদ্ধান্ত হয় কীর্তিপাশার ক্যাম্প তিন কিলোমিটার উত্তরে পেয়ারাবাগান এলাকায় সরিয়ে নেওয়ার। তাৎক্ষণিকভাবে সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয়। আমাদের কয়েকজনকে করণীয় সম্পর্কে কিছু পরামর্শ দিয়ে সশস্ত্র মুক্তিবাহিনীর দল কীর্তিপাশা ছেড়ে উত্তরে যাত্রা করে। আশপাশের আরও কয়েকটি এলাকা থেকেও সশস্ত্র যোদ্ধারা জড়ো হতে থাকে পেয়ারাবাগানে।
প্রাথমিকভাবে তারা পেয়ারাবাগান ঘেরা ভীমরুলী ও শতদশকাঠিতে ক্যাম্প স্থাপন করে। তারপরই পেয়ারবাগানকে ঢাল (হাইড) হিসেবে ব্যবহার করে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধের পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ শুরু করে। আসলে পেয়ারাবাগানকে ঘিরে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর এই দলের যুদ্ধ করার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত আগেই নেওয়া হয়। ওই এলাকায় গিয়ে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কৌশল ও খুঁটিনাটি চূড়ান্ত করা হয়।
শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বহুল আলোচিত পেয়ারাবাগানের যুদ্ধের প্রস্তুতি। তার কেন্দ্রস্থলে ছিল সশস্ত্র মুক্তিবাহিনীর একটি দল। আর তাদের ঘিরে তথ্য ও রসদ সরবরাহের জন্য ছিলাম আমরা অনেকে।
অরুণ কর্মকার, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

আমাদের সুনসান নিস্তরঙ্গ গ্রামীণ জীবনে এক মার্চ এসেছিল ১৯৭১-এ। উন্মাতাল করা উত্তাপ ছিল তার। অনন্য এক বজ্রকণ্ঠের নির্দেশে সে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছিল সাড়ে সাত কোটি মানুষের অন্তরে। অন্তর থেকে বাইরে। জলে-স্থলে-অন্তরিক্ষে। এই মাটির প্রতিটি ধূলিকণায়। তারপর সীমানা পেরিয়ে। দূর থেকে দূরান্তে। দেশ থেকে দেশে। পৃথি
২৫ মার্চ ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

আমাদের সুনসান নিস্তরঙ্গ গ্রামীণ জীবনে এক মার্চ এসেছিল ১৯৭১-এ। উন্মাতাল করা উত্তাপ ছিল তার। অনন্য এক বজ্রকণ্ঠের নির্দেশে সে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছিল সাড়ে সাত কোটি মানুষের অন্তরে। অন্তর থেকে বাইরে। জলে-স্থলে-অন্তরিক্ষে। এই মাটির প্রতিটি ধূলিকণায়। তারপর সীমানা পেরিয়ে। দূর থেকে দূরান্তে। দেশ থেকে দেশে। পৃথি
২৫ মার্চ ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

আমাদের সুনসান নিস্তরঙ্গ গ্রামীণ জীবনে এক মার্চ এসেছিল ১৯৭১-এ। উন্মাতাল করা উত্তাপ ছিল তার। অনন্য এক বজ্রকণ্ঠের নির্দেশে সে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছিল সাড়ে সাত কোটি মানুষের অন্তরে। অন্তর থেকে বাইরে। জলে-স্থলে-অন্তরিক্ষে। এই মাটির প্রতিটি ধূলিকণায়। তারপর সীমানা পেরিয়ে। দূর থেকে দূরান্তে। দেশ থেকে দেশে। পৃথি
২৫ মার্চ ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আমাদের সুনসান নিস্তরঙ্গ গ্রামীণ জীবনে এক মার্চ এসেছিল ১৯৭১-এ। উন্মাতাল করা উত্তাপ ছিল তার। অনন্য এক বজ্রকণ্ঠের নির্দেশে সে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছিল সাড়ে সাত কোটি মানুষের অন্তরে। অন্তর থেকে বাইরে। জলে-স্থলে-অন্তরিক্ষে। এই মাটির প্রতিটি ধূলিকণায়। তারপর সীমানা পেরিয়ে। দূর থেকে দূরান্তে। দেশ থেকে দেশে। পৃথি
২৫ মার্চ ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫