Ajker Patrika

লোকসানের শঙ্কায় খামারিরা

মিজানুর রহমান নয়ন, কুমারখালী (কুষ্টিয়া)
আপডেট : ২০ জুন ২০২২, ১২: ৪১
লোকসানের শঙ্কায় খামারিরা

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে কোরবানির জন্য প্রস্তুত প্রায় ২৬ হাজার পশু। তবে হঠাৎ গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় খামারিরা রয়েছেন দুশ্চিন্তায়। তাঁরা জানান, গত দুই বছর করোনা ভাইরাসের কারণে তেমন লাভ করতে না পারায় এ বছর লাভের আশায় ছিলেন। সারা বছর পশু পরিচর্যাও করেন। কিন্তু গো-খাদ্যের দাম বাড়ায় লোকসানের শঙ্কায় আছেন।

খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোরবানির পশু বাজারে তোলার সময় ঘনিয়ে আসছে। চলছে শেষ মুহূর্তের পরিচর্যা। গত দুই বছর করোনার কারণে তেমন লাভ করতে পরিনি। অনেকে লাভ ছাড়াই পশু বিক্রি করেন। লোকসানের ভয়ে অনেকে আবার পশুপালন ছেড়ে দিয়েছেন। এবার পরিমিত লাভের আশায় সারা বছর পশু পালন করেছেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে লাভের অংশে ভাগ বসিয়েছে গো-খাদ্যের দাম। এ নিয়ে চিন্তিত তাঁরা।

উপজেলা ঘুরে জানা গেছে, কোরবানিকে সামনে রেখেই খামারিরা সারা বছর গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া লালন-পালনে বড় অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করেন। ওই সময় পশু বিক্রি করতে না পারলে বড় ধরনের লোকসান গুনতে হয় তাঁদের।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, কুমারখালীর ৩ হাজার ৭৬৭টি খামারে এ বছর ২৫ হাজার ৬৯৯টি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে ষাঁড় ১০ হাজার ৭৬৪, বলদ ৬ হাজার ৫৩৪, মহিষ ২১, ছাগল ৮ হাজার ১৩৬ এবং ভেড়া ২৪৪টি। উপজেলায় পশুর চাহিদা রয়েছে ১২ হাজার ৫৪৩ টি। গত বছর পশু প্রস্তুত করা হয়েছিল ২৯ হাজার ৩২টি।

জগন্নাথপুর ইউনিয়নের জোতপাড়া গ্রামের খামারি আব্দুল মতিন মোল্লা বলেন, ‘২০২০ সালে খামারে কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য ৩০টি হৃষ্টপুষ্টকরণ পশু ছিল। করোনায় লোকসান খেয়ে ২০২১ সালে পশু ছিল ২০ টি। সেবারও করোনায় লাভ করতে পারিনি। এবারের জন্য খামারে প্রায় ১০ থেকে ১৪ মণ ওজনের ১০টি পশু আছে। খুব যত্নে সারা বছর সেগুলো লালন-পালন করেছি। কিন্তু খাবারের যে দাম, তাতে এবারও লোকসান গুনতে হবে।’

উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের জোতমোড়া গ্রামের খামারি হান্নান মোল্লা বলেন, ‘সারা বছর গরু মোটাতাজাকরণ করি কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য। বড় এবং দেখতে সুন্দর গরুগুলোই কেবল মোটা অঙ্কের টাকায় বিক্রির জন্য ভালো ভালো খাবার দিয়ে পালন করি। গেল বারের চেয়ে এ বছর গো-খাদ্যের দাম অনেক বেশি। হয়তো এবারও লাভ হবে না।’

সদকী ইউনিয়নের নন্দীগ্রামের খামারি সুদেব কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘গত বছর কোরবানির ঈদে তিনটি ষাঁড় বিক্রি করেছিলাম। করোনার কারণে তিনটি গরুতে প্রায় দেড় লাখ টাকা লোকসান হয়েছিল। সে জন্য এবার আর ষাঁড় প্রস্তুত করিনি। বর্তমানে খামারে শুধু গাভি আছে। খাদ্যের দাম নিয়ে খুব কষ্টে আছি।’

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে এবার উপজেলায় ২৫ হাজার ৬৯৯টি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। করোনাকালীন খামারিদের লোকসান হয়েছে, ঠিক তা নয়। তবে লাভ করেছেন সীমিত। নানাবিদ কারণে এবার খামারির সংখ্যা কমেছে। কমেছে হৃষ্টপুষ্টকরণ পশু। এবারও আমরা সারা বছর খামারিদের সার্বিক খোঁজখবর নিয়েছি। পশুদের সেবা দিয়েছি। এখানকার পশুদের প্রাকৃতিক উপায়ে এবং কোনো প্রকার ক্ষতিকর কেমিক্যাল ছাড়ায় হৃষ্টপুষ্টকরণ করা হয়ে থাকে। তবে হঠাৎ গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় লাভ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন খামারিরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত